Wednesday, September 17, 2008

মানবসম্পদ উন্নয়নে চাই কৃষি শিক্ষা

১৭.০৯.০৮
কৃষি ও পরিবেশ
।।ডেসটিনি।। অধ্যক্ষ ফোরকান আলী

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান একটি দেশ। এ দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়ন মূলত কৃষিভিত্তিক। তাই কৃষিশিক্ষা গ্রহণ ও দক্ষতা অর্জন হচ্ছে কৃষি উন্নয়নের মূল হাতিয়ার। কৃষি বাংলাদেশের জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধির মেরুদ-। ‘জাতীয় উন্নতি ও সমৃদ্ধি হলো গাছের ন্যায়। কৃষি হলো তার মূল, শিল্প তার শাখা এবং বাণিজ্য তার পাতা। মূলে ক্ষত দেখা দিলে তা সমস্ত গাছটিকে ধ্বংস করে দেয়।’ চীনা এ প্রবাদটি কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের জন্য খুবই প্রযোজ্য। বাংলাদেশের সার্বিক উন্নতি ও সমৃদ্ধি সুষ্ঠু কৃষি উন্নয়নের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। কৃষি মানুষের মৌলিক চাহিদাবলী যথাÑ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার উপাদানগুলো যোগান দেয়। কৃষি উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অবস্থার উন্নতি ঘটে। আমাদের দেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক কারিগরি কৃষিশিক্ষা ও আধুনিক প্রযুক্তির সার্বিক প্রয়োগ প্রয়োজন। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯২ ভাগ লোকই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভর করে। এই বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও আত্মকর্মসংস্থানের জন্য কৃষিশিক্ষা গ্রহণ অপরিহার্য। এ গুরুত্ব অনুধাবন করে ১৯৯৪ সাল থেকে মাধ্যমিক স্তরে কৃষি শিক্ষাকে একটি আবশ্যিক বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৯৬ সালের এসএসসি পরক্ষার্থীরা আবশ্যিক হিসেবে কৃষিশিক্ষা বিষয়ে পরীক্ষা দেয়। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ১৯৯৭ সাল থেকে যুগোপযোগী এই কর্মমুখী ও আত্মকর্মসংস্থানমূলক বিষয় কৃষিশিক্ষাকে মাধ্যমিক স্তরে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন কারণে অনেক শিক্ষার্থীর আগ্রহ থাকলেও কৃষিশিক্ষা লাভ করতে পারছে না। ফলে তারা যুগোপযোগী কর্মমুখী এই শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আমাদের দেশে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থার ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভর করে। দারিদ্র্য বিমোচন ও মানবসম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কৃষি ও কারিগরিশিক্ষা বাধ্যতামূলকক করা প্রয়োজন। আমাদের দেশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। আর এইসব বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৬০ লাখ। ছাত্রছাত্রীর শতকরা ৫৩ ভাগ মাধ্যমিক স্তরেই ঝরে যায়। যারা মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় তাদের মধ্যে মাত্র ৪০ ভাগ ছেলেমেয়ে উচ্চমাধ্যমিক বা এইচএসসি পরীক্ষা দেয়। কিন্তু এই হার ক্রমান্বয়ে আরও কমছে। মাধ্যমিক শিক্ষা লাভের পর যাদের পক্ষে উচ্চমাধ্যমিক কিংবা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ সম্ভব নয় তারা অন্তত মাধ্যমিক পর্যায়ে কারিগরি ও কৃষি শিক্ষাকে কাজে লাগাতে পারে। আধুনিক পদ্ধতিতে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারে।
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক মেরুদ- হচ্ছে কৃষি। মাঠফসল ছাড়াও কৃষিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মৎস্য পশু-পাখি এবং বনজ সম্পদ। কৃষির এসব শাখা অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। দেশে ৫৭ মিলিয়ন গবাদি পশু, ১৩৭ মিলিয়ন হাঁস-মুরগি এবং স্থলভাগের মধ্যে ২২ লাখ হেক্টর জমিতে বনাঞ্চল রয়েছে। ২০০৪-২০০৫ অর্থ বছরে মৎস্য উৎপাদন হয়েছে ১৮ লাখ টন, যার মধ্যে ১২ লাখ টন অভ্যন্তরীণ জলাশয় থেকে এবং বাকি ৬ লাখ টন সামুদ্রিক এলাকা থেকে। পশু-পাখি থেকে আমরা মাংস, দুধ ও ডিম পাই। যা আমাদের আমিষ ও পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে । মৎস্য সম্পদ রফতানি করে বাংলাদেশ ২০০৪-২০০৫ সালে ২১২৮ কোটি টাকা আয় করে। এ সময়ে জিডিপিতে মৎস্য সম্পদের অবদান ছিল ৫ ভাগ এবং রফতানি আয়ে ১২ ভাগ। বন পরিবেশতন্ত্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বনজ সম্পদ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান রাখছে। কৃষিজ বনায়নের মাধ্যমে বনায়ন সৃষ্টি করা সম্ভব। দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ৫ ভাগ বন থেকে আসে। কৃষির উপর্যুক্ত শাখাগুলোর দক্ষ ব্যবস্থাপনার জন্যও কৃষি ও কারিগরি শিক্ষা আবশ্যক। কৃষিশিক্ষা প্রসার ঘটলে সর্ব স্তরের মানুষ কৃষি সম্বন্ধে জানবে। মানুষ কৃষি ও কারিগরি শিক্ষা সম্পর্কে সচেতন হলে চাষের প্রয়োজনীয়তা বুঝবে। এ সম্পর্কে দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা অর্জন করবে। এতে মানুষের মধ্যে চাষাবাদ ও কারিগরি কাজের উৎসাহ জাগবে। এই উৎসাহ তাদেরকে কৃষির বিভিন্ন সমস্যা ও সমাধান খুঁজে বের করতে সাহায্য করবে এবং আধুনিক কলাকৌশল ব্যবহার করতেও প্রেরণা যোগাবে। কারিগরি ও কৃষিশিক্ষায় শিক্ষিত এসব লোকজন স্ব-কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে। শিক্ষা কাঠামোর মাধ্যমিক পর্যায়ে কারিগরি ও কৃষিশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা একান্ত প্রয়োজন। পাশাপাশি প্রাথমিক, উচ্চ মাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কারিগরি ও কৃষি শিক্ষার ওপর আরও গুরুত্ব দেয়া উচিত। দেশের বৃহত্তর কৃষক জনগোষ্ঠীকে কারিগরি ও কৃষিশিক্ষা প্রদানের জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। এ শিক্ষা কার্যক্রম সরকারের বিভিন্ন অধিদফতর পরিচালনা করতে পারে। এতে দেশের দরিদ্রতা দূর করে জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করা সম্ভব হবে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor