Saturday, February 14, 2009

দক্ষিণাঞ্চলে সেচ সুবিধা নিশ্চিত হয়নি।। ড্রামসিডার ব্যবহার করতে কৃষকরা আগ্রহী নয়

১৪.০২.০৯
ইত্তেফাক ।। লিটন বাশার, বরিশাল অফিস ।।

সেচ সুবিধা নিশ্চিত না হওয়া এবং ড্রাম সিডারের ব্যবহার না জানায় দক্ষিণাঞ্চলের ইরি-বোরো চাষে সাফল্য আসছে না। এখনো অধিকাংশ সেচযন্ত্র চালু করা হয়নি। ড্রাম সিডার তিন বছর যাবৎ বিতরণ করা হলেও এখন পর্যন্ত কৃষকরা তার নামই জানেন না।

দেশের সিংহভাগ ধান উৎপাদন হয় দক্ষিণাঞ্চলে। কিন্তু এখানে ফসলের গড় উৎপাদন প্রতি হেক্টরে মাত্র ৪ দশমিক ১ টন। উন্নত প্রযুক্তিতে ফসল উৎপাদন না করায় ইতিবাচক সাফল্য পাচ্ছেন না এ অঞ্চলের কৃষকরা। ফসল উৎপাদনে প্রযুক্তি ব্যবহারের লক্ষ্যে গত তিন বছর পূর্বে ১১ জেলায় ড্রাম সিডার সরবরাহ শুরু হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, এ অঞ্চলের কৃষকদের মাঝে ১৫৬০টি ড্রাম সিডার বিতরণ করা হয়েছে। ২০০৬ সালে বিপিজেবিএএইচপি প্রকল্পের অধীনে বীজ বুননের লক্ষ্যে এ ড্রাম সিডার বিতরণ করা হয়। কিন্তু কৃষকরা ড্রাম সিডার ব্যবহারে আগ্রহী নয়। ব্যবহার কম থাকায় অধিকাংশ কৃষক ড্রাম সিডারের নাম পর্যন্ত জানেন না। যারা ড্রাম সিডার পেয়েছেন তারা জানান, এ অঞ্চলের চাষাবাদের জমিতে বীজ বুননের সময় পানি জমে থাকায় ড্রাম সিডার ব্যবহার সম্ভব হয় না। সমতল ভূমি ছাড়া ড্রাম সিডার ব্যবহার করা মুশকিল।

আউশ-আমন ও বোরো মৌসুমে ড্রাম সিডার ব্যবহার করা সম্ভব বলে মনে করেন কৃষি কর্মকর্তারা। এই লক্ষ্য নিয়েই বরিশাল জেলায় ২০২টি, পিরোজপুরে ৫৭টি, ঝালকাঠীতে ৪১৬টি, পটুয়াখালীতে ১১৬টি, বরগুনায় ১১১টি, ভোলায় ৫৯টি, ফরিদপুরে ২শ’, গোপালগঞ্জে ৮৩, মাদারীপুরে ২০৪টি, রাজবাড়িতে ৭৫টি ও শরিয়তপুরে ৩৭টি ড্রাম সিডার সরবরাহ করা হয়। বিনামূল্যেই বীজ বুননের লক্ষ্যে কৃষকদের এসব ড্রাম সিডার দেয়া হয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশ ড্রাম সিডার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে পড়ে রয়েছে। অনেক কৃষক ড্রাম সিডার নেয়ার পর তা আবার ফেরত দিয়েছেন। তাদেরকে আর কৃষি কর্মকর্তারা উদ্বুদ্ধ করেননি। ড্রাম সিডারের মাধ্যমে বীজ বুনলে ১০ থেকে ২০ ভাগ ফসল বেশি উৎপাদন করা সম্ভব। ফলন ফলতেও ১০ থেকে ১৫ দিন সময় কম লাগবে। এ পদ্ধতিতে খুব সহজেই একজন চাষী ঘন্টায় এক বিঘা জমিতে বীজ বুনন করতে পারেন। কিন্তু এর বাস্তবায়ন নেই। এর সাথে যোগ হয়েছে সেচযন্ত্র চালু না হওয়ার বিষয়টি। গত এক মাস আগে এ অঞ্চলে ইরি-বোরো মৌসুম শুরু হয়েছে। কিন্তু পানি সরবরাহের জন্য এখন পর্যন্ত সর্বত্র সেচযন্ত্র চালু হয়নি।

বরিশাল ও ঝালকাঠী জেলার অধিকাংশ এলাকায় ইরি-বোরো চাষ শুরু না হওয়ায় ফসল নষ্ট হওয়ার আশংকায় পড়েছেন কৃষকরা। এ বিভাগের পিরোজপুরসহ তিনটি জেলায় মোট ৭টি উপজেলার ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছিল। ঐ প্রকল্পের অধীন ৭১ হেক্টর জমি সেচ ব্যবস্থার আওতায় আনার কথা ছিল। কিন্তু ধীর গতিতে চলছে ঐ প্রকল্পের কাজ। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখনো ৭৮টি পাম্প স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। প্রতিটি পাম্পে প্রতি সেকেন্ডে ২৫ কিউসেক পানি উত্তোলন করা সম্ভব। এ পর্যন্ত ৩০টি পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে পানি সরবরাহ হচ্ছে ২১ থেকে ২২টি পাম্পের মাধ্যমে। এখন পর্যন্ত ২ হাজার কৃষক ইরি-বোরো চাষাবাদের আওতায় আসলেও অধিকাংশ কৃষকের জমি অনাবাদি রয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, খুব শীঘ্রই বাকি সেচ পাম্পগুলো চালু করা হবে। তা না হলে ইরি-বোরো চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor