Monday, February 2, 2009

আমদানি করা সার গুদামে পড়ে আছে কৃষকের হাতে যথাযথ সময়ে সার পৌঁছে দিতে হবে

যায়যায়দিন ।। সম্পাদকীয়
বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতির দেশ। কৃষকদের সমস্যাগুলোর প্রতি যথাযথ দৃষ্টি দেয়া তাই অনেক গুরুত্ব বহন করে। কৃষকরা দুর্নীতি-সুনীতি বোঝে না, রাজনীতিবিদদের পরস্পরের মধ্যে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি নিয়েও তাদের মাথাব্যথা নেই। তাদের মাথাব্যথা হচ্ছে সঠিক সময়ে জমিতে সার দিয়ে ফসল ঘরে তোলা। তারা উদয়াস্ত পরিশ্রম করে এবং সৎভাবে বাঁচতে চায়।
সম্প্রতি জানা গেছে, বিদেশ থেকে চড়া দামে আমদানি করা ৩ লাখ ৪৬ হাজার ২০০ বস্তা উন্নতমানের টিএসপি ও এমওপি সার বগুড়ার বিএডিসির গুদামে পড়ে আছে। কৃষি মন্ত্রণালয় বরাদ্দ না দেয়ায় গত পাঁচ মাসেও সারগুলো ডিলার কিংবা কৃষক পর্যায়ে বণ্টন করা হয়নি।
ডিলারদের অনেকেই অভিযোগ করেছেন, সার বরাদ্দ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িতরা বেসরকারি আমদানিকারকদের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে তাদের সার বাজারজাত করতে সহযোগিতা করছে। এ কারণেই সরকারি আমদানি করা সার আটকে রাখা হচ্ছে। সারগুলো কৃষক পর্যায়ে ছাড়া হচ্ছে না।
নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৪ জানুয়ারি সারের দাম কমানো হয়। নতুন দাম রাখা হয় টিএসপি ৩৮ হাজার টাকা এবং এমওপি ৩৩ হাজার টাকা টন। প্রতি টনে দুই হাজার টাকা লাভ রেখে ডিলারদের খুচরা মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এসবই ভালো উদ্যোগ। কিন্তু, সময়মতো যদি এ সার কৃষকদের হাতে না পৌঁছে, তাহলে আখেরে কোনো ফায়দা হবে না।
চাহিদা অনুযায়ী কৃষি মন্ত্রণালয় প্রতি মাসে বিভিন্ন জেলার জন্য সারের বরাদ্দ দেয়। এছাড়া জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটি ওই বরাদ্দ করা সার উপজেলার চাহিদা অনুযায়ী ডিলারদের বরাদ্দ করে। ওই বরাদ্দ পাওয়ার পর বিএডিসির গুদাম থেকে সার সরবরাহ করা হয়। কিন্তু গত কয়েক মাসে বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি করা সার ডিলারদের সরবরাহ করা হলেও সরকারি সার বরাদ্দ দেয়া হয়নি। গত আলুর মৌসুমে সরকারি পর্যায়ে আমদানি করা সারও বাজারে ছাড়া হয়নি। আবার চলতি বোরো মৌসুমের শুরুতেও গুদামজাত সরকারি সার বাজারে ছাড়ার কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। কেন এমন হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সার বিতরণের ক্ষেত্রে সরকারের করণীয় আছে অনেক কিছুই। সঠিক সময়ে জমিতে সার না দিতে পারলে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হয়। কৃষি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সরকারকেই তাই এ বিষয়টির দিকে নজর দিতে হবে।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে চাষীদের কাছে স্বল্প সময়ে সার পৌঁছে দেয়ার জন্য একটি কার্যকর ও দক্ষ প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলা দরকার। আর এখানেই স্থানীয় সরকার ব্যবস্থার বিষয়টি সামনে চলে আসে। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতে পারে স্থানীয় সরকার। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী ও কার্যকর করে তার মাধ্যমে কৃষকের প্রয়োজনীয় সব চাহিদা পূরণ করা হলে কৃষি খাতের বিশৃঙ্খলা দূর হবে। সরকার ও কৃষকের মধ্যকার দূরত্বও অনেক কমবে।
এছাড়া ডিলারশিপের পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও ভাবা যেতে পারে। সার বিতরণের একটি সুষ্ঠু ও টেকসই প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে তোলা প্রয়োজন।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor