Tuesday, February 10, 2009

ভর্তুকি মূল্যের সার অবিক্রীত নিম্নমানের সারের ফাঁদে কৃষক

১০.০২.০৯

শফিকুল ইসলাম
ভারতীয় নিম্নমানের সারের ফাঁদে আটকা পড়েছে দেশের কৃষক। সরকার ফসলের উৎপাদন বাড়াতে সব ধরনের সারে অর্ধেক ভর্তুকি দিলেও গত ১ মাসে চাহিদার ৩ ভাগের ১ ভাগও কৃষক পর্যায়ে বিক্রি হয়নি। ভারতের নিম্নমানের কমদামি সার দেশের বাজারে ও কৃষক পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা, সার ডিলার, বিএডিসি ও বিসিআইসি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিম্নমানের সারে ফসলি মাটির দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করবে। আশঙ্কাজনকহারে কমাবে কৃষি উৎপাদনও। তাদের মতে, সম্প্রতি আলুতে সৃষ্ট রোগের পেছনে বীজ-আবহাওয়ার পাশাপাশি ভেজাল সারের ভূমিকাও রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের সারের চড়াদামের সুযোগ নিয়ে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে ভারতের সার সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে চোরাই পথে আমদানি করে তা সারা দেশে বাজারজাত করছে। তারা ভারতের এমওপি ও টিএসপির নামে দানাদার এসএসপির ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা এবং ডিএপির নামে ভারতের টাটা কোম্পানির এনপিকে বিক্রি করছে ১১০০ থেকে ১২০০ টাকায়। পক্ষান্তরে, সরকারের ভর্তুকি দামের টিএসপির প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকায়, এমওপি ১৭৫০ টাকায় এবং ডিএপি ২২৫০ টাকায়। তারা বলছেন, ভারতের ভেজাল সার বিক্রিতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিসিআইসির অনুমোদিত সিলসংবলিত ব্যাগও। এ ছাড়া ভেজাল সার বিক্রিতে ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও সীমান্ত এলাকাসহ সারাদেশের কৃষি উৎপাদন বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে। ভেজাল সার দেশে ঢুকলেও তা বন্ধে সরকারের তেমন কোনো পদক্ষেপও নেই।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, নিম্নমানের ভারতীয় সার আসা বন্ধে সীমান্ত এলাকার জেলাগুলোর সার বীজ মনিটরিং কমিটিকে সার্বক্ষণিক তদারকি করতে বলা হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকের কাছে গিয়ে ভেজাল সার ব্যবহার থেকে চাষিদের বিরত থাকতে পরামর্শ দিচ্ছেন।
এদিকে রাজশাহীর মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, নওগাঁ, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যশোর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়সহ সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে সংগৃহীত ডিএপি সার পরীক্ষার পর তাতে ফসফেটের পরিমাণ মেলে ১৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। অথচ যার আদর্শমান ৪৬ শতাংশ। এমওপিতে পটাশের আদর্শমান ৬০ শতাংশ হলেও পাওয়া যায় ৩৯ শতাংশ এবং টিএসপিতে ফসফেটের আদর্শমান ৬০ শতাংশ হলেও পাওয়া যায় ১৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। কর্মকর্তারা জানান, ভারতের অধিকাংশ সারেই মাত্রাতিরিক্ত লবণ, ইট, পাথর কুচি ও রেড অক্সাইড পাওয়া গেছে।
কৃষি মন্ত্রণায়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, কৃষির ক্ষতি রোধকল্পে এরই মধ্যে নওগাঁ, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, যশোর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়সহ সীমান্ত এলাকায় বেশ কিছু ভারতীয় নিম্নমানের সার আটক করা হয়েছে। চোরাই পথে আসা সারের আমদানি বন্ধেও কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, কৃষকরা সচেতন হয়ে ভেজাল সার না কিনলে অসাধু ব্যবসায়ীরা সার আমদানি ও বিক্রি বন্ধ করবে। বিসিআইসি, বিএডিসি ও বিএফএ সূত্র জানায়, গত ২ মাসে বরাদ্দকৃত সার থেকে দেশের ৫০৪৮ ডিলারের কাছে মজুদ পড়ে গেছে প্রায় ২ লাখ টন ইউরিয়া, ৫০ হাজার টন টিএসপি, ৩০ হাজার টন এমওপি ও ৮ হাজার টন ডিএপি সার।
বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএ) চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন আহমেদ জানান, ভারতের নকল সার বাজারে ঢুকলে সরকারি-বেসরকারিভাবে আমদানিকৃত উন্নতমানের সার অবিক্রীত থাকবে। ফসলেরও মারাত্মক ক্ষতি হবে। সার বিক্রি কমে গেলে ও মোটা অঙ্কের পুঁজিতে লাভ না এলে আমদানিকারকরা ব্যবসায় আগ্রহ হারাবে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor