Tuesday, February 10, 2009

উত্তরাঞ্চলে ভুট্টা চাষ, অন্য ফসল উৎপাদনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা

১০.০২.০৯

ডেসটিনি ।। সুমন হাসান, রাজশাহী
উত্তরাঞ্চলের চরাঞ্চলগুলোতে ধান চাষের পাশাপাশি ভুট্টার চাষও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই উৎপাদন ধারা অব্যাহত থাকলে ভুট্টা ভা-ার হিসেবে এ অঞ্চল সারাদেশে পরিচিতি লাভ করবে। ইতিমধ্যে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান চরাঞ্চলের জমি লিজ নিয়ে ভুট্টা আবাদ শুরু করেছে। যার জন্য চরাঞ্চল এলাকার প্রায় ৮৫ হাজার হেক্টর জমি লিজ দেয়া হয়েছে বলে ভূমি বিভাগ জানায়। রাজশাহী, রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলায় লিজ দেয়া হয়েছে ৩০ হাজার হেক্টর জমি। এটি কৃষি বিভাগের জন্য সুখবর হলেও এর সঙ্গে তৈরি হয়েছে অন্য পরিস্থিতি। চরাঞ্চলে ভুট্টা চাষের কারণে অন্যান্য ফসলের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। ফলে এ অঞ্চলে আগামীতে ধানসহ অন্যান্য ফসলের উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে। অধিক মুনাফা, খাদ্য ঘাটতি ও পশুখাদ্যের ঘাটতি কমাতে ২০০৪ সাল থেকে ভুট্টা চাষের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণ দিয়ে সহায়তা করার উদ্যোগ নেয় রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে গত ৫-৬ বছর বিভিন্ন ব্যবসায়ী এসব জমি লিজ নিয়ে ভুট্টা চাষ করছেন। ভুট্টা চাষাবাদে সহযোগিতা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উইনরক ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি সংস্থা, দেশি এনজিও ব্র্যাক এবং কয়েকটি বেসরকারি বীজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। উইনরক বাংলাদেশে শিশুশ্রম নিবারণ, পরিবেশ, কৃষি প্রভৃতি ক্ষেত্রে বেসরকারি প্রকল্প চালালেও ভুট্টা চাষে উৎসাহিত করার প্রকল্প শুরু করে ২০০৪-এ।
স্থানীয় অর্থনীতিবিদ ও পরিবেশবাদীরা বলছেন, চরাঞ্চলে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ভুট্টা চাষ করে কৃষকরা সাময়িক লাভবান হলেও চিরায়ত ও প্রচলিত পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে কৃষকরা যেভাবে জমির উপরিভাগ রক্ষা করে চরাঞ্চলে আবাসন তৈরি করতো, এখন অপ্রচলিত ও নিবিড় চাষাবাদের কারণে মাটির উপরিভাগ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কমে আসবে ধান চাষের জমি। বিঘিœত হবে বসতি গড়ে তোলার প্রক্রিয়া। চরের ফসলের বৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হবে। হ্রাস পাবে ফসলের উৎপাদন।
রাজশাহীর গোদাগাড়ীর চরআষাঢ়িয়াদহের গোলাম আলী বলেন, চরের জমিতে ধান, বুট, খেসারি, কাউন, ধনিয়া, মৌরি, মিষ্টিআলু, লাউ, কুমড়া, বেগুন ও কলাসহ নানা জাতের দেশি ফসল আবাদ হয়। আউশ মৌসুমে জমিতে ধান ছাড়া অন্য কোনো ফসল চাষাবাদ হয় না। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলার চরাঞ্চলে কয়েক হাজার একর জমি ভুট্টা চাষের জন্য লিজ নেয়া হয়েছে। পঞ্চগড় জেলায় বিস্তীর্ণ এলাকা অনেকে জমি লিজ নিয়ে ভুট্টার পাশাপাশি বাউকুল চাষ করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেসরকারি সংস্থার এক কৃষিবিদ জানান, ভুট্টা সাধারণত পতিত বা এক ফসলি জমিতে চাষযোগ্য একটি সারখেকো ফসল। দো-ফসলি জমিতে চাষ করলে মাটির উর্বরতা কমে যাবে এবং পরে ধান কিংবা অন্য ফসল চাষ করতে গেলে উৎপাদনে বিপর্যয় দেখা দেবে। তখন প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক সার প্রয়োগ করে ফসলের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠা ধরে রাখতে হবে। অপরিকল্পিতভাবে ভুট্টা চাষ করে চরাঞ্চল জমির আবাসন ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। কারণ ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে রাসায়নিক কীটনাশক। ফলে নষ্ট হচ্ছে জমির স্বাভাবিক উর্বরতা। এ ছাড়াও অধিক কীটনাশক ব্যবহারের কারণে ভুট্টা গাছে যখন ফুল আসে তখন ওই ফুলে মধু আহরণের জন্য বসা প্রজাপতি, মথ, ফড়িং প্রভৃতি পতঙ্গ মারা যায়। এসব পতঙ্গের অভাবে ওই এলাকায় লাউ, কুমড়া ও নানা জাতের শাকসবজির পরাগায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের চরাঞ্চলে এক ও দো-ফসলি জমির পরিমাণ প্রায় ২ লাখ হেক্টর। এর শতকরা ৮০ থেকে ৮৫ ভাগ জমিতে বিভিন্ন ধরনের দেশি জাতের ফসল উৎপাদিত হয়ে থাকে। অথচ যে জমিতে ভুট্টা চাষ করা হয় সে জমিতে ধান কিংবা প্রচলিত ফসল ভালো হয় না। কারণ ভুট্টা চাষে বেশি পরিমাণে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহƒত হয় বলে জমির উর্বরতা কমে যায়।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor