Monday, September 22, 2008

অন্যের জমিতে ধান ও সবজি চাষ করে মুকুল এখন স্বাবলম্বী

২২.০৯.০৮
ইত্তেফাক ।। সাতক্ষীরা সংবাদদাতা ।।

দেশের খাদ্য ঘাটতির চাহিদা পূরণে সাতক্ষীরার শেখ মুকুলার রহমান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। অন্যের জমি লীজ নিয়ে ধান ও সবজি চাষ করে তার স্বাবলম্বী হওয়ার প্রচেষ্টা এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। একই জমিতে তিনবার ধান উৎপাদনসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ করে সে এখন স্বাবলম্বী।

শহরের সুলতানপুর গ্রামের মৃত:শেখ মোকলেজার রহমানের পুত্র শেখ মুকুলার রহমান মুকুল মাত্র ২৩ বছর বয়সে পিতৃহারা হয়। পিতা মারা যাওয়ার পর মা, তিনভাই ও দুই বোনের সংসারের ভার পড়ে তার ঘাড়ে । অভাব-অনটনের কারণে তার লেখাপড়া বেশী হয়নি। ফলে তাকে বেছে নিতে হয় ব্যবসা। ব্যবসার শুরুতে সে স্থানীয় বাজার থেকে নানারকম সবজি বীজ ক্রয় করে জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করতে থাকে। এতে যে সামান্য লাভ হয় তা দিয়ে সে কোন রকমে ৬/৭ জনের সংসার চালাতো। এভাবে চলতে চলতে বিভিন্ন স্থানের চাষীদের সাথে তার পরিচয় হওয়ায় ব্যবসার উন্নতি হতে থাকে। সে সুযোগ পেল ভারতের ব্যাঙ্গালোরের নামধারী একটি সীড কোম্পানীতে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণের।

প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে সে একই জমিতে তিনবার ফসল ফলানোর লক্ষ্যে তিনি স্থানীয় খড়িবিলায় ৮০ বিঘা জমি এক বছরের জন্য লীজ নেন। সে শুরু করলো উন্নতজাতের ধান চাষ। লীজ নেয়া ৫২ বিঘা জমিতে তিনি হাইব্রীড সোনার বাংলা-৬, ২০ বিঘায় বি আর - ২৮, ৫ বিঘায় বি আর-২৯ এবং ৩ বিঘা জমিতে চাষ করলেন অন্যান্য হাইব্রীড জাতের ধান। মোট ৮০ বিঘা জমিতে চাষ করতে তার খরচ হয় ৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। একই সাথে তিনি জমির আইলে কলাগাছ, চালকুমড়া, লাউ, ঝিঙ্গা, ঢেড়শ, বরবটি, করলাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজী চাষ করেন। তিনি জমিতে ব্যবহার করেন লালন জৈব সার, সালফার- ৯৫ ও সামান্য কিছু রাসায়নিক সার। তার চাষকৃত ৮০ বিঘা জমিতে ১ম বার বোরো চাষ করে তিনি ধান পেয়েছেন সোনার বাংলা-৬ বিঘাপ্রতি ১৪ বস্তা হিসাবে ৫২ বিঘায় ৭২৮ বস্তা, বিআর-২৮ , ২৯ ও অন্যান্য জাতের ধান বিঘাপ্রতি ১২ বস্তা হিসাবে ২০ বিঘায় ২৪০ বস্তা ও ৫ বিঘায় ৬০ বস্তা ও ৩ বিঘায় ৩৬ বস্তা। ১ম বোরো ধান চাষ করে তিনি সর্বমোট ধান পেয়েছেন ১ হাজার ৬৪ বস্তা। এর থেকে তিনি জমির মালিক ও পানি সরবরাহকারীকে দিয়েছেন ৫৬০ বস্তা। বাকি ৫০৪ বস্তা ধানের মধ্যে তিনি বিআর -২৮ ধানের বীজ রেখেছেন ৭৩ বস্তা। অবশিষ্ট ৪৩১ বস্তা ধান বাজারে প্রতিবস্তা ১ হাজার একশত টাকা দরে বিক্রি করে পেয়েছেন ৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা, খড় কুটা বিক্রি করে পেয়েছেন ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা ও এ সময়ে সবজি বিক্রি করে পেয়েছেন ২৯ হাজার টাকা। সর্বমোট বিক্রি ৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা হতে খরচ ৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা বাদ দিয়ে তার নীট লাভ হয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এরপর তিনি ঐ জমি থেকে ৭০ বিঘা জমিতে ২য় ব্লকে সোনার বাংলা - ৬ জাতের ধান চাষ করে একই পড়তায় ধান পেয়েছেন ৯৮০ বস্তা। এখানে তার খরচ হয়েছে ২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। উৎপাদিত ৯৮০ বস্তা ধান থেকে তিনি জমির মালিক ও পানি সরবরাহকারীকে দিয়েছেন ৪২০ বস্তা। অবশিষ্ট ধান বিক্রি করে পেয়েছেন ৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, খড়-কুটা বিক্রি করে পেয়েছেন ৮১ হাজার টাকা এবং সবজি বিক্রি করে পেয়েছেন ১৪ হাজার টাকা। সর্বমোট বিক্রি ৬ লাখ ৩১ হাজার টাকার মধ্যে খরচ ২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা বাদ দিলে তার নীট লাভ হয়েছে ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। ১ম ও ২য় ব্লকের চাষ করে মুকুল নীট লাভ করেছেন ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বর্তমান তিনি ৩য় বার ধান চাষের লক্ষ্যে জোর আমন চাষের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor