Friday, November 14, 2008

খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে সিদ্ধান্ত

১৩.১১.০৮
ডেসটিনি ।। কুতুব উদ্দিন প্রধান

এ দেশের মানুষের প্রধান খাদ্য চাল। শতকরা ৮০ ভাগ লোক চালের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল। ভৌগোলিক দিক থেকে বাংলাদেশে চাল উৎপাদন হয় ব্যাপক, আবহাওয়া ও মাটি চাল উৎপাদনের জন্য উপযোগী হওয়ায় খাল-বিল, উঁচু-নিচু, জলাশয়, টেক-টিলা, সমতল ভূমিসহ সব ধরনের জমিই বিদ্যমান। তাই বছরের তিনটি ফসলই সমপরিমাণে উৎপন্ন হয়। উচ্চ ফলনশীল বীজ, আধুনিক পদ্ধতির চাষাবাদ, সেচ ও জ্বালানির জোগান নিশ্চিত হলে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে সুষ্ঠুভাবে কৃষক ফসল ঘরে আনতে পারলে দেশীয় খাদ্য চাহিদা সংকুলান হয়। বিদেশ থেকে আমদানির ওপর নির্ভর করতে হয় না। এ দেশের ধানের পাশাপাশি গম ও ভুট্টা উৎপাদন হয়। তবে চাহিদার তুলনায় উৎপাদন খুব বেশি নয়। দেশীয় উৎপাদনের চাহিদা সংকুলান না হলে আমদানি করে তা পূরণ করা হয়। বিশ্ব বাজারে চালের দাম বাড়ার কারণে উন্নয়নশীল দেশ বা অধিক জনসংখ্যাসম্পন্ন দেশগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দেশীয় উৎপাদনে কৃষি উপকরণ সার, বীজ, কীটনাশকের দাম আকাশচুম্বী। কৃষকের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। সরকার কৃষিক্ষেত্রে সারের যে ভর্তকি দেয় তা পর্যাপ্ত নয়। তা ছাড়া ভর্তুকির টাকা বেশির ভাগ গিয়ে থাকে কৃষকের হাতের নাগালের বাইরে। স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধিরা তাদের ইচ্ছামাফিক নিজস্ব লোকদের কাল্পনিক জমি তৈরি করে ভর্তুকির টাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সারের ভর্তুকির টাকা দেয়ার সময় অনেক জায়গায় অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।
পৃথিবীর যেসব দেশে চাল উৎপন্ন হয় সে সব দেশ তাদের চাহিদা মিটিয়ে মাত্র ৫ শতাংশ বিশ্ব বাজারে রফতানি করতে পারে। বৃহত্তম চাল ভোগকারী দেশগুলোতে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উৎপাদনে কোনো বিপর্যয় ঘটে তবে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের চাহিদা বেড়ে যায়। পাশাপাশি চাল উৎপাদনকারী দেশগুলোতে রফতানিযোগ্য চাল উৎপাদন করতে না পারে তবে আন্তর্জাতিক বাজারে চালের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। উল্লেখযোগ্য এটি কৃষি পণ্য। এ পণ্য একটি নির্দিষ্ট সময়ে উৎপাদিত হয়। রাতারাতি অধিক উৎপাদন সম্ভব নয়। সুতরাং প্রকৃতির ওপরই অনেকাংশে নির্ভরশীল।
’৯০-এর দশকে বিশ্বে চালের উৎপাদন ছিল ৩৫ কোটি মে. টন। ২০০০ সালের দিক দিয়ে এর উৎপাদন দাঁড়ায় প্রায় ৪০ কোটি মে. টন। ২০০২ সালে তার উৎপাদন কমে আসে ৩৮ কোটি মে. টন পরের বছর একটু বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ কোটি মে. টন। বর্তমানে বিশ্বে চালের উৎপাদন প্রায় ৪০ কোটি মে. টন। বিশেষজ্ঞদের মতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে জমির ওপর চাপ বেড়ে গিয়েছে। মানুষের আবাসন প্রয়োজনে ফসলী জমির ওপর বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে। সড়ক-মহাসড়ক, উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানা তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি অব্যাহত নদী ভাঙ্গন ইত্যাদির কারণে দিন দিনই ফসলী জমি কমে আসছে। পৃথিবীর ৯০ শতাংশ চাল এশিয়ার পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে উৎপাদন হয়। পৃথিবীর মোট চাল উৎপাদনের ৫০.৩ শতাংশ কেবল চীন ও ভারত থেকে আসে। ব্রাজিল, ইটালি ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চাল উৎপন্ন হয়। তাদের দেশীয় চাহিদা পূরণ করে ১০ শতাংশের অধিক চাল আন্তর্জাতিক বাজারে প্রেরণ করতে পারে না। অতি সম্প্রতি কৃষি ও খাদ্য সংস্থার এক জরিপে দেখা যায় চীন ৩০.৭, ভারত ২১.৬, ইন্দোনেশিয়া ৮.৭, ভিয়েতনাম ৫.৬, থাইল্যান্ড ৪.৪, জাপান ১.৯, ব্রাজিল ১.৮, পাকিস্তান ১.২, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ০.৪, ইরান ০.৪, অন্যান্য দেশে ২৩.৩ শতাংশ মোট চাল উৎপাদন হয়।
বাংলাদেশও পৃথিবীর বৃহত্তম চাল উৎপাদনকারী দেশ। ইন্দোনেশিয়ার পরের স্থানই বাংলাদেশ। তবে বাস্তবে যদি কৃষি উপকরণ, সার, বীজ ও সেচ সহজে ও সস্তায় পাওয়া যেত তবে বাংলাদেশের উৎপাদন অবশ্যই আরও বৃদ্ধি পেত। খরা, বন্যা ও সিডরের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো দেখা না দিলে জনসংখ্যা অধিক হলেও দেশীয় উৎপাদনের ওপর নির্ভর করা যেতো।
বিশ্বব্যাপী মাংসের দাম বাড়ার কারণে বিশেষ করে চীনের মানুষের খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন হয়েছে।
এশিয়া ইউরোপেও মাংসের প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হচ্ছে। তারা মাংস আগের তুলনায় বেশি খাচ্ছে। মাংস উৎপাদন করতে খাদ্যদ্রব্য বেশি খরচ হচ্ছে। ১ কেজি মাংস তৈরি করে ৮ কেজি খাদ্য দ্রব্য ব্যবহৃত হয়। আজ কয়েক বছর যাবত আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে গিয়েছে। এর কারণ একদিকে জনসংখ্যা বৃদ্ধি অন্যদিকে উৎপাদন হ্রাস। জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে উৎপাদন বাড়লে আন্তর্জাতিক বাজারে এ রকম চাপ পড়তো না। ভবিষ্যতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে। সঠিক উৎপাদন না হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ফসল মার খেলে দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়া স্বাভাবিক। বহির্বিশ্বে নিজেদের চাহিদা পূরণ হওয়ার পর অর্থাৎ উদ্বৃত্ত চালই বাজারে আসে। তাই খুব সহজ শর্তে চাল আমদানি করা সহজ হবে বলে মনে হয় না। তাই নিজেদের উৎপাদনের ওপরই নির্ভর করা শ্রেয়। নিজেদের উৎপাদন করতে হলে সার, বীজ, সেচের ব্যবস্থা করতে হবে। অতি দ্রুত ও সহজ শর্তে কৃষি ঋণ দিতে হবে। পাশাপাশি ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে হবে। এই বিষয়ে অতি সূক্ষèভাবে ও সময়োপযোগী বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত না নিলে, বিলম্বিত সিদ্ধান্ত হলে কালক্ষেপন ছাড়া অন্যথা নয়। তাই উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে সময়োপযোগী বলিষ্ঠ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত না নিলে, বিলম্বিত সিদ্ধান্ত হলে কালক্ষেপন ছাড়া অন্যথা নয়। তাই উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে সময়োপযোগী সিদ্ধান্তই বাঞ্ছনীয়।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor