Saturday, September 20, 2008

জাম্বুরা: পাহাড়ে আর্থিক সাফল্যের হাতছানি

২১.০৯.০৮
মাটি ও মানুষের কৃষি
ইত্তেফাক ।। মাজহার মিলন

বাজারে এখন নানা বাহারি ফলমূলের সমাহার। দেশী-বিদেশী ফলমূলের ভিড়ে এখনও আমাদের কিছু পুরানো ফল বেশ জনপ্রিয় রয়ে গেছে। স্বাদের ভিন্নতার কারণে এসব ফলমূলের যেমন রয়েছে ক্রেতা চাহিদা তেমনি বাণিজ্যিক উৎপাদনের কারণে রয়েছে সহজলভ্যতাও। আমাদের দেশী ফলের তেমনই একটি হল জাম্বুরা। রমজানের এই বাজারে জাম্বুরার রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ লেবুজাতীয় এই ফলটির জুস কিংবা সরাসরি শাঁসের স্বাদ সারাদিনের রোজার পর শরীরকে চনমনে করে তোলে।

জাম্বুরার ফলন বিচ্ছিন্নভাবে সারাদেশে হলেও শুধুমাত্র জাম্বুরাকেই বাণিজ্যিক ফসল হিসেবে চাষের বিষয়টিকে অনেকের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। কিন্তু এটাই সত্যি, বৃহত্তর সিলেটের কয়েকটি জেলায় ছোটবড় টিলাগুলোতে অনেকদিন ধরেই চলছে জাম্বুরার চাষ। এ অঞ্চেলের অনেক চাষীই শুধুমাত্র জাম্বুরার চাষ করে তাদের জীবিকা নির্বাহই করেন না তাদের অনেকেই আজ লাখপতি। মাত্র দেড় দশক আগেও বি¯-ীর্ণ এই পাহাড়ী পললভূমির মানুষের দিন কাটত অর্থনৈতিক দৈন্যদশার ভেতর দিয়ে। আজ সেই মানুষের মুখে ফুটে উঠছে স্বচ্ছলতার হাসি। নানাধরনের পাহাড়ী ফলমূলের উৎপাদন আর বাজারজাতকরণের সুযোগ সুবিধার জন্য আজ এই সাফল্য। সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক আকারে মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জুড়ি, কুলাউড়া ও আশেপাশের থানাগুলোর ছোটবড় এইসব পাহাড়ের গায়ে চাষ করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ জাম্বুরা। এছাড়াও হবিগঞ্জ ও সিলেটসহ বেশকিছু অঞ্চলে চাষ চলছে এই জাম্বুরার। আগে পুলিশ বা বিডিআর ভারতীয় জাম্বুরা সন্দেহে এই জাম্বুরার বাজারজাতকরণে চাষীদের নানাভাবে নাজেহাল করত। এখন দিন পাল্টে গেছে। সহজেই বিভিন্ন শহরের বাজারে যেতে পারছে এখানকার জাম্বুরা।

মৌলভীবাজারের পাহাড়ী টিলাগুলোর উপর প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই রয়েছে ছোট বড় জাম্বুরার বাগান। দেশী জাতের এই গাছগুলো একবার রোপনের পর তেমন পরিচর্যা ছাড়াই বেড়ে ওঠে। দুবছর পরই শুরু হয় ফলন। প্রতিটি গাছ থেকে বছরে আসে প্রায় ২০০ থেকে ৫০০টি মত জাম্বুরা। একেকটির দাম সর্বোচ্চ বিশ থেকে পঁচিশ টাকা হলেও সর্বনিু পাঁচ থেকে সাত টাকা পর্যš-। গাছগুলো বাঁচেও ত্রিশ থেকে চলি¬শ বছর পর্যš-। জাম্বুরা চাষের মাধ্যমে পরিবর্তন ঘটছে এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার। তাই জাম্বুরা হয়েছে এই এলাকার অন্যতম অর্থকরী ফসল।

শুধুমাত্র জাম্বুরা চাষ করে সহায়-সম্বলহীন অবস্থা থেকে লাখপতি হয়েছে এমন উদাহরণ অনেক। জেলার জুড়ি উপজেলার শুকনাছড়া গ্রামের মায়া বেগম নামে এক পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীর সাথে কথা হল এখানকার জাম্বুরা চাষের রেওয়াজ আর সাফল্যের কথা নিয়ে। মায়া বেগম জানালেন মাত্র কয়েক বছর আগেও তিনি ছিলেন সহায়-সম্বলহীন এক নারী, স্বামী-সš-ান নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করা ছাড়া কোন গত্যš-র ছিল না তার। যে টিলাটিতে তিনি থাকেন, সেখানে কয়েক’শ জাম্বুরার চারা লাগিয়ে তিনি ফলন পাওয়া শুরু করেন মাত্র তিন বছর পর থেকেই। এরপর প্রতিবছর শুধু লাভ আর লাভ। গাছের পরিচর্যা বাবদ কোন খরচ নেই বললেই চলে। কোন রোগবালাইয়ের আক্রমণ হলে সামান্য কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়, খরচ বলতে এটুকুই। মায়া বেগম এখন লাখপতি। প্রতিবছর দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার জাম্বুরা বিক্রি করেন তিনি। নিজের তত্ত্বাবধানেই ট্রাকভর্তি জাম্বুরা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠান। মায়া বেগম এখন এই এলাকার জাম্বুরা চাষীদের মধ্যে একজন মডেল। বাড়ি পাকা করেছেন, জীবনযাত্রায় এনেছেন ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন। এরকম উদাহরণ ওই অঞ্চলে বি¯-র। শুধুমাত্র জাম্বুরাকে প্রধান ফসল করে এ রকম অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা এ অঞ্চল এনেছে রীতিমত ¬িবপ¬ব।

এভাবেই আমাদের দেশের নানা অঞ্চলে বাড়ির আঙ্গিনা ও আশেপাশে করতে পারি জাম্বুরার চাষ। আর এ চাষ করে আর্থিকভাবে আসতে পারে স্বচ্ছলতা। এমনি নানা ফলমূল যেগুলো আপাত অর্থে আমাদের কাছে মনে হয় সামান্য এক-একটি নাম সেগুলো আমাদের প্রধান ফসলের পাশাপাশি হয়ে উঠতে পারে অন্যতম অর্থকরী ফসল। মৌলভীবাজারে জাম্বুরা চাষে আসা এই অর্থনৈতিক সাফল্য এর একটি উলে¬¬খযোগ্য উদাহরণ।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor