Monday, September 22, 2008

ভেড়ামারায় জি.কে. প্রকল্প এলাকার কৃষকরা সেচ ও সার সংকটে

২২.০৯.০৮
ইত্তেফাক ।। এ কে এম কাওছার হোসেন, ভেড়ামারা সংবাদদাতা ।।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প (জি.কে. প্রজেক্ট) এলাকার কৃষকদের মাঝে সেচ ও সার সংকট দেখা দিয়েছে। প্রয়োজনের সময় পানি না পেয়ে তারা ধান লাগাতে পারছেন না এবং চাহিদা মতো জমিতে সার দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন।

জানা গেছে, ভেড়ামারা উপজেলায় জি.কে. প্রজেক্টের আওতায় ৬ হাজার ৯৪ হেক্টর জমি রয়েছে। ঐ জমিতে সারা বছরই ধান আবাদ হয়। সেচের ক্ষেত্রে জি. কে. প্রজেক্টের পানিই কৃষকের একমাত্র ভরসা। সম্প্রতি প্রকল্প এলাকার কৃষকদের রোটেশনের ভিত্তিতে জি. কে. প্রজেক্ট পানি সরবরাহ করছে। এ কারণে কৃষকরা সপ্তাহে মাত্র তিনদিন পানি পাচ্ছেন।

প্রকল্পের আওতাধীন রোপার মাঠ, বারোঘোরি, আঁড়িদাগ, নওদাপাড়াচর, কামারথাক, সুতিগাঙ, পঞ্চাশ দাগ, বাহান্ন দাগ, তেরল, এক দালান ও খরতলা মাঠের অধিকাংশ জমিতে চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জি. কে. সেচ প্রকল্পের প্রধান সেচ খালের সাথে যুক্ত শাখা ও উপ-শাখা খালে পানি নেই। ধান লাগানোর জন্য কৃষকরা জমি তৈরিতে ব্যস্ত। সপ্তাহখানেক আগে বেশ কিছু জমিতে ধানের চারা লাগানো হলেও পর্যাপ্ত পানির অভাবে সেগুলো ঝিমিয়ে পড়েছে।

ফারাকপুর গ্রামের কৃষক আবুল মৃধা বলেন, ‘বি আর-১১ ও স্বর্ণা ধান লাগানোর জন্য জমি তৈরি করছি। কিন্তু জি. কে.’র পানির জন্য অপেক্ষায় আছি। ক্যানালে (সেচ খালে) পানি ছাড়লিই ধানের চারা বুনবো’।

আবুল মৃধার মতো নওদাপাড়া গ্রামের কৃষক শহিদুল, মণ্ডলপাড়ার শাহাবুল মণ্ডল, চাঁদগ্রামের গনি সর্দার বলেন, পানির অভাবে ধান লাগানো যাচ্ছে না। যখন আমাদের পানির প্রয়োজন তখন আমরা পানি পাই না। রোটেশনের নিয়ম চালুর কারণে যখন পানির দরকার হয় না তখন সেচ খালে পানি থাকে। ধান লাগানোর সময় রোটেশনের নিয়ম না থাকাই উচিত।

জি.কে. প্রজেক্টের পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের ওভারসিয়ার গোলাম মোর্তুজা বলেন, প্রকল্পের ভেড়ামারা এলাকায় নয়টি পানি ব্যবস্থাপনা সমিতি আছে। ঐসব সমিতির সভাপতির মাধ্যমে যখন কৃষকরা পানি চান তখনই পানি দেয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু রোটেশনের কারণে পানি দিতে তিন-চারদিন দেরি হয়।

রোটেশন পদ্ধতিতে পানি সরবরাহ প্রসঙ্গে জি.কে. প্রজেক্টের পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের মুখ্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুর রহমান মণ্ডল জানান, খরিফ-১ (আউশ) ও খরিফ-২ (আমন) উভয় মৌসুমেই প্রকল্পের ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দিতে হয়। একই সময় একসাথে সব জমিতে পানি দেয়া সম্ভব নয়। সে কারণে রোটেশন পদ্ধতিতে কৃষকদের পানি দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, শাখা ও উপ-শাখা খালগুলো খনন বা সংস্কার করা হলে কৃষকরা আরো দ্রুত তাদের জমিতে পানি পেত।

অন্যদিকে জি. কে. প্রকল্প এলাকার কৃষকরা সার সংকটেও পড়েছেন। কার্ডধারী তালিকাভুক্ত কৃষকরা সার ডিলারের কাছ থেকে সপ্তাহে দুইদিন দশ কেজি করে ইউরিয়া পেলেও অতিরিক্ত দামের কারণে ফসফেট কিনতে পারছেন না। আর পটাশ (এমওপি) সার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না।

বাহিরচর গ্রামের আশরাফ আলি বলেন, বর্তমানে এক বস্তা ইউরিয়া সার ৬ শত ২৫ টাকায়, ফসফেট ৩ হাজার ৫ শত টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তারপরও ফসফেট ও পটাশ সার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। বেশি দামের কারণে জমিতে সার ছিটাতে পারছি না।

কৃষকরা বলেন, সারের অভাবে তারা এখন জমিতে সারের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। এক বিঘা জমিতে ৩০ কেজি ইউরিয়া সারের স্থলে ১০ কেজি ও ১৫ কেজি ফসফেট সারের স্থলে ৫ কেজি সার দিতে হচ্ছে।

ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন জানান, ধান লাগানোর সময় জমিতে পানির প্রয়োজন হয়। লাগানোর পরও জমিতে পানি জমিয়ে রাখতে হয়। কিছুদিন পরে সার দিতে হয়। সার ও পানির অভাবে ধান চাষ ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor