Friday, November 28, 2008

সার, তেল, ওষুধে আরও বেশি ভর্তুকি দিতে হবে

২৩.১১.০৮
ইত্তেফাক ।। মুনসী কাওছার উদ্দিন

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এ দেশের অধিকাংশ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে কৃষিকাজকে অবলম্বন করে। অথচ কৃষিকে অবহেলা করার কারণে দিন দিন আমাদের খাদ্য সমস্যার সন্মুখীন হতে হচ্ছে। কৃষিকে অবহেলা বলছি এই কারণে যে, আমাদের দেশে উৎপাদন পদ্ধতি এখনও মান্ধাতা আমলের রয়ে গেছে। উন্নত বিশ্বের সাথে আমরা তাল মিলিয়ে চলতে পারছি না। বাংলাদেশের কৃষি খাতকে অধিক উন্নতির জন্য কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মী ছড়িয়ে আছে সারা দেশের প্রত্যš- অঞ্চলে। কিন্তু তারা তাদের দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হলেও যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে না নানা কারণে। কেউ কেউ অবহেলা করে দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করে আবার কেউ আছে নিবেদিত প্রাণ। আমাদের অধিকাংশ কৃষক অশিক্ষিত হওয়ার কারণে তারা ওষুধ, সারের নানা অপকারিতা সম্পর্কে অবগত না হয়ে মাঠে কাজ করে। ওষুধের বিষক্রিয়ায় কৃষকের চর্মরোগ, ফুসফুসে ব্যথা, শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। ওষুধ প্রয়োগের নিয়ম কানুন অনেকেই জানে না। এ ব্যাপারে উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলেও অনেকক্ষেত্রে মূল কৃষক সে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পায় না বা থাকে না।

আমাদের দেশের আবাদি জমি অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক উর্বর। এই উর্বর জমির যথাযথ ব্যবহার করতে পারি তাহলে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা মোটেও আমাদের পক্ষে কঠিন কাজ হবে না। তবে এ ব্যাপারে সরকারের সর্বোচ্চ বরাদ্দ রাখতে হবে কৃষি খাতে। তৎপর হতে হবে সব মহলকে।

দেশে আজ সার, ওষুধ, ডিজেলের দাম বেশি। ভাল ফলন পেতে হলে এই তিনটি জিনিস খুব দরকারি। অথচ এগুলো এক রকম কৃষকের নাগালের বাইরে। মৌসুমের সময় অনেক কৃষক গ্রামের মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে অথবা ব্যাংক থেকে নানা প্রতিকূল অবস্থা পার হয়ে ঋণ নিয়ে ফসল ফলায়। কখনও দেখা যায় অতিবৃষ্টি, খরা কিংবা সিডরের মত দুর্যোগ এসে ক্ষতি করে ফসল। তখন কৃষকের ভিটেমাটিটুকু চলে যায় দেনার দায়ে। কৃষক হয় পথের ভিখারী। দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারের নিতে হবে নানা বা¯-বমুখি পদক্ষেপ। সরকারের কৃষি খাতে দিতে হবে ভর্তুকি। না হলে দেশ খাদ্য সংকটের মুখোমুখি হবে।

ইদানিং জৈব সার নিয়ে নানা কথাবার্তা চলছে। রাসায়নিক সার জমিতে ব্যবহারের ফলে দিন দিন জমির উর্বরাশক্তি হারাচ্ছে। এমন একদিন আসবে জমিতে তখন বেশি সার দিলেও ফসল ফলবে না। ফসলবান্ধক জৈব সার আমাদের উৎপাদন করে জমিতে ব্যবহার করতে হবে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং এর লাইসেন্স দিতে হবে কৃষককে কোনরকম ঝুটঝামেলা ছাড়া। আমাদের অশিক্ষিত কৃষকদের এ কাজে সাহায্য করবে উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা। কোন পদ্ধতিতে জৈব সার তৈরি করতে হবে তা শিখিয়ে দেবে কৃষি কর্মকর্তারা। কৃষক তার নিজের প্রয়োজন মাফিক উৎপাদন করবে ফসলবান্ধব জৈব সার। এতে যেমন আর্থিক সাশ্রয় হবে তেমনি জমির উর্বরা শক্তি অক্ষুন্ন থাকবে। অন্যদিকে বালাইদমন যদি প্রাকৃতিকভাবে করা যায় তাহলে ওষুধ খরচটাও বেঁচে যাবে। যেমন সেক্সফেরোমনের (জাদুর ফাঁদ) মাধ্যমে মনিরামপুরের কৃষকরা বালাইদমন করে সাফল্য অর্জন করেছে। এমনি করে আমাদের কৃষি বিজ্ঞানীদের নতুন নতুন প্রাকৃতিক উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে দমন করতে হবে রোগবালাই।

ডিজেলে সরকারকে ভর্তুকি দিয়ে কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। কেননা সেচ ব্যবস্থা আমাদের ফসল উৎপাদনের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত।

সারের অগ্নিমূল্য আজ ভাবিয়ে তুলছে কৃষকদের। অনেক কৃষকই প্রয়োজন মাফিক সার সংগ্রহ করতে পারছে না অর্থনৈতিক কারণে। সার সংগ্রহ করতে না পারার ফলে জমিতে সারের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। ফলে উৎপাদন তার কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারছে না। খবরের কাগজের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই সারের অগ্নিমূল্যের কারণে বিভিন্ন জেলাতে মিছিল মিটিং হয়েছে এবং হচ্ছে।

১০০ দিনের সরকারের কর্মসৃজন কর্মসূচির প্রশংসা না করে পারছি না। তবে জৈব সার গ্রামের সাধারণ মানুষ দিয়ে যেভাবে তৈরি করা হচ্ছে তাতে সবকিছু পরিমাণ মত না থাকলে হিতে বিপরীত হতে পারে। কর্তৃপক্ষের এদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তারপরও একটা কথা থেকে যায়, ১০০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্প সঠিকভাবে বা¯-বায়িত হচ্ছে তা বলা যাবে না। অনেক জায়গা থেকে নানা রকমের দুর্নীতির কথা শোনা যাচ্ছে। তারপরও সরকারকে ধন্যবাদ এমন একটা প্রকল্প হাতে নেওয়ার জন্য।

১ অগ্রহায়ণকে সরকার প্রথম কৃষি দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি সারা দেশে পালিত হয়েছে এই দিবসটি। গণমাধ্যম বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করেছে এই দিবসটি কেন্দ্র করে। বিভিন্ন জেলাতে কৃষরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উদযাপন করেছে দিনটিকে। এতদিন কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে কৃষকের কোন বিশেষ দিন ছিল না। সরকারের এই শুভবুদ্ধিকে সাধুবাদ জানাই।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor