Friday, November 28, 2008

মঙ্গার অভিশাপ মুক্তিতে ব্রি ধান-৩৩

২৩.১১.০৮
মন্তব্য প্রতিবেদন
ইত্তেফাক ।। শাইখ সিরাজ

উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা একটি পরিচিত শব্দ এবং প্রতিবছরই আশ্বিন কার্তিক মাসে এর অভিশাপ জনজীবনকে পর্যুদ¯- করে দেয়। এই অঞ্চলের বৃহৎ জনগোষ্ঠীর দিন কাটে ক্ষুধার সঙ্গে যুদ্ধ করে। দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষগুলোর কাজ থাকে না। কাজের সন্ধানে তারা পাড়ি জমায় দূর শহরে। আর অশিক্ষার কারণে এই অঞ্চলগুলোতে জনসংখ্যা একেবারেই অনিয়ন্ত্রিত। প্রতিদিনই যেন যোগ হচ্ছে খাবারের নতুন মুখ।

লক্ষ্য করা গেছে, আশ্বিনের শুরুতে বা সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে শুরু হয় এই মঙ্গা। থাকে কার্তিকের শেষ অর্থাৎ ধান কাটার আগ পর্যš-। এই এলাকার কৃষকরা আমন মৌসুমে ব্যাপকভাবে বিআর ১১, স্বর্ণা ইত্যাদি ধানের চাষ করে থাকেন। এসব ধানের জীবনকাল ১৪৫ থেকে ১৭০ দিন পর্যš-। সাধারণত কৃষকরা জৈষ্ঠ্য থেকে আষাঢ় মাসে বীজতলায় বীজ বপন করেন এবং পরবর্তীতে প্রায় দেড় দুই মাস বয়স্ক চারা জমিতে রোপণ করেন। এরপর নভেম্বর থেকে মধ্য ডিসেম্বরে কৃষকরা এই ধান কাটেন। ধানকাটার দুই মাস আগে থেকেই ধানের জমিতে কোন কাজ থাকে না। আর উত্তরাঞ্চলে আমন ধানই একমাত্র ফসল যেখানে ১০০ ভাগ কৃষকই এই ধান উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। সরকারি বেসরকারি সংস্থার জরীপে স্পষ্টতই প্রমাণিত হয়েছে যে, আমন ধান কাটা যদি অগ্রহায়ণ মাসের পরিবর্তে কার্তিক মাসে সম্ভব করা যায় তাহলে মঙ্গা উত্তরণ করা সম্ভব।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত আমন মৌসুমে স্বল্প সময়ের ধান ব্রি ধান-৩৩ এই সমস্যা সমাধানে কার্যকর ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। এ বছরই দেখা গেছে এর দারুণ সফলতা। যার কারণে এবার ‘মঙ্গা’ শব্দটি আর ইস্যু হয়ে উঠতে পারেনি। এবারই প্রথম কার্তিক পার হয়েছে মঙ্গার হাহাকার ও রাজনৈতিক প্রচার অপ্রচার ছাড়া। ব্রি ধান-৩৩ নিয়ে প্রথম থেকেই গবেষণা করেছেন ব্রি’র মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আব্দুল মজিদ। তিনি জানান, এই জাতের ধান পাকতে সময় লাগে ১১৫ থেকে ১১৮দিন। পক্ষাš-রে বিআর ১১সহ অন্যান্য জাতের ধান পাকতে সময় লাগে ১৪৫ থেকে ১৬০ দিন। সেই সঙ্গে ধানের চারা রোপণের পরিবর্তে অংকুরিত বীজ সরাসরি ড্রাম সিডারের মাধ্যমে সরাসরি বুনে দেখা গেছে প্রকৃত সময়ের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ দিন আগেই ধান পেকে যায়। ফলনও পাওয়া যায় ১০-১২ ভাগ বেশি। ২০০৪ সাল থেকে এ বছর পর্যš- সরকারি বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় উত্তরাঞ্চলের ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে ছড়ানো গেছে ব্রি ধান-৩৩ এর আবাদ। আমন মৌসুমে ব্রি ধান-৩৩ সরাসরি বোনা পদ্ধতিতে উৎপাদন করে প্রায় একমাস আগেই ধান কাটতে পেরেছেন। এতে কৃষি শ্রমিকরা যেমন আগাম ধান কাটার কাজ পেয়েছেন। তাকে এবং তার পরিবারকে মঙ্গার কষ্ট সহ্য করতে হয়নি। এ বছর উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, পঞ্চগড় ও লালমনিরহাট জেলায় এবার মঙ্গা প্রতিরোধের লক্ষ্য থেকে কৃষকরা ব্রি ধান-৩৩ আবাদ করেছে। ইতোমধ্যে সাফল্যজনক ফলাফলও পেয়েছেন। সত্যিই, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত ধান এর মাধ্যমে দীর্ঘদিনের একটি সমস্যা লাঘবের এই প্রয়াস দারুণভাবেই প্রশংসনীয়। এর জন্য ধান বিজ্ঞানী ড. আব্দুল মজিদ, বেসরকারি সংস্থা আর ডি আর এস-এর কৃষি সমন্বয়ক এম জি নিয়োগীসহ সংশি¬ষ্ট বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি সংস্থার নিষ্ঠাবান কর্মকর্তাদের প্রতি জানাই আš-রিক ধন্যবাদ।

খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশের স্থান অষ্টমে। তারপরেও প্রাকৃতিক বিপর্যয়সহ নানা কারণেই এদেশের প্রাšি-ক পর্যায়ের জনগোষ্ঠীকে এক ধরণের খাদ্যাভাব মোকাবিলা করতে হয়। আর উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলার মানুষের এই অভাব নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চিত্রও দেখা যায়। অথচ মানুষের সংকট ও সমস্যা সমাধানের কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায় না। পর পর কয়েক বছর ধরে বি¯-ৃতি লাভ করা বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্ভাবিত ব্রি ধান-৩৩ প্রাšি-ক জনগোষ্ঠীর দীর্ঘ সংকটের অনেকটাই নিরসন করেছে। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট উদ্ভাবিত জাতগুলো নিয়ে আরও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। যেগুলোর মধ্য দিয়ে প্রাকৃতিক বিপর্যয় সহনশীলসহ বিভিন্ন এলাকার ভূ-প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়। হাজারও প্রতিকূলতার মধ্যেও আমাদের খাদ্যশস্য উৎপাদনের সাফল্য পৃথিবীর অনেক দেশকেই আর্থসামাজিক উন্নয়নের পথ দেখাচ্ছে। শুধু মানুষের খাদ্যাভাব মোবাবিলাই নয়, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা পূরণের জন্য আমাদের নিজস্ব সম্পদের আরও পরিকল্পিত ব্যবহার প্রয়োজন। প্রয়োজন উৎপাদন কৌশলে আরও সুদূরপ্রসারি টেকসই কার্যক্রম গ্রহণ।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor