Wednesday, September 24, 2008

মরিচের সঙ্গে ভুট্টার আবাদ

২৪.০৯.০৮
ডেসটিনি ।। কৃষিবিদ বকুল হাসান খান

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট দেশে ভুট্টার উৎপাদন বাড়ানোর উদ্দেশ্যে মরিচের সঙ্গে আন্তঃফসল হিসেবে ভুট্টা চাষের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এই প্রযুক্তিতে দেশের বহুল প্রচলিত এবং গুরুত্বপূর্ণ ফসল হিসেবে মরিচকে প্রাধান্য দিয়ে এর সঙ্গে কিছু পরিমাণে ভুট্টা আবাদ করা হয়। এমনভাবে চাষাবাদ করা হয় যাতে মরিচ উৎপাদনে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে এবং চাষি তার মরিচ প্রধান শস্য হিসেবে পেয়ে থাকে। সুবিধা হচ্ছে বাড়তি ভুট্টার উৎপাদনের জন্য কৃষককে জমিতে অতিরিক্ত কোনো সার দিতে হয় না।
স্থান নির্বাচন ও চাষের মৌসুম : মরিচ ও ভুট্টা উভয়ের জন্য উঁচু, উন্মুক্ত ও আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। মাটি সাধারণ দোআঁশ, এঁটেল-দোআঁশ, পলি-দোআঁশ কিংবা বেলে-দোআঁশ হলে সবচেয়ে ভালো হয়। লক্ষ রাখতে হবে জমিতে যাতে পানি না জমে। সাধারণত কার্তিক থেকে মধ্য পৌষ পর্যন্ত সময়কালে মরিচের চারা রোপণ ও ভুট্টা বীজ বোনার উত্তম সময়। অবশ্য এরপরও এই ফসলের চাষ করা যেতে পারে। বাংলাদেশে মোট উৎপাদিত মরিচের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগই হয় রবি মৌসুমে। বাকি অন্য সময়েও হয়ে থাকে।
জাত ও মরিচের চারা : মরিচের যে কোনো স্থানীয় বাণিজ্যিক জাত হলেও চলে। তবে শুকনো মরিচ হিসেবে বিক্রি করা যায় এমন জাতের মরিচের জাত নির্বাচন করা প্রয়োজন।
ভুট্টার জাত যেমন: খই ভুট্টা, মোহর বর্ণালি, শুভ্রা, সাভার-১, বারি-৫, ৬, বারি হাইব্রিড-১ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
মরিচের বীজ সরাসরি মাঠে বোনা যায়, আবার বীজতলায় চারা তৈরি করে তা মাঠে রোপণ করা যায়। চারা রোপণ করাই উত্তম। তাতে মাঠে চারা রোপণের আগ পর্যন্ত সময়টা পূর্ববর্তী ফসল উৎপাদনের জন্য পাওয়া যায়। ভুট্টার বীজ সরাসরি বপন করতে হবে।
মরিচ ও ভুট্টার রোপণ : মরিচের চারা রোপণের জন্য সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০ সেন্টিমিটার (প্রায় ২০ ইঞ্চি) বা এবং সারিতে এক চারা থেকে আরেক চারার দূরত্ব হবে ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি বা ১ ফুট)।
ভুট্টা রোপণের দূরত্ব : শতকরা ১০ ভাগ। ভুট্টার একক আবাদের গাছের সংখ্যার ১০ ভাগ ধরলে, প্রতি দুই সারি মরিচের পর পরবর্তী দুই সারির মাঝখান দিয়ে এক সারি ভুট্টার গাছ ১.৮ মিটার দূরে দূরে বপন করতে হবে।
সারের পরিমাণ : মরিচ ও ভুট্টার জন্য সারের পরিমাণ প্রায় একক।
পরিচর্যা : চারা রোপণ ও বীজ বপনের পরের কাজগুলো হচ্ছেÑ
১. পানি সেচ : মাটিতে যদি রস থাকে তাহলে রোপণের প্রায় এক মাস পর ভালোভাবে পানি সেচ দিতে হবে। এরপর ১৫ দিন অন্তর অন্তর দুই বা তিনবার সেচের প্রয়োজন হতে পারে।
২. আগাছা দমন ও মালচিং : চারা রোপণ ও বীজ বপনের পরবর্তী দেড় মাস আগাছা দমন একান্ত দরকার। এ জন্য প্রয়োজনে এক থেকে তিনবার পর্যন্ত নিড়ানি কিংবা কোপানোর দরকার। তাতে অবশ্য মালচিংয়েরও কাজ হয়ে যায়।
পোকামাকড় রোগবালাই : মরিচের রোগের মধ্যে ডাই ব্যাক উল্লেখযোগ্য। এই রোগের শুরুতে শাখার আগা মরে যায়। পরে সেটা নিচের দিকে নামতে থাকে। শেষে গাছ মরে যায়। ফাঙ্গাস বা ছত্রাকজনিত এই রোগে বোর্দোমিকচার বা অন্য কোনো ছত্রাক দমনকারী ওষুধ ছিটাতে হবে। এ ছাড়া নরম পচা রোগও গাছের ক্ষতি করে। এ জন্যও উপরোক্ত ওষুধ ছিটাতে হবে। মরিচের বিভিন্ন ক্ষতিকারক পোকার মধ্যে কাটওয়ার্ম বা কাটুই পোকা অন্যতম, এটি চারা অবস্থায় গাছ কেটে ফেলে। এর প্রতি কৃষককে কড়া নজর দিতে হবে।
ভুট্টা : ভুট্টার রোগ বালাইয়ের মধ্যে বীজ পচা, চারা ঝলসানো, গোড়া ও শিকড় পচা রোগ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। সুস্থ্য-সবল বীজ ব্যবহার করতে হবে। চারা ঝলসানো রোগের জন্য টিল্ট ২৫০ ইসি স্প্রে করতে হবে। আর ভুট্টার কীটশত্রুর মধ্যে মাজরা পোকা উল্লেখযোগ্য। এই পোকা গাছের কচি পাতার ভেতরে প্রবেশ করে খেতে থাকে। অনুমোদিত কীটনাশক ওষুধ ছিটিয়ে এই পোকা দমন করা যেতে পারে।
ফসল সংগ্রহ : মরিচ কাঁচা-পাকা দ্’ুভাবেই গাছ থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে। কাঁচা মরিচ তুলতে হবে পরিমান মতো বাত্তি হয়েছে এমন অবস্থায়। পাকা মরিচের বেলায় তোলা হয় লালচে হয়েছে এমন মরিচ। সাধারণত মাঠ থেকে হেক্টরপ্রতি মোট ৪ থেকে ৬ টন পাকা মরিচ সংগ্রহ করা যায়। পরে এই মরিচ রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়।
ভুট্টা সংগ্রহ : ভুট্টা কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থায় সংগ্রহ করা যায়। সাধারণত কাঁচা অবস্থায় তোলা হয় সিদ্ধ করে বা পুড়িয়ে খাওয়ার জন্য। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভুট্টা পাকার পরই ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা ভালো। মাড়াই যন্ত্রের সাহায্যে মাড়াই করে ভালোভাবে শুকিয়ে টিনের পাত্রে, মাটির পাত্রে বা পলিথিনসহ পাটের ব্যাগে সংরক্ষণ করতে হবে।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor