Saturday, September 20, 2008

কম্পিউটারে উদ্ভিদের রোগ নির্ণয়

২১.০৯.০৮
ইত্তেফাক ।। মোঃ শাহীন আলম ও তাওহিদুল ইসলাম

সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষ কোন না কোনভাবে উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল। আধুনিক সভ্যতার শুরু থেকেই তাই মানুষ কৃষির উপর সর্বোচ্চ নজর দিয়েছে। শুরু হয়েছে কৃষির উপর গবেষণা ও নতুন নতুন উদ্ভাবন। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী মুহাম্মদ মো¯-াগীজ বিল¬¬াহ উদ্ভাবন করেছেন এমনই এক প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে পাতা দেখেই একটি উদ্ভিদের রোগ বলে দেবে কম্পিউটার।

বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে মানুষসহ বিভিন্ন পশুপাখির রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে কম্পিউটারসহ আরও উন্নত ধরনের প্রযুক্তি। প্রাণীজগত বাদে জীবজগতের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য অংশ হচ্ছে উদ্ভিদজগত। আর এই উদ্ভিদজগতের বিভিন্ন রোগ নির্ণয়কল্পে দেশে প্রথমবারের মত উদ্ভিদের পাতা থেকে কম্পিউটারের মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ে সফলতা লাভ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) এর কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ম্যাথমেটিক্স বিভাগের শিক্ষক মুহাম্মদ মো¯-াগীজ বিল¬াহ।

বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতি কৃষিনির্ভর হলেও দিন দিন এদেশের কৃষক বিভিন্ন সমস্যার কারণে কৃষির এই অগ্রযাত্রা থেকে পিছিয়ে পড়ছে। বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে উদ্ভিদের রোগ, পোকামাকড়ের আক্রমণ ইত্যাদি উলে¬খযোগ্য। বাকৃবিতে অবস্থিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্বপ্রথম উদ্ভিদ হাসপাতাল এর তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর উদ্ভিদের প্রায় ১২০০ রোগবালাইয়ের জন্য ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ফসল নষ্ট হয়। টাকার হিসেবে ওই ক্ষতির পরিমাণ ৭০০ থেকে ৮৪০ কোটি টাকা। এই বিশাল ক্ষতির একমাত্র কারণ হচ্ছে সময়মত উদ্ভিদের সঠিক রোগ নির্ণয়ের অপারগতা। মানুষের পক্ষে অতি অল্প সময়ে এই শত শত প্রকার বাহ্যিক রোগ নির্ণয় করা অনেকাংশেই সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। আর এই অসম্ভবকে কম্পিউটারের মাধ্যমে দ্রুত ও সহজতর করার চেষ্টা করছেন মু¯-াগীজ বিল¬াহ। তিনি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে দীর্ঘ এক বছর ধান গাছের বিভিন্ন রোগের উপর গবেষণা চালিয়ে উদ্ভাবন করেছেন এক নতুন প্রযুক্তি। কম্পিউটারের আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ইমেজ প্রসেসিং এবং সেন্সরকে কাজে লাগিয়ে ধান গাছের পাতার বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ সফলতা লাভ করেছেন। এক্ষেত্রে রোগাক্রাš- উদ্ভিদের পাতাকে স্ক্যানিং করে সফটওয়ারের মাধ্যমে কম্পিউটারের মধ্যে ওই রোগের বৈশিষ্ট্যসমূহকে প্রবেশ করানো হয় এবং কম্পিউটার তাৎক্ষণিক বিশে¬¬ষণ করে ফলাফল প্রদান করে। এতে করে ভুলের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বর্তমানে ধানের পাতার কিছু নির্দিষ্ট রোগ নিয়ে চলছে গবেষণা। রোগ সনাক্তকরণের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইপিএম ল্যাব ও উদ্ভিদ রোগ হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ড. এম বাহাদুর মিঞা ।

মুহাম্মদ মো¯-াগীজ বিল¬াহ বলেন- “যদি উচ্চমানসম্পন্ন ছবি এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ রোগাক্রাš- পাতার নমুনা সংগ্রহ করে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা, গবেষণা এবং নিউরাল নেটওয়ার্কে প্রশিক্ষণ করানো যায় তবে এ প্রযুক্তির মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা শতভাগের কাছাকাছি পৌঁছানো সম্ভব হবে।’’ তিনি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ডিজিটাল ক্যামেরার সাহায্যে সরাসরি মাঠ থেকে ছবি সংগ্রহ করে ওয়ার্লেস প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘরে বসেই যাতে রোগ সনাক্ত করা যায় এবং একই সাথে রোগ নির্ণয় যেন মাঠেই করা যায় এমন হাতে বহনযোগ্য, স্বল্পমূল্যের এবং সহজলভ্য যন্ত্র আবিষ্কারের ব্যাপারে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘এ প্রযুক্তিটির কাজ প্রাথমিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং এ ব্যাপারে আরও প্রচুর গবেষণার প্রয়োজন আছে।”

প্রফেসর ড. বাহাদুর মিঞা বলেন, ‘‘এ প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষকরা তুলনামুলকভাবে স্বল্প খরচে সল্প সময়ে উদ্ভিদ রোগাক্রাš- হওয়ার সাথে সাথেই দ্রুত সমস্যা চিহ্নত করে ব্যবস্থা নিলে উৎপাদন প্রত্যাশিত হবে এবং দেশ শত শত কোটি টাকা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।’’ ধানের মত অন্য ফসলের ক্ষেত্রেও এ প্রযুক্তি নতুন দিগš- সৃষ্টি করবে। ধান এবং অন্য ফসলের পাতা দেখে আগাম রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে শস্যকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করতে সহজ হবে। তবে এ প্রযুক্তিটি মাঠ পর্যায়ে বি¯-ারের জন্য সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক সহযোগীতা প্রয়োজন।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor