Sunday, November 16, 2008

উত্তরাঞ্চলে প্রতি বছর এক ভাগ আবাদি জমি কমে যাচ্ছে

১৫.১১.০৮
সমকাল ।। কাজী শাহেদ, রাজশাহী

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার সাদিপুর মোলল্গাপাড়া ৫ বছর আগেও গোটাটাই ছিল বিল এলাকা। বিলের বিস্টøীর্ণ জমিতে হতো ধান চাষ। ভরাট করে বসতভিটা গড়তে গড়তে সেই বিলে উঠেছে বাড়িঘর। ধানের জমি এখন লোকালয়, বিল এখন পাড়া। এলাকার আবদুল হামিদ সšøানদের জন্য ধানের জমিতে নির্মাণ করেছেন বসতভিটা। তিনি জানান, সাদিপুর এলাকার সবাই এই কাজ করেছেন।
গোদাগাড়ী উপজেলার চরআষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের মুনসুর রহমান একসময় চাষী ছিলেন। নিজের জমিতে চাষ করে প্রতি বছর যে ফসল ঘরে তুলতেন, তা দিয়েই চলত সংসার। নদীর অব্যাহত ভাঙনের কবলে পড়ে তার কৃষিজমি নদীগর্ভে চলে গেছে। ২০ বিঘা কৃষিজমি হারিয়ে তিনি সংসার চালাতে এখন ব্যবসা করেন। তার মতো অবস্ট’া চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলাতুলি এলাকার আনিসুর রহমানের। পৈতৃক সহৃত্রে পেয়েছিলেন ৬০ বিঘা কৃষিজমি। ভাঙতে ভাঙতে পুরোটাই এখন ভেঙে নদীগর্ভে।
এভাবেই উত্তরাঞ্চলে দিন দিন কমছে আবাদি জমির পরিমাণ। ফসলি জমিতে বড় বড় স্ট’াপনা নির্মাণ, জনসংখ্যার চাপ এবং নদী ভাঙনের কারণে প্রতি বছর আবাদি জমির পরিমাণ কমে আসছে। সরকারি হিসাবে প্রতি বছর শতকরা ১ ভাগ হারে তা কমছে। গত ১০ বছরে শুধু নদী ভাঙনের কারণেই কমে গেছে ৫৫ হাজার হেক্টর আবাদি জমি।
রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি তথ্য অফিস জানায়, ২০০৬ সালে উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলায় আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ১৪ লাখ ২৩ হাজার ৪৮৭ হেক্টর। ২০০৮ সালের তথ্য অনুযায়ী, উত্তরের এই জেলাগুলোতে আবাদি জমির পরিমাণ রয়েছে ১৪ লাখ ১৮ হাজার ৮৪৪ হেক্টর। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, মাত্র দুই বছরে কমেছে সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর আবাদি জমি। উত্তরের ৮টি জেলার মধ্যে রাজশাহীতে ১ লাখ ৮৩ হাজার ২৪৩, নওগাঁয় ২ লাখ ৭৩ হাজার ৮৩২, নাটোরে ১ লাখ ৫০ হাজার ৭৮৮, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬৫৪, বগুড়ায় ২ লাখ ২৬ হাজার ৭৯৭, জয়পুরহাটে ৮০ হাজার ৪০৫, পাবনায় ১ লাখ ৮০ হাজার ৯০৫ এবং সিরাজগঞ্জে ১ লাখ ৮৩ হাজার ২২০ হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে।
কৃষি স¤ক্স্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, আবাদি জমির পরিমাণ সবচেয়ে বেশি কমেছে প™§া, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্টøা ও ধরলা নদীর তীরবর্তী এলাকায়। নদী ভাঙনের কারণে বগুড়া, রংপুর, গাইবাল্পব্দা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় গত ৫ বছরে ৪৪ হাজার হেক্টরের বেশি আবাদি জমি হারিয়ে গেছে। এছাড়া ওই এলাকায় নদী ভাঙন এবং নদী অববাহিকায় বালি জমে চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়েছে ৫৫ হাজার হেক্টর জমি।
রাজশাহী পানি উল্পুয়ন বোর্ড সহৃত্র জানায়, বন্যার সময় বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বগুড়ার গাবতলী, সারিয়াকন্দি ও সোনাতলা এবং সিরাজগঞ্জের কাজীপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুরের ৩৮টি গ্রামসহ প্রায় ২৯ হাজার হেক্টর জমি বালির আস্টøরণে ঢাকা পড়েছে। ফলে ওই জমি চাষাবাদের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। ২০০৬ সালে পাবনায় আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯৮ হাজার ৫৩৫ হেক্টর। সেই জমির পরিমাণ এ বছর নেমে এসেছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৯০৫ হেক্টরে। মাত্র দুই বছরে পাবনায় আবাদি জমির পরিমাণ কমেছে ১৩ হাজার ৬৩০ হেক্টর। এছাড়া যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্টøা ও ধরলা নদীর চরাঞ্চলে চর পড়ে আবাদের অযোগ্য হয়ে পড়েছে অনেক জমি। বগুড়া, রংপুর, গাইবাল্পব্দা, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, পাবনা এবং সিরাজগঞ্জ জেলার ৩ শতাধিক চরে মানুষ চাষাবাদ করতে পারে না।
রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি তথ্য কর্মকর্তা পলাশ সরকার জানান, দেশে প্রতি বছর শতকরা ১ ভাগ হারে কৃষিজমি কমছে। কর্মসংস্ট’ানের জন্য কলকারখানা গড়ে তোলা, জনসংখ্যা বৃ™িব্দর ফলে ঘরবাড়ি নির্মাণ এবং নদী ভাঙনের কারণে উত্তরাঞ্চলে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাওয়ার হার বেশি। তবে আগের পতিত জমিগুলো চাষাবাদের সঙ্গে যোগ হচ্ছে। তিনি জানান, অনেক কৃষক তার যে পরিমাণ জমি থাকে, তার অর্ধেকে চাষাবাদ করতেন। বাকি জমি পরিত্যক্ত থাকত। সেখানে ঝোপঝাড় হয়ে থাকত। এখন ওই জমির ঝোপঝাড় পরিষ্ফ‹ার করে চাষাবাদ করা হচ্ছে। এছাড়া পুকুরপাড়, বাঁশঝাড় এবং পরিত্যক্ত ভিটা নতুনভাবে আবাদি জমির তালিকায় যোগ হচ্ছে।
উত্তরাঞ্চলে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাওয়া প্রসঙ্গে রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোনমি অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের সভাপতি ড. মোঃ আরিফুর রহমান জানান, আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে জনসংখ্যা বৃ™িব্দর ফলে বাসস্ট’ান নির্মাণ। এছাড়া অপরিকল্কিপ্পত বনায়নের কারণেও আবাদি জমি কমছে।
রাজশাহী কৃষি স¤ক্স্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ব্রজহরি দাস জানান, আবাদি জমি রক্ষা করতে হলে পরিত্যক্ত জমিগুলোর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। প্রতি বছর বাড়ি-ঘর নির্মাণের জন্য যে পরিমাণ জমি ব্যবহƒত হয়, তা রোধ করতে হবে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor