Sunday, November 16, 2008

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষকদের নিরাপত্তা জরুরি

৫.১১.০৮
।। ইত্তেফাক রিপোর্ট ।।

‘বাংলাদেশের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা: আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তাগণ সমবায় ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থা চালুর পক্ষে মত দিয়েছেন। তারা বলেন, কৃষি নির্ভর দেশের কৃষকসমাজ নানা বঞ্চনা ও অবহেলার পরও জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রেখে চলেছেন। তারা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষকের নিরাপত্তা বিধানের ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ডিপ্লোমা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন ( ডিকেআই) এ সেমিনারের আয়োজন করে।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের ( টিআইবি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ। সংগঠনের সভাপতি মোঃ জহির উদ্দিন মবুর সভাপতিত্বে সেমিনারে দৈনিক ইত্তেফাকের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ তোশারফ আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. এস এম ইমামুল হক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ড. মোঃ নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক সদরুল আমিন, সার্ক নিউজ লেটারের সম্পাদক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিসুর রহমান, সংগঠনের মহাসচিব সরকার মোঃ আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ সাংবাদিক সংস্থার চেয়ারম্যান আলতাব হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কৃষি বিশেষজ্ঞ ড. এম এ নাছির।

কৃষকদের নানা সমস্যার চিত্র তুলে ধরে অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদ বলেন, কৃষকরা খাদ্যপণ্য উৎপাদন করলেও অনেক সময় তারা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত। একদিকে কৃষি উপকরণ সরবরাহ করতে ব্যর্থতা অন্যদিকে উৎপাদিত পণ্যের প্রকৃত মূল্য প্রাপ্তিতে ব্যর্থতা কৃষকদের সমস্যাকে গভীর করে তুলেছে। মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছে কৃষকরা হেরে যাচ্ছেন। অসহায় কৃষকরা ক্ষুদ্রঋণ থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন এমন অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ঋণ কৃষকদেরই বেশি দরকার। কিন্তু ব্যাংক থেকে কৃষকরা ক্ষুদ্র ঋণ পান না। কৃষকদের সমস্যা লাঘবে তিনি সমবায় ভিত্তিক কৃষি ব্যবস্থা চালুর পক্ষে মত দেন। তিনি বলেন, কৃষি উন্নয়নে আমরা বিদেশী জ্ঞান কাজে লাগানোর চেষ্টা করছি। অথচ পরীক্ষিত দেশীয় জ্ঞান-প্রযুক্তিকে কাজে লাগাতে আগ্রহ দেখাচ্ছি না। তিনি বলেন, কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সেচের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে হবে। ভূমি ব্যবস্থাপনায় নানা অনিয়মের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের ভূমি অফিস বেশি দুর্নীতিগ্রস্থ। একই জমি কয়েকবার বিক্রি হচ্ছে। ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন নিরক্ষর কৃষকরা।

সৈয়দ তোশারফ আলী বলেন, কৃষক সমাজকে অবিভাজ্যভাবে দেখা ঠিক হবে না। ধনী কৃষকের সার পেতে, ঋণ পেতে, ফসলের দাম পেতে কোন সমস্যায় পড়তে হয় না। কিন্তু দরিদ্র কৃষকদের সমস্যার অন্ত নেই। তারা তাদের ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে, বিয়ে দিতে গিয়ে, প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকে তারা সর্বস্বান্ত হন। দুর্দিনে তাদের সহায় সম্পত্তি হাতিয়ে নেয় প্রভাবশালী শ্রেণীর লোকেরা। থানা কিংবা স্থানীয় প্রশাসনের কোন সহায়তা গরীব কৃষকরা পায় না। কৃষককে জাতির মেরুদন্ড বলা হয় কিন্তু প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে তাদের মেরুদন্ড ভাঙ্গার কাজই করা হয়। কৃষক তথা উৎপাদক শ্রেণীর প্রতি সম্মানজনক দৃষ্টিভঙ্গি ছাড়া খাদ্য নিরাপত্তা এবং কৃষির বৈপ্লবিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। আমাদের হত দরিদ্র অবস্থায় থাকার কোন যুক্তি নেই। সমুদ্রে তলিয়ে যাবার কথা বলে আমাদের নিরাশ করা হচ্ছে। আমরা তলিয়ে যাবার জন্য, ব্যর্থ হবার জন্য কিংবা দরিদ্রদের বেষ্টনীর মধ্যে আবদ্ধ থাকার জন্য স্বাধীন হইনি।

আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে দেশের কৃষকরা ফসলের প্রকৃত মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমদের জমি উর্বর। এ জমি কাজে লাগিয়ে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, কৃষকরা সঠিক সময়ে সার, বীজ পায় না এটা কৃষি উৎপাদনে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি কৃষির মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাবার পক্ষে মত দেন। মূল প্রবন্ধে ড. এম এ নাছির বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেশাগত-কারিগরি দক্ষতার উন্নয়ন, কৃষি কার্যক্রম বাণিজ্য ভিত্তিক ও কৃষক কল্যাণমুখী হওয়া প্রয়োজন । তিনি কৃষি ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor