Wednesday, September 17, 2008

রিকশাচালকদের কি কৃষি উৎপাদনে নিয়োজিত করা যায় না?

১৭.০৯.০৮
কৃষি ও পরিবেশ
।।ডেসটিনি।। মিজানুর রহমান

কৃষি আমাদের অর্থনীতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। সেদিকে খেয়াল রেখেই আমাদের অর্থনীতিকে পরিচালতি করতে হয়। আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করে খাদ্য অভাব দূর করতে হবে। আমাদের জনসংখ্যা বেশি যে কারণে শ্রমজীবী মানুষও বেশি। তাই খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তন হয়তো অতি সহজে করা সম্ভব হবে না।
তাছাড়া কৃষিজীবীদের অনেকেই এখন শ্রমজীবী হয়ে গেছে। এদের বেশিরভাগই রিকশাচালক, কেননা আপনি দেশের যে প্রান্তে যাবেন দেখবেন রাস্তা-ঘাটে যানজট লেগেই আছে, কারণ দেখে মনে হবে এদেশে রিকশা ছাড়া আর অন্য কোনো কাজই আমাদের নেই। নেই কোনো কলকারখানা কোনো, পতিত জমি। সে কারণে দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করে তাদের প্রধান কাজ হচ্ছে রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করা। কাজেই এই পেশার থেকে আমরা যতদিন মুক্তি না পাব, ততদিন যতই আমরা সচেতনতার কথা বলি না কেন, কোনোভাবেই আমাদের খাদ্যের অভাব দূর করা যাবে না। কারণ আমরা যারা পেশাজীবী আমরা খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তন করলে কি হবে। রিকশাচালক তা খাদ্য অভ্যাস পরিবর্তন করবে না। তার তো আমার মতো দু’জনের খাবারের প্রয়োজন। আজকের কোলকাতার শহরের দিকে লক্ষ্য করুন যেখানে শুধু রিকশাই নয় মানুষ নিজে রিকশা টানতো, আজ সেখানে সারা শহর ঘুরলে আপনি এক-দুইটি ছাড়া রিকশা চোখে দেখবেন না। পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন দেখেছি তারা পরিকল্পিতভাবে চাষাবাদ করে এখন আর রিকশা চালায় না। তাদের খাদ্য অভ্যাসও পরিবর্তন করে ফেলেছে। তারা যে পরিমাণ খাবার খায় তা আমাদের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগ। দেশের বিভাগীয় শহরগুলোর দিকে একটু লক্ষ্য করুন খালি পতিত জায়গায় গড়ে উঠেছে বস্তি। রিকশা শ্রমজীবী মানুষগুলো এই সব বস্তিতে নোংরা আবর্জনার মধ্যে বসবাস করছে। এদের পুঁজি করে গড়ে উঠেছে ছিনতাই, ডাকাতি, মাদকাসক্তের বড় বড় নেটওয়ার্ক। তবে রিকশা একেবারে বন্ধ করে দিতে হবে একথা বলছি না, তবে আস্তে আস্তে বন্ধ করে দিতে হবে। প্রথমে রিকশা তৈরি কারখানা বন্ধ করতে হবে এবং আস্তে আস্তে এদের পুনর্বাসনে ব্যবস্থা করতে হবে। রিকশাচালক বেশির ভাগই রংপুর, শেরপুর, জামালপুর ও বরিশাল জেলার অধিবাসী। এ পেশায় আসার পিছনে অনেক কারণ এ অঞ্চলের লোক কিন্তু অনেক কর্মঠ। অথচ বছরের অর্ধেক সময় এদের কাজ থাকে না বলে অলস সময় কাটায়। তাই এরা শহরে রিকশা চালাতে আসে। ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেট ও দিনাজপুরেও অনাবাদি অনেক জমি রয়েছে সেখানে পরিকল্পিতভাবে এদের পুনর্বাসন করে চাষাবাদ করলে একদিন এদেশেও খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে। বিজ্ঞানভিত্তিক চাষাবাদ করলে ভালো যে কোনো ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। সম্প্রতি এ বিষয়টি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন পিএইচপি গ্রুপের চেয়ারম্যান সুফি মিজানুর রহমান। তিনি তার গ্রামে রূপগঞ্জে ধান উৎপান করে দেখিয়ে দিয়েছেন কৃষিতে অন্যান্য ব্যবসার চেয়ে লাভ অনেক বেশি। অনুরূপ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মেরিডিয়ান গ্রুপের ববস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তাফা কামাল। তিনি চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় আম বাগান করে প্রমাণ করলেন পরিকল্পিতভাবে চাষাবাদ করে সব ফসল উৎপাদন সম্ভব। তাই চায়না, ভারত ও বার্মা থেকে, পেঁয়াজ, আদা বীজ সংগ্রহ করে উৎপাদন করলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রফতানি করে দেশের অর্থনীতি রাখতে পারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। অমানবীয় পেশা থেকে নিস্তার পাবে সমাজ। বন্যা আমাদের ফসলের জন্য একটা ক্ষতিকর প্রভাব তাই এদেশের সব নদ-নদী খনন করে গ্রামগুলো উঁচু করলে একদিকে নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি পারে বর্ষায় অনেক পানি ধরে রাখতে পারবে অন্যদিকে গ্রামগুলোও বন্যার কবল থেকে রক্ষা পাবে, নষ্ট হবে না আমাদের ফসল, ঘরবাড়ি, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল এবং গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট। গ্রামীণ রাস্তাগুলোকেও দীর্ঘ মেয়াদি বৃক্ষ রোপণের পরিকল্পনায় আওতায় আনলে কর্মমুখী হয়ে উঠবে আমাদের গ্রামের কর্মঠ মানুষগুলো। নির্ভর করতে হবে না শহরের রিকশা চালানোর ওপর।
মিজানুর রহমান
৮ ডিআইটি, এক্সটেনশন এভিনিউ পূর্ব মঞ্জুরী
ভবন নিচতলা মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor