Friday, November 14, 2008

কৃষকের স্বার্থে কৃষিপণ্যের আমদানি কমাইতে হইবে

১৪.১১.০৮
ইত্তেফাক ।। সম্পাদকীয়

ইত্তেফাকের খবরে প্রকাশ, চাহিদা মিটাইতে ভারত হইতে আমদানি করা হইতেছে কাঁচা মরিচ। আমাদের খুলনা প্রতিনিধির বরাত দিয়া বলা হইয়াছে যে, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ৯০ শতাংশ মরিচই এখন ভারতীয়। প্রতিদিন যশোরের বেনাপোল ও সাতক্ষীরার ভোমরা সীমান্ত দিয়া ৫ শত হইতে ৬ শত মণ কাঁচা মরিচ আমদানি হইতেছে। এভাবে ২০০০ ও ২০০৪ সালেও দেশের সংকট মিটাইতে ভারত হইতে কাঁচা মরিচ আমদানি করিতে হইয়াছিল।

কাঁচা মরিচ আমদানির খবর নিছক একটি খবর নহে। ইহা দ্বারা কৃষিপ্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও কৃষিপণ্যের আমদানি নির্ভরতার বিষয়টি খোলাসা হইয়া পড়ে। সামান্য মরিচ উৎপাদনেই যদি স্বনির্ভরতা না আসে, তাহা হইলে আমরা সামগ্রিকভাবে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হইব কিভাবে? ব্যবসায়িগণ বলিতেছেন, এই মুহূর্তে কাঁচা মরিচ আমদানি না করা হইলে বাজারে ইহার দাম কেজিপ্রতি দেড়শত-দুইশত টাকা ছাড়াইয়া যাইত। আমদানির কারণেই ইহা খুচরা বাজারে ৭৫/৮০ টাকায় পাওয়া যাইতেছে। বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে কাঁচা মরিচ গাছের ক্ষতি হওয়ায় এই সংকট তীব্র হইয়াছে। যে অজুহাতই প্রদর্শন করা হউক সারাদেশে কাঁচা মরিচের যে যথেষ্ট উৎপাদন ঘাটতি রহিয়াছে তাহা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। প্রতি বৎসর রমজান মাসের সময় ইহা ভাল মতই টের পাওয়া যায়। শুধু কাঁচা মরিচ নয়, চাল, ডাল, তেল, গম, পেঁয়াজ ইত্যাদিসহ অনেক খাদ্যশস্য ও খাদ্যপণ্য আমাদেরকে এখনও আমদানি করিতে হয়।

লোকসংখ্যা বৃদ্ধি, আবাদি জমির পরিমাণ হ্রাস ও কৃষি খাতকে অগ্রাধিকার না দেওয়ার কারণে প্রতি বৎসর খাদ্য ঘাটতি দেখা দিয়াছে। ইহার সহিত ফি বৎসর প্রাকৃতিক দুর্যোগও খাদ্য ঘাটতি সৃষ্টিতে একটা বড় ফ্যাক্টর হিসাবে কাজ করে। উচ্চ ফলনশীল ধান ও অন্যান্য শস্য উদ্ভাবনের পর ঘাটতি অনেকটা কাটিয়া যাইতে শুরু করিয়াছে। যদিও এখনও বিপুল পরিমাণ খাদ্যশস্য আমদানি করিতে হইতেছে। কৃষি ব্যবস্থাপনা উন্নত করিয়া ও উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে আমাদের সর্বাগ্রে খাদ্য নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করিতে হইবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র অনুযায়ী গত অর্থ বৎসরে (২০০৭-০৮) বীজ ও অপচয় বাদ দেওয়ার পর নীট খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ কোটি ৯১ লক্ষ ৮৬ হাজার ৯৬০ টন। কিন্তু কী পরিমাণ ঘাটতি ছিল তাহার হিসাব এখনও চূড়ান্ত করা হয় নাই। তবে চলতি অর্থ বৎসরে ৩ কোটি ৮৯ লক্ষ ৪৫ হাজার ৫ শত টন খাদ্যশস্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হইয়াছে।

আমাদের খাদ্যশস্য ও কৃষিপণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে অবশ্যই স্বয়ংসম্পূর্ণ হইতে হইবে। আমদানি-নির্ভরতা ধীরে ধীরে শূন্যের কোঠায় নামাইয়া আনিতে হইবে। সুখবর হইল, সরকার কৃষিখাতকে আরও উজ্জীবিত করার জন্য নানা প্রণোদনাসূচক কর্মসূচি গ্রহণ করিয়াছে। ইহার মধ্যে সুষ্ঠুভাবে কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যে কৃষক সমবায় সমিতি গঠনের উদ্যোগ অন্যতম। কৃষকগণ এতদিন মহাজনদের নিকট হইতে ঋণ কিংবা দাদন সংগ্রহ করিয়া কেবল সর্বস্বান্তই হইয়াছে। এই পরিস্থিতির চির অবসানের লক্ষ্যে বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উচিত কৃষিখাতে বেশি করিয়া বিনিয়োগ করা। কৃষিখাত যদি প্রাণ হয় এবং দেশের ৬০ ভাগ লোক ইহার উপর নির্ভরশীল হয়, তবে অবশ্যই ইহা অধিক মনোযোগের দাবি রাখে। শুধু সমবায় সমিতি কেন, আমরা মনে করি কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নিজস্ব রাজনৈতিক দল বা প্লাটফরমও থাকা বাঞ্ছনীয়। শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের কৃষকপ্রজা পার্টির পর আর কোন স্বতন্ত্র দল গঠিত হয় নাই বলিলেই চলে। বর্তমানে প্রায় সব রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন হিসাবে কৃষক সংগঠন আছে বটে তবে তাহা না থাকারই শামিল। প্রকৃতপক্ষে রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তিক এসব সংগঠন কৃষকদের দাবি-দাওয়া তুলিয়া ধরিবার ক্ষেত্রে সোচ্চার নহে। আমরা আসন্ন পার্লামেন্টে কৃষক সমাজের যোগ্য প্রতিনিধিদের সরব উপস্থিতিও নিশ্চিত দেখিতে চাই। কৃষকদের সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের বিষয়টি সবাইকে গভীরভাবে ভাবিয়া দেখিতে হইবে।

আমাদের দেশে প্রথমবারের মতো পালিত হইতে যাইতেছে জাতীয় কৃষিদিবস। ইহার মূল প্রতিপাদ্য হইতেছে ‘কৃষিই সমৃদ্ধি’। কিন্তু কৃষিপণ্য আমদানি-নির্ভর থাকিয়া কৃষির সমৃদ্ধি বোঝানো কষ্টকর। অতএব, কৃষি অর্থনীতির দেশে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সর্বপ্রকার সমন্বিত উদ্যোগ একান্ত জরুরি।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor