Sunday, November 16, 2008

স্ট্রবেরী চাষে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

১৬.১১.০৮
ইত্তেফাক ।। মাটি ও মানুষের কৃষি

স্ট্রবেরী একটি অত্যš- রসালো ও সুস্বাদু ফল। স্ট্রবেরী গাছ দেখতে অনেকটা থানকুনি অথবা আলুর গাছের মত, তবে পাতা আরো বড় এবং চওড়া। এটি থানকুনি গাছের মতই রানারের মাধ্যমে চারা চারদিকে ছড়াতে থাকে। পাশ থেকে বের হওয়া পরিণত রানার কেটে আলাদা লাগিয়ে এর চাষ করা সম্ভব। তবে এর বীজ বর্তমানে পাওয়া যাচ্ছে। একটি স্ট্রবেরী গাছ থেকে রানারের মাধ্যমে বংশ বৃদ্ধি করলে বছরে কয়েকশত চারা উৎপাদন করা সম্ভব। স্ট্রবেরী শীত প্রধান দেশের ফল তাই বেশি তাপমাত্রার কারণে বাংলাদেশে এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যš- এ গাছ বাঁচিয়ে রাখা খুব কষ্টসাধ্য। স্ট্রবেরী ফল কাঁচা অবস্থায় সবুজ এবং পাকা অবস্থায় টকটকে লাল রঙের হয়। ফলটি দেখতে অনেকটা লিচুর মত। স্ট্রবেরী জীবন রক্ষাকারী নানা পুষ্টি উপাদানে সমৃদ্ধ। এতে আছে ভিটামিন এ, সি, ই, ফলিক এসিড, সেলেনিয়াম, ক্যালসিয়াম, পলিফেনল, এলাজিক এসিড, ফেরালিক এসিড, কুমারিক এসিড, কুয়েরসিটিন, জ্যান্থোমাইসিন ও ফাইটোস্টেরল। এদের মধ্যে এলাজিক এসিড ক্যান্সার, বার্ধক্য, যৌনরোগ প্রতিরোধের গুণাগুণ আছে বলে জানা গেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম. মনজুর হোসেন ১৯৯৬ সালে জাপান থেকে একটি স্বল্প দিবা দৈর্ঘ্য জাতের স্ট্রবেরী বাংলাদেশে আবাদের চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি প্রথমে দেখতে পান যে, এই জাতটি রানারের মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি হচ্ছে না। এমনকি ফলের আকার অনেক ছোট হচ্ছে। যা বাণিজ্যিকভাবে চাষের উপযোগী নয়। পরে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত টিস্যু কালচার ল্যাবে গত কয়েক বছর গবেষণার মাধ্যমে একটি জাত উদ্ভাবনে সক্ষম হন। যা বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা সম্ভব। তার জাতটির নাম এস.টি -৩। এটি অক্টোবরের তৃতীয় সপ্তাহে মাঠে লাগালে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে মার্চ মাস পর্যš- ফলন দেবে বলে তিনি জানান। তিনি আরও জানান প্রতি গাছ থেকে উক্ত চার মাসে ২৫০-৩০০ গ্রাম পর্যš- ফলন পাওয়া সম্ভব। প্রতিটি স্ট্রবেরী গড় ওজন ১০ থেকে ১৫ গ্রাম। অধ্যাপক ড. এম. মনজুর হোসেন গত ৩ বছর ধরে রাজশাহী মহানগীর পদ্মা আবাসিক এলাকার ভদ্রায় আকাফুজি নার্সারীতে এটি সফলভাবে চাষ করে আসছেন। এ বছর তিনি বাংলাদেশ স্ট্রবেরী এ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জেলায় চারা সরবরাহ করছেন। স্ট্রবেরী একটি অধিক লাভজনক ফসল হওয়ায় এবার রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার কর্তৃপক্ষ কয়েদিদের স্ট্রবেরী চাষ প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য প্রদশর্নী প¬ট তৈরি করে স্ট্রবেরী চাষ করছে। গত বছর এ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা চট্রগ্রাম, কুমিল¬া, ঢাকা, খুলনা, কুষ্টিয়া, সিলেট, পঞ্চগড়, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় স্ট্রবেরী চাষ করে আশাতীত ফলন পেয়েছেন বলে তিনি জানান। অধ্যাপক মনজুর আরও বলেছেন, বাংলাদেশের সব এলাকার সব মাটিতেই স্ট্রবেরী চাষ সম্ভব বলে প্রমাণিত হয়েছে। তবে বেলে দো-আঁশ মাটি সর্বোত্তম। উজ্জ্বল সূর্যালোকিত খোলামেলা ও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাযুক্ত জমি নির্বাচন করতে হবে। মাটির অ¤¬তা বা ক্ষারতা হতে হবে ৬.০ থেকে ৬.৫-এর মধ্যে। এজন্য স্ট্রবেরী চাষের আগে মাটির অ¤¬তা বা ক্ষারতা এবং পুষ্টিমাত্রা পরীক্ষা করে সে অনুযায়ী চাষ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। উঁচু মান ও ফলন পাওয়ার জন্য দিনের তাপমাত্রা ২০-২৬ক্ক সে. এবং রাতের তাপমাত্রা ১২-১৬ক্ক সে. হলে ভাল হয়। দিনে কমপক্ষে ৮ ঘন্টা সূর্যালোকের উপস্থিতি স্ট্রবেরীর বৃদ্ধির জন্য সবচেয়ে ভাল। দিনের দৈর্ঘ্য ১৪ ঘন্টার কম হলে স্ট্রবেরীর ফুল আসতে শুরু করে। তাপমাত্রা ৩৮ক্ক সে. এর বেশি হলে স্ট্রবেরীর গাছ মারা যায়।

স্ট্রবেরীর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে তিনি আরও বলেছেন, স্ট্রবেরী চাষের জন্য মাটি শোধন করে নিলে এর রোগবালাই অনেক কম হয়। এজন্য প্রতি ১ শতাংশ জমিতে ৪০ থেকে ৬০ গ্রাম বি¬চিং পাউডার ব্যবহার করা যেতে পারে। অ¤¬তা বা ক্ষারতা কম হলে মাটিতে প্রয়োজন মত ডলোমাইট ব্যবহার করতে হবে। মাটির বেড তৈরি করে স্ট্রবেরী চাষ করা ভাল। বেড থেকে বেডের দূরত্ব হবে ৩০ ইঞ্চি। প্রতিটি বেডে ৪৫ থেকে ৫০ কেজি গোবর পচা সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। এরপর মাটি শোধন করতে হবে। মাটি শোধন শেষ হলে প্রতি বেডে ৭৫০ গ্রাম মিশ্র সার (৬% নাইট্রোজেন, ৮% ফসফেট ও ৪% পটাশ) ছড়িয়ে মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। এর পরে সমপরিমাণ একই সার ৪.৫ক্ষ্ম গভীরে বেডের মাঝ বরাবর লম্বালম্বিভাবে প্রয়োগ করে মাটি দিয়ে লাইন ভরে দিতে হবে। নাইট্রোজেনের উৎস হিসাবে ইউরিয়ার পরিবর্তে অ্যামোনিয়াম সালফেট ব্যবহার করা ভাল। এরপর প্রতি বেডের মাঝ বরাবর দুই সারিতে চারাগুলো লাগিয়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে চারা থেকে চারার দূরত্ব হবে ১২ ইঞ্চি এবং লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব হবে ৩০ ইঞ্চি। চারা বিকেলবেলা লাগানো উত্তম। চারা লাগানোর পরই বেড ঝরনার পানির মাধ্যমে হালকা করে ভিজিয়ে দিতে হবে। প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৬ হাজার চারা লাগানো যায়।

এক প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে যে ১ বিঘা জমিতে স্ট্রবেরী চাষ করলে খরচ হয় প্রায় দেড় লাখ টাকা এবং ছয় মাসে আয় হয় প্রায় ৪ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে ১ বিঘা জমিতে প্রয়োজনীয় ৬ হাজার চারার মূল্য ধরা হয়েছে ১লাখ ২০হাজার টাকা এবং উৎপাদিত দেড় হাজার কেজি স্ট্রবেরীর প্রতি কেজির মূল্য ধরা হয়েছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। ঢাকার বিভিন্ন সুপার মার্কেটগুলোতে বিদেশ থেকে আমদানি হয়ে আসা স্ট্রবেরী পাওয়া যায় বর্তমানে যার প্রতি কেজির মূল্য ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা।

বাংলাদেশ স্ট্রবেরী এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের উদ্যান উন্নয়ন কেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক সরদার মোঃ সালাউদ্দিন বলেছেন, বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই স্ট্রবেরী চাষ করা সম্ভব। স্ট্রবেরী অত্যš- লাভজনক ফসল হওয়ায় স্ট্রবেরী চাষ করে শত শত কৃষক ও বেকার যুবক স্বাবলম্বী হতে পারে। এরজন্য প্রয়োজন সরকারি ও বেসরকরি বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা। আবু সালেহ মোঃ ফাত্তাহ, রাজশাহী

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor