Friday, November 7, 2008

ডিজেলের জন্য ভর্তুকির টাকা

০৭.১১.০৮
ডেসটিনি ।। সম্পাদকীয়

বোরো চাষিদের কাছে সংবাদটি সুসংবাদ বলেই গণ্য হতে পারে যদি কৃষি মন্ত্রণালয় কথায়-কাজে মিল রাখে। বোরো মৌসুমে এবার সরকার ডিজেলে ভর্তুকি দিচ্ছে ৫৪০ কোটি টাকা। ভর্তুকির এই টাকা বোরোর জন্য সেচের কাজ শুরু করার আগেই যাতে কৃষকের হাতে পৌঁছে তারই তোড়জোর চালাচ্ছে কৃষি মন্ত্রণালয়। অবশ্য ভর্তুকি প্রদানের দিক থেকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে ক্ষুদ্র ও বর্গাচাষিদের। উল্লেখ্য, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের দিকে শুরু হবে বোরোর সেচ কাজ। ইতিমধ্যেই কৃষি মন্ত্রণালয় কাজ শুরু করে দিয়েছে। ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে গত বছর সরকার কৃষকদের ভর্তুকি দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেজন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ৭৫০ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় এই বরাদ্দের ওপর করাতকল চালিয়ে দেয়। ৫০০ কোটি টাকাই কর্তন করে দেয়। চূড়ান্ত বরাদ্দের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৫০ কোটি। কিন্তু এই টাকাও প্রকৃত, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের হাতে পৌঁছেনি, সময়মতো তো নয়ই। যারা ভর্তুকির টাকা পায় তাদের টাকাও কাজে লাগাননি। সেচের সময় টাকা না পাওয়ার কারণে ক্ষুদ্র, দরিদ্র, বর্গাচাষিরা প্রয়োজনীয় সেচ দিতে না পারায় বঞ্চিত হয় ঈপ্সিত ফলন থেকে।
এবার যাতে একই অবস্থার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য কৃষি মন্ত্রণালয় আগেভাগেই তৎপর। এবারে বরাদ্দ ৫৪০ কোটি টাকা। অর্থ মন্ত্রণালয় যদি এই বরাদ্দের ওপর ছুরি না চালায় তাহলে ভর্তুকি পাওয়ার ক্ষেত্রে কৃষকদের সংখ্যা বাড়বে, ভর্তুকি প্রদানের আওতাও বাড়বে। বোরো দেশের একটি প্রধান ফসল। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বোরোর অধিক উৎপাদন আবশ্যক। এবং সবার জানা যে, বোরোর ফলন নির্ভর করে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় সেচ ও চাহিদামত সার ব্যবহারের ওপর। সেচ দিয়ে বোরোর জমি তৈরি করতে হয়, চারা রোপণের পর দফায় দফায় সেচ দিতে হয়। একই সঙ্গে ভালো ফলন পেতে ব্যবহার করতে হয় সার। কিন্তু ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি সেচের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়ানোতেই এই ভর্তুকি সুবিধা। সরকার সারের মূল্যও প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি করে কৃষকদের জন্য দুশ্চিন্তার অন্ধকার গাঢ় করে দিয়েছেন। এরপর রাসায়নিক সার বিশেষ করে ইউরিয়া সারের ‘টোকেন পদ্ধতি’ ফলন বাড়ানোর জন্য বড় প্রতিবন্ধক হয়ে ওঠেছে। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে প্রান্তিক, ক্ষুদ্র, দরিদ্র, বর্গা চাষিরা সেচ দিতেও পারে না প্রয়োজনমত। চাষিদের উৎপাদন বৃদ্ধির আহ্বান জানানো হয়, উচ্চফলনশীল ধান, হাইব্রিডের আবাদে উৎসাহী হতে বলা হয়। কিন্তু সেজন্য প্রধান প্রধান উপকরণ সেচ-সার ব্যবহারের সুবিধা কৃষকদের হাতের কাছে পৌঁছানো হয় না।
সেচ নিশ্চিত করতে ডিজেলে ভর্তুকি দেয়া একটি উপকারী এবং প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। কিন্তু গত বোরো মৌসুমে ভর্তুকির টাকা যেমন সব প্রকৃত প্রাপক পায়নি, তেমনি যারা পেয়েছে তারাও বিলম্বে পেয়েছে, অর্থের পরিমাণও স্বল্প। এবার আশা করা যায় অর্থ মন্ত্রণালয় আর ভুল করবে না, বরাদ্দকৃত অঙ্কের ওপর ছুরি চালাবে না। কৃষি মন্ত্রণালয় ভর্তুকির টাকা যাতে সেচের সময়ই কৃষকদের হাতে পৌঁছে এখন থেকেই তার উদ্যোগ নিয়ে সঠিক কাজই করছে। কৃষি মন্ত্রণালয় যদি কথায়-কাজে মিল রাখতে পারে তাহলে প্রত্যাশার যথেষ্ট কারণ থাকবে যে এবার সেচের অর্থ জোগাতে কৃষকদের দুশ্চিন্তায় পড়তে হবে না। বোরো ফলনে মোট উৎপাদনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে বিশ্বাস করা যায়।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor