Saturday, September 20, 2008

চাল উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণে নতুন সংস্করণ ‘ভ¬াদেনি’

২১.০৯.০৮
ইত্তেফাক ।। তৌফিক আহমেদ

রোমানিয় কমিউনিস্ট নেতা নিকোলাই ভালবাসতেন ইতালিয় রিসোতো (একধরনের পোলাও), আর প্রায়ই শঙ্কিত হয়ে পড়তেন এটা ভেবে যে রোমানিয়ার চালের বাণিজ্য অন্য কোন ইউরোপিয় দেশ না দখল করে নেয়। যেহেতু সারা বিশ্বে চালের দাম বেড়েছে হু হু করে আর শুধুমাত্র এ বছরেই যখন চালের দাম বেড়েছে তিনগুণ এবং যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ চাল রপ্তানীর ক্ষেত্রে নির্ধারণ করেছে বেশ কঠোরতা, সেক্ষেত্রে, খাদ্য সংকটের এই কঠিন সময়ে নিজের অবস্থান সংহত করতে একটি ইউরোপিয় দেশ হয়েও, চালের উৎপাদনে নীরবে যথেষ্ট এগিয়েছে বালকান রাষ্ট্র, রোমানিয়া। সিংহভাগ সহযোগিতায় রয়েছে অন্য একটি বৃহৎ এবং শক্তিশালী ইউরোপিয় রাষ্ট্র, ইতালি। বুখারেস্ট থেকে ১৭০ কিলোমিটার পূর্বে ভ¬াদেনি নামক একটি গ্রামে ইতালিয় চাল-প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান, ‘রিসো স্কটি’-এর সহযোগিতায় জোরেশোরে চলছে চাল-উৎপাদন থেকে শুরু করে এর প্রক্রিয়াজাতকরণের অন্যান্য সব কার্যক্রম। ২০০৩ সাল থেকে শুরু করে ‘রিসো স্কটি’ ৭,০০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের জন্য প্রায় দশ মিলিয়ন ইউরো ইতোমধ্যে বিনিয়োগ করেছে এবং তাদের লক্ষ্য ১০,০০০ হেক্টর পর্যš- জমিতে বিনিয়োগ করা। দিনের পর দিন, অমিত সম্ভাবনার এক কৃষিক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে রোমানিয়া। সবচেয়ে বড় কথা, প্রাšি-ক এবং দূর্বিষহ জীবনযাপন করা এই কৃষকেরা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তাদের জীর্ণদশা থেকে বের হয়ে আসতে পারছেন। স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন প্রত্যেকেই। সাহস, আস্থা আর মনোবলের সাথে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে ভ¬¬াদেনির কৃষক ভাইয়েরা। রোমানিয়াতে চাল কখনোই জনপ্রিয় খাদ্য কিংবা প্রধান খাদ্যশস্য হিসেবে অš-র্ভূক্ত ছিল না বরং গম এবং ভুট্টাই এখানে প্রধান খাদ্যশস্য হিসেবে সুপরিচিত। ১৯৭০ সালে প্রথমবারের মত চীন এবং উত্তর কোরিয়ার সামগ্রিক কৃষি উন্নয়ন প্রচণ্ড প্রভাবিত করে নিকোলাইকে। এর পর বলা চলে, নিকোলাই তার নিজের পরিকল্পনাতে এক রকম জোর করেই সেখানকার প্রাšি-ক এবং দুর্ভাগা কৃষকদের ঠেলে দেন ধান চাষের দিকে। ভ¬াদেনি নামক রোমানিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গ্রামটির বুকে তখন থেকেই উন্নয়নের নতুন ধারা রচিত হয়ে যায়। এ সব কিছুই জানতেন শুধু নিকোলাই। স্বাবলম্বী হয়ে গড়ে উঠতে থাকে ভ¬¬াদেনি। তারই ফলস্বরূপ ইউরোপিয় অন্য রাষ্ট্রগুলো ক্রমেই রোমানিয়ার কৃষি বাণিজ্যে আগ্রহী হয়ে উঠতে থাকে। অবহেলিত জমিগুলোতে নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে রোমানিয়ায় চাল উৎপাদনে চলে আসে বিরাট পরিবর্তন। উষ্ণ জলবায়ু, উর্বরা জমি এবং কল্যাণময়ী নদী, ‘দান্যুবে’ দেশটির ধান উৎপাদনে রেখে চলেছে বিশেষ অবদান। আর ইউরোপিয় অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম খরচে এখানে চলছে ফসল উৎপাদন। ধারণা করা হচ্ছে, ২০০৮ সালেই প্রায় ৪০,০০০ টন চাল উৎপাদনে সক্ষম হবে রোমানিয়া যা গোটা ইউরোপিয় চাল উৎপাদনের ১০ ভাগ। এরকমই একের পর এক ইতিবাচক বিষয়ের পাশাপাশি রোমানিয়ায় চাল উৎপাদনে নেতিবাচক যে বিষয়টি রয়েছে তা হল রোমানিয়া সরকার এবং ইউরোপিয় ইউনিয়নের যৌথ প্রয়াসে রোমানিয় কৃষকদের প্রতি হেক্টর জমিতে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে সর্বসাকুল্যে ৫০০ ইউরো। অংকটি সেখানকার কৃষকদের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই, রোমানিয়ার ধান চাষের ভবিষ্যত সুনিশ্চিত করতে এই মুহূর্তে যা প্রয়োজন তা হল, সুষ্ঠু এবং আš-রিক রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা, তবেই খুব অল্প দিনে রোমানিয়া পরিণত হতে পারবে এক শক্তিশালী চাল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে। ধান চাষ এবং চাল উৎপাদনে টেক্কা দিতে পারবে ইউরোপের সব দেশগুলোকে।

-তৌফিক আহমেদ

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor