Monday, September 15, 2008

মধুপুরের কলার রাজ্য

১৬.০৯.০৮
।।সমকাল।। মুক্তমঞ্চ
দীপংকর গৌতম ।। হাবিবুর রহমান

মধুপুর লালমাটি পাহাড়ের পিরোজপুর, চাপাইদ, কাকরাইদ, মমিনপুর, শোলাকুড়ি ও আউশনারাসহ প্রায় ৫০টি গ্রামে কলা আবাদ করে ক্ষুদ্র ও প্রাšিøক কৃষকদের ভাগ্য পাল্কেল্ট গেছে। পুরুষের পাশাপাশি মেয়েরাই অংশ নিচ্ছে কলা আবাদে। আর এ আবাদের সুবাদে কাকরাইদ গ্রামের হারুন, জলছত্র গ্রামের আতিকুল, আয়নাল হক, অরণখোলা গ্রামের আকবর আলী, পিরোজপুর গ্রামের মইনুল হক, আউশমারা গ্রামের রাজিব হাসান, হাবিবুলল্গাহ মরিয়ামসহ ৫০টি গ্রামের সহস্রাধিক কৃষক পরিবারে দারিদ্র্য কমেছে। পরিবারে এসেছে সচ্ছলতার ছোঁয়া। এ এলাকার ক্ষুদ্র ও প্রাšিøক চাষীর কলা আবাদের সাফল্য দেখে আশপাশের গ্রামগুলোতেও চাষীরা এগিয়ে আসছে কলা আবাদে। সরজমিনে মধুপুর উপজেলার কাকরাইদ সাইনামারি, পিরোজপুর গ্রামে পরিদর্শনে গেলে তাদের কলা আবাদের কাহিনী জানা যায়। এলাকায় পাহাড়ি মাটিতে ধান, পাট, আখ ও আলু তেমন ভালো ফলন হয় না। এসব ফসল আবাদ করে ফসল তুলে আনাই মুশকিল। এ কারণে একসময় জমি থাকা সত্ত্বেও এলাকার প্রাšিøকরা চরমভাবে দারিদ্র্যের শিকার ছিল। অন্যের জমিতে মজুর খেটে, রিকশাভ্যান চালিয়ে কোনোমতে অনাহারে-অর্ধাহারে বহু ক®েদ্ব তাদের জীবন চলত। ৭ বছর আগে কাকরাইদ ও পিরোজপুর গ্রামে দু’চারজন ক্ষুদ্র কৃষক তাদের জমিতে দেশি জাতের কলার সঙ্গে সাগর কলার আবাদ শুরু করেন। এতে তাদের ফলন ভালো হয়। দেখেন লাভের মুখ। কৃষকদের এ সাফল্য দেখে আশপাশের চাপাইদ, কুড়াগাছা, মমিনপুর, পিরগাছা, ভুটিয়া, মাগšিøনগর, সাইনমারি, বেরিবাইদ, টেলকি, জটবাড়ি, জলছত্র, গাছাবাড়ি, আমলিতলা, মোলাকুড়ি, কাকরাইদসহ বিভিল্পু গ্রামের কৃষকরা ও প্রাšিøক মহিলারা আশা কাকরাইদ, পিরোজপুর মধুপুর-১, মধুপুর-২, মোটেরবাজার ব্রাঞ্চের ম্যানেজার খালেক, জুলহাস উদ্দিন, জিনাত রেহেনা, আকতারুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সদস্য হওয়ার জন্য। অন্যান্য ফসল আবাদ করার চেয়ে কলা আবাদে একটু বেশি পুঁজি লাগে। তাই তারা ঋণ তোলে কলা আবাদের দিকে মনোযোগ দেন। এভাবে দিন দিন বাড়তে থাকে কলা আবাদ। এখানে বর্ষা ও শীত দুই মৌসুমেই সহজে কলা আবাদ করা যায়। এ এলাকায় এখন হাজার হাজার একর জমিতে কলার আবাদ। গুণে ও মানে এসব কলা উৎকৃ®দ্ব, ত্রেক্রতারও কোনো অভাব নেই। এ এলাকায় বেসরকারি উল্পুয়ন সংস্ট’া আশার সদস্যরা জানান, কলা আবাদ করে গত ৭ বছরে এলাকার প্রায় সহস্রাধিক হতদরিদ্র ও প্রাšিøক কৃষকের জীবনে সচ্ছলতা এসেছে। তাদের মতে, কলা আবাদ এলাকার আর্থসামাজিক অবস্ট’ারও ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এ পরিবর্তন দেখে আশপাশের পাহাড়িয়া উর্বর ভূমির গ্রাম মাগšিøনগর, রাজাবাড়ি, ইদিলপুর, হলুদিয়া, কাউচির বাজার, ভবানিটেকিসহ বিভিল্পু গ্রামেও ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ছে কলার আবাদ। তারা জানান, খ- খ- জমিতে খুবই অল্কপ্প খরচে কলা চাষ করা যায়। উৎপাদিত কলার চাহিদাও ভালো। বাজারমহৃল্যের কারণে কৃষকের বেশি লাভ হয়। এজন্যই এলাকায় কলা আবাদ বাড়ছে। কথা হয় আশার সহৃর্যমুখী সমিতির হারুনের সঙ্গে। তার বাড়ি আকালিয়া। তার স্টúী হাসনা হেনা প্রথমে আশা থেকে ৪ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ১৫ শতাংশ জমিতে কলা আবাদ করেন। তাতে তার ভালো লাভ হয়। সে লাভের টাকায় ঋণ পরিশোধ করতে ও নিজের খরচ তুলতে কোনো অসুবিধা হয়নি। পরের বছর ৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তার প্রতিবেশী শাজাহানের কাছ থেকে আরো ১৫ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে মোট ৩০ শতাংশ জমিতে কলা চাষ করেন। কার্তিক মাসে জমি চাষ করে নিজের মাথা খাটিয়ে গোবর-সার ও রাসায়নিক সার মিশিয়ে জমি তৈরি করেন। জমিতে লাগান ৩০০ কলার চারা। তাতে ওই জমি থেকে কলা বিত্রিক্র করে তার খরচ বাদে লাভ হয় ৮ হাজার টাকা। তৃতীয়বার তিনি ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে আরো ২০ শতাংশ জমি লিজ নিয়ে মোট ৫০ শতাংশ জমিতে কলা চাষ করেন। তাতে আরো লাভ হয় ২০ হাজার টাকা। চতুর্থবার তিনি ১৪ হাজার টাকা ঋণ তোলেন। এ টাকা দিয়ে তিনি লাভের টাকার সঙ্গে যোগ করে নতুন করে নিজের নামে জমি কেনেন। পরে শুরু করেন পুরোদমে কলা আবাদ। হাসনা হেনা জানান, এ বছর শীতকালে তার ৮০ শতাংশ জমিতে ৮০০ কলার ছড়ি বিত্রিক্র করতে পারবেন। কলা চাষ করে হাসনার স্ট^ামী হারুন এখন স্ট^াবলল্ফ^ী। তিনি জানান, কলার আবাদ তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। এক সময়ের দিনমজুর অভাবী হাসনা হেনার বাড়িতে এখন টিনের ঘর। ছেলেমেয়েরা স্ট‹ুলে পড়ে। সংসারে অভাব নেই। কথা হয় নাজমা বেগমের সঙ্গে। তার প্রতিবেশীর সঙ্গে পরামর্শ করে সমিতিতে ভর্তি হন। তিনি জানান, তার ঋণ পেতে অন্যদের মতো দেরি হয়নি। প্রথমে তিনি ৪ হাজার টাকা ঋণ নেন। এই টাকা দিয়ে নিজের জমিতে রোপণ করেন ৩০০ কলার চারা। ভালোভাবে সার-সেচ দিয়ে যÍু করেন। ৩০০ ছড়ি কলা ২০ হাজার টাকা বিত্রিক্র করেন। ভ্যান চালিয়ে নিজের জমিতে ফসল করে কিস্টিø পরিশোধ করেন। আর কলা বিত্রিক্রর টাকা সল্ফ^লের জন্য রেখে দিয়েছেন। পরেরবার ৫ হাজার টাকা ঋণ ও নিজের জমানো ৫ হাজার টাকা একত্র করে ৩০ শতাংশ জমিতে কলা চাষ করেন। নাজমা বেগমের স্ট^ামী মফিজ উদ্দিন জানান, বাবার রেখে যাওয়া ২০ শতাংশ জমিই তার সল্ফ^ল। কলা আবাদই তার সব অভাব দহৃর করেছে। পাইকাররা এসে বাড়ি থেকে কলা কিনে নিয়ে যান। কোনো ঝামেলা নেই। কথা হয় পীরগাছা গ্রামের আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে। তিনি জানান, কলা আবাদ করতে প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। গ্রাম্য মহাজনদের কাছ থেকে টাকা নিলে সুদ বেশি। ঝামেলাও অনেক। ব্যাংকগুলোতে কাগজপত্রের ঝুটঝামেলা ঘোরাঘুরি। ২০০৭ সালে তিনি কলা আবাদের জন্য অ্যাগ্রিলোন হিসেবে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন। ৫০ হাজার টাকার সঙ্গে তার আরো নিজের পুঁজি দিয়ে কলার আবাদকে বেগবান করেন। ওই বছর তিনি ৮ বিঘা জমিতে ২ হাজার ৪০০ কলার চারা রোপণ করেন। সংসারের বাড়তি ফসল বিত্রিক্র করে কিস্টিø পরিশোধ করেন। এভাবে মাসিক কিস্টিøতে ১২ মাসে ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। তার লেনদেন দেখে কর্তৃপক্ষ খুশি হয়ে আবার অ্যাগ্রিলোনের আওতায় ৭০ হাজার টাকা ঋণ দেন। এই ৭০ হাজার টাকা দিয়ে তিনি আরো ৪ বিঘা জমি বেশি করে কলা চাষের আওতায় আনেন। এমনিতে তিনি এ লোন নিয়ে আরেকটু আরামে চাষ করতে শুরু করেন। এতে কলা আবাদের প্রতি তার মনোযোগ ™ি^গুণ বৃ™িব্দ পায়। ১২ বিঘা জমিতে করেন কলার আবাদ। ভালোভাবে যÍু নেন, বাগানের ফলনও হয় ভালো। ওই এলাকায় এভাবে অনেকেই খুঁজে পেয়েছেন আͧকর্মসংস্ট’ানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠার পথ।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor