Wednesday, November 19, 2008

নবান্নে নতুন মাত্রা ।। দিনাজপুরের গ্রামে গ্রামে উৎসব

১৭.১১.০৮
ডেসটিনি ।। শাহিন হোসেন, দিনাজপুর

প্রতিবছরের মতো এবারো পয়লা অগ্রহায়ণ থেকে দিনাজপুর অঞ্চলের শুরু হয়েছে ঐতিহ্যবাহী নবান্ন উৎসব। উৎসবকে ঘিরে বৃহত্তর দিনাজপুরের গ্রামে গ্রামে রাত জেগে চলছে জারি ও কবি গানের পালা। নতুন চালের ভাঁপা পিঠা, পুলি ও পায়েসের সঙ্গে চারিদিকে এখন নতুন ধানের মৌ মৌ আমেজ। এ অঞ্চলে এবার আগে থেকেই শুরু হয়েছে ধান কাটা। কৃষকরা জানান বদলে গেছে প্রকৃতি, বদলে গেছে গ্রামবাংলার শস্য ক্ষেতের দৃশ্যপট। কার্তিক শেষ না হতেই বাংলার দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ সোনালী ধানে ভরে উঠেছে। শীতের হালকা বাতাসের দোলায় ধানের সোনা রঙ কিষাণ-কিষাণির বুকেও যে দোলা দিয়ে যায় তা গ্রামের ব্যস্ত উঠানে গেলে বোঝা যায়। আনন্দে ভাসছে যেন কৃষকের মুখ, ধানের গোলা।
এবার পয়লা অগ্রহায়ণের সঙ্গে যোগ হয়েছে সরকার ঘোষিত ১৫ অক্টোবরের জাতীয় কৃষিদিবস। সরকার কৃষকদের উৎসাহ দিতে উপজেলা পর্যায়ে তিনজন কৃষককে শ্রেষ্ঠ কৃষক হিসেবে পুরস্কৃত করেছে। এছাড়াও আসন্ন বোরো মৌসুমে কৃষকের উৎপাদন বাড়াতে ডিজেলে ৫৪০ কোটি টাকা ভর্তুকি দেবে সরকার। এই প্রথম কৃষকরা নিজেদের জন্য আলাদা একটি দিন নিজের মতো করে পালন করেছে। বাংলার চিরাচরিত পয়লা অগ্রহায়ণ এবং জাতীয় কৃষিদিবসে আনন্দে ভেসে ওঠে গ্রামের পর গ্রাম।
সদর উপজেলার মহিষকোটা গ্রামের ষাটোর্ধ্ব শেফালী বেগম জানান, আগের দিনের অগ্রহায়ণ আর নেই। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বৈরী আবহাওয়ার কাছে হার মানছে গ্রামবাংলার চিরায়ত প্রথা, উৎসব আমেজ। আগের দিনে অগ্রহায়ণ ছাড়া নতুন ধানের চাল খাওয়া হতো না। আর অগ্রহায়ণে প্রতিটি ঘরে ঘরে মেহমান ভরে থাকতো। রাতভর চলতো পিঠা-পায়েস বানানো, গল্পগুজব ছাড়াও বসতো পুঁথিপাঠের জমজমাট আসর। সেই সব সহজ-সরল দিনগুলো হারিয়ে গিয়ে এখন সব কিছুই কেমন যেন মেকি হয়ে গেছে। আগের দিনের সেই সহজ-সরল দিনগুলো না থাকলেও প্রতি বছরের মতো আনন্দ-উদ্দীপনা নিয়ে আমাদের মধ্যে আসে পয়লা অগ্রহায়ণ। প্রকৃতির নিয়মেই আবারো মাঠের পর মাঠ সোনালি ধানের দোলায় হেসে ওঠে কৃষক। নতুন ধানের ভাঁজে ভাঁজে স্বপ্ন বুনে চলে কিষাণির দুচোখ।
এদিকে ১০ লাখ ৭৩ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের টার্গেট নিয়ে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলার কৃষকরা আমন ধান কাটা শুরু করে দিয়েছেন। বন্যা, খরা আর পাতাপচা রোগের সঙ্গে যুদ্ধ করে কৃষকরা তাদের ফসল ঘরে তুলতে পারবেন বলে চিরিরবন্দর উপজেলার আলোকডিহি গ্রামের অভিজ্ঞ কৃষক সাইদুর রহমান ও তার ভাই সাদেকুর রহমান জানান। বৃহত্তর দিনাজপুরের ২৩ উপজেলার কৃষকরা তাদের জমির ধান কাটার জন্য পাইটদের কাছে ধরনা দিয়ে বেড়াচ্ছে। পরিশ্রম ও কিষাণের মজুরি বেশি হলেও তারা তাদের জমির ধান গোলায় তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. নজরুল ইসলাম ম-ল জানান, দিনাজপুর জেলায় ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে আবাদ করে উৎপাদন ধরা হয়েছে ৬ লাখ ১৪ হাজার ৪৪০ মেট্রিক টন, ঠাকুরগাঁও জেলায় ১ লাখ ২ হাজার ৩৩২ হেক্টর জমিতে আবাদ করে উৎপাদন ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার ২৮৯ মেট্রিক টন, পঞ্চগড় জেলায় ৭৯ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে আবাদ করে উৎপাদন ধরা হয়েছে ১ লাখ ৯৫ হাজার ৭২৩ মেট্রিক টন।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor