Sunday, February 1, 2009

বাঘায় আলু বেগুন শিম কুয়াশায় হিম ।। পেঁয়াজে বাম্পার রসুনে ধস

০১.০২.০৯
ডেসটিনি ।। নুরুজ্জামান, বাঘা (রাজশাহী)

রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় এ বছর আলু, বেগুন ও শিমে বাম্পার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও প্রকৃতির পীড়নে তা ভেস্তে গেছে। প্রক্ষান্তরে পেঁয়াজের উৎপাদন আশানুরূপ হলেও রসুন চাষি ও ব্যবসায়ীরা ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় তাদের ব্যবসায় এবার ধস নেমেছে।
সরেজমিন ঘুরে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর কৃষি উপকরণের অধিক মূল্য এবং সার ও বীজের দাম বেশি থাকা সত্ত্বেও কৃষকরা উৎপাদনে পিছিয়ে ছিল না। তারা সর্বশক্তি নিয়োগ করে যার যতটুকু জমি আছে সেই হিসেবে প্রত্যেকেই ফসল উৎপাদনের চেষ্টা করেছে। এ ক্ষেত্রে আলু, বেগুন ও শিম চাষিরা প্রকৃতির কাছে পরাজিত হয়েছেন। ভালো গাছ ও উৎপাদন শুরু হওয়ার প্রাক্কালে দীর্ঘ সময় ধরে ঘন কুয়াশা তাদের কপাল ভেঙেছে। পক্ষান্তরে যারা পেঁয়াজ চাষ করেছে তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। কারণ পেঁয়াজ চাষিরা অন্যান্য বারের চেয়ে এবার উৎপাদন এবং মূল্য দুইই ভালো পাচ্ছে। শুধু ধস নেমেছে রসুন উৎপাদনকারী কৃষক ও স্টক ব্যবসায়ীদের।
উপজেলার পদ্মার চর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চাষিদের মাঝে পেঁয়াজ তোলার ধুম পড়েছে। চর কালিদাস খালি গ্রামের মোহাম্মদ খাঁ তার জমিতে বসেই পেঁয়াজ বিক্রি করছেন। তিনি বলেন, তার ১০ কাঠা জমিতে এ বছর ৩০ মণ পেঁয়াজ হয়েছে। তিনি ১ হাজার ২৫০ টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বিক্রি করলেন। উপজেলার কলিগ্রামের আরসাদ সরদার এবার দুই বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। তার বিঘায় ৫০ মণ হারে ফলন হয়েছে। অনুরূপ ফলন হয়েছে অন্যান্য কৃষকদের। এ প্রসঙ্গে পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মফিজুল ইসলাম বলেন, পেঁয়াজ চাষ করে চাষিরা এবার লাল হয়েছে। তিনি বলেন, আমি ১২ বছর ধরে পেঁয়াজের ব্যবসা করছি, পেঁয়াজ চাষিদের এ রকম হাসিমুখ কখনো দেখিনি।
পক্ষান্তরে আলু, বেগুন ও শিম চাষিরা এবার হতাশায় ভুগছে। এর প্রধান কারণ এ বছর আলু চাষিরা ভালো বীজ পায়নি। দ্বিতীয়ত একটানা ঘন কুয়াশা মৌসুমের শুরু থেকে হওয়ার কারণে আলুর গাছ, শিম ও বেগুনের ফুলে পচন ধরে। ফলে তারা আশানুরূপ ফলন থেকে বঞ্চিত হয়। এ ব্যাপারে উপজেলার সবচেয়ে বেশি বেগুন, আলু ও শিম উৎপাদনকারী আড়ানি অঞ্চলের কৃষক আমান, মোজাম্মেল ও গফুর মিয়া বলেন, তাদের অঞ্চলে অন্যান্য ফসলের তুলনায় প্রচুর পরিমাণ উৎপাদন হয় আলু, বেগুন, শিম ও মরিচ। যে কারণে এ অঞ্চলের কৃষকরা এসব ফসলের ওপর বেশি গুরত্বারোপ করে থাকে। কিন্তু এবার প্রকৃতির রোষানলে পড়ে সবাই সর্বস্বান্ত হয়েছে। অপর পক্ষে রসুন উৎপাদন ভালো হলেও বাজার মূল্যে ধস নামায় কৃষকরা একেবারেই ভেঙে পড়েছে।
এ ব্যাপারে বাঘা কৃষি অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, বাঘা একটি কৃষিপ্রধান এলাকা। এ বছর এ উপজেলায় প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ এবং সাড়ে ৫ হাজার হেক্টর জমিতে আলু, বেগুন ও শিম চাষ হয়েছে। যারা পেঁয়াজ উৎপাদনে শামিল হয়েছে তাদের মুখে হাসি ফুটেছে। পক্ষান্তরে যারা আলু, বেগুন ও শিম চাষ করেছে তারা প্রকৃতির কাছে হেরে যাওয়ায় চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদেরকে বীজ প্রয়োগ থেকে শুরু করে নানামুখি পরামর্শ দিলেও দীর্ঘ সময় কুয়াশা হওয়ায় কোনো পরামর্শই কাজে আসেনি বলে তারা অভিমত ব্যক্ত করেন।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor