Friday, November 21, 2008

কম্পোস্ট তৈরির নানা কৌশল

১৯.১১.০৮
ডেসটিনি ।। কৃষিবিদ মো. কামরুল আহসান ভূঁইয়া

আন্তর্জাতিক বাজারে রাসায়নিক সারের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ফলে দেশীয় প্রাকৃতিক উৎস ব্যবহার করে কীভাবে ফসল চাষ করা যায় সে বিষয়ে ভাবতে হবে। আমাদের হাতের কাছেই অযতেœ পড়ে আছে কচুরিপানা, ফসলের অবশিষ্টাংশ, খড়কুটা, আগাছা, গৃহস্থালীর আবর্জনা, ঝরাপাতা ইত্যাদি। অথচ এগুলো সঠিক নিয়মে পচিয়ে তৈরি করা যায় কম্পোস্ট সার। কম্পোস্ট ব্যবহারে একদিকে যেমন ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় অন্যদিকে মাটি গঠন-প্রকৃতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কম্পোস্ট তৈরির কাজে কচুরিপানা একটি উৎকৃষ্ট উপাদান, যা বর্ষাকালে আমাদের দেশের অধিকাংশ এলাকার আনাচে-কানাচে, খাল-বিল, ডোবা-নালায় পাওয়া যায়। এর সঙ্গে আগাছা ও শস্যের পরিত্যক্ত অংশ, লতাপাতা ইত্যাদি একত্রে মিশিয়ে তা পচিয়ে সহজেই কম্পোস্ট তৈরি করা যায়। উপকরণের অভাবে একটি মাত্র জিনিস দিয়েও কম্পোস্ট তৈরি সম্ভব।
কীভাবে তৈরি করবেন : আমাদের দেশে সাধারণত দুভাবে কম্পোস্ট তৈরি করা হয়। স্তূপ বা গাদা পদ্ধতি এবং গর্ত পদ্ধতি। সাধারণত বর্ষকালে স্তূপ পদ্ধতিতে এবং কম বৃষ্টি হয় এমন এলাকায় ও শুকনো মৌসুমে গর্ত পদ্ধতিতে কম্পোস্ট তৈরির সুপারিশ করা হয়। তুলনামূলকভাবে স্তূপ পদ্ধতিতে কম্পোস্ট সার তৈরি করা সহজ ও সুবিধাজনক। এ পদ্ধতিতে আবার দুইভাবে কম্পোস্ট সার তৈরি করা যায়। এক. দ্রুত স্তূপ পদ্ধতি এবং দুই. ধীর স্তূপ পদ্ধতি।
দ্রুত স্তূপ পদ্ধতি : খড়কুটো, লতাপাতা, বাড়ি ও বাগানের আবর্জনা, কচুরিপানা ইত্যাদি টুকরো করে কেটে গোবরের সঙ্গে ভালো করে মেশাতে হবে। গোবর ও জৈব পদার্থের অনুপাত হবে ১ঃ২-১ঃ৩। এ মিশ্রণ স্তূপাকারে সাজাতে হবে। স্তূপের আকার হবে ১০ ফুট দৈর্ঘ্য, ৪ ফুট প্রস্থ ও ৪ ফুট উঁচু, তবে উপকরণ প্রাপ্তি ও অন্যান্য সুবিধা অনুযায়ী দৈর্ঘ্য কমবেশি করা যেতে পারে। স্তূপ তৈরি করে উপরে কলাপাতা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে, যাতে বাষ্পীভবন হতে না পারে। ৪-৫ দিন পর স্তূপের ভেতরের অংশ খুব গরম হয়ে যেতে পারে। তখন প্রতি ২ দিন পরপর স্তূপ নাড়াচাড়া করে দিতে হবে। কম্পোস্ট স্তূপকে স্যাঁতসেঁতে অবস্থায় রাখতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে মাঝে মাঝে হালকাভাবে পানি ছিটিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। এভাবে কম্পোস্ট স্তূপ করলে ২-৩ সপ্তাহ পর জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করার উপযোগী হবে।
ধীর স্তূপ পদ্ধতি : এ পদ্ধতিতে কম্পোস্ট সার তৈরি করার জন্য মূল উপাদান হিসেবে কচুরিপানা ব্যবহার করা হয়। স্তূপের আকার হবে দ্রুত স্তূপ পদ্ধতির অনুরূপ। প্রথমে কচুরিপানা ও অন্যান্য আবর্জনা যেমনÑ গাছের পাতা, ধানের খড় ইত্যাদি ১৫ সেমি টুকরো করে কেটে নিয়ে ১৫-১৮ সেমি পর স্তর সাজাতে হবে। ওই স্তরের ওপরে ২০০ গ্রাম ইউরিয়া ও ২০০ গ্রাম টিএসপি ছিটিয়ে দেয়ার পর স্তূপের উপরভাগে ২.৫০-৫ সেমি. পুরু করে গোবরের আস্তর দিতে হবে। পরের স্তরে থাকবে উর্বর মাটি। এই স্তরটি হবে ১ ইঞ্চি পুরু। এভাবে ৪-৫টি স্তর তৈরি করে কাক্সিক্ষত উচ্চতার কম্পোস্ট স্তূপ করতে হবে, যার প্রতি স্তরে কচুরিপানা, খড়কুটা এসব এবং উপরোক্ত হারে রাসায়নিক সার, গোবর এবং উর্বর মাটির স্তর থাকবে। তবে উচ্চতা ৪ ফুটের অধিক করা উচিত নয়। স্তূপের ওপরে চালার ব্যবস্থা করতে হবে। সম্ভব হলে গাছের নিচে স্তূপ তৈরি করতে হবে। গাছের ছায়ায় যে তাপমাত্রা পাওয়া যায়, তা জৈব পদার্থের পচন ক্রিয়ার সহায়ক, রোদ বৃষ্টি থেকেও অনেকটা রক্ষা করে। এছাড়াও চালার ব্যবস্থা না করতে পারলে স্তূপের উপরিভাবে এঁটেল মাটির প্রলেপ দিতে হবে, যাতে ভেতরে বৃষ্টির পানি প্রবেশ না করতে পারে এবং অতি রোদে না শুকিয়ে যায়। স্তূপ তৈরি শেষ হলে গাছের বড় পাতা যেমনÑ কলাপাতা দিয়ে স্তূপের উপরিভাগে ঢেকে দিতে হবে যাতে বাষ্পীভবন হতে না পারে। কম্পোস্টের স্তূপ তৈরির কাজ শেষ করার প্রায় সপ্তাহ খানেক পর একটি শক্ত কাঠি স্তূপের মাঝখানে ঢুকিয়ে দেখতে হবে যে, গাদাটি অতিরিক্ত ভিজা কিনা। অতিরিক্ত ভেজা হলে ভেতরে বাতাস চলাচলের জন্য শক্ত কাঠি দিয়ে গাদার ওপরে মাঝে মাঝে ছিদ্র করে দিতে হবে। ২-৩ দিন পর গর্তগুলো মাটি দিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে। আবার গাদা অতিরিক্ত শুকিয়ে গেলে ওপরে ছিদ্র করে পানি অথবা গো-চনা ঢেলে দেয়া যেতে পারে। তাড়াতাড়ি পচনের জন্য ১ মাস পর পর ২ বার গাদার স্তরগুলো উল্টিয়ে দিতে হবে। এ সময় কম পচা আবর্জনাগুলো গাদার মাঝখানে রাখতে হবে। সম্ভব হলে চৌকোনা বেড়া নির্মাণ করে তার ভেতর কম্পোস্ট তৈরি করতে হবে। এতে কম্পোস্ট স্তরগুলো ঠিক থাকে। পর্যাপ্ত পরিমাণ গো-চনা, গোবর, ইউরিয়া ইত্যাদি ব্যবহার করলে দেড় থেকে তিন মাসের মধ্যেই কম্পোস্ট পচে জমিতে ব্যবহার উপোযোগী সার প্রস্তুত হয়।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor