Monday, September 15, 2008

সিডর বিধ্বস্ত পিরোজপুরে পেয়ারা চাষীদের দীর্ঘশ্বাস থামেনি

১৬.০৯.০৮
।।যায়যায়দিন।। কিবরিয়া মুরাদ পিরোজপুর

দুঃস্বপ্ন, দীর্ঘশ্বাস, হাহাকার-এ তিন শব্দ দিয়েই বলে দেয়া যায় কেমন আছেন দক্ষিণাঞ্চলের পেয়ারা চাষীরা। পিরোজপুরের স্বরূপকাঠীর পেয়ারা চাষী আরতি ম-লের দেড় একরের পেয়ারা বাগান। প্রতিবছর এ বাগান থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে মোটামুটিভাবে সংসার চলে তার। স্বামী সুবোধ ম-ল বাগানে কাজ করার পাশাপাশি দিন মজুরি করে সংসারের কিছুটা হাল ধরেন। কিন্তু বেশকিছু দিন ধরে অসুস্থ থাকায় এখন আর সেটাও করতে পারেন না। তাই আরতি ম-লের পুরো বছরের ভরসা ওই দেড় একরের পেয়ারা বাগান। কিন্তু ১৫ নভেম্বরের সিডর পাল্টে দিয়েছে আরতি ম-লের সব হিসাব-নিকাশ। কলেজ পড়ুয়া দুই ছেলে, অসুস্থ স্বামী নিয়ে দিশেহারা আরতি ম-ল। পেয়ারার ফলন বিপর্যয়ে এ বছর শুধু আরতি ম-লই নয় দক্ষিণাঞ্চলের পেয়ারা চাষীদের মধ্যে শুধুই হাহাকার।
দক্ষিণাঞ্চলের তিন জেলা বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরের তিন হাজারেরও বেশি একর জায়গা জুড়ে প্রায় ১৫০ বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারা চাষ হয়ে আসছে। এর মধ্যে শুধু পিরোজপুরের স্বরূপকাঠির চারটি ইউনিয়নেই ১ হাজার ৬০০ একর জায়গায় ২ হাজার ৫টি বাগানে পেয়ারা চাষ হচ্ছে। এছাড়া বরিশালের বানারিপাড়া উপজেলার সৈয়দকাঠি, উদয়কাঠি, ইলুহারের ৫৫০ একর জায়গা জুড়ে ও ঝালকাঠির ভীমরুলি, পোষন্ডা, শতদশকাঠি, কাফুরাকাঠি, জগদিশপুর, ডুমুরিয়ার ৮৫০ একর জায়গা জুড়ে পেয়ারা চাষ হচ্ছে। এর মধ্যে স্বরূপকাঠির আটঘর কুড়িয়ানা পেয়ারা বাগানটি দেশের সর্ববৃহৎ পেয়ারা বাগান। সংশিষ্টদের মতে এটি এশিয়ারও সর্ববৃহৎ পেয়ারা বাগান।
সিডরের আঘাতে ব্যাপকভাবে পেয়ারা বাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক গাছপালা ভেঙে ও উপড়ে গেছে। এ অঞ্চলের প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবারের একমাত্র উপার্জন আসে পেয়ারা থেকে। ফসল তোলা, পরিবহন ও পেয়ারা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকে আরো প্রায় দুই হাজার পরিবার। এভাবে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার পরিবার এবার অনেকটা উপার্জনহীন, কর্মহীন সময় কাটাচ্ছে। পেয়ারা চাষীরা জানায়, সিডরে পেয়ারা গাছ উপড়ে ফেলেছে, না হয় ভেঙে দিয়েছে কিংবা করেছে এলোমেলো। বাগান হয়ে গেছে ল-ভ-। ঝড়ের পরে ৫-৬ দিন পর্যন্ত পেয়ারা গাছ দাঁড় করিয়ে খুঁটি বেঁধে সোজা করার কাজ চলেছেন। আদমকাঠি গ্রামের পেয়ারা চাষী অমল ম-ল জানান, সিডরের পরে শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় সব গাছের পাতা শুকিয়ে ঝরে যায়। ফলে এ মৌসুমে ফুল-ফল তেমন ধরেনি। ঝড়ে ফেলা গাছগুলো ৫-৬ দিনের মধ্যে হেলে পড়ে মাটিতে নতুন শেকড় দেয়। ফলে সিডরের ৫-৬ দিন পর থেকে আর সোজা করার কাজ করা যায়নি ঠিকমত। ২০০-২৫০ টাকায়ও পাওয়া যায়নি কৃষি শ্রমিক। এসব গাছে শুয়ে পড়া অবস্থায় কিছু ফুল-ফল ধরেছিল। কিন্তু তা জোয়ারের পানিতে ডুবে যায়। ফলে ফল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় মৌসুমের শুরুতেই দেখা দেয় ফলন বিপর্যয়। দক্ষিণাঞ্চলের পেয়ারা চাষীরা এ মৌসুমে যে ফলন বিপর্যয়ের কবলে পড়ে আর্থিক সঙ্কটে পড়েছেন, তা কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজন সরকারি বিশেষ ও সমন্বিত উদ্যোগ।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor