Saturday, September 20, 2008

চুয়াডাঙ্গা পান বরজে পচন

২১.০৯.০৮
ডেসটিনি ।। চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

চুয়াডাঙ্গার অর্থনীতিতে ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কা বিরাজ করছে। বরজের পর বরজের পান গাছের লতি পচে মরে যাচ্ছে। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের চুয়াডাঙ্গা উপ পরিচালক মমতাজ হোসেন বলেছেন, আমাদের কাছে কেউ এলে তাদের প্রতিকারের পথ দেখাচ্ছি। পরামর্শ দিচ্ছি।
চুয়াডাঙ্গাসহ পার্শ্ববর্র্র্র্র্তী কয়েকটি জেলার কৃষকদের প্রধান অর্থকরী ফসল পান। পান বরজ করে এলাকার কৃষকরা তাদের ভাগ্যের চাকাই শুধু ঘোরায়নি এলাকার অর্থনৈতিক অবস্থারও পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এলাকা থেকে বিতাড়িত করেছে অভাব। বারো মাসের আবাদ পান বরজের কারণে এখন আর এলাকায় মঙ্গা বা আকাল দেখা দেয়া না। অনাহারী মানুষ খুঁজে পাওয়া ভার। যে পান বরজ এলাকার আর্থ-সামিজিক চিত্র পাল্টে দিয়েছে, সেই পান বরজ বা পান চাষিদের কল্যাণে সরকার তেমন কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করেনি। পানের ওপর গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার কথা থাকলেও তারা দীর্ঘদিন ধরেই রয়েছে খাতা কলমে। ওই ফাইল কবে নাগাদ লাল ফিতার বেড়া জাল থেকে মুক্ত হবে তা অনিশ্চয়তার মধ্যে। বংশ পরম্পরায় এলাকার পান চাষিরা একে অপরকে দেখে পানের আবাদ করে নিজেদের ভাগ্য যেমন পরিবর্তন করেছেন, তেমনই বদলে দিয়েছেন এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থা। কৃষি স¤প্রসারণের হিসেবে চুয়াডাঙ্গার জেলার ৪টি উপজেলায় বর্তমানে রয়েছে ২ হাজার ৮২৮ হেক্টর জমিতে পানের বরজ রয়েছে। এর মধ্যে আলমডাঙ্গা উপজেলায় সর্বাধিক। এ উপজেলায় ২ হাজার ৬৩ হেক্টর, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ৬শ’ ৫০ হেক্টর, দামুড়হুদা উপজেলায় ৯০ হেক্টর ও জীবননগর উপজেলায় রয়েছে ২৫ হেক্টর জমিতে পানের বরজ। সমস্যায় না পড়লে একজন পান চাষি ১০ কাঠা জমিতে পানের বরজ করে সারাবছর সচ্ছলভাবে চলতে পারেন। এক বিঘা জমিতে পানের বরজ করে অনেকেই পরিবারের বাড়তি খরচ ও সৌখিন আসবাব পত্র করতে সক্ষম হয়েছেন। ফলে পানের বরজ এলাকায় দিন দিন বাড়ছে।
এলাকার অনেক পান চাষিই আক্ষেপ করে বললেন, পান চাষিরা পানের আবাদ করে শুধু নিজেদের সংসারে সচ্ছলতাই আনছে না, দেশের অর্থনীতিতে রাখছে অবদান। কারণ পান বিদেশে রফতানিও হচ্ছে প্রচুর। চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন পান হাট থেকে ট্রাক ট্রাক পান দেশের বিভিন্ন স্থানে রফতানি হচ্ছে। এলাকার প্রধান অর্থকরী ফসল হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই এলাকার কৃষকদের নিকট স্বীকৃত। অথচ এই পান বরজের দিকে কৃষি স¤প্রসারণের তেমন নজরই নেই। বছর বছর নতুন নতুন রোগ বালাই পান চাষিদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। কোনো বছর পান গাছ হলুদ হয়ে মারা যাচ্ছে, কোনো বার ধরছে পানের লতিতে পচন। ফলে অনেক পান চাষিকেই বসতে হচ্ছে পথে। গত কয়েক মাস ধরে চুয়াডাঙ্গা জেলা সদরসহ আলমডাঙ্গা এলাকার বেশ কয়েকটি এলাকার পান বরজে পচন রোগ লেগেছে। প্রতিকার নেই। মাঝে দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকায় এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা তুলে ধরে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। চুয়াডাঙ্গায় বর্তমানে বরজের পর বরজ পান, পচনে দেখা দিচ্ছে পচন রোগ। এ ভাগে ছড়িয়ে পড়ছে গোটা বরজে। কিছুতেই ওই পচন রোধ করা যাচ্ছে না। বরজের পর বরজ এভাবে বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। একের পর এক পান বরজ বিনষ্ট হওয়ায় কত টাকার ক্ষতি হবে তা নিরূপণ করা সম্ভব না হলেও অনেকেই অনুমান করে বলেছেন, ৫০ কোটি টাকার পান ইতিমধ্যে বিনষ্ট হয়ে গেছে। আরও কোটি কোটি টাকার পান বরজ বিনষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক বলেন, ‘রাসায়নিক সার ইউরিয়া ও তাজা খৈল দেয়ার কারণে এ ধরনের রোগের আবির্ভাব ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যখন পচন রোগ দেখা দিচ্ছে তখন তারা না বুঝে কীটনাশক প্রয়োগ করছেন। এতে আরও ক্ষতি হচ্ছে। তা ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে একই জমিতে পান বরজ রাখার কারণেও এ রোগের উৎপত্তি হতে পারে।’ রাসায়নিক সার তথা ইউরিয়া ও তাজা খৈল প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। রোগাক্রান্ত পানগাছের লতি কেটে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। পচন লাগা গাছ বরজের পিলির মধ্যে রাখা উচিৎ হবে না। পটাশ ও ছাই অধিক পরিমাণে দু’সারির মাঝে দিতে হবে। প্রতি বিঘা জমির বরজে তিন থেকে ৫ কেজি হারে দেয়া যেতে পারে।’ চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ লুৎফর রহমান বলেছেন, পানের ওপর আমাদের পড়াশোনা নেই। পান বরজের মাটি পরীক্ষা করার ব্যবস্থা দেশে নেই। আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকেই কৃষকদের এই সংকট থেকে পরিত্রাণের পরামর্শ দিচ্ছি।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor