Tuesday, September 16, 2008

সব ব্যাংকেরই কৃষিঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক

১৭.০৯.০৮
।।সমকাল।। সমকাল প্রতিবেদক
দেশে কার্যরত দেশি-বিদেশি সব ব্যাংকের জন্য কৃষিঋণ বিতরণ বাধ্যতামহৃলক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী ঋণের জোগান দেওয়া, বর্গাচাষীদের জামানতবিহীন ঋণ প্রদান এবং জেলেদের ঋণ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কৃষি স¤ক্স্রসারণ বিভাগ মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের মধ্যে কার্ড বিতরণ করছে। ওই কার্ড দেখে কৃষকদের ঋণ দেওয়া হবে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং কৃষি উৎপাদন বাড়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করা হবে।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকে কৃষিঋণ বিতরণ
কার্যত্রক্রম তদারকি ও পরিবীক্ষণ কমিটির বৈঠক শেষে কমিটি চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নজরুল হুদা এক সংবাদ সম্মেলনে এসব উদ্যোগের কথা জানান। তিনি জানান, স¤ক্স্রতি প্রধান উপদে®দ্বার সভাপতিÍে^ অনুষ্ঠিত বেটার বিজনেস ফোরামের বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ওইসব প্রস্টøাব উপস্ট’াপন করা হলে তা অনুমোদন করা হয়। এর আলোকে কৃষিঋণ পর্যালোচনা কমিটি এসব সি™ব্দাšø নিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সল্ফে§লন কক্ষে কমিটির চেয়ারম্যান নজরুল হুদার সভাপতিÍে^ অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য অর্থ মšúণালয়, সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, কৃষি, রাজশাহী কৃষি উল্পুয়ন, বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংকের প্রতিনিধি ও কমিটির সদস্য সচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্ট’াপক আবদুল হক উপস্টি’ত ছিলেন।
সংবাদ সল্ফে§লনে ডেপুটি গভর্নর নজরুল হুদা জানান, ১৯৯০ সালের আর্থিক খাত সংস্ট‹ার কর্মসহৃচির আওতায় কৃষিঋণ প্রদানের বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া হয়। এরপর থেকে তারা ইচ্ছে করলে এ খাতে ঋণ দিতে পারে। না দিলেও কিছু করার নেই। সা¤ক্স্রতিক সময়ে আšøর্জাতিক বাজারে কৃষিপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কৃষি উৎপাদন বাড়ানো জরুরি হয়ে পড়ে। এ জন্য কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়ানোর আর কোনো বিকল্কপ্প নেই। এ কারণে সব ব্যাংকের জন্য কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ বাধ্যতামহৃলক করা হয়েছে। তবে কোন ব্যাংক এই খাতে কত ঋণ প্রদান করবে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাপিয়ে দেবে না। ব্যাংকগুলো নিজেরাই তাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করবে। তবে ব্যাংকগুলো যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করবে তা যাতে যুক্তিসঙ্গত হয় তা তদারকির মাধ্যমে নিশ্চিত করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
নজরুল হুদা বলেন, চলতি অর্থবছরে কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। যা গত বছরের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।
কৃষকদের মধ্যে কার্ড বিতরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, একজন কৃষককে প্রতিবছরই ঋণের জন্য ব্যাংকে আসতে হয়। কৃষি স¤ক্স্রসারণ বিভাগ যে কার্ড তৈরি করছে তাতে কৃষকের জমির পরিমাণ, তাতে কী পরিমাণ ফসল হবে, বছরে কতটি ফসল হবে এসব তথ্য থাকবে। কার্ড দেখেই কৃষকের বছরের ঋণের চাহিদা জানা যাবে। কৃষকরা শস্য চাষের জন্য সাধারণত স্ট^ল্কপ্পকালীন ঋণ গ্রহণ করে। তাদের জন্য আবর্তক শস্য ঋণ সীমা দেওয়া হবে। যাতে তারা তিন বছরের ঋণের নিশ্চয়তা পাবে।
বর্গাচাষীদের ঋণ দেওয়া প্রসঙ্গে নজরুল হুদা বলেন, ব্যাংকগুলো সাধারণত বর্গাচাষীদের ঋণ দেয় না। যাদের জমি আছে তাদেরই ঋণ দেয়। অথচ দেশে অনেক বর্গাচাষী রয়েছে। সেজন্য বর্গাচাষীদের ঋণ দেওয়ার জন্য ব্যবস্ট’া নেওয়া হচ্ছে।
এছাড়া বিভিল্পু এলাকায় জেলেরা যাতে ঋণ পায় সেই বিষয়টিও নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
দেশের প্রত্যšø অঞ্চলে কৃষিঋণের প্রবাহ বাড়াতে এনজিও লিগ্ধেকজ ঋণ কর্মসহৃচিকে আরো জোরদার করা হবে। যেসব ব্যাংকের পল্কèী এলাকায় শাখা নেই তাদের এনজিওদের মাধ্যমে কৃষিঋণ বিতরণ করতে হবে। ইতিমধ্যে এ কর্মসহৃচি সীমিত আকারে চালু হয়েছে।
কৃষিঋণ বিতরণ বাড়াতে প্রয়োজনে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পুনঃঅর্থায়ন সুবিধা বাড়ানো হবে। এখন পর্যšø মোট কৃষিঋণের প্রায় ৫০ শতাংশ বিতরণ করে কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উল্পুয়ন ব্যাংক। এ দুটি ব্যাংকের আমানত পরিস্টি’তি নিল্ফুমুখী। এ কারণে ঋণ বিতরণে ব্যাংক দুটি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়নের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।
কৃষিঋণ বিতরণে অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে তদারকি জোরদার করার বিষয়ে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিল্পু ব্যাংকে তদšø টিম পাঠিয়ে তদারকি করছে। এছাড়া ব্যাংকগুলোর নিজস্ট^ পরিদর্শক দল রয়েছে। এর বাইরে মাঠ পর্যায়ের জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কৃষি তদারকির জন্য আলাদা কমিটি রয়েছে। তবে বর্তমানে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা ততটুকু কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারছে না। জেলা ও উপজেলা কমিটিকে আরো শক্তিশালী করা হবে।
চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৯৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি খাতের ৮ ব্যাংক বিতরণ করেছে ৬৩৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বেসরকারি খাতের সব ব্যাংক ৩৩৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। বিদেশি একটি ব্যাংক বিতরণ করেছে ৮ কোটি টাকা।
লক্ষ্যমাত্রা : সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী ব্যাংক ৬৭৫ কোটি, জনতা ব্যাংক ৬৫৫ কোটি, অগ্রণী ব্যাংক ৪৮০ কোটি, রূপালী ব্যাংক ৭০ কোটি, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ৩ হাজার ৮০০ কোটি, রাজশাহী কৃষি উল্পুয়ন ব্যাংক ৮৫৫ কোটি ১৮ লাখ, বাংলাদেশ পল্কèী উল্পুয়ন বোর্ড ৭৫০ কোটি ৫০ লাখ, বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক ৪৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে এবি ব্যাংক ১১৫ কোটি, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ৩২ কোটি, ব্যাংক এশিয়া ৬০ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংক ৩৫ কোটি, বেসিক ব্যাংক ৪০ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ২০ কোটি, ব্র্যাক ব্যাংক ৩৫ কোটি, ঢাকা ব্যাংক ১ কোটি ৮০ লাখ, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ৪০ কোটি, ই¯দ্বার্ন ব্যাংক ৫২ কোটি, এক্সিম ব্যাংক ২১ কোটি, ফা¯র্দ্ব সিকিউরিটি ব্যাংক ১০ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংক ২৫ কোটি, ইসলামী ব্যাংক ৬৬০ কোটি, যমুনা ব্যাংক ৫৮ কোটি, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ২৭ কোটি, মিউচুয়াল ট্রা¯দ্ব ব্যাংক ১০ কোটি ৭৫ লাখ, ন্যাশনাল ব্যাংক ৪১ কোটি ৫০ লাখ, ন্যাশনাল ত্রেক্রডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ১৪ কোটি, ওয়ান ব্যাংক ২০ কোটি, প্রাইম ব্যাংক ৩০ কোটি, পহৃবালী ব্যাংক ১০২ কোটি, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ৪০ কোটি, সোস্যাল ইনভে¯দ্বমেন্ট ব্যাংক ৩০ কোটি, সাউথই¯দ্ব ব্যাংক ৩০ কোটি, ¯দ্ব্যান্ডার্ড ব্যাংক ১০ কোটি, সিটি ব্যাংক ৮০ কোটি, ট্রা¯দ্ব ব্যাংক ১৭৫ কোটি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ১২ কোটি এবং উত্তরা ব্যাংক ৩০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ব্যাংক আল ফালাহ ১০ কোটি, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন ২০ কোটি, সিটি ব্যাংক এনএ ১০৬ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্টøান ৫০ কোটি, ¯েদ্বট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
দুই মাসে বিতরণ : সোনালী ব্যাংক বিতরণ করেছে ৩৬ কোটি ৫২ লাখ, জনতা ব্যাংক ৩১ কোটি, অগ্রণী ব্যাংক ২২ কোটি, রূপালী ব্যাংক সাড়ে ৩ কোটি, কৃষি ব্যাংক ৩৬৬ কোটি, রাজশাহী কৃষি উল্পুয়ন ব্যাংক সাড়ে ৭৮ কোটি, বাংলদেশ পল্কèী উল্পুয়ন বোর্ড ৯৮ কোটি টাকা।
বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে এবি ব্যাংক ২ কোটি ৮ লাখ, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ৮ কোটি, ব্যাংক এশিয়া ১৮ কোটি, বেসিক ব্যাংক প্রায় ৩ কোটি, ব্র্যাক ব্যাংক প্রায় ৯ কোটি, ডাচ-বাংলা ব্যাংক ১২ কোটি, ই¯দ্বার্ন ব্যাংক প্রায় ৩১ কোটি, এক্সিম ব্যাংক ২ কোটি, ফা¯র্দ্ব সিকিউরিটি ব্যাংক ১১ লাখ, আইএফআইসি ব্যাংক প্রায় সোয়া ৩ কোটি, ইসলামী ব্যাংক ১৫১ কোটি ৪২ লাখ, ন্যাশনাল ব্যাংক ২৮ কোটি, ওয়ান ব্যাংক ২ কোটি, প্রাইম ব্যাংক ৫১ কোটি ২৯ লাখ, সোস্যাল ইনভে¯দ্বমেন্ট ব্যাংক ৭৯ লাখ, ¯দ্ব্যান্ডার্ড ব্যাংক ৮ লাখ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ৫ কোটি, উত্তরা ব্যাংক ২৯ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করেছে।
বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে একমাত্র সিটি ব্যাংক এনএ ৮ কোটি টাকা বিতরণ করেছে।
কোনো লক্ষ্যমাত্রা নেই : চলতি অর্থবছর শুরু হওয়ার আগেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে চিঠি দিয়ে চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে তাদের ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা স¤ক্সর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে বলা হয়েছিল। ওই চিঠির জবাবে দেশে কার্যরত ৪৮ ব্যাংকের মধ্যে ৫টি বিদেশি ব্যাংক কোনো তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানায়নি। এগুলো হচ্ছে ¯দ্ব্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, হাবিব ব্যাংক, এইচএসবিসি, ওরি ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। এসব ব্যাংক চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণের জন্য এখন পর্যšø কোনো লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেনি।

No comments:

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor