Tuesday, November 4, 2008

টমেটো চাষ ও পরিচর্যা

০৫.১১.০৮
ডেসটিনি ।। মো. শাহীন আলম

এখনই সময় টমেটো চাষের। টমেটোর উৎপত্তি স্থান মধ্য আমেরিকায়। বাংলাদেশে এটি বিলাতি বেগুন নামেও পরিচিত। এ সবজির জনপ্রিয়তা খুব বেশি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু বলে। এতে আমিষ ১.৯ গ্রাম, শর্করা ৩০৬ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, খাদ্যশক্তি ২৩ কিলোক্যালরি, আঁশ ০.৭ গ্রাম, জলীয় অংশ ৯৩.১ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ২০ মিলিগ্রাম, লৌহ ১.৮ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ২০০ মিলিগ্রাম ছাড়াও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। আধুনিক পদ্ধতি ও উন্নত জাতের টমেটো চাষ করলে ফলন অনেক বেড়ে যায়। সেই সঙ্গে আর্থিকভাবে লাভবানের পাশাপাশি পরিবারের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা যায়। টমেটোর অনেক জাত রয়েছে। যেমন রুমা, মানিক, রতন, ভি এফ, সানমারজানো, অক্সহার্ট, মারগোব, বারি টমেটো-৩, বারি টমেটো-৫, অপূর্ব, শিলা, অনুপমা, বিনা টমেটো-২, বিনা টমেটো-৩, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
মাটি ও জলবায়ু : সব ধরনের মাটিতে টমেটোর চাষ করা যায়। তবে দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি বেশি উপযোগী। সাধারণত ২০-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গাছে টমেটো ভালো জন্মে। তাই বাংলাদেশে শীতকালে টমেটো চাষের জন্য উপযুক্ত সময়।
জমি তৈরি ও চারা রোপণ : জমি ৪-৫ বার চাষ এবং মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে তৈরি করে নিতে হবে। বীজ রোপণের ৩০-৪০ দিন পর চারা রোপণের উপযোগী সময়। প্রতিটি সারিতে ২ সারি করে চারা লাগাতে হবে। চারা রোপণের দূরত্ব সারি থেকে সারি ৬০ সেন্টিমিটার, চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪০ সেন্টিমিটার।
রোপণের সময় : নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত চারা রোপণ করা যায়।
সার প্রয়োগ : টমেটোর ভালো ফলনের জন্য নিম্নবর্ণিত হারে সার প্রয়োগ করতে হবে।
সারের নাম সারের পরিমাণ/হেক্টর
১। গোবর বা কম্পোস্ট ৫-৭ টন
২। ইউরিয়া ৫০০-৬০০ কেজি
৩। টিএসপি ৪০০-৫০০ কেজি
৪। এমপি ২০০-৩০০ কেজি
৫। কাইসেরাইট ৪০-৫০ কেজি
সার প্রয়োগ পদ্ধতি : সম্পূর্ণ গোবর, টিএসপি, এমপি, কাইনেরাইটের অর্ধেক ইউরিয়া ইত্যাদি সার শেষ চাষের সময় জমিতে ছিটিয়ে দিতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া সার সমান ২ কিস্তিতে চারা লাগানোর ১৫ ও ৩০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে।
পরিচর্যা : প্রথম ও দ্বিতীয় কিস্তির সার প্রয়োগের আগে পার্শ্বকুশিসহ মরা পাতা ছাঁটাই করে দিতে হবে। হরমোন প্রয়োগ সুবিধা এবং বাতাসে যেন হেলে না পড়ে সেজন্য বাঁশের কঞ্চি দ্বারা ঠেকনা দিতে হবে। প্রয়োজনে নিড়ানি দিতে হবে এবং মাটির উপরিভাগ আলগা করে দিতে হবে। ফলে আলো বাতাস প্রবেশের সুবিধাসহ মাটি রস বেশিদিন ধরে রাখতে পারবে। ৪-৬ বার সেচ প্রয়োজন অনুযায়ী দিতে হবে। তবে চারা লাগানোর ৩-৪ দিন পর হালকা এবং পরে প্রতি কিস্তি সার প্রয়োগের পর জমিতে সেচ দিতে হবে।
পোকা দমন : টমেটোর মূলত ২টি পোকা অধিক হারে ক্ষতি করে থাকে যথা জাব পোকা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা। জাব পোকা টমেটোর গাছের পাতা, কচি ডগা ও কা- থেকে রস শুষে খেয়ে গাছের ক্ষতি করে এবং গাছে মোজাইক রোগ ছড়ায়। এ পোকা দমনে ১০০০ লিটার পানির সঙ্গে রগোর এল-৪০/সাইফানন ৫৭ ইসি বা ক্লাসিক-২০ ইসি মিশিয়ে প্রতি হেক্টর জমিতে স্প্রে করতে হবে। অন্যদিকে ফল ছিদ্রকারী পোকার কিড়া টমেটো ছিদ্র করে ভেতরে ঢোকে এবং কুড়ে কুড়ে খায় ফলে আক্রান্ত ফল খাওয়ার অনুপযুক্ত করে ফেলে। এ পোকা দমনের জন্য প্রথমত আক্রান্ত পাতা ও ফল সংগ্রহ করে নষ্ট করে ফেলতে হবে। যদি বেশি পরিমাণে আক্রান্ত হয় তবে ফরাটাপ বা কেয়ার ৫০ এসপি ২ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানির সঙ্গে মিশিয়ে গাছের সব অংশ স্প্রে করতে হবে। তাছাড়াও বাইকাও-১ প্রয়োগ করে পোকা দমন করা যেতে পারে।
রোগ দমন : টমেটোর ঢলে পড়া রোগ লাল মাটিতে চাষ করলে বেশি পরিমাণে হতে পারে তাই চাষ করার আগে জমি নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে এবং পরিমিত সেচ দিতে হবে। টমেটোর আগাম ধসা রোগের ফলে গাছের পাতা এক সময় সম্পূর্ণ শুকিয়ে যায় ফলে ফসল মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই রোগমুক্ত বীজ ও চারা রোপণ করতে হবে এবং প্রয়োজন মতে কৃষিবিদদের সাহায্য নিতে হবে। টমেটোর নাবি ধসা রোগের কারণ ছত্রাক। এ রোগ অনেকটা আগাম ধসা রোগের মত তাই একই রকম রোগ দমনে একই রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে। ভাইরাসের কারণে টমেটোর মোজাইক রোগ এবং বুশি স্টান্ট রোগে আক্রান্ত গাছ দেখামাত্র তুলে ধ্বংস করতে হবে এবং প্রয়োজনে কৃষিবিদদের পরামর্শ নিতে হবে। টমেটোর শিকড়ের গিট রোগে হেক্টর প্রতি ৬০ জি ফুরাফুরান বা কেয়ার ৪ জি ৫ কেজি প্রয়োগ করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ : চারা লাগানোর ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে টমেটোর ফল সংগ্রহ করা যায় এবং প্রতি গাছ থেকে ৭-৮ বার ফল সংগ্রহ করা যায়। ফল কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থায় তোলা যায়।
ফলন : হেক্টর প্রতি ফলন ৩০-৪০ টন পর্যন্ত হয়।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor