Sunday, November 9, 2008

লোহাগাড়ার কৃষি উন্নয়নে টংকাবতী রাবারড্যাম প্রকল্প

০৯.১১.০৮
ইত্তেফাক ।। মোহাম্মদ ইলিয়াছ,

লোহাগাড়া উপজেলা চট্টগ্রামের সর্বদক্ষিণে ২৫৯.৯৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ৯টি ইউনিয়ন ৪০টি মৌজা ও ৪৩টি গ্রাম নিয়ে গঠিত একটি এলাকা। এ অঞ্চলের ১২,১৮০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। কৃষি প্রধান পরিবার গ্রামীণ গৃহস্থ শতকরা ৫৬ ভাগ এবং অকৃষি প্রধান পরিবার গ্রামীণ গৃহস্থ শতকরা ৪৪ ভাগ। মোট কৃষি জমির শতকরা ৩২.৯১ ভাগ এক ফসলি, ৫১.১৮ ভাগ দো-ফসলি এবং ১৫.৯১ ভাগ তিন ফসলি শস্য চাষাবাদ হয়। ৩৩,১২৫টি কৃষক পরিবার ১,২১০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করে বছরে ৪৫,৬৮২ মেট্রিকটন শস্য উৎপাদন করে। ধান, পান, লিচু, আলু, আম, কলা, পেয়ারা, আমড়া, আনারস ইত্যাদিসহ বিভিন্ন শাকসবজির প্রচুর চাষ হয়। তবে সেচ প্রকল্পের অভাবে এ উপজেলায় বোরো ও আমন মৌসুমে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমি অনাবাদি রয়ে যায়। ফলে কৃষকরা আরও বিভিন্ন শস্য উৎপাদন থেকে বিরত থাকে। এসব অনাবাদি জমিতে চাষাবাদযোগ্য করতে প্রয়োজন হয় রাবারড্যাম প্রকল্প।

উপজেলার চরম্বা ইউনিয়নের টংকাবতী খালে রাবারড্যাম প্রকল্পটি স্থাপিত হওয়ার পর থেকে এলাকার চাষযোগ্য জমির পরিমাণ তিনগুণ বেড়ে গেছে। বেড়েছে বোরো ও রবিশস্যের সেচ সুবিধাও। বিগত শুষ্ক মৌসুমে উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ৪,২২০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। ডিজেল চালিত পাম্পের সাহায্যে, গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে ৩,০৭৬ জন কৃষক ৯৫৭.৪১ হেক্টর জমি, বিদ্যুৎ চালিত গভীর ও অগভীর নলকূপের মাধ্যমে ৪,২৭৫ জন কৃষক ১,২০৫.৪০ হেক্টর জমি এবং অন্যান্য মাধ্যমে ৫,০৭০ জন কৃষক ১,২২০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ করেছে। এতে করে হাইব্রিড হেক্টর প্রতি ৬ মেট্রিকটন চাল ও উফশী হেক্টর প্রতি সাড়ে ৪ মেট্রিকটন চাল উৎপাদিত হয়েছে। ৫০০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ধান এবং ৩,৭২০ হেক্টর জমিতে উফশী ধান চাষ করা হয়েছে। সেচ খরচও কমে যাওয়ায় উৎসাহিত হয়েছে কৃষকরা। এলাকার সচেতন কৃষকের দাবী আরও ২টি রাবারড্যাম হলে শস্য উৎপাদন অনেক বেড়ে যাবে। লোহাগাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আমিনুল হক চৌধুরী জানান, উপজেলায় ৫০ হাজার মেট্রিকটন চালের চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে উৎপাদিত হয় ৪০ হাজার মেট্রিকটন। আরও ২টি রাবারড্যাম স্থাপিত হলে উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যত্র সরবরাহ করা সম্ভব হবে। অš-ত আরও ২০ হাজার মেট্রিকটন চাল উৎপাদন বাড়বে। উপজেলার পদুয়া, হাঙ্গর এবং চুনতির চাম্বী অথবা ডলুখালে পৃথক এ ২টি রাবারড্যাম স্থাপন করা সম্ভব।

এদিকে টংকাবতী রাবারড্যাম প্রকল্প বা¯-বায়নের ফলে রবিশস্য মৌসুমে ভূ-পৃষ্টের পানি ব্যবহারের মাধ্যমে বোরো ও রবিশস্য এবং খরার সময় আমন উৎপাদনের জন্য সম্পূরক সেচ সুবিধা পাওয়া যায়। ফলে এলাকায় কৃষকরা বিপুল উৎসাহে চাষে মনযোগী হচ্ছে। স্থানীয় কৃষকরা জানান, নদীর তলদেশ থেকে এলএলপি’র পানি তোলার জন্য আগে একর প্রতি সেচ খরচ লাগত ৫,০০০ টাকা। টংকাবতী রাবারড্যাম নির্মাণের পর থেকে নেমে এসেছে একর প্রতি ২,০০০ টাকা। প্রকল্প এলাকায় চাষযোগ্য জমির পরিমাণ ৩২৯ হেক্টর থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,০০০ হেক্টরে। রাবারড্যাম প্রকল্পের সংরক্ষিত পানিতে মাছ চাষও করা হচ্ছে। সর্বোপরি টংকাবতী খালের উপর রাবারড্যাম নির্মাণের ফলে একাধিকে ভূগর্ভস্থ পানির চাপ কমেছে অন্যদিকে ক্ষতিকর খনিজ লবণ আয়রন এমনকি ক্ষতিকর আর্সেনিকের বিরূপ প্রভাব থেকে উৎপাদিত ফলস রক্ষা পাচ্ছে। তাছাড়া ¯¬ুইস গেট নির্মাণে যে খরচ হয় রাবারড্যাম নির্মাণে খরচ হয় তার অর্ধেক। তাই উপজেলায় আরও ২টি রাবারড্যাম স্থাপন করে শস্য উৎপাদন বাড়ানো খুবই জরুরি। রাবারড্যাম প্রকল্প স্থাপনের মাধ্যমে পানি নিষ্কাশনের স্থায়ী ব্যবস্থা করলে এলাকার কৃষিসহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চেহারা পাল্টে যাবে। কৃষকের ঘরে ঢুকবে সোনার শস্য। ফুটবে কৃষকের মুখের হাসি। আর কমবে খাদ্য ঘাটতি।

মোহাম্মদ ইলিয়াছ, চট্টগ্রাম

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor