Friday, February 27, 2009

পানির অভাবে বোরো চাষ ব্যাহত

১৯.০২.০৯
ডেসটিনি ।। পিন্টু দেবনাথ, কমলগঞ্জ

‘এবার বরুয়া (বোরো) অইত নায়। আমরার মরা ছাড়া আর কোন উপায় নাই। এক কিয়ার জমিনে আড়াই হাজার টেকা খরছ করিয়া অখনও পানি নাই। আগে লাঘাটাতে পানি ভরা থাকত আর অখন লাঘাটাতও পানি নাই।’ অসহায়ের মতো কথাগুলো বলছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলার পতনউষার ইউনিয়নের কৃষক শেরওয়ান আলী ও আক্তার মিয়া। বর্তমান বোরো আবাদের ভরা মৌসুমে কমলগঞ্জের নদী ও ছড়াগুলোর উজানে একাধিক ক্রসবাঁধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন নিম্নাঞ্চলের কৃষকরা। ফলে কৃষি বিভাগের লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক জমিতেও বোরো চাষাবাদ সম্ভব হচ্ছে না। নিম্নাঞ্চলের কৃষকরা বেশি নির্ভরশীল ছিলেন লাঘাটা নদীর ওপর। কিন্তু তারা এখন সেই নদীর পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত। পাম্পের মাধ্যমে সেচ দেয়ার মতো পানিও পাচ্ছেন না কৃষকরা। তাই আবাদ করা জমিগুলোও এখন পানির অভাবে খাঁ খাঁ করছে। ফলে ১৬০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। অথচ গত বছর কমলগঞ্জে একসময়ে পড়ে থাকা অনাবাদি ১২০৯ হেক্টর জমিতে সরকারি সহযোগিতায় বোরো আবাদের মধ্য দিয়ে উপজেলা কৃষি অধিদফতরের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ বোরো চাষাবাদ হয়েছিল।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বোরো মৌসুমে ৮৮০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও ১৬৩০ হেক্টর জমিতে উফসীসহ মোট ২৫১০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ২১০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও ৭০৫ হেক্টর জমিতে উফসী আবাদ হয়েছে। সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা যায়, প্রতি বছর লাঘাটা নদী থেকে সেচ সুবিধা নিয়ে নিম্নাঞ্চলের কৃষকরা বোরো চাষের জন্য জমি প্রস্তুত করেন। কিন্তু এ বছর সেই নদীতে পানি সংকটের কারণে ও পর্যাপ্ত সেচ সুবিধার অভাবে বোরো চাষাবাদের ভরা মৌসুমে বোরো নির্ভরশীল কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। চলতি বছর লাঘাটা নদীতে পানি একেবারেই কম, তার ওপর উজানের একাধিক স্থানে ক্রসবাঁধ নির্মিত হওয়ায় নদীর নিম্নাঞ্চল এলাকায় পানি পাওয়া যাচ্ছে না। কমলগঞ্জের নিম্নাঞ্চল এলাকা শমসেরনগর, মুন্সীবাজার ও পতনউষার ইউনিয়নের বোরো চাষাবাদকৃত কেওলার হাওর সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যুতায়ন না থাকায় পড়ে থাকা অনাবাদি প্রায় ৫০০ একর জমিতে বোরো চাষাবাদ সম্ভব হচ্ছে না। শমসেরনগর ইউনিয়নের কৃষক ফজলু মিয়া, সিদ্দিকুর রহমান, পতনউষার ইউনিয়নের কৃষক আক্তার মিয়া, শেরওয়ান আলী, জুয়েল আহমদ, ডা. আবু বক্কর ও মুন্সীবাজার ইউনিয়নের কৃষক মোজাহিদ আলী বলেন, উপজেলার নিম্নাঞ্চল এই এলাকায় বন্যার ক্ষয়ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষকরা সাধারণত বোরো চাষের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু উজানের ক্রসবাঁধগুলো থেকে অতিরিক্ত পানিও ছাড়া হচ্ছে না। তাছাড়া কেওলার হাওর সংলগ্ন শ্রীসূর্য ও ধূপাটিলা গ্রাম এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। এলাকায় বিদ্যুৎ থাকলে সেচ সুবিধার মাধ্যমে পড়ে থাকা অনাবাদি আরো ৫০০ একর জমিতে বোরো চাষ করা যেত। কিন্তু যথাসময়ে বৃষ্টিপাত না হওয়া এবং নদীতে পানি না পাওয়ায় বোরো চাষের ওপর নির্ভরশীল কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়ছেন। লাঘাটা নদীসহ ছোটবড় বিভিন্ন ছড়ার উজানে একাধিক বাঁধ নির্মাণ করায় সৃষ্টি হয়েছে পানির সংকট। কৃষি বিভাগ বা উপজেলা প্রশাসন কোনো উদ্যোগ নিয়ে পলি নালার ব্যবস্থা করছে না। এতে কৃষকরা পড়েছেন মহাচিন্তায়। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নরেশ চন্দ্র বাড়ৈ বলেন, পানি সংকট কমানোর জন্য অচিরেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor