Saturday, November 22, 2008

কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ভর্তুকি বাড়ানোর বিকল্প নেই

২১.১১.০৮
যায়যায়দিন ।। সম্পাদকীয়-উপসম্পাদকীয়

খাদ্য সঙ্কটে থাকা বাংলাদেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। আর কৃষি উৎপাদন বাড়াতে চাই এ খাতে পর্যাপ্ত ভর্তুকি এবং সহজ শর্তে ঋণ। পরিস্থিতির দাবি যখন এই তখন বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে ঠিক তার উল্টো। দেশের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এ খাতটিতে বছর বছর ভর্তুকি কমানো হচ্ছে এবং বাড়ানো হচ্ছে কৃষিঋণের সুদ। এ কাজগুলো সরকার করে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মতো সংস্থার পরামর্শে।
যায়যায়দিনের এক রিপোর্টে জানা যায়, বিশ্ববাণিজ্য সংস্থার শর্ত অনুযায়ী, কোনো দেশের কৃষিতে সরকারের ১০ ভাগ ভর্তুকি দেয়ার সুযোগ থাকলেও আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের চাপে তিন বছর ধরে কৃষিতে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে মাত্র ০.৩ ভাগ করে। চলতি বছরে যা ০.২ ভাগে নেমে এসেছে। গত বছরের মূল বাজেটে কৃষির জন্য বরাদ্দ ছিল ৫ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে আনা হয় ৪ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকায়। দেশের মোট জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ কৃষি খাতে নিয়োজিত। তাছাড়া জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ২১ দশমিক ১১ শতাংশ হওয়ার পরও বিশ্বব্যাংকের নীতি অনুসরণ করতে গিয়ে এ খাতে ভর্তুকি কমানো হচ্ছে আবার বছর শেষেও মূল বরাদ্দ থেকে ছেঁটে ফেলা হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফের পরামর্শে সরকার বছরের পর বছর কৃষি সেক্টর থেকে ভর্তুকির পরিমাণ কমিয়ে আনলেও তাদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। কারণ তারা চায় কৃষি খাতে ভর্তুকি পুরোপুরি প্রত্যাহার। যে দেশে খাদ্য সঙ্কট চলছে সে দেশকে যদি কৃষি খাতে ভর্তুকি বন্ধ করে দেয়ার পরামর্শ দেয়া হয় তাহলে বুঝতে বাকি থাকার কথা নয় এ পরামর্শ কৃষি খাতকে শক্তিশালী করার জন্য নয়, দেয়া হচ্ছে ধ্বংস করার জন্য।
বাংলাদেশ সরকারকে বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ পরামর্শ নতুন দিচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল মুদ্রা সঙ্কোচন নীতি গ্রহণ করার জন্য। তাদের পরামর্শে মুদ্রা সঙ্কোচন নীতি অনুসরণ করে দেশের মূল্যস্ফীতি তো কমেইনি বরং বেড়েছে বহুগুণে। এরপর ভুল পরামর্শের দায়ভার তারা নিজেরা না নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছিল। তাদের পরামর্শ মানতে গিয়ে আফ্রিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। ধ্বংস হয়েছে তাদের কৃষি ব্যবস্থা। আর সেসব পরামর্শই এখন মানার জন্য বাংলাদেশকে চাপ দেয়া হচ্ছে।
দেশের সরকার যাতে তাদের কথা শুনে সে ব্যবস্থাও করে রাখা হচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তার কথা বলে বিভিন্ন প্রকল্পের নামে বাংলাদেশকে ঋণের জালে আরো ভালোভাবে বেঁধে ফেলা হচ্ছে। দেশে কোনো রাজনৈতিক সরকার না থাকায় সংস্থাগুলো চাপ দিয়ে বর্তমান সরকারের কাছ থেকে তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রকল্পগুলো পাস করিয়ে নিচ্ছে বলেও জানা যাচ্ছে। এতে বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থায় সংস্থা দুটোর নিয়ন্ত্রণ আরো জোরদার হচ্ছে।
কৃষিতে ভর্তুকি কমতে থাকলে বাংলাদেশ কখনই খাদ্য সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত যখন বছর বছর কৃষিতে ভর্তুকি বাড়াচ্ছে সেখানে আমাদের কমানো ভালো লক্ষণ নয়। দেশের কৃষি খাতকে বাঁচাতে ভর্তুকি এবং কম সুদে ঋণ প্রদানের বিকল্প নেই। আমরা আশা করবো, কোনো সংস্থার পরামর্শের কাছে নতিস্বীকার করে নয়, দেশ বাঁচাতে দেশের মানুষের পরামর্শেই কৃষি খাতের ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor