Saturday, September 13, 2008

বালাই দমনে দরকার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা

১৪.০৯.০৮
মাটি ও মানুষ

।।ইত্তেফাক।। মোঃ সাহিদুর রহমান

আমাদের দেশে প্রচলিত বেশিরভাগ সবজি মূলত রবিশস্য হলেও এখন চলছে গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষের মৌসুম। লাউ, মিষ্টি কুমড়া, চাল কুমড়া, করলা, কাঁকরোল, ঝিঙ্গা, পটল ইত্যাদি গ্রীষ্মকালীন সবজি। এ সময় সবজি ক্ষেতে নানা রকমের পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দেয়। আমার মত অনেক কৃষকই সবজির রোগ এবং তার প্রতিকার নিয়ে চিšি-ত। যেমন লালচে বাদামী রঙের মাছিপোকা। এর ঘাড়ে হলুদ দাগের মত রেখা থাকে এবং পাখা স্বচ্ছ ও কিনারার দিকে কালো দাগ দেখে একে সহজেই চেনা যায়। স্ত্রী মাছির পেছনের লম্বা সরু নলের মত ডিমপাড়া অঙ্গের জন্য একে সনাক্ত করা যায়। ডিম দেখতে সাদা নলের মত এবং একদিকে একটু বাঁকা। পূর্ণবয়স্ক কীড়া দেখতে প্রায় সাদা অথবা খুবই হালকা হলুদ এবং ¯িপ্রং এর মত হঠাৎ লাফ দিতে পারে।

মাছিপোকা ফল ছিদ্র করে এবং কচি ফলের ভেতর গুচ্ছাকারে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে লম্বাটে ও গোলকৃমির মত পোকা বের হয়। এই পোকা ফলের শাঁস খেতে খেতে ভেতরে ঢুকে বড় হতে থাকে। পোকায় ফলের শাঁস খাওয়ায় ফল বড় হতে পারে না এবং পরে ফলের শাঁসের খোলা অংশে ছত্রাকের আক্রমণে পচে যায়। এভাবে ক্ষেতের পর ক্ষেত সবজি উজার হয়ে যায়। হিসাব করলে দেখা যায় শতকরা ৫০ ভাগ সবজি এ সময় পোকার আক্রমণে নষ্ট হয়ে যায়। উৎপাদন কমে গিয়ে ক্ষতি হয় মোটা অংকের টাকা। কৃষক ও দেশ হয় ক্ষতিগ্রস্থ।

গ্রীষ্মকালীন পোকামাকড় দমন করতে হলে আমাদের কী ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে তা নিয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকতার সাথে আলোচনা করেছি। কিন্তু আমাদের এই গ্রাম অনেক বড় হওয়ার কারণে সবাইকে সব সময় পরামর্শ দিতে পারে না। এই চিত্র বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলেই বিদ্যমান। কোন বড় একটি এলাকাতে একজন মাত্র উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার পক্ষে পুরো এলাকা চষে বেড়ানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। ফলে তাদের কাছ থেকে দরকারি পরামর্শ পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। এই অবস্থার জন্য উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের দোষারোপ করাটাও আমার কাছে উচিত মনে হয় না। আমার এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে আমি জানলাম যে, প্রতিবছর এবং প্রতি মাসেই সে সময়কালীন চাষাবাদযোগ্য বিভিন্ন ফল-ফসলের চাষ নির্দেশিকা এবং রোগবালাই ও প্রতিকার বা প্রতিরোধ সম্পর্কিত একটি পু¯ি-কা বের করে কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগ। সেগুলো সময়মত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাসহ মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন ¯-রের কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছানো হয়। এতে সংশি¬ষ্ট উপ-সহকারী কর্মকর্তা তার এলাকার কৃষকদের পরামর্শ দিতে পারেন। সেই উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আমাকে জানালেন যে গত প্রায় একবছর ধরে সেই পু¯ি-কা তাদের সরবরাহ করা হচ্ছে না। ফলে তাদের পক্ষে আর সেসব তথ্য কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া সম্ভব হয়ে উঠছে না। এ ছাড়া উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তার সপ্তাহে পাঁচদিন মাঠে এবং অফিসে একদিন বসার কথা থাকলেও সব কর্মকর্তা যে সঠিকভাবে তার দায়িত্ব পালন করেন তা বলা যাবে না। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ফসল, সবজির রোগবালাই নিয়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কৃষকদের এক জায়গায় করে আলোচনা করেন ঠিকই তবে তা পর্যাপ্ত বলে মনে হয় না। আরও বেশি কৃষকদের কাছে যেতে হবে। তাদের মনের কথা বুঝতে হবে। পাশাপাশি তাদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে হবে।

বর্তমানে গ্রীষ্মকালীন সবজির আবাদ চলছে। আমাদের সবজিক্ষেত আক্রাš- হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় দ্বারা। এই আক্রমণকারী পোকাগুলো নানা ধরনের হয়ে থাকে। কিছু কীটপতঙ্গ নির্দিষ্ট কোন একটি মৌসুমে নির্দিষ্ট এক জাতের সবজিতে আক্রমণ করে আবার কিছু প্রজাতির পোকামাকড় বারোমাসী সবজির ক্ষতি করে। যেমন বেগুনের ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা। আবার এমন কিছু পোকামাকড় আছে যারা একাধিক সবজির ক্ষতি করে। যেমন জাব পোকা। এগুলোর কারণে আমাদের উৎপাদন ব্যবস্থা যেমন একদিকে ক্ষতিগ্র¯- হচ্ছে তেমনি আমরা কৃষকরাও আর্থিকভাবে বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয়ে আসছি বছরের পর বছর ধরে।

কৃষকদের শিক্ষার অভাব তাদের ভোগাšি-র অন্যতম কারণ। আমি দেখেছি আমার আশেপাশের কৃষকরা তাদের ফসলের ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে চিরাচরিত নিয়মের বাইরে যেতে চায় না। নতুন কোন কিছু গ্রহণ করাটাকে তারা ঝুঁকি নেয়ার মত মনে করে। অবশ্য এজন্য তাদের দোষ দেয়ার কিছু নেই। তাদের স্বল্প পুঁজির বিনিয়োগে তারা উৎপাদন করে। কোন মার খাওয়ার ঝুঁকি তারা নিতে চায় না। উৎপাদন বাড়াতে কৃষিঋণ নিতে বেশ ঝক্কি ঝামেলা পোহাতে হয় বলে কৃষকরা সেদিক থেকে ফিরে আসছে। ফলে ব্যহত হচ্ছে উৎপাদন ব্যবস্থা। বাংলাদেশে প্রতি বছর ক্ষতিকর পোকামাকড় ও বিভিন্ন রোগে শতকরা ১৫ ভাগ সবজি আক্রাš- হয়ে থাকে। বাংলাদেশের আবহাওয়া এর জন্যে অনেকাংশে দায়ী হলেও আমাদের মান্ধাতা আমলের নিয়ম কানুনও কম দায়ী নয়। সবচেয়ে বড় কাজ হল আমাদের অশিক্ষিত কৃষকদের সরকারি বেসরকারিভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে তারা নিজেদের প্রয়োজনে নিজেরাই ব্যবস্থা নিতে পারে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor