Wednesday, September 17, 2008

কৃষকের ভাগ্যোন্নয়ন : সুদূর পরাহত নয়

১৮.০৯.০৮
দৃষ্টিকোন
।।ইত্তেফাক।। ড. কাশফিয়া আহমেদ

বাংলাদেশের কৃষকরা বংশানুক্রমিকভাবেই কৃষিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। তার বাপ-দাদারা সে প্রক্রিয়ায় জমি তৈরি থেকে ফসল তোলার কাজগুলো করে এসেছে, সেই একই ধারাবাহিকতায় সেও চালিয়ে যায় তার চাষাবাদ। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় যখন বদলে যাচ্ছে পৃথিবীর আবহাওয়া, জলবায়ু, পরিবেশ, মাটির ধরন ও প্রকৃতি, তখন পুরনো সেই চাষাবাদের পদ্ধতি আর নিয়মগুলোকে আঁকড়ে ধরে থাকলে জমির ফসল প্রাপ্তির হার হবে কম। কৃষিতে লাভের পরিমাণও উত্তরোত্তর হ্রাস পেতে থাকবে। এছাড়াও রয়েছে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার অত্যধিক চাপ, যা কিনা বাংলাদেশের সমগ্র অর্থনীতির উন্নয়নে এক বিরাট বাধা। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে কমে আসছে চাষযোগ্য জমির পরিমাণ, প্রয়োজন হয়ে পড়ছে অল্প জমিতে অধিক ফলন নিশ্চিতকরণ। পনেরো কোটি মানুষের জন্য অন্ন জোগাতে একই জমিতে বারবার ফসল ফলাতে হচ্ছে; বিশ্রাম হচ্ছে না মাটির; ফলশ্রুতিতে এর উর্বরতা শক্তি ক্রমশই হ্রাস পাচ্ছে। তার উপর রয়েছে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের উপর্যুপরি ব্যবহার, জমি এবং ফসল উভয়ের মানই নিম্নগামী হবার জন্য এসকল উপকরণের নেতিবাচক ভূমিকা এখন সবার জানা। বর্তমানে আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতির কথা কমবেশি কৃষকরা শুনে আসছে। সরকারী কিংবা বেসরকারী সংস্থার প্রচুর উদ্যোগ ও কর্মসূচী গৃহীত হচ্ছে কৃষকদের আধুনিক ও উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন করার জন্য। তারপরও সংখ্যাগরিষ্ঠ কৃষক আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ও প্রযুক্তি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। বাংলাদেশের যে সমস্ত কৃষি সংশ্লিষ্ট গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের গবেষণার ফল বা উদ্ভাবিত প্রযুক্তি অধিকাংশ কৃষকের দোরগোড়াতেই পৌঁছায়নি। তাছাড়াও মাঠপর্যায়ের গবেষণায় গিয়ে দেখা যায়, কৃষি উপকরণগুলোর যথাযথ প্রাপ্তি ও সর্বাধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি কৃষকদের জন্য নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি এখনো। উদাহরণস্বরূপ এখন যেসব শস্যের আগাম বীজ কৃষকদের কাছে সহজলভ্য হওয়া জরুরী ছিলো, সেগুলো নিয়ে তাদের কাছে অতৃপ্তি রয়েছে। রয়েছে প্রয়োজনীয় তথ্যের অভাব। কৃষি উপকরণ সংক্রান্ত তথ্য, সার সংক্রান্ত তথ্য, অধিক ফলন প্রাপ্তি সংক্রান্ত তথ্য, রোগ-বালাই এবং পোকা-মাকড় দমন সংক্রান্ত তথ্য এবং সর্বোপরি বাজারজাতকরণ সংক্রান্ত তথ্য- সবকিছুতেই কৃষকরা রয়েছে পিছিয়ে। কোন বাজারটিতে তার উৎপাদিত শস্যের সর্বাধিক চাহিদা রয়েছে, কোথায় সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে তার পণ্যটি বিক্রি করতে পারলে সর্বাধিক লাভ পাওয়া যাবে, এড়ানো যাবে মধ্যস্বত্বভোগীদের থাবা, কৃষক কিন্তু এ তথ্য এখনও জানে না। সাত টাকায় বিক্রি করা তার পণ্যটি ঢাকার বাজারে এসে সাতাশ টাকা হয়ে যাচ্ছে, মাঝের এই বিরাট অংকের ব্যবধানের শতকরা একধাপও যে সে পায় না- এ তথ্যও কৃষকের অজানা।

কৃষি অর্থনীতির চাকা ঘুরানোর যে স্বপ্ন অর্থনীতিবিদরা দেখেন, তার লক্ষ্য কৃষিতে ভর্তুকি কমানো, কৃষিপণ্যের সঠিক বাজারদর নিশ্চিতকরণ, কৃষি সেক্টরে লাভের হার বৃদ্ধি করা হলেও সবকিছুর মূলে কিন্তু রয়েছে কৃষকের ভাগ্যের উন্নয়ন। সেক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগুনো প্রয়োজন। কৃষকের জন্য সময়োপযোগী-সঠিক তথ্যপ্রাপ্তি হতে হবে সে পরিকল্পনার প্রথম ধাপ। এরপর দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে ক্রমান্বয়ে সকল কৃষি উপকরণের সহজপ্রাপ্ততা এবং বাজারজাতকরণ ব্যবস্থার পরিবর্তন আলোচনায় আসা দরকার। এ ধাপগুলোর প্রতিটিই কৃষকের ভাগ্যোন্নয়নের সমগ্র প্রক্রিয়াকে বিঘিœত করবে। কৃষি তথা কৃষকের উন্নয়ন নিয়ে যারা কাজ করছেন, তাদের এ বিষয়গুলোর দিকে নজর রাখা জরুরী।

[লেখক : প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, উইন ইনকরপোরেট]

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor