Friday, November 21, 2008

কালাইয়ে চাষিবাজারে চাষী নেই

১৮.১১.০৮
ডেসটিনি।।কালাই (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি

জয়পুরহাটের কালাইয়ে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বিপণন ও বাজারজাত করার জন্য প্রায় ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত গ্রোয়ার্স মার্কেট এলাকার কৃষকদের কোনো উপকারেই আসছে না। নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পাঁচ মাসেও আনুষ্ঠানিকভাবে এ মার্কেটের কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় কৃষকদের জন্য নির্মিত এ মার্কেটটির পুরোটাই এখন ফুটপাতের হকারদের দখলে। রাতে এ মার্কেটে নিয়মিত নেশাখোরদের আড্ডা বসে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এদিকে নির্মাণ কাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেলা বাজার অনুসন্ধান কর্মকর্তার হস্তান্তরের পরপরই মাকের্ট ভবনের দেয়ালের কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উৎপাদক পর্যায়ের কৃষকদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ভালো বাজার সৃষ্টি ও ন্যায্য দামপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের উত্তর-পশ্চিম শস্য বহুমুখীকরণ প্রকল্পের (এনসিডিপি) আওতায় জয়পুরহাটের কালাই সদরের পুরনো হাটে একটি ‘গ্রোয়ার্স মার্কেট’ বা উৎপাদক (চাষি) বাজার নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এ মার্কেটে মহিলা উৎপাদক বা কৃষাণীদেরও নির্দিষ্ট সংখ্যক দোকানঘর বরাদ্দ দেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়।
কৃষি বিপণন অধিদফতরের জেলা বাজার অনুসন্ধান কার্যালয়ের তদারকিতে হাতে নেয়া ‘কালাই গ্রোয়ার্স মার্কেট উন্নয়ন’ নামে এ প্রকল্পে ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরে ৩৪ লাখ ৮৩ হাজার ৯৪৭ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের নিজস্ব তহবিল (এডিবি) থেকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) মাধ্যমে ওই অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। ২০০৮ সালের ১৫ মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করার জন্য এলজিইডি কার্যদেশের মেয়াদ বেঁধে দিলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স লাকী কনস্ট্রাকশন নির্ধারিত সময়ের প্রায় তিন মাস পর চলতি বছরের ৪ জুন বেশকিছু কাজ অসমাপ্ত রেখেই জেলা বাজার অনুসন্ধান কর্মকর্তার কাছে তা হস্তান্তর করে। হস্তান্তরের পরপরই মার্কেট ভবনের বেশ কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দেয়। স্থানীয় একাধিক চাষি জানান, এ মার্কেট ভবন নির্মাণে অত্যন্ত নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। যোগাযোগ করা হলে লাকী কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী ও কালাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন ফকির বলেন, আমি প্রতিষ্ঠানের কাজ পেলেও প্রকৃতপক্ষে কাজটি করেছেন ঠিকাদার নজরুল ইসলাম। ঠিকাদার ও উপজেলার জিন্দারপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি নজরুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মার্কেট ভবনের দেয়ালের কয়েকটি স্থানে যে ফাটল দেখা দিয়েছে তাতে কোনো সমস্যা নেই। কারণ ওটা কোনো গভীর ফাটল নয়; দেয়ালের ওপরের সিমেন্টের আস্তরণ ও পলেস্তরা ফেটেছে মাত্র। আঠা দিয়ে ওই ফাটল ঠিক করে দেয়া হবে। এলজিইডির প্রকৌশলী ও জেলা পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তারাও এ ফাটল পরিদর্শন করে গেছেন। আর নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ সঠিক নয়।
নির্মাণ কাজ তদারকি প্রতিষ্ঠান এলজিইডির কালাই উপজেলা প্রকৌশলী মোনাব্বর হোসেন বলেন, হস্তান্তরের পরপরই মার্কেট ভবনের কয়েকটি স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে সত্য; তবে তা দেয়ালের অভ্যন্তরীণ কোনো ফাটল নয়; ওপরের অংশের সিমেন্টের আস্তরণ ফেটেছে সম্ভবত। এতে তেমন কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এদিকে গ্রোয়ার্স মার্কেটের দোকানঘর এলাকার উৎপাদক পর্যায়ের চাষিদের মাঝে বরাদ্দ দেয়া কথা থাকলেও হস্তান্তরের পরপরই এর পুরোটা ফুটপাতের হকাররা দখলে নিয়েছেন। তারা প্রতি হাটের দিন এখানে দোকান খুলে বসছেন। আর চাষিরা পণ্য বিক্রি করছেন এ মার্কেটের বাইরের এলাকায়। কালাই হাট সংলগ্ন মহল্লার বাসিন্দা সাজ্জাদুর রহমান কাজল অভিযোগ করে বলেন, চাষিদের জন্য নির্মিত এ মার্কেটে রাতে নিয়মিত এখানে বসে নেশাখোরদের আড্ডা।
কালাই হাটের নিয়মিত সবজি বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, এনসিডিপি বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটিতে কোনো কৃষক বা চাষি স্থান পায়নি, এখানে স্থান পেয়েছে রাজনৈতিক দলের নেতা ও প্রভাবশালীরা, যাদের সঙ্গে কৃষি ও কৃষকের কোনো সম্পর্ক নেই। নারী কোঠায় কমিটিতে কোনো কৃষাণী স্থান পাননি। সেখানে নেয়া হয়েছে দুজন মহিলা মেম্বারকে।
তবে এনসিডিপি প্রকল্পের জিও (এনজিও) গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশনের কালাই শাখা ব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ন্যূনতম ৫০ শতাংশ থেকে ৭ একর পর্যন্ত জমি আছে এমন ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের নিয়ে ১৪৯টি এনসিডিপি গ্রুপ, ২০টি সমিতি এবং সমিতির সভাপতিদের নিয়ে ৭টি ফামার্স মার্কেটিং গ্রুপ (এফএমজি) গঠন করা হয়েছে। ওই ৭ গ্রুপের সভাপতিকেই বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটিতে রাখা হয়েছে অন্য কোনো বিবেচনাতে নয়। এনসিডিপি কালাই বাজার কমিটির সভাপতি ও পৌর মেয়র হেলাল উদ্দিন মোল্লা বলেন, প্রায় ৩৫ লাখ টাকার এ প্রকল্প এলাকার চাষিদের ন্যূনতম কোনো উপকারে আসেনি। এমনকি আজ পর্যন্ত এ গ্রোয়ার্স মার্কেট কমিটিকে বুঝেও দেয়া হয়নি। উপরন্তু নির্মাণ কাজে নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহার করায় কমিটির কাছে বুঝে দেয়ার আগেই ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে।
কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এবিএম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ গ্রোয়ার্স মার্কেটে ৫০ শতাংশ দোকান এলাকার উৎপাদক পর্যায়ের কৃষক ও কৃষাণী বরাদ্দ পাওয়ার কথা। অথচ বর্তমানে পুরোটাই ফুটপাতের হকারদের দখলে। স্থান নির্বাচনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হওয়ায় ৩৫ লাখ টাকার এ প্রকল্প কৃষকদের ন্যূনতম উপকারে আসছে না। এ ব্যর্থতা জেলা বাজার অনুসন্ধান কর্মকর্তার।
দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কৃষি বিপণন অধিদফতরের জয়পুরহাট জেলা বাজার অনুসন্ধানকারী ও এনসিডিপি কালাই বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য সচিব রতন কুমার রায় বলেন, সরকারি কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে নির্মাণ কাজ হস্তান্তরের সাড়ে চার মাসেও এ গ্রোয়ার্স মার্কেটের দোকানগুলো চাষিদের মাঝে বরাদ্দ দিতে দেরি হচ্ছে। তবে নভেম্বরের মধ্যেই তা কৃষকদের মাঝে বরাদ্দ দেয়া হবে। আর যথাযথ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার স্বার্থেই আপাতত এ মার্কেটে ফুটপাতের হকারদের বসতে দেয়া হয়েছে। তবে নেশাখোরদের আড্ডা দেয়ার বিষয়টি জানা নেই।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor