Friday, November 28, 2008

প্রতি মণের উৎপাদন খরচ ৭৭৬ টাকা বাজারে বিত্রিক্র হচ্ছে সাড়ে পাঁচ শ’

২৩.১১.০৮
সমকাল ।। মোহন আখন্দ, বগুড়া ব্যুরো

‘ইবার (এবার) ধানের যে অবস্ট’া... যারা লিজের (নিজের) জমিত আবাদ করিচে তারা কোনোমতে চলবার পারবি। কিন্তু যারা জমি আদি (বর্গা) লিয়ে (নিয়ে) ধান লাগাছিল তারকেরে (তাদের) খরচের ট্যাকাই উটপি (উঠবে) না’। সদ্য ঘরে তোলা আমন ধানের ফলন নিয়ে এমন মšøব্য কৃষক আফজাল হোসেনের।
ফসফেটিক সারের অভাবজনিত অপু®িদ্ব এবং পোকার আত্রক্রমণে এবার বগুড়ার যে অঞ্চলে আমন ফসলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সেই কাহালু উপজেলার শিমুলিয়া গ্রামের বাসিন্দা তিনি। কাহালুসহ জেলার পশ্চিমাঞ্চলে নভেল্ফ^রের ™ি^তীয় সপ্টøাহ থেকেই আমন কাটা শুরু হয়েছে। স্ট’ানীয় কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী ইতিমধ্যে ২৫ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। কৃষক আফজাল জানিয়েছেন, ধান জন্ম নেওয়ার মুহহৃর্তে গাছগুলো নানা রোগে আত্রক্রাšø হয়ে পড়ায় ফলন অর্ধেকে নেমে এসেছে। অন্য বছরগুলোতে যেখানে বিঘাপ্রতি (৩৩ শতাংশ জমি) ১০ থেকে ১২ মণ করে ফলন এসেছে সেখানে এখন ৬ মণের বেশি ধান মিলছে না। তার মতে, আবাদের শুরুতে সব ধরনের সারের দাম কয়েকগুণ বাড়ানোর কারণে উৎপাদন খরচ যে হারে বেড়েছে সেই হারে ধানের দাম বাড়েনি। তার ওপর ফলন কম হওয়ায় কৃষক বিশেষত যারা বর্গাচাষী তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।
আমন আবাদের লাভ-লোকসান সল্ফক্সর্কে কৃষক আফজালের দেওয়া বক্তব্যের যথার্থতা খুঁজে পাওয়া গেছে কৃষি বিভাগের হিসাবেও। কৃষি সল্ফপ্রসারণ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী সব ধরনের সারের মহৃল্যবৃ™িব্দর কারণে এক বছরের ব্যবধানে প্রতিকেজি আমন ধানের উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৫ টাকা ৬১ পয়সা। গত বছর প্রতি কেজি আমন ধানের উৎপাদন খরচ ছিল ১৩ টাকা ৮০ পয়সা আর এবার সল্ফ¢াব্য খরচ ধরা হয়েছে ১৯ টাকা ৪১ পয়সা।
কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী প্রতি কেজিতে উৎপাদন খরচ ৫ টাকা ৬১ পয়সা বৃ™িব্দর কারণে গত বছরের তুলনায় এবার ধানের মহৃল্য প্রতি মণে (৪০ কেজির কিছু কম) ২২৪ টাকা ৪০ পয়সা বাড়ার কথা। অর্থাৎ ১৯ টাকা ৪১ পয়সা কেজি হিসেবে প্রতিমণ ধানের মহৃল্য ৭৭৬ টাকা ৪০ পয়সা হওয়ার কথা। কিন্তু গত কয়েক দিনের হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, গেল আমন মৌসুমের তুলনায় এবার ধানের মহৃল্য ওই হারে বাড়েনি। বাজারভেদে ৫৫০ থেকে ৫৭০ টাকায় বিত্রিক্র হচ্ছে। এবার যে এলাকায় ফলন তুলনামহৃলক ভালো হয়েছে তার মধ্যে পশ্চিম বগুড়ার দুপচাঁচিয়া অন্যতম। ওই এলাকায় কাহালুর চেয়ে গড়ে ২ মণ করে বেশি অর্থাৎ বিঘাপ্রতি ৮ মণ করে ফলন এসেছে।
কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী ৮ মণ ধানের উৎপাদন খরচ দাঁড়ায় ৬ হাজার ২১১ টাকা ২০ পয়সা। কিন্তু বর্তমান বাজারে প্রতি মণ ধানের সর্বোচ্চ মহৃল্য ৫৭০ টাকা হিসাবে ওই ৮ মণের মহৃল্য দাঁড়ায় ৪ হাজার ৫৬০ টাকা। অর্থাৎ কৃষককে প্রতি বিঘায় ১ হাজার ৬৫১ টাকা ২০ পয়সা লোকসান গুনতে হচ্ছে।
দুপচাঁচিয়ার জিয়ানগর ইউনিয়নের খিদিরপাড়া গ্রামের কৃষক হামিদুর রহমান ৩ বিঘা জমিতে আমন আবাদের কথা জানিয়ে বলেন, সারের মহৃল্যবৃ™িব্দর পাশাপাশি ফলন গতবারের তুলনায় কম হওয়ায় বর্গাচাষীরা লোকসানের মুখে পড়েছে। তিনি জানান, জমিগুলো নিজের হওয়ায় ভাড়া বাবদ প্রতি বিঘায় ৩ হাজার করে বাড়তি ১২ হাজার টাকা গুনতে হয়নি বলে কোনোরকমে তার রক্ষা হয়েছে। তার মতে, যারা বর্গাচাষী তাদের প্রত্যেককেই লোকসান দিতে হয়েছে।
কৃষি বিভাগ বীজ থেকে শুরু করে ধান কাটা পর্যšø যে ৯টি খাতে এক বছরে খরচের ব্যবধান তুলে ধরেছে তাতে দেখা গেছে সারের ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি খরচ বেড়েছে। গত মৌসুমে প্রতি কেজি ইউরিয়া ৬ টাকা দরে বিত্রিক্র হলেও এবার সরকারিভাবে তা শতভাগ বৃ™িব্দ করায় ১২ টাকায় গিয়ে ঠেকে। একইভাবে ট্রিপল সুপার ফসফেটের (টিএসপি) মহৃল্য ২৮ টাকা থেকে ১৬০ শতাংশ বেড়ে ৭৩ টাকায় এবং ২৪ টাকা কেজির মিউরেট অব পটাশ (এমওপি) ৪৫ টাকায় কিনতে হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতি বছর ১ জুলাই আমন মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই জুনের মাঝামাঝি থেকে কৃষক জমিতে ফসফেটিক সার প্রয়োগ করে থাকেন। কিন্তু এবার বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলের কোনো জেলাতেই নির্ধারিত সময়ে তো নয়ই; এমনকি এক মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও কৃষক চাহিদা অনুযায়ী টিএসপি ও এমওপি সার মেলাতে পারেনি। সময়মতো ওই দুটি সারের যে বরাদ্দ মেলেনি তা কৃষি কর্মকর্তারা স্ট^ীকারও করেছেন। তবে ‘চাকরি বাঁচানোর’ কথা বলে কোনো কর্মকর্তাই বরাদ্দ ও উত্তোলন পরিস্টি’তির পরিসংখ্যান মিডিয়ার কাছে প্রকাশ করতে রাজি হননি।
মাঠ পর্যায়ে কৃষকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নির্ধারিত সময়ে টিএসপি ও এমপি না পাওয়ার কারণে কৃষক ওই দুটি সার ছাড়াই আবাদে নেমে পড়ে। পরে অনেক দেরিতে সারগুলো ডিলারদের মাধ্যমে বাজারে ছাড়া হলেও দাম গত মৌসুমের তুলনায় ™ি^গুণের বেশি হওয়ায় হিমশিম অবস্ট’ার কারণে কৃষক তা কেনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উচ্চপদস্ট’ এক কৃষি কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, টিএসপি ও এমওপি সারের ঘাটতির কারণে এবার আমন আবাদে কৃষক পুরোপুরি ইউরিয়া সারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। ফলে ধান গাছ তর তর করে বেড়ে উঠলেও টিএসপি এবং এমওপি সারের অভাবজনিত কারণে অপু®িদ্বতে আত্রক্রাšø বিবর্ণ হতে শুরু করে। গাছে ধান জন্ম নেওয়ার মুহহৃর্তে তা আরো প্রকট আকার ধারণ করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় সবুজ ধান গাছ লাল-হলুদ রঙ ধারণ করার পাশাপাশি অঞ্চলভেদে ধানক্ষেতে মাজরা ও বাদামিসহ নানা ধরনের পোকার উপদ্রবও বেড়ে যায়। বগুড়ার কৃষি সল্ফপ্রসারণ কর্মকর্তা রুস্টøম আলী অবশ্য ধানের ফলন কমে যাওয়ার কথা অস্ট^ীকার করে সমকালকে বলেন, ‘এখন পর্যšø যে ২৫ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে তাতে স্ট^াভাবিক ফলন পাওয়া গেছে’।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor