Monday, September 22, 2008

চিংড়ি শিল্প রক্ষায় সরকারী উদ্যোগ প্রয়োজন

২২.০৯.০৮
ইত্তেফাক ।। জি এম মনিরুল ইসলাম মিনি, সাতক্ষীরা সংবাদদাতা

সাতক্ষীরার চিংড়ি ঘের গুলোতে অজ্ঞাত রোগে মাছ মারা যাওয়া অব্যহত রয়েছে। মাছ মারা যাওয়া বন্ধ না হওয়ায় জেলার চিংড়ি চাষীরাসহ এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা দারুনভাবে আর্থিক সংকটে পড়েছে। একই সাথে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয় বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে পাট শিল্পের ন্যায় চিংড়ি শিল্পেও মারাতœক বিপর্যয় নেমে আসবে। সত্তর দশকের প্রথম দিকে দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চিংড়ি চাষ শুরু হয়। এসব জেলার মধ্যে দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা খুলনা ও বাগেরহাটে চিংড়ি চাষ শুরু হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এর চাষ ও বৃদ্ধি পেতে থাকে। চিংড়ি চাষ অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এর চাষেরও প্রসার ঘটতে থাকে। দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায় ১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশ প্রথম ৭২ কোটি টাকার চিংড়ি মাছ রফতানি করে এর যাত্রা শুরু করে। যা ২০০৭-০৮ সালে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে শুধু সাতক্ষীরা জেলা থেকে গত অর্থ বছরে সাড়ে তের’শ কোটি টাকার চিংড়ি রফতানি করা হয়েছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি খাত হিসাবে চিংড়ি শিল্প স্বীকৃত। কিন্তু বর্তমানে এ শিল্পে যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে তাতে পাট শিল্পের ন্যায় এ শিল্পটিও হুমকির মুখে পড়েছে। চলতি বছর সাতক্ষীরা জেলায় প্রায় ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে শতকরা ৮৫ ভাগ জমির চিংড়ি মাছ গত ৩/৪ মাস যাবৎ অজ্ঞাত রোগে মারা যাচ্ছে। যা এখনো অব্যাহত আছে।

অজ্ঞাত রোগে চিংড়ি মাছ মারা যাওয়া সম্পর্কে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে জানা গেছে বৈরী আবহাওয়া, ঘেরগুলিতে ভাইরাসযুক্ত রেণু ছাড়া, চাষীদের ঘের পরিচর্যায় অবহেলা সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের উদাসিনতা ইত্যাদি। চিংড়ি ঘেরগুলোতে মাছ মারা যাওয়ার ব্যাপারে গত ৯ সেপ্টেম্বর মৎস ও পশু সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক সম্পর্কে সাবেক মৎস প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় চিংড়ি সমিতির সভাপতি ডা: আফতাবুজ্জামান ইত্তেফাককে জানান, নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভাইরাস জনিত কারণে ব্যাপক মাছ মারা যায়। সেখান থেকে উপকূলবর্তী সকল চিংড়ি চাষ এলাকায় এ ভাইরাসের প্রকোপ চলে আসছে। চলতি বছর বৃহত্তর খুলনা এলাকায় ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেশী হওয়ায় কাঙিক্ষত উৎপাদন পাওয়া যাবে না। এর কারণ হিসাবে তিনি বৈরী আবহাওয়ার পাশাপাশি ভাইরাসযুক্ত রেণুর কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন এই সমস্যা নিয়ে ২০০২ সালে তৎকালীন মৎস মন্ত্রী ও সচিবের উপস্থিতিতে একটি সভা হয়। সেখানে হ্যাচারী মালিক সমিতির প্রতিনিধিবৃন্দ হিমায়িত খাদ্য রফতানিকারক সমিতির প্রতিনিধিবৃন্দ, জাতীয় চিংড়ি চাষী সমিতির প্রতিনিধিবৃন্দ ও মৎস মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় রেণু উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের রেণু বাজারজাত করার সময় প্রতিটি পলিব্যাগের গায়ে রেনুর সংখ্যা ,বয়স, পানির লবণাক্ততা, পি এইচ লেভেল এবং সার্টিফাইড টু বি ভাইরাস ফ্রি লিখবে। কিন্তু গত ৬ বছরেরও সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি বা সরকার বাস্তবায়নের জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। ফলে ভাইরাসযুক্ত ও নিম্নমানের রেণু বাজারজাত হওয়ায় চাষীরাসহ এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং কাঙিক্ষত উৎপাদন না হওয়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয় কমে যাচ্ছে। এ শিল্পের উন্নয়নে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কক্সবাজারে সরকার নিয়ন্ত্রিত পিসিআর মেশিনসহ একটি রেণুর মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগার কেন্দ্র স্থাপন, প্রাকৃতিক উৎস হতে আহরিত ব্রুড গুলো ভাইরাসমুক্ত কিনা তা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা, পিসিআর মেশিনে পরীক্ষা করে ভাইরাসমুক্ত ও মানসম্মত রেনু বাজারজাত করা, বাজারজাত করার সময় প্রতিটি পলি ব্যাগের গায়ে উল্লেখিত তথ্য দেয়া, প্রাকৃতিক উৎস হতে রেণু আহরণ বন্ধ রাখা, মাঠ পর্যায়ে পিসিআর ল্যাবের সাথে মাটি ও পানি পরীক্ষার ব্যাবস্থা করা,ও ভাইরাস প্রতিরোধে চাষীদের মোটিভেশনের ব্যাবস্থা করা। এসব ব্যবস্থা গ্রহন করলে দেশের চিংড়ি শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor