Monday, September 22, 2008

এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ হেমেন্দ্র দত্তের কৃষি খামার এবার লাভের মুখ দেখেছে

২২.০৯.০৮
ইত্তেফাক ।। বিমল সাহা,ভ্রাম্যমাণ সংবাদদাতা ।।

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার দত্তনগরের হেমেন্দ্র নাথ দত্তের সবজি খামার আজ এশিয়ার বৃহৎ কৃষি খামারগুলোর অন্যতম। বহুদিন পর এবার খামারটি লাভের মুখ দেখলো। গত অর্থ বছরে (২০০৭-২০০৮) ৪৪ লাখ ৯০ হাজার ৬৭২ টাকা লাভ হয়েছে।

দত্তনগর ফার্মের যুগ্ম পরিচালক জানান, গত অর্থ বছরে এ বৃহত্তম বীজ উৎপাদন খামারের মোট আয় হয়েছে ১০ কোটি ২১ লাখ টাকা। আর মোট ব্যয় হয়েছে ৯ কোটি ৭৩ লাখ ৪শ ৩৭ টাকা। গত অর্থ বছরে আউশ ধান বীজ ৪৩৮ টন, আমন ধান বীজ ৯৩৭ টন, বোরো ধান বীজ ১১শ’ ২২ টন, গম বীজ ৪০৬ টন, ভুট্টা বীজ ৫৮ টন, আলু বীজ ৪১৫ টন এবং প্রায় ১০ টন পাট বীজ উৎপাদিত হয়েছে। নানা কারণে দেশের এ বৃহত্তম বীজ উৎপাদন খামার লোকসান দিয়ে আসছিল। ব্যবস্থাপনার ক্রটি ছিল। আজ থেকে ৬৭ বছর আগে কলকাতার বিশিষ্ট ঠিকাদার হেমেন্দ্র নাথ দত্ত এ বিশাল কৃষি খামার স্থাপন করেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সেনা বাহিনীর রসদ সরবরাহকারি ঠিকাদার ছিলেন। তিনি সেনাবাহিনীর জন্য সবজি সরবরাহের ঠিকাদারি লাভ করেন। তাজা সবজি উৎপাদনের জন্য নিজ গ্রাম দত্তনগরে এ বিশাল কৃষি খামার গড়ে তুলেন। ১৯৪০ সালে এ এলাকা ছিল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন নিভৃত পল্লী। সড়ক ছিল না। রেলপথে দর্শনা স্টেশনে সবজি বহন করে নিয়ে কলকাতায় পাঠানোও ছিল দুরূহ ব্যাপার। দীর্ঘ সময় লাগায় পচে যেত। তিনি দত্তনগরে হেলিপ্যাড স্থাপন করেন। প্রতিদিন হেলিকপ্টারযোগে টাটকা শাক-সবজি কলকাতায় সরবরাহ করে তিনি প্রচুর লাভ করতেন। খামারের কলেবরও বৃদ্ধি করেন। দত্তনগর এ বিশাল খামারের আওতায় ৫টি ফার্ম আছে।

সেগুলো হচ্ছে গোকুলনগর, পাতিলা, মথুরা, খড়িঞ্চা এবং কুশডাঙ্গা। ফার্মগুলোর মোট জমির পরিমাণ দু’হাজার ৭৩৭ একর। আবাদী জমির পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার একর। নীচু জমি আছে ৬শ’ একর এবং বিল এলাকা আছে ২শ’ একরের উপর।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর এইচ দত্ত দত্তনগর খামার ছেড়ে কলকাতায় চলে যান। ম্যানেজার ও কর্মচারিরা খামার দেখাশুনা করতে থাকেন।

১৯৪৮ সাােল তৎকালীন পাকিস্তান সরকার দত্তনগর খামার অধিগ্রহণ করে এবং কৃষি বিভাগের উপর পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ১৯৬২ সালে ফার্মের যাবতীয় সম্পত্তি কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিএডিসি বিভিন্ন শস্য বীজ উৎপাদনে খামারটি কাজে লাগায়। অফিস, বাসভবনসহ নানান স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। সেচের জন্য বসানো হয় গভীর ও অগভীর নলকূপ। আর ক্ষেতে পানি সরবরাহের জন্য পাকা ড্রেন নির্মাণ করা হয়। আগে শ্রমিক দিয়ে শস্য কর্তন ও মাড়াই করা হতো। এখন বড় বড় মেশিনের সাহায্যে ফসল কাটা ও মাড়াই করা হয়। সেচের জন্য ৩৬টি গভীর, ১৩টি অগভীর এবং ১০টি পাওয়ার পাম্প আছে।

দত্তনগর খামারের গভীর-অগভীর নলকূপ বিদ্যুতের সাহায্যে চালানো হয়। কিন্ত চাহিদামত বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। রুটিন লোডশেডিং-এর বকলে পড়ে খামারটি। তখন সেচ যন্ত্রগুলো বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাহত হয় সেচদান। বোরো মৌসুমে সমস্যা বেশি হয়।

বর্তমানে পানি ষ্কিাশন সমস্যাও সৃষ্টি হয়েছে। ৫টি ফার্মের পানি করতোয়া, ভোগেরদাড়ি, উড়কি ও পোড়াবিল দিয়ে নিষ্কাশিত হয়ে থাকে। মাছ চাষের জন্য ওই বিলগুলোর বিভিন্ন স্থানে প্রবাবশালীরা বাঁধ দিয়ে পানি ঠেকিয়ে রাখে ফলে ভারি বৃষ্টি হলে পানি জমে ফসল ডুবে যায়। এ খামারে শস্য বীজ প্রসেসিং-এর আধুনিক ব্যবস্থা নেই। প্রচুর পরিমাণ টমেটো উৎপাদন হয়ে থাকে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor