Sunday, February 1, 2009

চট্টগ্রাম অঞ্চলে সেচের অভাবে বোরো আবাদ হয়নি ২ লাখ হেক্টর জমিতে

০১.০২.০৯
ইত্তেফাক ।। সারোয়ার সুমন, চট্টগ্রাম অফিস ।।

পর্যাপ্ত সেচ সুবিধার অভাবে চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচ জেলায় চাষযোগ্য জমির অর্ধেকেই এবার বোরো ধানের আবাদ হয়নি। এসব জেলায় ২ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হলেও খালি পড়ে আছে আরো প্রায় ২ লাখ হেক্টর জমি। কর্ণফুলী নদীর পানিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণাক্ততাও নতুন এক সমস্যায় ফেলেছে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরকে। কারণ লবণাক্ততার কারণে বোরো চাষ হওয়া জমির মধ্যে অন্তত ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেয়া যাচ্ছে না। বিকল্প উপায়ে সেচ সুবিধা দিয়েও এসব জমিতে বোরো ফসল রক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা। বিপুল পরিমাণ জমি সেচ সুবিধার মাধ্যমে চাষের আওতায় আনা গেলে এই অঞ্চলের উৎপাদন এক বছরেই দ্বিগুণ হয়ে যাবে বলে কৃষি কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন। কিন্তু এই সেচ সুবিধা দেয়ার ব্যাপারে সরকারের নীতিনির্ধারকদের ভূমিকাই প্রধান বলে তারা মন্তব্য করেন। কারণ সেচ সুবিধা পাওয়ার জন্য দরকার প্রচুর পরিমাণ গভীর ও অগভীর নলকূপ এবং পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ ও সুলভ মূল্যে ডিজেল। আর এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে। খাল খনন কিংবা এসব জমির পাশে বিশাল জলাধার তৈরির মাধ্যমেও সেচ সুবিধা নিশ্চিত করা যেতে পারে বলে জানান চট্টগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক।

চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কক্সবাজার, ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ আবুল কালাম আযাদ বলেন, বোরো আবাদের প্রধান শর্তই হচ্ছে পর্যাপ্ত সেচ সুবিধা থাকা। বিভিন্ন কারণে অনেক চাষযোগ্য জমিতে এই সুবিধা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। কিন্তু এটি সম্ভব হলে বোরো চাষের জমির পরিমাণ বাড়বে কয়েকগুণ। কর্ণফুলী নদীর পানিতে লবণাক্ততা বাড়াকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া, আনোয়ারা ও বোয়ালখালীর বিস্তীর্ণ অংশের বোরো ফসল এবারে নষ্ট হবে এই লবণাক্ততায়। শুধু বোরো নয়, এই ক্ষতি হবে আরো দীর্ঘমেয়াদী। কারণ লবণাক্ত মাটিতে অন্য কোন ফসলও আর সহজে উৎপাদন করা যাবে না। তাই লবণাক্ত মাটিতে হয় এমন জাতের ধানের বীজ পাঠাতে ঢাকায় চিঠি পাঠিয়েছি আমরা।

বিদ্যুৎ চালিত সেচযন্ত্রের সংখ্যা এত কম থাকা প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম জেলার উপ-পরিচালক আনিসুর রহমান বলেন, বোরো আবাদের জন্য বিদ্যুৎ চালিত সব সেচযন্ত্র ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে পুরোদমে চালু হবে। এখন চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাচ্ছে কি-না জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, এখনো চাহিদা কম থাকায় সমস্যাটা ব্যাপক হচ্ছে না। তবে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ভবিষ্যতের নিশ্চয়তা দিতে না পারায় কিছুটা উদ্বিগ্ন আমরা। কারণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাত্রা দিন দিন কমছে বলে তারা জানিয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচ উপজেলায় চাষযোগ্য পতিত জমি আছে ২ লাখ ১ হাজার ২৩৩ হেক্টর। আমন ধান হলেও পর্যাপ্ত সেচ সুবিধা দিতে না পারায় বোরোর আবাদ করা যায়নি এসব জমিতে। এর মধ্যে চট্টগ্রামে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৩ হাজার ৫ হেক্টর, নোয়াখালীতে ৫৯ হাজার ২০০ হেক্টর, ফেনীতে ২৮ হাজার ৭৫০ হেক্টর, কক্সবাজারে ৫ হাজার ৬০৮ হেক্টর ও লক্ষ্মীপুরে ৪ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমি রয়েছে। উল্লেখ্য, শিল্প-কারখানা ও ইটভাটাসহ বিভিন্ন কারণে এই ৫ উপজেলায় ইতিমধ্যে স্থায়ীভাবে পতিত হয়েছে ৪০ হাজার ২৩ হেক্টর জমি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাঁচ জেলায় এবারে বোরো আবাদ হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার ৫৬৯ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ৪৮ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড এবং ১ লাখ ৮১ হাজার ১৬৯ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল ধান (উফশী) চাষ হয়েছে। চাষ হওয়া এসব জমির ফসল ঠিক রাখতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১০ হাজার ১১১টি গভীর, অগভীর নলকূপ এবং এলএলপির (লো লিফট প্ল্যান্ট) মাধ্যমে সেচ কার্যক্রম পরিচালনা করবে। বিদ্যুৎ চালিত এসব সেচযন্ত্রের মধ্যে ১৫২টি গভীর, ৭ হাজার ৯২৯টি অগভীর ও ২ হাজার ৩০টি এলএলপি প্ল্যান্ট রয়েছে। তবে বর্তমানে বিদ্যুৎ চালিত সচল সেচযন্ত্র আছে মাত্র ৩৯০টি। এর মধ্যে ১০টি গভীর, ২৭০টি অগভীর নলকূপ ও ১১০টি এলএলপি প্লান্ট।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor