Wednesday, November 19, 2008

আসন্ন বোরো মৌসুমে পর্যাপ্ত সেচ-বীজের ব্যবস্থা করুন

১৭.১১.০৮
ইত্তেফাক ।। সম্পাদকীয়

পর্যাপ্ত সেচ-বীজের ব্যবস্থা না থাকায় আসন্ন বোরো উৎপাদন ব্যাহত হইবে বলিয়া আশংকা করা হইতেছে। দেশে ডিসেম্বর-জানুয়ারি হইতে শুরু হইবে বোরো মৌসুম এবং মার্চ-এপ্রিল নাগাদ অব্যাহত থাকিবে। সেচনির্ভর এ মৌসুমে সারাদেশে ব্যবহৃত হয় ১৩ লক্ষ অগভীর নলকূপ। কিন্তু বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন বা বিএডিসির এক সাম্প্রতিক জরিপে বলা হইয়াছে যে, বেসরকারি মালিকানায় ব্যবহৃত তিন লক্ষ নলকূপের কার্যকারিতা হ্রাস পাইয়াছে বহুগুণ। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামিয়া যাওয়ায় নলকূপগুলি যে কোন সময় অকেজো হইয়া পড়িতে পারে। ইহাতে এ বৎসর ধানের উৎপাদন ৪০ লক্ষ টন কমিয়া যাইবে। পাবনা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, কুষ্টিয়া, জয়পুরহাট, বগুড়া, রাজবাড়ী, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নেত্রকোনা, ঝিনাইদহ ও চাঁদপুরে এই সমস্যা প্রকট হইয়া দেখা দিতে পারে।

বোরো চাষ ব্যবস্থাপনায় সেচের গুরুত্ব সর্বাধিক। এ সময় ৯৫ শতাংশ জমি গভীর ও অগভীর নলকূপের ওপর নির্ভরশীল। নলকূপগুলি সচল রাখিবার জন্য প্রয়োজন বিদ্যুৎ কিংবা ডিজেল। এবার গ্যাস সংকটের দরুন বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পাইতে পারে। তখন এ মৌসুমে ডিজেলের চাহিদা বাড়িবে হু হু করিয়া। প্রায় ১৪/১৫ হাজার মেট্রিক টন ডিজেল চাহিদার একটি বড় অংশ বিক্রি হয় উত্তরাঞ্চলে। সাধারণত প্রতি বৎসর নৌপথ ও রেলপথেই বেশিরভাগ ডিজেল পরিবহন করা হয়। কিন্তু আমাদের সহযোগী একটি দৈনিক রেলওয়ের সূত্রে আগাম খবর দিয়া বলিয়াছে যে, ইঞ্জিন সংকটের কারণে এবার রেলপথে জ্বালানি তেল পরিবহনে বিঘœ সৃষ্টি হইতে পারে। প্রতিদিন যতগুলি ইঞ্জিনের দরকার হয় সরবরাহ আছে তাহার অর্ধেকেরও কম। সুতরাং পুরাদমে বোরো মৌসুম শুরু হইয়া গেলে রেলইঞ্জিন ও ট্যাংক ওয়াগনের সংখ্যা বৃদ্ধি করিতে হইবে। প্রয়োজনে গুডস ট্রেনের ইঞ্জিন প্রত্যাহার করিয়া ইহা ট্যাংক ওয়াগনবাহী ট্রেনে সংযোজিত করিতে হইবে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বা বিপিসি যাহাতে পতেঙ্গার মূল স্থাপনা হইতে উত্তরাঞ্চলে জ্বালানি তেল ঠিকমত পরিবহন করিতে পারে, সেজন্য পূর্ব রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের এখন হইতে কর্মপন্থা গ্রহণ করা উচিত।

আমাদের দেশে আমন ও আউশের তুলনায় বোরোর ওপর নির্ভরশীলতা গত চার-পাঁচ দশকে বহুগুণ বৃদ্ধি পাইয়াছে। ইহার কারণ বোরো উচ্চ ফলনশীল ধান। ২০০৭-০৮ অর্থ বৎসরে বোরো হইতেই দুই-তৃতীয়াংশ ধান আসিয়াছে। কিন্তু ইহার পরও বোরোর কাঙিক্ষত ফলাফল পাওয়া যাইতেছে না। গবেষণা পর্যায়ে জনপ্রিয় বিআর ২৮ ও ২৯-এর একর প্রতি ফলন সাত টন। অথচ কৃষক পর্যায়ে সাড়ে তিন হইতে চার টন উৎপাদিত হইতেছে। ইহা ভারত, থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের তুলনায় অনেক কম। কম ফলনের জন্য দায়ী উপরোক্ত সেচ-সমস্যা ও উন্নত বীজের সংকট। প্রায় ৬০ শতাংশ বোরো বীজ কৃষকদেরকে বাণিজ্যিকভাবে সংগ্রহ করিতে হয়। অনেক সময় বেশি দামে ক্রয় করিয়াও বীজের মান ভাল হয় না। নকল ও ভেজাল বীজে বাজার সয়লাব হইতে দেখা যায়। এসব সমস্যা দীর্ঘদিন ধরিয়াই বিরাজ করিতেছে। কিন্তু সমস্যার আশু সমাধান হইতেছে না। সর্বশেষ ধানের ফলন বাড়ানোর ওপর ২৫ বৎসর যাবৎ গবেষণা করিয়া কৃষি বিজ্ঞানীগণ দেখিতে পাইয়াছেন যে, ভালমত সেচ, কৃষি উপকরণ ও পরিবেশ নিশ্চিত করিতে পারিলে কেবল বোরোতেই ফি বৎসর সাত কোটি টন ধান উৎপাদন সম্ভব। গেল বৎসর উৎপাদিত এক কোটি ৮০ লাখ টনের তুলনায় ইহা অনেক বেশি। ইহাতে আর খাদ্য সংকট থাকার কথা নয়। ইতিমধ্যে হাইব্রিড ধানের নানা ক্ষতিকর দিক প্রমাণিত হওয়ায় বোরো ধানের উৎপাদন কিভাবে সাধ্যমত বৃদ্ধি করা যায় আমাদের সেদিকে অবশ্যই মনোযোগ দিতে হইবে। খাদ্য নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টির জন্য ইহা অপরিহার্য। সেক্ষেত্রে বোরো চাষ ব্যবস্থাপনায় জ্বালানি সংকট দূরীকরণ, বৃষ্টির পানির সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার ও সুলভে উন্নত বীজ সংকুলান জরুরি হইয়া পড়িয়াছে। এ ব্যাপারে সামনের দিনগুলিতে সরকারের কার্যকরি উদ্যোগ গ্রহণ যে একান্ত প্রয়োজন, তাহা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor