Sunday, November 9, 2008

কৃষিঋণ বিতরণ বেসরকারি ব্যাংকগুলোর এগিয়ে আসা প্রয়োজন

০৯.১১.০৮
সম্পাদকীয় ।। যায়যায়দিন

দেশের খাদ্য ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে হলে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হবে। আর কৃষি উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজন কৃষকদের পর্যাপ্ত সহযোগিতা করা। এ ক্ষেত্রে কৃষিঋণ বিতরণের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হয়। কারণ ফসল ফলানোর সময় কৃষকরা প্রয়োজনীয় অর্থ না পেলে চাষাবাদ ব্যাহত হবে। এ সমস্যার সমাধানে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আশার বিষয় হচ্ছে, সরকারের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এ বছর ঋণ বিতরণে কিছুটা সাফল্যের পরিচয় দিয়েছে।
যায়যায়দিনে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী চলতি অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর কৃষিঋণ বিতরণ বেড়েছে। তবে এটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে। কৃষিঋণ বিষয়ক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বিআরডিবি ও বিএসবিএল মোট ১ হাজার ১১১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে, যা বিতরণ লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ১৫ দশমিক ১৫ শতাংশ। পাশাপাশি বকেয়া ঋণ আদায়ের হারও বেড়েছে, যার পরিমাণ ১১ দশমিক ৭০ শতাংশ। এ আট ব্যাংকের খেলাপি ঋণও কমে এসেছে।
যে বিষয়টি দুঃখজনক তা হচ্ছে, বেসরকারি ব্যাংকগুলো কৃষিঋণ খুব একটা বেশি বিতরণ করেনি। এটা তাদের অনাগ্রহেরই বহির্প্রকাশ, যা আগে থেকেই আমরা দেখে আসছি। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নানা ছুঁতোয় কৃষিঋণ বিতরণ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করছে। এসব ব্যাংক কৃষি ঋণের নামে কৃষিজাত শিল্প, কৃষি পণ্যের মজুদ ও বাজারজাতকরণে অর্থায়ন করলেও প্রকৃত দরিদ্র কৃষকরা ঋণ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কৃষি উৎপাদনের চেয়ে অন্য খাতে ঋণ দেয়ার দিকেই ব্যাংকগুলোর আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।
কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের জন্য কৃষি উন্নয়ন কতোটুকু গুরুত্বপূর্ণ তা নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। অথচ এ খাতে ঋণ প্রদানে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর অনাগ্রহ সত্যিই দুঃখজনক। দেশের কৃষি উৎপাদন বাড়াতে হলে সরকারি-বেসরকারি সব পক্ষ থেকেই কৃষকদের সহযোগিতা করতে হবে। বিশেষ করে প্রান্তিক চাষীদের সুলভে ঋণ দেয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। ব্যাংক থেকে ঋণ প্রদানে অনাগ্রহ তার ওপর ঋণ নিতে গেলে বিভিন্ন জটিলতাÑ এতো সব সমস্যার কারণে কৃষকরাও ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ না পেয়ে কৃষকরা এনজিও বা মহাজনদের দ্বারস্থ হয়। যারা কৃষকদের সহজে ঋণ দিলেও অতিরিক্ত সুদ নেয় এবং স্থায়ীভাবে ঋণের সুদে বেঁধে ফেলে। এতে কৃষকরা নয়, লাভবান হয় এনজিও বা মহাজনরা। যার পরোক্ষ প্রভাব পড়ে দেশের কৃষি খাতে।
আমরা মনে করি, দেশের কৃষি এবং কৃষকদের বাঁচাতে হলে ঋণ প্রদানে সরকারি-বেসরকারি সব ব্যাংককেই এগিয়ে আসতে হবে। ঋণ প্রদানের নিয়মনীতিও সহজ করতে হবে, যাতে প্রান্তিক চাষীরা ঋণ গ্রহণ করতে পারে। ঋণ বিতরণে সরকারের পক্ষ থেকে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাকগুলোর প্রতি প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা থাকা দরকার। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে বাধ্যবাধকতাও তৈরি করা যেতে পারে।
কৃষিভিত্তিক বাংলাদেশে কৃষি এখনো একটি অবহেলিত খাত। অবহেলিত এ খাতকে শক্তিশালী করতে হলে কৃষিঋণ বিতরণের পাশাপাশি পর্যাপ্ত কৃষিভর্তুকি প্রদান করতে হবে এবং কৃষি উৎপাদন সামগ্রীর দাম কমাতে হবে। এ খাতের জন্য সহায়ক সব পদক্ষেপ যদি সমন্বিতভাবে নেয়া যায় তবে অবশ্যই দেশ কৃষিতে স্বনির্ভর হবে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor