Wednesday, September 24, 2008

চুয়াডাঙ্গার কৃষকদের চাষাবাদ অনিশ্চিত

২৫.০৯.০৮
ডেসটিনি ।। চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি

চুয়াডাঙ্গা বিএডিসির কাছে পাওনা প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা। এসব টাকা ঈদের আগে না পাওয়ার আশঙ্কায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। টাকার অভাবে এসব কৃষকের চাষাবাদ বিঘিœত হচ্ছে। একই কারণে তাদের ঈদের আনন্দও মাটি হতে বসেছে। কৃষকদের অভিযোগে জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গা বিএডিসির কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স ও বিএডিসির অধিক বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের তালিকাভুক্ত কৃষকের সংখ্যা ১ হাজার ১৯২ জন। চলতি মৌসুমে কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স ও অধিক বীজ উৎপাদন কেন্দ্র কৃষকদের কাছ থেকে মোট ৪ হাজার ৯৫৮ মেট্রিক টন বীজ কেনে। যার মূল্য প্রায় ১৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এর মধ্যে মাত্র ৬ কোটি টাকা কৃষকদের পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি আছে প্রায় সাড়ে ৭ কোটি টাকা। অপর দিকে কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স অফিস সূত্র জানায়, তাদের মোট চুক্তিবদ্ধ চাষীর সংখ্যা ৬২৫ জন। চুক্তিবদ্ধ এসব কৃষকদের কাছ থেকে কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্স গত জুলাই পর্যন্ত ৩ হাজার ১০৮ মেট্রিক টন বোরো ধানবীজ কিনেছে। যার মূল্য ৮ কোটি ৩৯ লাখ ৩৭ হাজার ৭৬২ টাকা। এর মধ্যে এ পর্যন্ত পরিশোধ করা হয়েছে ৩ কোটি ৯২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। কৃষকদের এখনো পাওনা আছে ৪ কোটি ৪৬ লাখ ৫২ হাজার ৭৬২ টাকা। এদিকে অধিক বীজ উৎপাদন কেন্দ্রের চুক্তিবদ্ধ কৃষকের সংখ্যা ৫৬৭ জন। চুক্তিবদ্ধ এসব কৃষকদের কাছ থেকে ১ হাজার ৮৫০ মেট্রিক টন বোরো ধানবীজ কেনা হয়। যার মূল্য প্রায় ৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ২ কোটি টাকা পরিশোধ করা হলেও এখনো কৃষকদের পাওনা আছে প্রায় ৩ কোটি টাকা।
কৃষকরা জানান, মে মাস থেকে তারা সরকারি এ দু’টি প্রতিষ্ঠানে বীজ সরবরাহ করছেন। প্রতি বছর আগস্ট মাসের মধ্যে তাদের সমুদয় পাওনা পরিশোধ করা হলেও এ বছর সময়মতো টাকা না পাওয়ায় কৃষকেরা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আলমডাঙ্গা চিৎলা এলাকার কৃষক মুকুল জানান, তার এলাকার প্রায় ৫০ জন কৃষকের প্রায় ১৫ লাখ টাকা পাওনা আছে। এখন মাঠে আছে আমন ধান। ধানের জন্য সার, সেচ ও পরিচর্যা দরকার। এ ছাড়া পাট কাটা ও ধোয়াবাবদ শ্রমিক খরচের জন্য টাকার দরকার। টাকার অভাবে কৃষকেরা তাদের ফসলের যতœ নিতে পারছেন না। ফলে চলতি আমন মৌসুমে আমন ধানবীজের সংকট ও গুণগত মান কম হবে বলে তিনি জানান। একই অভিযোগ করেছেন তালিকাভুক্ত অনেক কৃষক। কন্ট্রাক্ট গ্রোয়ার্সের উপ-পরিচালক আবদুল মালেক বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে টাকা না আসার কারণে বকেয়া পরিশোধ করা যাচ্ছে না। তবে ঈদের আগেই টাকা পরিশোধের চেষ্টা চলছে।

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় সারের দাবিতে কৃষক বিক্ষোভ

২৫.০৯.০৮
যায়যায়দিন ।। ফখরে আলম যশোর

আমনের ভরা মৌসুমে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় ইউরিয়া সার নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। সারের দাবিতে কৃষকরা বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ, কৃষি কর্মকর্তাদের অফিস ঘেরাও করছে। দ্বিগুণ দাম দিয়েও ইউরিয়া সার কিনতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কৃষকরা।
কৃষকদের আশঙ্কা টিএসপি এওপি সারের আকাশছোঁয়া দাম আর ইউরিয়া সারের সঙ্কটের কারণে এবার আমন উৎপাদন ব্যাহত হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় এবার ৭ লাখ ৬০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ২০ লাখ মেট্রিক টন চাল। কিন্তু প্রতি বিঘা জমিতে ২৫ কেজি ইউরিয়ার প্রয়োজন হলেও কৃষকদের দেয়া হচ্ছে মাত্র ৫ থেকে ১০ কেজি।
অন্যদিকে দ্বিগুণ দাম দিয়েও কৃষকরা সার পাচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সার সঙ্কট নিরসনের দাবিতে ২১ সেপ্টেম্বর কৃষকরা ৫ ঘণ্টা নড়াইল-মাগুরা সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরিস্থিতির কোনো উন্নতি না হওয়ায় গত মঙ্গলবার তুলারামপুরে যশোর-নড়াইল সড়ক অবরোধ করে কৃষকরা বিক্ষোভ করে। এ সময় তারা কৃষি কর্মকর্তাদের ঘেরাও করে রাখে। ২১ সেপ্টেম্বর কেশবপুরের কৃষকরা সারের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে এবং বিক্ষোভ করেছে। একইদিন ঝিকরগাছা এলাকার ফুলচাষীরা স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাকে স্মারকলিপি দিয়েছে। চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহসহ আরো কয়েকটি জেলায় ইউরিয়ার জন্য কৃষকরা উপজেলা ও সারের ডিলারদের কাছে ধরণা দিয়েছে।

ব্যাংককে বাধ্যতামূলক আবর্তক শস্য ঋণ দিতে হবে

২৫.০৯.০৮
যাযাদি ডেস্ক

খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাধ্যতামূলক কৃষকদের তিন বছরের আবর্তক শস্য ঋণ দিতে হবে সিডিউল ব্যাংককে। ওই সময়ের মধ্যে ব্যাংক ঋণ পেতে কৃষকদের যাতে আর হয়রানির শিকার হতে না হয় সেজন্য এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত একটি সার্কুলার আজ অথবা আগামী সপ্তাহে জারি করবে।
নির্দিষ্ট জমিতে শস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৃষক কোনো ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ বা সমম্বয় করে তিন বছর পর্যন্ত ওই ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে পারবে। নতুন করে তাকে আর আবেদন করতে হবে না বা এজন্য আর কোনো কাগজপত্র দিতে হবে না।
কৃষকরা শস্য উৎপাদনের জন্য মূলত মেয়াদি ঋণ নিয়ে থাকে। শস্য উৎপাদনের পর আগের ঋণ পরিশোধ করে নতুন ঋণ পেতে আবেদন করতে হয়, এতে করে তারা নানা ঝামেলায় পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে ফসলের সময় চলে যায় কিন্তু ঋণ পায় না।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাঠ পর্যায়ে জরিপ চালিয়ে কৃষকদের মাঝে আইডি কার্ড দিয়েছে। এতে কৃষকের অবস্থা, জমির পরিমাণ, জমিতে সারাবছর কী কী ফসল উৎপাদন হয় তা লিপিবদ্ধ আছে। এ কার্ডের ওপর ভিত্তি করে এখন থেকে তাদের চাহিদা অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করা হবে।
চলতি অর্থবছরে ব্যাংকগুলোর জন্য ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকার কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি। এবার বেসরকারি ব্যাংকগুলোর কৃষি ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৫৫ শতাংশ। তবে কোনো ব্যাংকের জন্য আলাদা লক্ষ্যমাত্রা বাধ্যতামূলক করা হয়নি।
১৯৯০ সালে আর্থিক খাতে সংস্কার কর্মসূচির আওতায় ডিরেকটেড লেন্ডিং প্রথা বিলোপ হওয়ার পর কৃষিখাতে ঋণ দেয়া ব্যাংকগুলোর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে এ খাতে ঋণ দেয়া ব্যাংকগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ব্যাংকগুলো তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী ঋণ বিতরণ করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক তা তদারকি করবে।
সূত্র জানায়, গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে সার, বীজ, কীটনাশক, সেচসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণের দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। এ কারণে একই পণ্য চাষে গত বছরের চেয়ে চলতি বছর ব্যাংকগুলো আরো ২০ শতাংশ বেশি ঋণ দিতে পারবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে ২০০৭ সালে রোপা আমন চাষে একরপ্রতি ঋণের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছিল ৯ হাজার ২৬৭ টাকা। চলতি বছর ৯ হাজার ২৬৭ টাকা থেকে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি ঋণ পাবে কৃষকরা। ব্যাংক চাইলে আরো ১০ শতাংশ বেশি ঋণ দিতে পারবে।

পাবনায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাশরুম চাষ শুরু

২৫.০৯.০৮
সমকাল ।। পাবনা অফিস
পাবনায় বাণিজ্যিকভাবে মাশরুম চাষ হচ্ছে। ঔষধি গুণস¤ক্সল্পু এবং স¤ক্সহৃর্ণ হালাল এই সবজি চাষে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন ইউনিভার্সাল গ্র“প।
পাবনার দিলালপুরে ইউনিভার্সাল গ্র“পের প্রধান কার্যালয়ের পাশে নিজস্ট^ জায়গায় এই মাশরুম চাষ করা হচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ৫ কেজি মাশরুম সবজি এই বাগান থেকে উত্তোলন করা হয়। খুব তাড়াতাড়ি এই মাশরুম বাজারজাত করা হবে।
সরেজমিনে মাশরুম বাগানে গিয়ে দেখা যায়, দোচালা ছনের ঘরে যার বেড়া দেওয়া হয়েছে পাটখড়ি দিয়ে। মেঝে পাকা, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে স¤ক্সহৃর্ণ পরিষ্ফ‹ার-পরিচ্ছল্পু একটি ঘর। ঘরের ভেতরে কাঠ দিয়ে তৈরি ৫ থাক বিশি¯দ্ব র‌্যাকের ওপর এই মাশরুম সবজি চাষ করা হচ্ছে। সেখানে প্রায় ৫ শ’ টবের ওপর মাশরুম রয়েছে।
ইউনিভার্সাল গ্র“পের ব্যবস্ট’াপনা পরিচালক সোহানী হোসেন সমকালকে জানান, প্রত্যেক দিন প্রতিটি বীজ থেকে ৮-১০টি করে মাশরুমের অগ্ধকুর বের হয়। মজার বিষয়, এক রাতের মধ্যেই এই মাশরুম খাবার উপযোগী হয়ে যায়।
তিনি বলেন, মাশরুম বিজ্ঞানস¤ক্সল্পু উপায়ে চাষ করা সুস্ট^াদু পু®িদ্বকর এবং ঔষধিগুণ স¤ক্সল্পু হালাল সবজি। মাশরুমের সবজি খেলে রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ নানা জটিল রোগ কমে আসে। শিগগির এটি বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাজারজাত করা হবে।

আলুর বাজারে ধস : জয়পুরহাটে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত হিমাগারে এখনো মজুদ ৭০ হাজার টন

২৫.০৯.০৮
সমকাল ।। আলমগীর চৌধুরী, ক্ষেতলাল

বাজার দিন দিন নিল্ফুমুখী হওয়ায় জয়পুরহাটের কৃষক ও আলু ব্যবসায়ীদের দিন কাটছে এখন দুশ্চিšøা আর দুর্ভাবনায়। প্রতি বস্টøা (৮৪ কেজি) হিমায়িত আলু বর্তমানে প্রকারভেদে বিত্রিক্র হচ্ছে ৭ শ’ থেকে ৯ শ’ টাকায়। অথচ হিমাগারে মজুদের সময় এসব আলুর বস্টøাপ্রতি খরচই হয়েছে ১২ শ’ থেকে ১২ শ’ ৫০ টাকা। অর্থাৎ বর্তমানে বস্টøাপ্রতি মজুদকারি কৃষক ও ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হচ্ছে ৩ শ’ থেকে ৫ শ’ টাকা। আলু বিত্রিক্রর মৌসুম শেষ হতে মাত্র ২ মাস বাকি থাকলেও জেলার ১৩টি হিমাগারে এখনো মজুদ রয়েছে ৭০ হাজার মেট্রিক টন আলু। বাজারের এ মন্দাবস্ট’া আসল্পু মৌসুমে আলু উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে কৃষি বিভাগ মনে করছে।
খাদ্যে উ™^ৃত্ত জয়পুরহাট জেলায় গত মৌসুমে ৩৯ হাজার হেক্টর জমিতে রেকর্ড পরিমাণ আলু চাষ হয়। ফলে অধিক মুনাফার আশায় জেলার লক্ষাধিক কৃষক ও ব্যবসায়ী ১৩টি হিমাগারে ৮১ হাজার ৪৯৯ মেট্রিক টন আলু মজুদ করে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৮৪ কেজির প্রতি বস্টøা আলু হিমাগারে মজুদ করতে তাদের ব্যয় হয়েছে ১২ শ’ থেকে সাড়ে ১২ শ’ ৫০ টাকা। এর মধ্যে আলুর দাম ৯৫০ টাকা, খালি বস্টøা ৪০ টাকা, লেবার ১০ টাকা, পরিবহন বাবদে ২০ টাকা, হিমাগার ভাড়া ১৭০ টাকা ও অন্যান্য খরচ পড়েছে ১০ টাকা। কিন্তু পাইকারি বাজারে ওই আলু এখন তাদের বিত্রিক্র করতে হচ্ছে ৭ শ’ থেকে সর্বোচ্চ ৯ শ’ টাকায়। কালাই উপজেলার করিমপুর গ্রামের আলু ব্যবসায়ী শেখ মজিবর রহমান বাবু জানান, ১০ থেকে ১৫ বিঘায় আলু চাষের পাশাপাশি তিনি প্রতি বছর ৫ শ’ থেকে ১ হাজার বস্টøা আলু হিমাগারে নিয়মিত মজুদ রেখে আসছেন। এতে বস্টøাপ্রতি তার ১ থেকে ২ শ’ টাকা লাভ আসে। এ বছর তার মজুদের পরিমাণ ৮ শ’ বস্টøা। কিন্তু বাজারের যে অবস্ট’’া তাতে এবার তার কমপক্ষে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকা লোকসান হবে। আলু নিয়ে আশাভঙ্গের এ ঘটনায় বাবুর মতো জয়পুরহাটের কমবেশি সব আলু ব্যবসায়ী আর কৃষকেরই এখন মাথায় হাত উঠে গেছে।
এলাকার বেশ কয়েকটি হিমাগার ঘুরে দেখা গেছে শতকরা আশিভাগ আলুই এখনো মজুদ রয়েছে। আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর হিমাগারের সবচেয়ে বড় আলু ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান জানান, মোকামে আলু পাঠিয়ে প্রতি ট্রাকে তাকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ পর্যšø তার ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে। অথচ গত বছরে তার ট্রাকপ্রতি লাভ হয়েছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা।
একই অভিযোগ করলেন ক্ষেতলালের মোল্কèা হিমাগারে আলু কিনতে আসা ব্যবসায়ী আজিজুল হক। তবে তিনি এ প্রতিনিধিকে আলুর মহৃল্য কমে যাওয়ার বিষয় নিয়ে লেখালেখির চেয়ে আলু বিদেশে পাঠানোর গুরুÍ^ তুলে ধরে পত্রিকায় রিপোর্ট করার পরামর্শ দিয়ে জানালেন, এ অবস্ট’া চলতে থাকলে আগামীতে কৃষকরা আর আলু চাষ করবে না।
মোলামগাড়ী নর্থপোল কোল্ড ¯েদ্বারেজের ব্যবস্ট’াপক মনোয়ার হোসেন বলেন, এ বছর তাদের হিমাগারে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ১ লাখ ৩৫ হাজার বস্টøা আলু মজুদ করেছিল। তবে গত বছর এর পরিমাণ ছিল মাত্র ৯০ হাজার বস্টøা। তিনি বলেন, আলু বিত্রিক্রর মৌসুম শেষ হতে আর মাত্র ২ মাস বাকি অথচ এ পর্যšø মাত্র ৩৭ হাজার বস্টøা আলু হিমাগার থেকে বের হয়েছে। এখনো ৯৮ হাজার বস্টøা মজুদ আছে বলে তিনি জানান।
এদিকে ক্ষেতলাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহ আলম জানান, জয়পুরহাটে ক্ষেতলাল এবং কালাই উপজেলার কৃষকরা সবচেয়ে বেশি আলু চাষ করে। তিনি বলেন, মহৃল্য পতনের ফলে আগামী মৌসুমে ক্ষেতলালে গত বছরের তুলনায় প্রায় ৫০ ভাগ কৃষক আলু চাষ থেকে বিরত থাকতে পারেন। এতে উৎপাদন হ্রাস পাবে আশাতীত হারে। ফলে আগামী মৌসুমের শুরু থেকেই আলুর মহৃল্য বেশি হতে পারে।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মহসিন আলী বলেন, গত মৌসুমে আলুর উৎপাদন বেশি হওয়ার পাশাপাশি চলতি মৌসুমে সুষম বৃ®িদ্বপাতের কারণে জেলায় শাকসবজি ব্যাপকহারে উৎপাদন হয়েছে। বাজারে ওইসব শাক-সবজির পর্যাপ্টø সরবরাহের কারণে আলুর চাহিদা কিছুটা কমে গেছে। আর তাই জেলার ১৩টি হিমাগারে ৮১ হাজার ৪৯৯ টন আলু মজুদ থাকলেও এ পর্যšø মাত্র সাড়ে ১১ হাজার টন আলু হিমাগার থেকে বিত্রিক্র হয়েছে। এ অবস্ট’ায় আগামীতে বিদেশে রফতানির পাশাপাশি আলুর বহুবিধ ব্যবহার নিশ্চিত করতে না পারলে কৃষকরা আলু উৎপাদনে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে বলে তিনি মšøব্য করেন।

নড়াইলে সারের দাবিতে কৃষকদের বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ

২৫.০৯.০৮
ইত্তেফাক ।। নড়াইল সংবাদদাতা ।।

মঙ্গলবার সদর উপজেলার তুলারামপুর বাজারের কাছে সারের দাবিতে কৃষকরা নড়াইল-যশোর সড়ক দেড় ঘন্টা অবরোধ করে রাখে। এ সময় বিক্ষুব্ধ কৃষকরা রাস্তার উপর শুয়ে, বসে এবং কাঁচি ও বস্তা উঁচু করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। জেলা কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার সাহা ও স্থানীয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাহবুব রহমানের অপসারণের দাবিতে তারা শ্লোগান দেয়।

বাজারে আসছে হাইব্রিডের নতুনজাত এসএল ৮ ।। ফলন হেক্টর প্রতি ১০ টন

২৫.০৯.০৮
।। ইত্তেফাক রিপোর্ট ।।

ফিলিপাইন থেকে মাতৃগাছ এনে হাইব্রিড ধানের বীজ উৎপাদন করেছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। এর নাম দেয়া হয়েছে এসএল-৮। আগামী মওসুমে এ বীজ বাজারে বিক্রির অনুমতি পেয়েছে। বিএডিসি মাতৃগাছ থেকে বীজ উৎপাদন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরীক্ষামূলক আবাদ করে। দেশের আবহাওয়া ও জমি উপযোগী হওয়ায় সরকারের এ প্রতিষ্ঠানটি বীজ বাজারজাতকরণের অনুমতি পায়।

দেশে স্থানীয় জাত বা বেশিরভাগ উচ্চ ফলনশীল জাতের হেক্টর প্রতি ফলন ৪ থেকে ৫ টন । কিন্তু এসএল-৮-এর হেক্টর প্রতি ফলন ১০ টন। আগামী মওসুমে ৫শ টন বীজ বাজারজাত করা হবে। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, প্রতি কেজি এসএল-৮-এর দাম নির্ধারণ হতে পারে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা। যা বেসরকারিভাবে আমদানিকৃত হাইব্রিড জাতের চেয়ে কম।

অবশেষে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকই নির্মাণ করলেন কালভার্ট

২৪.০৯.০৮
সমকাল ।। মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

অবশেষে নিজ উদ্যোগেই কালভার্ট নির্মাণ করলেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক আলকাছ আলী। ফলে জলাবদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা পেল সঞ্জবপুর গ্রামের বসতভিটেসহ ৩৫ একর ধানি জমি। মঙ্গলবার প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ করে ৪টি রিং বসিয়ে কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। এ সময় মৌলভীবাজার সড়ক ও জনপথের উপ-সহকারী প্রকৌশলী শাহাদাৎ হোসেন উপস্থি’ত ছিলেন।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষার দাবিতে একাধিবার জেলা প্রশাসক, কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে বারবার লিখিতভাবে আবেদন জানান। গত বৃহ¯ক্সতিবার কৃষক আলকাছ আলীকে জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবি জানাতে গিয়ে সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে হেনস্থ’া হতে হয়েছে। এ ব্যাপারে গত রোববার সমকালে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়।

এবার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা মঠবাড়িয়ায় জোয়ারের পানিতে আমন ক্ষেতের গুঁড়ি ও মাজরা পোকা দমন

২৪.০৯.০৮
সমকাল ।। মঠবাড়িয়া (পিরোজপুর) প্রতিনিধি
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় অস্থ^াভাবিক জোয়ারের পানিতে রোপা আমন ক্ষেতের গুঁড়ি পোকা (সাদা পিঠফড়িং) এবং মাজরা পোকার (মাজরার মথ) ভেসে যাওয়ায় আমান চাষে এবার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বলে মনে করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। তবে প্রবল জোয়ারের প্রভাবে উপজেলার ৪০ একর জমির রবিশস্য ও শীতকালীন সবজির বীজতলা নষ্ট হয়ে প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ এবং কৃষকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, সিডরের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আগেভাগে কৃষকরা মাঠে নেমে পড়েন। এ বছর মঠবাড়িয়ায় ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন এবং ৪ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে উফশী ধানের আবাদ করা হয়েছে। কিন্তু ফসলের মাঠে রোপিত বীজতলায় মাজরা ও গুঁড়ি পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। এদিকে, বাজারে সার ও কীটনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় চাষীরা অনেকটা বিপাকে পড়েন। পরিস্থি’তি মোকাবেলায় কৃষি বিভাগ চাষীদের পরামর্শ দিলেও পোকা দমনে চাষীরা ব্যর্থ হন। সমুদ্রের লঘুচাপ ও পূর্ণিমার প্রভাবে বলেশ^র নদীর পানিতে নিম্নাঞ্চল ঈ­াবিত হওয়ায় তা ফসলের ক্ষেতে প্রবেশ করে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, জোয়ারের পানিতে ফসলি জমি ঈ­াবিত হলে প্রাথমিকভাবে ফসল হানির আশংকা করা হয়েছিল। কিন্তু এতে আমন ক্ষেতের মাজরা ও গুঁড়ি পোকা দমন হয়েছে। পাশাপাশি পানি দ্র“ত নেমে যাওয়ায় আমন ধানের কোনো ক্ষতি হয়নি। এ উপজেলায় এবার আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে।
এ ব্যাপারে গুলিসালী ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হরষিত চন্দ্র কীর্তনিয়া জানান, আমন ক্ষেতের অবস্থ’া অত্যন্ত ভালো। তবে চাষীদের অন্যান্য পোকা দমনে আলোর ফাঁদ এবং মাঠে গাছের ডাল পুঁতে দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

আরও দুটি সারকারখানা হচ্ছে দেশে

২৪.০৯.০৮
ডেসটিনি ।। হাসান আজাদ

দেশে নতুন দুটি সারকারখানা স্থাপন করা হচ্ছে। একটি সিরাজগজ্ঞে নর্থওয়েস্ট ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউএফসি) নামে। আরেকটি সিলেটে, যার নাম শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড (এসএফসিএল)। এই দুটি কারখানা নির্মাণের জন্য ইতিমধ্যে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরই মধ্যে কমিটি প্রকল্পের প্রাক সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষাও সম্পন্ন করেছে। পাশাপাশি কমিটির দেয়া সমীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রকল্প দুটির জন্য খসড়া প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়ন করা হয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, সিরাজগজ্ঞের সয়দাবাদে নর্থওয়েস্ট ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড স্থাপনে চীন সরকারের এক্সিম ব্যাংক অর্থায়নের প্রস্তাব দিয়েছে। অর্থায়ন নিয়ে আলোচনার জন্য এক্সিম ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঢাকায় আসেন। সার কারখানায় অর্থায়নের বিষয় নিয়ে তারা ইআরডি, শিল্প মন্ত্রণালয় ও বিসিআইসির সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
অন্যদিকে সিলেটের ফেঞ্চুগজ্ঞের শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড স্থাপনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম এগিয়ে চলছে।
আন্তঃমন্ত্রণালয় সম্ভাব্যতা জরিপ কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ডিপিপি প্রণয়ন করা হয়েছে। এই প্রকল্পেরও চীন সরকারের এক্সিম ব্যাংক থেকে অর্থায়নের বিষয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয় গ্যাস ও অন্য সুবিধাগুলো পাওয়ার বিষয়ে এবং সার উৎপাদনের কাঁচামাল, প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রাপ্যতা ও নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পেট্রোবাংলার সঙ্গে বেশ কয়েকবার আলোচনায় বসেছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত এ দুটি সার কারখানা স্থাপন করা হলে বছরে প্রতিটিতে ৫ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন করে দুটিতে ১১ লাখ ৫৪ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করা সম্ভব হবে। এর ফলে দেশে বর্তমানে আমদানিকৃত ১৩ লাখ মেট্রিক টন সারের মধ্যে সবোর্চ্চ দেড় লাখ টন সার আমদানি করতে হবে। বিদেশ থেকে বর্তমানে প্রতি টন ইউরিয়া আমদানিতে সরকারের খরচ হয় ৫৮ হাজার টাকা। আর প্রতিটন সার ভর্তুকি দিয়ে সরকারকে বিসিআইসির মাধ্যমে বিক্রি করতে হয় ১০ হাজার টাকায়। ফলে বর্তমানে প্রতিটনে সরকারকে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে ৪৮ হাজার টাকা।
মন্ত্রণালয়ের সূত্র আরও জানায়, বিগত ১১ বছরে ইউরিয়া সার আমদানিতে সরকার ভর্তুকি দিয়েছে ৬ হাজার ৫২ কোটি ৩১ লাখ টাকা। প্রস্তাবিত এ দুটি সারকারখানা স্থাপিত হলে সরকারের ভর্তুকির পরিমাণ ৭০০ কোটি টাকায় নেমে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
সূত্র জানায়, আমদানি করা ছাড়াও দেশের ৬টি ইউরিয়া সারকারখানায় উৎপাদিত সার উৎপাদন খরচের চেয়ে কম মূল্যে বিক্রি করার কারণে বিসিআইসি আরও প্রায় ১ হাজার ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এর ফরে দেশীয় সার কারখানাগুলো আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে মোট ৬টি ইউরিয়া সারকারখানা রয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড, যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড, জিয়া ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড, ঘোড়াশাল ইউরিয়া সারকারখানা লিমিটেড, পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড ও ফেঞ্চুগঞ্জ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেড। এ ছটি কারখানায় বর্তমানে মোট ১৫ লাখ মেট্রিক টন সার উৎপাদিত হচ্ছে। বর্তমানে দেশে গড়ে ইউরিয়ার চাহিদা রয়েছে ২৮ লাখ মেট্রিক টন।

কালীগঞ্জের পোল্ট্রি শিল্পে চলছে ক্রান্তিকাল

২৪.০৯.০৮
ডেসটিনি ।। কালীগঞ্জ (লালমনিরহাট) প্রতিনিধি

লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় দেশের বৃহত্তম কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী পোল্ট্র্রি শিল্পে বর্তমান ভয়াবহ ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। ২০০৪ সালের পূর্ব এশিয়ায় বার্ড ফ্লু রোগের প্রাদুর্ভাবের পর বর্তমান সময় পর্যন্ত পোল্ট্রি শিল্পে জড়িত বেকারদের ব্যবসায়ে আর্থিক সংকট, প্রশিক্ষণের অভাব, ব্যাংক ঋণ প্রাপ্তিতে জটিলতা সবমিলিয়ে পোল্ট্রি খামারগুলো বিভিন্ন সংকট কাটিয়ে উঠতে পারছে না।
জানা গেছে এর আগে উপজেলার যেসব খামারি নিজস্ব স্বল্প পুঁজি ও আড়তদারের বাকির ওপর ব্যবসা শুরু করেছিলেন তাদের অনেকেই প্রথমত লোকসান হওয়ার পর তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারেননি। সরকারি উদ্যোগে আর্থিক সুবিধা প্রদান না করায় প্রযুক্তিনির্ভর আধুনিক বড় আকারের ব্রয়লার, লেয়ার খামার গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। ফলে উপজেলায় পোল্ট্রি জাত মাংস ও ডিমের চাহিদা পূরণ সম্ভব হচ্ছে না।
সরজমিনে দেখা গেছে, অধিকাংশ খামারি ভাড়া ঘরে অথবা নিজের বসত ঘরের পাশে ক্ষুদ্র আকারে শেড স্থাপন করে মুরগি পালন করলেও সম্প্রতি মুরগির বাচ্চা, খাদ্য, ওষুধের মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে খামারিরা বর্তমান প্রতিযোগিতার বাজারে ব্যবসায় টিকতে না পেরে অনেকেই পোল্ট্রি ব্যবসা ত্যাগ করেছেন। দেশের আর্থ-সামাজিক বিবেচনায় উপজেলার চাকুরির সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষিত বেকার যুবক শ্রেণী অভিভাবকের সহযোগিতায় আবার খামার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠিত হতে চাইলেও সম্প্রতিক এভিয়েন ইনফ্লুয়েঞ্জার প্রাদুর্ভাবে সরকারি উদ্যোগে আক্রান্ত মুরগি নিধন খামার ব্যবসায়ীদের যথেষ্ট নিরুৎসাহিত করছে।
উপজেলার ক্ষুদ্র খামার ব্যবসায়ীদের মতে, সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণ সুবিধার নিশ্চয়তা সরকারি উদ্যোগ যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদান, শিল্প রফতানিমুখী পোল্ট্রি নীতিমালা প্রণয়ন, ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানে উপজেলার শত শত বেকার যুবক আবার পোল্ট্র্রি শিল্পে নিয়োজিত করে বেকারত্ব দূরীকরণে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করতে পারে বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা।

বকশীগঞ্জে ৫ টন ভেজাল সার আটক

২৪.০৯.০৮
ডেসটিনি ।।

বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি
বকশীগঞ্জে পুলিশ ৫ টন ভেজাল টিএসপি সার আটক করলেও রহস্যজনক কারণে আটকের ৩ দিন পরও কোনো মামলা হয়নি।
জানা গেছে, বকশীগঞ্জ থানাপুলিশ গত বৃহস্পতিবার রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে নিশাক্ষিয়া ইউনিয়নের মাঞ্জালিয়া গ্রামের মনির হোসেনের বাড়ি থেকে ৫ টন ভেজাল টিএসপি সার আটক করে। আটকের ৩ দিন পরও কেন মামলা হয়নি এ ব্যাপারে আটককারী এসআই হযরত আলী জানান, কৃষি অফিসকে বিষয়টি অবিহত করেছি; কিন্তু কৃষি অফিস থেকে কোনো প্রকার মতামত না দেয়ায় কোনো মামলা হয়নি। তবে থানায় একটি জিডি হয়েছে।

কলার চারা রোপণের সেরা সময় আশ্বিন মাস

২৪.০৯.০৮
ডেসটিনি ।। কৃষিবিদ খোন্দকার মো. মেসবাহুল ইসলাম


কলা বাংলাদেশের জনপ্রিয় এবং সারা বছর পাওয়া যায় এমন একটি ফল যা পুষ্টিকর এবং অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। প্রায় সব ধরনের পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ এই ফলটি বাংলাদেশের মোট ফল উৎপাদনের প্রায় ৪২ ভাগ ও জমির ব্যবহারের দিক দিয়ে মোট ফলের জমির প্রায় ২১ ভাগ। এবং সুস্বাদু ও মিষ্ট গন্ধযুক্ত কলার গড় ফলন হেক্টর প্রতি প্রায় ১৬ টন। বাংলাদেশের বরিশাল, খুলনা, রংপুর, দিনাজপুর, নরসিংদী, ঢাকা, ফরিদপুর, বগুড়া, পাবনা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, যশোর, ঝিনাইদহ, ময়মনসিংহ, জামালপুর, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান জেলায় ব্যাপক হারে কলার চাষ হয়। তবে অন্যান্য অঞ্চলেও কিছু না কিছু কলার চাষ হয়ে থাকে। পৃথিবীর ১২০টি দেশে কলা উৎপাদন হলেও ভারতেই সবচেয়ে বেশি কলা (প্রায় ১৪ হাজার টন) উৎপাদন হয়। অন্যান্য অন্যতম কলা উৎপাদনকারী দেশ হচ্ছে চীন, ব্রাজিল, ইকুয়েডর, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, কোস্টারিকা, পানামা, ফিজি, পেরু, হাওয়াই, তাইওয়ান, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়া।
বর্ষায় পানি জমে না এবং ভালো পানি নিকাশযুক্ত উর্বর দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ জমি কলা চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। অন্য ধরনের মাটিতে কলার শিকড় ভালোভাবে বাড়তে পারে না অথবা কলা গাছের জন্য খাদ্য উপাদান প্রাপ্তি সহজলভ্য হয় না। এ ক্ষেত্রে মাটির পিএইচ বা অম্ল ৬.০ থেকে ৭.৫ থাকলে সবচেয়ে ভালো হয়। বাংলাদেশে প্রায় সারা বছরই কলার চারা রোপণ করা গেলেও অতিরিক্ত বর্ষা বা অতিরিক্ত শীতের সময় কলার চারা রোপণ না করাই ভালো। কারণ এ সময়ে রোপণ করা কলার চারা বেশি রসের বা বেশি শীতের জন্য ঠিকভাবে বাড়তে পারে না। শিকড়ের বিস্তার ভালোভাবে না হওয়ার কারণে অনেক চারা মারাও যেতে পারে। সে জন্য বর্ষার শেষে এবং শীতের আগে আশ্বিন মাসই কলার চারা রোপণের উপযুক্ত সময় বলে কৃষি বিজ্ঞানীরা মত প্রকাশ করেছেন। আশ্বিন মাসে মাটিতে যথেষ্ট রস থাকে, ফলে সেচের প্রয়োজন প্রায় হয়ই না। চারা খুব সহজেই মাটিতে খাপ খাইয়ে নেয় এবং শীতের আগেই চারার কিছুটা বাড়-বাড়তি হয়ে যায়। চারা রোপণের মাস দেড়-দুইয়ের মধ্যেই শীত শুরু হওয়ায় ওই সময়ে গাছের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু শীতের শেষে গরম পড়া শুরু হলে উপরি সার ব্যবহার করে সেচ প্রদান করলেই রোপণ করা কলা গাছের বৃদ্ধি আবার দ্রুত হয়। এই সময়ে রোপণ করা চারা থেকে ১১ থেকে ১৩ মাসের মধ্যেই কলা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। কলার চারা রোপণের জন্য অসি তেউর সবচেয়ে উত্তম। এ চারা মাটিতে লেগে যেতে খুবই কম সময় নেয়। এর কারণ এ চারার গোড়ায় ভবিষ্যতের জন্য খাদ্য মজুদ থাকে। ফলে মাতৃগাছ থেকে আলাদা করার পরও এ চারার খাদ্যের অভাব হয় না এবং রোপণের পর প্রয়োগকৃত সার থেকে খাদ্য গ্রহণের আগে নিজের মজুদ করা খাদ্য থেকেই কাজ চালিয়ে যায়। অন্যদিকে পানি তেউড়ের চারা মাটিতে প্রতিষ্ঠিত হতে বেশ সময় লাগে এবং কখনো কখনো বেশ কিছু চারা মারাও যায়। তবে এই ২ প্রকারের চারাই মাটিতে লেগে গেলে ৩-৪ মাস পরে আর এদের আলাদাই করা যায় না। যে ধরনের চারাই রোপণ করা হোক না কেন চারার বয়স প্রায় ৩ মাস এবং চারা সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত বাগান থেকে সেগুলো সংগ্রহ করতে হয়। রোপণের আগে চারার মোথার পুরনো শিকড় ও গোড়ার শুকনো পাতা ফেলতে হয়।
চারা রোপণের আগে ৪-৫ বার আড়াআড়িভাবে জমি চাষ ও মই দিয়ে সমান করে নিতে হয়। এর পর কলা গাছের জাত (দৈহিক গঠন ও বৈশিষ্ট্য) অনুযায়ী সাগর কলার ক্ষেত্রে ২ মিটার এবং সবরি কলার ক্ষেত্রে ২.৫ মিটার দূরত্বে ৬০ সেমি (২ ফুট) ব্যাসার্ধের গর্ত খনন করতে হয়। এই হিসাবে একর প্রতি ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২৫০টি কলার চারা রোপণ করা যায়। গর্তটি খনন করার পর গর্তের মাটির সঙ্গে জৈব সার মিশিয়ে কমপক্ষে ৫-৭ দিন রেখে দিতে হয়। চারা রোপণের আগে গর্ত ভরাট করার পর গর্তের মাঝখানে চারার গোড়া অনুযায়ী মাটি সরিয়ে চারাটি সোজাভাবে স্থাপন করে চারদিকে কিছু আলগা মাটি দিয়ে চেপে দিতে হয়। রোপণ কাজ শেষ হলে গোড়ার মাটি পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হয়। কলা গাছ দ্রুত বর্ধনশীল হলেও আশ্বিন মাসে রোপণ করা চারা শীতের কারণে দ্রুত বাড়তে পারে না। তাই শীতের শেষে সার উপরি প্রয়োগ করতে হয়। আশ্বিন মাসে চারা রোপণের আগে গর্তে সার দিতে হয়। গর্তে এবং উপরি হিসেবে নিম্নরূপ পরিমাণে সার প্রয়োগ করতে হয়।
সারের নাম প্রতি গাছে প্রয়োগের পরিমাণ (গ্রাম)
জৈব সার ১০,০০০
ইউরিয়া ৩০০
টিএসপি ১৫০
এমওপি ২৫০
জিপসাম ২০০
জিংক অক্সাইড ১.৫
বোরন সার ২.০
কলার চারা রোপণের পর গর্তে উল্লিখিত পরিমাণের সম্পূর্ণ জৈব সার, টিএসপি, বোরিক সার ও জিংক অক্সাইড এবং অর্ধেক এমওপি এবং অর্ধেক জিপসাম সার দিতে হয়। রোপণের ৩ মাস পর এক-তৃতীয়াংশ ইউরিয়া এবং ৫-৬ মাস পর বাকি দুই-তৃতীয়াংশ ইউরিয়া, বাকি অর্ধেক এমওপি ও জিপসাম সার গাছের চারপাশে ছিটিয়ে দিয়ে হালকা করে কুপিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হয়। মাটি কোপানোর সময় এমনভাবে কোপাতে হবে যেন শিকড় কেটে না যায়। জমির রস বুঝে সার দেয়ার পর সেচ দিতে হয়। তবে ফল বের হওয়ার পর সার প্রয়োগ করা উচিত নয়। কলার চারা রোপণের পর মাটির আর্দ্রতা বা রসের অবস্থা বুঝে সেচের ব্যবস্থা করতে হয়। আবার বর্ষায় অতিরিক্ত পানি যাতে সহজেই বের হয়ে যায় সে জন্য নিকাশের ব্যবস্থাও করতে হয়। অধিক ফলন ও ভালোমানের কলা পেতে হলে রোপণের ৪-৫ মাস পর থেকে কলা গাছের গোড়া থেকে বের হওয়া চারাগুলো কেটে ফেলতে হয়। একটি কলা গাছে ২০টি পর্যন্ত চারা বের হতে পারে। ফুল বের হওয়ার পর মুড়ি ফসলের জন্য ১টি এবং বিক্রির জন্য ১টি চারা রেখে বাকিগুলো কেটে ফেলা উচিত। কলা বাগানে কোনো আগাছা জন্মাতে দেয়া ঠিক না। এতে কলার ফলন ৫০-৭০ ভাগ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। গাছের অপ্রয়োজনীয় পাতা বা নিচের দিকের হলুদ হয়ে যাওয়া বা শুকনো পাতা কেটে ফেলতে হয়। বর্ষায় গোড়ার মাটি সরে গেলে শিকড় বেরিয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে সারির দুপাশ থেকে অগভীর নালা করে নালার মাটি দিয়ে শিকড় ঢেকে দিতে হয়। কখনোই গোড়া ঢেকে মাটি দেয়া উচিত নয়। মোচা থেকে কলা বের হওয়ার পর শেষোক্ত ফানার ৫-৭ সেমি নিচে থেকে মোচা কেটে দিতে হয়। ঝড়ো বাতাসের থেকে কলার গাছকে রক্ষা করতে অনেক সময় বাঁশের খুঁটি দিয়ে গাছকে ঠেকা দিতে হয়, এতে কলার কাঁদির ভারে গাছ ভেঙে পড়ে না। বিটল পোকা থেকে কলাকে রক্ষা করতে স্বচ্ছ বা নীল পলিথিন ব্যাগ দিয়ে কলার কাঁদি ঢেকে দেয়া যেতে পারে। এতে কলার কাঁদি ধুলাবালি থেকেও রক্ষা পেতে পারে। জাত ভেদে ও পরিচর্যার উপর ভিত্তি করে কলার ফলন বিভিন্ন হতে পারে। যেমন একর প্রতি গড়ে অমৃত সাগর ১০ টন, সবরি, চাঁপা ও কাঁচা কলা ৬ টন, বারি কলা-১ ১৪ টন এবং বারি কলা-২ ৮ টন হয়।
-

মরিচের সঙ্গে ভুট্টার আবাদ

২৪.০৯.০৮
ডেসটিনি ।। কৃষিবিদ বকুল হাসান খান

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট দেশে ভুট্টার উৎপাদন বাড়ানোর উদ্দেশ্যে মরিচের সঙ্গে আন্তঃফসল হিসেবে ভুট্টা চাষের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। এই প্রযুক্তিতে দেশের বহুল প্রচলিত এবং গুরুত্বপূর্ণ ফসল হিসেবে মরিচকে প্রাধান্য দিয়ে এর সঙ্গে কিছু পরিমাণে ভুট্টা আবাদ করা হয়। এমনভাবে চাষাবাদ করা হয় যাতে মরিচ উৎপাদনে কোনো ব্যাঘাত না ঘটে এবং চাষি তার মরিচ প্রধান শস্য হিসেবে পেয়ে থাকে। সুবিধা হচ্ছে বাড়তি ভুট্টার উৎপাদনের জন্য কৃষককে জমিতে অতিরিক্ত কোনো সার দিতে হয় না।
স্থান নির্বাচন ও চাষের মৌসুম : মরিচ ও ভুট্টা উভয়ের জন্য উঁচু, উন্মুক্ত ও আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে এমন জমি নির্বাচন করতে হবে। মাটি সাধারণ দোআঁশ, এঁটেল-দোআঁশ, পলি-দোআঁশ কিংবা বেলে-দোআঁশ হলে সবচেয়ে ভালো হয়। লক্ষ রাখতে হবে জমিতে যাতে পানি না জমে। সাধারণত কার্তিক থেকে মধ্য পৌষ পর্যন্ত সময়কালে মরিচের চারা রোপণ ও ভুট্টা বীজ বোনার উত্তম সময়। অবশ্য এরপরও এই ফসলের চাষ করা যেতে পারে। বাংলাদেশে মোট উৎপাদিত মরিচের শতকরা প্রায় ৯০ ভাগই হয় রবি মৌসুমে। বাকি অন্য সময়েও হয়ে থাকে।
জাত ও মরিচের চারা : মরিচের যে কোনো স্থানীয় বাণিজ্যিক জাত হলেও চলে। তবে শুকনো মরিচ হিসেবে বিক্রি করা যায় এমন জাতের মরিচের জাত নির্বাচন করা প্রয়োজন।
ভুট্টার জাত যেমন: খই ভুট্টা, মোহর বর্ণালি, শুভ্রা, সাভার-১, বারি-৫, ৬, বারি হাইব্রিড-১ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
মরিচের বীজ সরাসরি মাঠে বোনা যায়, আবার বীজতলায় চারা তৈরি করে তা মাঠে রোপণ করা যায়। চারা রোপণ করাই উত্তম। তাতে মাঠে চারা রোপণের আগ পর্যন্ত সময়টা পূর্ববর্তী ফসল উৎপাদনের জন্য পাওয়া যায়। ভুট্টার বীজ সরাসরি বপন করতে হবে।
মরিচ ও ভুট্টার রোপণ : মরিচের চারা রোপণের জন্য সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০ সেন্টিমিটার (প্রায় ২০ ইঞ্চি) বা এবং সারিতে এক চারা থেকে আরেক চারার দূরত্ব হবে ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি বা ১ ফুট)।
ভুট্টা রোপণের দূরত্ব : শতকরা ১০ ভাগ। ভুট্টার একক আবাদের গাছের সংখ্যার ১০ ভাগ ধরলে, প্রতি দুই সারি মরিচের পর পরবর্তী দুই সারির মাঝখান দিয়ে এক সারি ভুট্টার গাছ ১.৮ মিটার দূরে দূরে বপন করতে হবে।
সারের পরিমাণ : মরিচ ও ভুট্টার জন্য সারের পরিমাণ প্রায় একক।
পরিচর্যা : চারা রোপণ ও বীজ বপনের পরের কাজগুলো হচ্ছেÑ
১. পানি সেচ : মাটিতে যদি রস থাকে তাহলে রোপণের প্রায় এক মাস পর ভালোভাবে পানি সেচ দিতে হবে। এরপর ১৫ দিন অন্তর অন্তর দুই বা তিনবার সেচের প্রয়োজন হতে পারে।
২. আগাছা দমন ও মালচিং : চারা রোপণ ও বীজ বপনের পরবর্তী দেড় মাস আগাছা দমন একান্ত দরকার। এ জন্য প্রয়োজনে এক থেকে তিনবার পর্যন্ত নিড়ানি কিংবা কোপানোর দরকার। তাতে অবশ্য মালচিংয়েরও কাজ হয়ে যায়।
পোকামাকড় রোগবালাই : মরিচের রোগের মধ্যে ডাই ব্যাক উল্লেখযোগ্য। এই রোগের শুরুতে শাখার আগা মরে যায়। পরে সেটা নিচের দিকে নামতে থাকে। শেষে গাছ মরে যায়। ফাঙ্গাস বা ছত্রাকজনিত এই রোগে বোর্দোমিকচার বা অন্য কোনো ছত্রাক দমনকারী ওষুধ ছিটাতে হবে। এ ছাড়া নরম পচা রোগও গাছের ক্ষতি করে। এ জন্যও উপরোক্ত ওষুধ ছিটাতে হবে। মরিচের বিভিন্ন ক্ষতিকারক পোকার মধ্যে কাটওয়ার্ম বা কাটুই পোকা অন্যতম, এটি চারা অবস্থায় গাছ কেটে ফেলে। এর প্রতি কৃষককে কড়া নজর দিতে হবে।
ভুট্টা : ভুট্টার রোগ বালাইয়ের মধ্যে বীজ পচা, চারা ঝলসানো, গোড়া ও শিকড় পচা রোগ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। সুস্থ্য-সবল বীজ ব্যবহার করতে হবে। চারা ঝলসানো রোগের জন্য টিল্ট ২৫০ ইসি স্প্রে করতে হবে। আর ভুট্টার কীটশত্রুর মধ্যে মাজরা পোকা উল্লেখযোগ্য। এই পোকা গাছের কচি পাতার ভেতরে প্রবেশ করে খেতে থাকে। অনুমোদিত কীটনাশক ওষুধ ছিটিয়ে এই পোকা দমন করা যেতে পারে।
ফসল সংগ্রহ : মরিচ কাঁচা-পাকা দ্’ুভাবেই গাছ থেকে সংগ্রহ করা যেতে পারে। কাঁচা মরিচ তুলতে হবে পরিমান মতো বাত্তি হয়েছে এমন অবস্থায়। পাকা মরিচের বেলায় তোলা হয় লালচে হয়েছে এমন মরিচ। সাধারণত মাঠ থেকে হেক্টরপ্রতি মোট ৪ থেকে ৬ টন পাকা মরিচ সংগ্রহ করা যায়। পরে এই মরিচ রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করা হয়।
ভুট্টা সংগ্রহ : ভুট্টা কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থায় সংগ্রহ করা যায়। সাধারণত কাঁচা অবস্থায় তোলা হয় সিদ্ধ করে বা পুড়িয়ে খাওয়ার জন্য। অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে ভুট্টা পাকার পরই ক্ষেত থেকে সংগ্রহ করা ভালো। মাড়াই যন্ত্রের সাহায্যে মাড়াই করে ভালোভাবে শুকিয়ে টিনের পাত্রে, মাটির পাত্রে বা পলিথিনসহ পাটের ব্যাগে সংরক্ষণ করতে হবে।

কৃষির ওপর নির্ভর করে মঙ্গা মোকাবিলার চেষ্টা

২৪.০৯.০৮
ডেসটিনি ।। আফরোজা নাজনীন
প্রতি বছর উত্তরবঙ্গে ‘কমন’ দুর্যোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে মঙ্গা। অনাকাক্সিক্ষত এ মঙ্গার চরম খাদ্য সংকট এখানকার বাসিন্দাদের ওপর বয়ে আনে স্থায়ী দুর্ভোগ। যার ফল ভোগ করতে হয় সারাবছর।
বৃহত্তর রংপুরে বাংলা মাসের আশ্বিন কার্তিকে মঙ্গা দেখা দেয়। ইংরেজি মাসের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত। সরেজমিনে দেখা গেছে, আমন চাষের পর মঙ্গাকবলিত এলাকায় কাজের অভাব দেখা দেয়। এর প্রভাব পড়ে সাধারণ হতদরিদ্র মানুষের ওপর। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) এক জরিপে বলা হয়, মঙ্গাপীড়িত অঞ্চলে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মানুষ কৃষিক্ষেত্রে শ্রম বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু এ সময় তাদের শ্রম বিক্রির কোনো সুযোগ থাকে না। তখন কাজ থাকে না, থাকে না তাদের হাতে টাকা। মঙ্গার কারণে দারিদ্র্যের স্ফীতি ঘটে। খাদ্য ঘাটতি হয়, মানুষ অনাহারে থাকে, স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। নারী ও শিশুর মৌলিক চাহিদা ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও সামাজিক নিরাপত্তা বিঘিœত হয়। মঙ্গা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর নারী ও শিশু স্বাস্থ্যের। শিশুরা দীর্ঘমেয়াদি পুষ্টিহীনতার শিকার হয়। রংপুর সিভিল সার্জন দফতর সূত্রে শুধু মিঠাপুকুর উপজেলায় অপুষ্টির বর্তমান পরিস্থিতির কিছু পরিসংখ্যান পাওয়া গেছে। সূত্র মতে, এখানে দু’বছরের নিচের বয়সের শিশু হালকা অপুষ্টিতে ভুগছে ৩ হাজার ৪৭৭ ছেলে, ৩ হাজার ৪৮৫ মেয়ে। মাঝারি অপুষ্টিতে ভুগছে ২ হাজার ৩০০ ছেলে এবং ১ হাজার ৯৭৭ মেয়ে। চরম অপুষ্টিতে ভুগছে ৯৮২ ছেলে ও ৯৫৬ মেয়ে। অপুষ্টিতে ভোগা গর্ভবতী নারীর সংখ্যা ৩ হাজার ৩৫০ জন। সূত্র আরও জানায়, বৃহত্তর রংপুরে রাতকানা রোগে ভুগছে শতকরা ০.২৫ ভাগ।
রংপুর ও কুড়িগ্রামের বিভিন্ন সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত ২০০৬ সালে মঙ্গা এলাকায় মারাত্মক অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর হার ছিল শতকরা ৭০.৯২ জন। জন্মকালীন কম ওজন শিশুর শতকরা হার ৭০.৫৭। শতকরা ৩৯ ভাগ গর্ভবতী নারী রক্তস্বল্পতায় ভুগছে।
এদিকে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, উত্তরাঞ্চেলের গ্রামগুলোতে অপুষ্টিতে আক্রান্ত ৩০ লাখ নারী, পুরুষ ও শিশু দৃষ্টিস্বল্পতায় ভুগছে। প্রতি বছর ৪০ হাজার বিকলাঙ্গ, হাবাগোবা শিশু জন্মগ্রহণ করছে। এসব অঞ্চলের মানুষ বেশিরভাগই ভূমিহীন, চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। কামলা খেটে জীবন চালায়। কাজ না পেলে অনাহারে থাকে। অপুষ্টি থেকে রক্ষায় ও মঙ্গা মোকাবিলায় এখানে প্রতি বছরই নতুন নতুন উৎস উদ্ভাাবিত হচ্ছে। প্রধানত কৃষির ওপর নির্ভর করেই এখানকার না খাওয়া মানুষগুলো মঙ্গা মোকাবিলার চেষ্টা করছে। সূর্যের হাসির মতো অতটা উজ্জ্বল না হলেও চাঁদের একফালি আলোর মতো সাফল্য গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বালুচরে দেখা দিয়েছে। বালু মাটিতে এখন লাখ টাকার ফসল ফলছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, তিস্তা ও ঘাঘট নদীর মোহনার চরে এখন ফসলের বাগান। এখানকার মাটি বালুজাতীয়। ফসল ফলানো কষ্টকর। এ মাটিতে কষ্ট করেই ফলানো হচ্ছে মিষ্টি কুমড়া। প্র্যাকটিকেল অ্যাকশন বাংলাদেশ ও একতা নামের দুটি এনজিও ৯০ সালে থেকে এখানে মিষ্টি কুমড়া চাষে চরবাসীকে সহায়তা করছে। গাইবান্ধার চারটি উপজেলার নয়টি চরে মিষ্টি কুমড়া চাষ হচ্ছে। এখানকার মোট ১৭৭টি গৃহহীন পরিবার মিষ্টি কুমড়া চাষ করে বেঁচে আছে। গত দুবছরে ওরা ৬৭ হাজার মিষ্টি কুমড়া পেয়েছে। যার বাজার মূল্য ২০ লাখ টাকা। গত বছর ৪৬০টি গৃহহীন পরিবারকে ৫ লাখ মেট্রিক টন কুমড়া দেয়া হবে। যার দাম তিন কোটি টাকা। চরে মিষ্টি কুমড়া চাষে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দেয়ার দরকার হয় না বলে এটি পুরোপুরি অর্গানিক সবজি। এদিকে এখানকার স্বাস্থ্য কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, শূন্য থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের ভিটামিন খাওয়ানোর হার শতকরা ৯৫ ভাগ। ৮৮ সালের বন্যার পর তিস্তা অববাহিকায় জেগে ওঠে নতুন চর। নদীভাঙা মানুষ এসে এখানে গড়ে তোলে বসতি। জীবন বাঁচাতে শুরু করে বাদামের চাষ। সেই থেকে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাপাসিয়া এলাকার বালুর চর বাদামের চর নামে পরিচিত। লোকসংখ্যা দুহাজারের একটু বেশি। এ চরে নারী-পুরুষ চাষ করেন বাদাম, মুসুর, কালাই, চীনা জোয়ার, খেসারি, কালাই, ভুট্টা, গম, পটল, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, মরিচ, কুশিয়ার ও বেগুন। বাদামের চরে শুধু আমন মৌসুমে ধান ফলে। নদীর কাছের জমিনে বোরো ধান হয়। আগের দিনে এই তিস্তা পাড়ের প্রধান ফসল ছিল আউশ ধান। এখন আউশ ধান হয় না। ৫-৬ বছর হলো আমনের জাতগুলো কমে গিয়ে এ চরভূমিতে উফশি ধানের চাষই হচ্ছে বেশি। ব্রি-ধান ২৮ এখানে বেশি আবাদ হয়। বিভিন্ন ফসল ও সবজির আবাদে এখানকার হতদরিদ্ররাও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে। আখতারজান (২৯) বলেন, ‘মঙ্গা আইলে শহরের মানুষ কতা কয় বেশি। সাহায্য পাই কম। খাওন নাই। কিন্তু এহন এইহানে কাম পাইছি। এহন থিকা আর খাওনের কষ্ট হইবো না।’ এখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা যায়, কুড়িগ্রামের অধিকাংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অসম জমি বণ্টন, কৃষি কাজের নিম্নমুখিতা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে এখানকার বাসিন্দারা খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার চরাঞ্চলের কৃষকরা মঙ্গাকে জয় করতে বালুচরে ভুট্টাচাষ শুরু করেছে। জানা যায়, হাতীবান্ধায় গত বছর ১০ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ করা হয়। চরে সিন্দুনার চাষি ইসমাইল আলী জানান, ধানচাষে যে খরচ হয় ভুট্টায় তার চেয়ে কম। ফলনও দ্বিগুণ। এদিকে সরেজমিনে রংপুর ঘুরে দেখা গেছে, শুধু লালমনিরহাট নয়, বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে ভুট্টা চাষে নীরব বিপ্লব ঘটে যাওয়ায় পাল্টে গেছে এ অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রা। সব ধরনের পতিত জমিতে চলছে ভুট্টা চাষ। জানা গেছে, রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, গাইবান্ধা জেলায় মোট ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হচ্ছে। চাষিরা জানিয়েছেন, উৎপাদন ব্যয় বাদ দিয়ে লাভ থাকে দ্বিগুণেরও বেশি। গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কাঞ্চিপাড়া ইউনিয়নে বেসরকারি সংস্থা একতা চালু করছে মহিলা সমবায় সমিতি। একতার সমন্বয়কারী আসিফ ইকবাল জানান, স্থায়ীভাবে মঙ্গা মোকাবিলায় ১৬০ জনের একটি দল গঠন করা হয়েছে। দলের প্রত্যেকের কাছ থেকে ১৫শ টাকা নিয়ে জমি বন্ধক ও ক্রয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ জমিতে চাষ করেই মঙ্গা মোকাবিলার প্রচেষ্টা নেয়া হয়।

Tuesday, September 23, 2008

জীবননগরে ধানক্ষেতে ছত্রাক : কৃষক দিশেহারা

২৩.০৯.০৮
যায়যায়দিন ।। জীবননগর (চুয়াডাঙ্গা) প্রতিনিধি

জীবননগর উপজেলার সর্বত্র ফলন্ত রোপা আউশ ধানক্ষেতে ব্যাপক হারে ছত্রাক আক্রমণে কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ধান পাকার আগ মুহূর্তে ছত্রাক আক্রমণের ফলে উৎপাদনে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশংকা করছে স্থানীয় সম্প্রসারণ বিভাগ।
উপজেলা কৃষি অফিস ও আক্রান্ত ক্ষেতের কৃষকদের কাছ থেকে জানা গেছে, চলতি রোপা আউশ মৌসুমে এ উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক জমিতে ধান চাষ হয়েছে।
এ উপজেলায় রোপা আউশের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমি। এ বছর তা বৃদ্ধি পেয়ে ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর হয়েছে বলে কৃষি অফিস জানিয়েছে।
মৌসুমের শুরু থেকে এ ধানের আবাদ খুবই ভালো করার লক্ষ্যে বেশি দামে সার, ডিজেল ও কীটনাশক খরচ করেছিল এলাকার কৃষকরা।
কিন্তু ধানের শীষ বের হওয়ার পর এবং পাকার আগ মুহূর্তে ক্ষেতের ধানে ব্যাপকহারে ছত্রাকে আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এ ছত্রাকের প্রভাবে ধানের শীষ কালো বর্ণ ধারণ করে চিটায় পরিণত হচ্ছে।
উপজেলার বাঁকা গ্রামের কৃষক ও ইউপি মেম্বর পরান আলী, আজিবর রহমান, আবদুল মজিদ ও সিরাজুল ইসলাম জানান, এ রোগে আক্রান্ত ধান ক্ষেতজুড়ে হলুদবর্ণ ধারণ করেছে। এ ছত্রাকের আক্রান্ত ফলন্ত ধানের বিপর্যয় দেখে কৃষকরা চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, এ ছত্রাকের নাম ‘ফসল স্মার্ট বা লক্ষীগু’। অনাবৃষ্টি ও প্রতিকূল আবহাওয়া এবং অশোধনকৃত বীজ ব্যবহার করায় ধানক্ষেত এ ছত্রাকে আক্রান্ত হয়।
ছত্রাক আক্রান্ত ক্ষেতের কৃষকরা প্রতিদিন কৃষি অফিসে এসে কৃষি কর্মকর্তাকে জানালে তিনি নতুন করে আর কোনো ক্ষেত এ রোগে আক্রান্ত না হতে পারে সেজন্য কৃষকদের ছত্রাকনাশক যেমন টিলট, স্কোর, ফলিকুর রেডিমিল্ড গোল্ড নামের কীটনাশক ব্যবহার করার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন। কৃষকদের ক্ষেতের ধান ওঠার পর রোদে শুকিয়ে বেবিস্টিন দিয়ে শোধন করে বীজ সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
ছত্রাকের আক্রমণের ফলে রোপা আউশ ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এবার ওরা ঘুরে দাঁড়াবেই

২৩.০৯.০৮
যায়যায়দিন ।। পটুয়াখালী প্রতিনিধি

ব্র্যাক থেকে নিজের নামে ২০ হাজার টাকা আর আশা থেকে স্ত্রীর নামে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে আমন চাষাবাদে মাঠে নেমেছেন পটুয়াখালীর বাউফলের মহাশ্রাদ্ধি গ্রামের প্রান্তিক চাষী মতলেব কাজী (৫০)। নিজের ৫০ শতক ও অন্যের বর্গাসহ দেড়কানি জমিতে এবার আমন ধানের চাষ করছেন তিনি। গত বছরেও একই পরিমাণ জমিতে আমন চাষ করেছিলেন। কিন্তু সিডর সবকিছু ল-ভ- করে দিয়েছে। ক্ষেতেই মিশে গেছে উঠতি আমন ফসল। মাত্র ২০ মণ ধান ঘরে তুলতে পারেন তিনি। এ অবস্থায় বাঁচার তাগিদে তাকে নতুন করে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে নামতে হয় চাষাবাদের মাঠে। চলতি মৌসুমে এখন ক্ষেতে আমন চারা রোপণ প্রায় শেষ। সামনে তার সোনালি স্বপ্ন। সিডরের ক্ষতি কাটিয়ে ঘুড়ে দাঁড়ানোর নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছেন তিনি।
একই এলাকার কৃষক আবদুস সালামের ঘরবাড়ি সিডরে বিধ্বস্ত হয়। বিনষ্ট হয় ক্ষেতের ফসল। এখন তাকে থাকতে হচ্ছে ঝুঁপড়ি ঘরে। এবারে তার ঘরে খোরাক (খাবার) ওঠেনি, রাখতে পারেননি প্রয়োজনীয় বীজ ধান। একদিকে খোরাকি চাল কিনতে হচ্ছে, অন্যদিকে আগামীর জন্য নামতে হয়েছে চাষাবাদে। এ অবস্থায় তাকে বাধ্য হয়ে জড়িয়ে পড়তে হয়েছে মহাজনের কর্জ-দাদনে, আর এনজিও’র ঋণের জালে। গত বছরের মতো এবারেও তিনি নিজের ৪০ কড়া (৯০ শতক), আর পাট্টা নিয়ে দুই কানি জমিতে চাষাবাদ করেছেন। তিনি জানান, এখন পরিবারের খোরাকি চাল হাওলাত করে খেতে হচ্ছে। চার মাস পর আমন ধান উঠলে প্রতি মণ চালের দাম পরিশোধ করতে হবে দুই হাজার টাকা। কর্জ-দাদনে মহাজনের কাছ থেকে আনা ১২ হাজার টাকায় পাঁচ মাসে পরিশোধ করতে হবে ১৮ হাজার টাকা। বীজ ধান ও চারা বীজ কেনাসহ চাষাবাদ সম্পন্নের জন্য আরো টাকার প্রয়োজন হওয়ায় গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ১৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছেন স্ত্রীর নামে। এ ঋণ আর কর্জ-দাদনে জড়িয়ে পড়ার চিত্র শুধু আবদুস সালামেরই নয় মজিবর সিকদারসহ আরো অনেক প্রান্তিক চাষীর। এরপরেও মনোবল হারাননি তারা। এবারে আর কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে তারা সিডরের ক্ষতি অনেকটা কাটিয়ে উঠতে পারবেন বলে আশাবাদী।
পটুয়াখালীসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সিডরে জানমালের ক্ষতি হয় ব্যাপক। অধিকাংশ এলাকার উঠতি আমন ফসল মিশে যায় ক্ষেতের মাটিতে। জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এ জেলায় দুই লক্ষাধিক হেক্টর জমির আমন ফসল দুর্যোগকবলিত হয়। এর মধ্যে ৯০ হাজার হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে উৎপাদন ক্ষতি হয় এক লাখ ৬২ হাজার মেট্রিক টন চাল। টাকার অঙ্কে এ ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। সিডর বিধ্বস্ত এলাকায় ফসলের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে গ্রহণ করা হয়েছে কৃষি পুনর্বাসন কর্মসূচি। চলতি মৌসুমে জেলায় দুই লাখ ১৪ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন চাল। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের লক্ষ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে ৫১৭ মেট্রিক টন আমন বীজ ধান ও সার।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. কফিল উদ্দিন জানান, এ অঞ্চলের অধিকাংশ জমি এক ফসলী। কৃষকরা আমন ফসলের ওপর নির্ভরশীল। তাই তারা সিডরের ক্ষতি পোষাতে চলতি আমন মৌসুমে আগেভাগে মাঠে নেমেছেন।

সিদ্ধান্ত ভালো কিন্তু ছিদ্র বন্ধ হবে তো?

২৩.০৯.০৮
উপসম্পাদকীয়
কৃষিঋণ
সমকাল ।। দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু

স¤ক্স্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক দেশি-বিদেশি সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের জন্য কৃষিঋণ বিতরণ বাধ্যতামহৃলক করার যে সি™ব্দাšø নিয়েছে তা ইতিবাচক, এ নিয়ে কোনো সংশয় নেই। ব্যাংকগুলোর জন্য কৃষিঋণ দেওয়া বাধ্যতামহৃলক হলেও কোন ব্যাংককে কী পরিমাণ কৃষিঋণ দিতে হবে, তা নির্দি®দ্ব করে দেওয়া হয়নি। এ বছর কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এই পরিমাণ গত বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি। ১৯৯০ সালে আর্থিক খাত সংস্ট‹ার কর্মসহৃচির আওতায় ‘ডাইরেক্ট লেন্ডিং’ প্রথা বিলোপ হয়ে যাওয়ার পর কৃষিঋণ বিতরণের বিষয়টি ব্যাংকের জন্য ঐচ্ছিক হয়ে পড়েছিল কিন্তু নতুন সি™ব্দাšেø ওই ঐচ্ছিক বিষয়টি হলো বাধ্যতামহৃলক।
কৃষিপণ্যের দাম বৃ™িব্দর সঙ্গে সঙ্গে এই খাতে ঋণ বিতরণে ঝুঁকি যে বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। তাছাড়া মুনাফার প্রেক্ষাপট বিশেèষণ করলেও বেসরকারি ব্যাংকগুলোর এ ব্যাপারে নিরুৎসাহিত হওয়ার কারণ নেই। এখনো মোট কৃষিঋণের সিংহভাগ জোগাচ্ছে রা®দ্ব্রায়ত্ত খাতের দুই ব্যাংক। তাদের অংশগ্রহণ সংকুচিত করে বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকের স¤ক্সৃক্ততা এ ক্ষেত্রে বাড়ালে সুফল পাওয়ার প্রত্যাশা অমহৃলক নয়। ধারণা করা যায়, বিশ^বাজারে খাদ্যশস্য নিয়ে সংকটের সৃ®িদ্ব না হলে পরিবর্তিত এই মনোভাব দ্র“ত সি™ব্দাšেø পৌঁছতে সাহায্য করত না। অর্থাৎ বিদ্যমান সংকট ও সামনে আরো যে গভীর সংকট অপেক্ষা করছে তা মোকাবেলায় উৎপাদন বৃ™িব্দই একমাত্র পথ, তা বিলল্ফে^ হলেও দায়িÍ^শীলদের বোধোদয় ঘটিয়েছে। কৃষি খাতে বিনিয়োগও যে অত্যšø জরুরি এবং এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান সব ধরনের প্রতিকূলতা দহৃর করা সরকারের অন্যতম বড় দায় তা-ও বোধকরি নীতিনির্ধারকরা বিলল্ফে^ হলেও অনুভব করতে সক্ষম হয়েছেন।
উপকরণ ও শ্রমের মজুরি বৃ™িব্দর ফলে সঙ্গতই কৃষকের ব্যয় বেড়েছে। সরকার এ খাতে অর্থ সংকট সত্ত্বেও প্রয়োজনের তাগিদেই ভর্তুকি বাড়িয়ে চলেছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা খুব তিক্ত। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ এবং জাতীয় অর্থনীতিতে কৃষকের জোগানদানের বিষয়টি নতুন করে ব্যাখ্যা-বিশেèষণও নি®ক্স্রয়োজন। বলা হয়ে থাকে কৃষক দেশ-জাতির মেরুদ-, কৃষি হচ্ছে প্রাণ। কথাটা অমহৃলক নয়; কিন্তু তারপরও কৃষক এবং কৃষি কারোরই অগ্রগতির পথটা নয় মসৃণ। দৃশ্যত মসৃণের চে®দ্বার কোনো ঘাটতি দেখা না গেলেও বাস্টøবতার কঠিন চাবুকে কৃষক জর্জরিত। দেশের কৃষি খাতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে বটে কিন্তু তা সহজলভ্য হয়নি বিধায় কাগ্ধিক্ষত মাত্রা ¯ক্সর্শ করা এখনো রয়ে গেছে স্ট^পেুর ব্যাপার। গত ইরি-বোরো মৌসুমে কৃষককে যে প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে উৎপাদনের চাকা সচল রাখতে হয়েছে, তা সচেতন মহলের অজানা নয়। বিগত কয়েক বছর ধরেই ইরি-বোরো মৌসুমে সার নিয়ে তুঘলকি কা- ঘটে চলেছে। বিদায়ী জোট সরকারের আমলে কৃষি খাতে ভর্তুকির অর্থের বড় অংশ কৃষকদের কল্যাণে না লেগে কীভাবে ব্যক্তি বা মহলবিশেষের উদরে ঢুকেছে, এর তথ্য-উপাত্ত পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে বহুবার। পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে ইরি-বোরো মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই দেশের শাসনভার নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ন্যস্টø হলেও আড়তদার, মজুদদার, ডিলার ও দলীয় ব্যবসায়ী চত্রক্র বা সিন্ডিকেট পুরো চরিত্র বদলাতে যে পারেনি, এরও বিস্টøর প্রমাণ রয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই (জানুয়ারি-ফেব্র“য়ারি) সার সংকট এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে যে, তা কাটিয়ে ওঠার লক্ষ্যে সার বিতরণ ও ব্যবস্ট’াপনার জন্য সেনাসদস্যদের মাঠে নামাতে হয়। এর মধ্যে কৃষক সময়মতো ঋণ পাননি।
কৃষকের জন্য সরকার যেমন, ইতিহাসও তেমনি দহৃরবর্তী ও উদাসীন। কৃষিকাজকে কেউ কেউ আমোদ করে বলেন, জাতীয় রল্পব্দনশালা। কিন্তু সে যে তারও বেশি, তা তারা টের পান না। নেতা-নেত্রী কিংবা সরকার তাদের খবরও রাখেন খুব কম। বিস্ট§য়কর অথচ সত্য, জাতীয় ইতিহাসে কৃষকের স্ট’ান হয় না। মুক্তিযু™েব্দর ইতিহাসই (?) এর বড় প্রমাণ। আমাদের অধিকাংশ ঘরই কৃষকের ঘর, অথচ সেই খবর ইতিহাসের কাছে পৌঁছে না! এই ব্যর্থতার দায় দেশের রাজনৈতিক নেতৃÍে^র, যারা কৃষকের কাছে শুধু ভোট চান, তাদের অধিকারের মহৃল্য দেন না। তুলনায় শ্রমিকের মর্যাদা সামান্য হলেও দৃশ্যত অধিক; কিন্তু শ্রমিক আর কয়জন, অধিকাংশই তো কৃষক, যারা শুধু আজ নয়, বহু আগেও ছিলেন। তবে কৃষককেও প্রয়োজন হয় বৈকি। কেবল যে খাদ্য উৎপাদনের বেলায় তা তো নয়, রাজনীতির বেলায়ও বিশেষ করে ভোটের সময়। এরপর কৃষক হয়ে যান তুচ্ছ, তার ন্যায্য অধিকার লুটেপুটে নিতে চলে দুর্বৃত্তপনা এবং তা এতটাই ভয়াবহভাবে বিদায়ী জোট সরকারের আমলে হয়েছে যা লাজলজ্জারও কোনো গ-ি মানেনি। সমাজের অনেকেই তাদের ক্ষতি নানাভাবে পুষিয়ে নেন বা নিতে পারেন, কিন্তু কৃষক? তারা যে তিমিরে ছিলেন এখনো সেখানেই আছেন। আজও তাকে নির্যাতন সইতে হয় উৎপাদনের জন্য, জীবন বাঁচানোর জন্য, দেশের সমৃ™িব্দর জন্য। অথচ প্রায় বিপরীতটাই হওয়া ছিল সঙ্গত এবং স্ট^াভাবিক। জাতীয় রাজনীতি তাকে নিজের মধ্যে আনতে চায় না, কেবল ভোট ছাড়া। শ্রমিককে চায়, কেননা শ্রমিক সংগঠিত। তাকে একসঙ্গে পাওয়া যায়, মিছিলে-হরতালে তারা কাজে লাগে। কৃষক সেভাবে তাদের কাজে লাগেন না। কিন্তু তারা ভুলে যান, কৃষক যদি একবার জেগে ওঠেন তাহলে বড় বিপদ। গোটা ব্যবস্ট’াই ভেঙে দিতে পারেন কৃষক। চাষী চাষ না করলে শুধু যে খাদ্যই জুটবে না তা তো নয়, রা®দ্ব্রও পড়বে সমহৃহ বিপদে, যেহেতু দেশটা কৃষিনির্ভর।
স্ট^াধীন বাংলাদেশেও কৃষকদের যে বঞ্চনা, দুর্ভোগ, প্রতিকূলতা ডিঙাতে হচ্ছে তা অনাকাগ্ধিক্ষত হলেও বাস্টøবতা ভয়াবহ। এমন দৃ®দ্বাšøও সামনে আছে, নামমাত্র কৃষিঋণের জন্য সংশিè®দ্ব ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কৃষকের কোমরে রশি বাঁধার আয়োজন করে। কিন্তু ওই যে তথাকথিত শিল্কপ্পপতি যারা কোটি কোটি টাকা আͧসাৎ করে বসে আছেন, যারা খেলাপি হিসেবে চিহিক্রতÑ তাদের কোমরে কি রশি পড়ে? কৃষকের বিরু™েব্দ সার্টিফিকেট মামলা দায়ের হয়। চত্রক্রবৃ™িব্দ সুদের কবলে পড়ে বহু কৃষক আর ইহজীবনে ঋণ শোধ করতে পারেননিÑ এমন দৃ®দ্বাšøও বিরল নয়। মাঝে মধ্যে কৃষিঋণ মওকুফ করে দেওয়ার কথা বলা হলেও এর সুফল সব কৃষকের ভাগ্যে জোটে কি? অথচ কৃষকের কাছ থেকে অনাদায়ী ঋণ আদায়ে কর্তৃপক্ষকে নমনীয় হওয়া প্রয়োজন, কারণ বিদ্যমান পরিস্টি’তি কৃষকের চরম প্রতিকূলে। ঋণ আদায়ে ব্যাংক নিয়মতাšিúক পদক্ষেপ নিতে পারে; কিন্তু এর পাশাপাশি মানবিক বিষয়টিও ভেবে দেখা প্রয়োজন। বিদ্যমান সংকটে কৃষক এমনিতেই দিশেহারা। দ্রব্যমহৃল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করার উ™^ৃত্তও কৃষকের হাতে নেই। বড় বড় ঋণখেলাপি আর সাধারণ কৃষকদের এক কাতারে ফেলে দেখা কি সমীচীন? ফসল মরলে যেমন তাদের মরণ, ফসল ভালো হলেও তাদের মরণ। ওই যে দাদন ব্যবসায়ী, সুদখোর, যারা ক্ষেতের ধান অনেক কম মহৃল্যে আগাম কিনে নিয়েছে, তাদের থাবা থেকে এ দেশের কৃষকের মুক্তি নেই। অতীতে ঋণ প্রদানে ব্যাংকগুলোর নানারকম জটিলতার কারণে উৎপাদনের চাকা সচল রাখতে কৃষককে ওই রক্তচোষা চত্রেক্রর কাছে যেতে হয়েছে, যে কারণে উৎপাদিত ফসল কৃষকের ঘরে না উঠে তাদের উদরে গেছে। পাঁচ হাজার টাকা কৃষিঋণ পাওয়া কৃষকের জন্য অত্যšø দুরূহ, সংশিè®দ্ব কর্তাদের তৈরি নিজস্ট^ ব্যবস্ট’ার কারণে। ঋণ পাওয়ার আগেই তাদের তু®দ্ব করতে হয়। পরিশোধ করতে বিলল্ফ^ হলে পুলিশ বাড়িতে যায়, কোমরে দড়ি দেয়; কিন্তু কোটি কোটি টাকার ঋণখেলাপিরা গোঁফে তা দেন। এ চিত্র কতটা পাল্কেল্টছে এর জবাব দেবে ভবিষ্যৎ।
কেবল ঋণ নয়, বীজ, সার, ডিজেল এবং কীটনাশক বিতরণেও নজরদারি কঠোর করা দরকার। চলতি আমন মৌসুমকে সফল করে তুলতে এবং ভবিষ্যতে গোটা কৃষি ব্যবস্ট’ার পথ মসৃণ করতে ঋণ বিতরণের যে সি™ব্দাšø নেওয়া হয়েছে, এর সুফল যাতে কৃষক পান, সে ব্যবস্ট’া নিশ্চিত করা চাই। ব্যাংকগুলো যাতে কোনো তুঘলকি কা- না ঘটাতে পারে এবং ব্যাংকের দরজা যাতে কৃষকের জন্য কণ্টকমুক্ত থাকে, সেদিকেও লক্ষ্য রাখা জরুরি। অতীতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজ অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তু®দ্ব করলেই ঋণ পাওয়া যাবেÑ এই যে অলিখিত রীতি পরিলক্ষিত হয়েছে, এর যাতে আর পুনরাবৃত্তি না ঘটে সে বিষয়টিও জরুরি। অর্থাৎ সব ছিদ্র বল্পব্দ করতে হবে। ব্যাংকগুলো যাতে সামাজিক দায়িÍে^র অংশ হিসেবে কর্তব্য পালনে নিষ্ঠ হয়, সে ব্যাপারে দায় সরকারের। বলিষ্ঠতার সঙ্গে কৃষিঋণ কার্যত্রক্রমের সঙ্গে স¤ক্সৃক্তদের দুর্নীতি দমন করা না গেলে এই শুভ উদ্যোগ নি®ম্ফল হতে বাধ্য। সে সঙ্গে ঋণের পরিমাণও খুবই গুরুÍ^পহৃর্ণ ব্যাপার। একজন কৃষককে দেওয়া ঋণ-সাহায্য যদি কৃষি উপকরণের ব্যয় মিটিয়ে চালানি পুঁজি হিসেবে কিছু টাকা তার হাতে না থাকে, তবে কৃষকের মেরুদ- সোজা হবে কী করে?
ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে বর্গা ও প্রাšিøক চাষীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ দেশের সিংহভাগ কৃষক বর্গাচাষী। এখন নতুন নিয়মে কৃষিঋণ বিতরণ করতে গিয়ে আবারো যদি সেই পুরনো কায়দায় যাদের জমি আছে শুধু তাদেরই মহৃল্যায়ন করা হয়, তাহলে বর্গাচাষীরা যে তিমিরে আছেন সেখানেই থেকে যাবেন। তাদের জন্য আবর্তক শস্যঋণ ব্যবস্ট’া চালু করা প্রয়োজন, যাতে তারা একবার আবেদন করে তিন মৌসুম ঋণ পেতে পারেন। আমাদের অভিজ্ঞতায় আছে, যারা কখনো লাঙলে হাত দেন না, তারা ওই অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তাদের সহায়তায় কৃষিঋণ উত্তোলন করে অন্য খাতে বিনিয়োগ করেন। এ ধরনের যাতে কোনো কিছু না ঘটে তা লক্ষ্য রেখে বর্গা ও প্রাšিøক চাষীদের পরিচয়পত্রের ব্যবস্ট’া করে তাদের ঋণ পাওয়ার পথ সুগম করতে হবে। তা না হলে খাদ্য নিরাপত্তা অনিশ্চিতই থেকে যাবে।
আমাদের দেশে পুঞ্জীভূত কৃষিঋণ আদায়ে ব্যর্থতার জন্য সরকারের দেওয়া তহবিল ‘রিভলভিং ফান্ড’ হিসেবে সফল হয়নি। সে জন্য বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উল্পুয়ন ব্যাংককে বারবার পুনঃঅর্থায়ন করতে হয়েছে। কৃষিঋণ আদায় না হওয়ার অন্যতম কারণ হলো শস্যঋণের একটা অংশ দালাল ও একশ্রেণীর কর্মকর্তার পকেটে যাওয়ার ফলে শস্য উৎপাদনে ঠিকমতো ব্যবহƒত হয় না। সব মিলিয়ে দেখতে হবে কৃষিঋণের শস্যঋণ অংশটি যেন সত্যিকারের কৃষকের হাতে যায়। ঠিক সময়ে তারা যেন টাকাটা হাতে পান। এ পরিস্টি’তিতে বেসরকারি ব্যাংকগুলো যদি কৃষকদের ঋণ বিতরণ শুরু করে তাহলে দেশের খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব পড়বে তা আশা করা যায়। এছাড়া জামানতবিহীন কৃষিঋণ যদি বর্গাচাষীদের দেওয়া সল্ফ¢ব হয়, তাহলে কৃষি খাতে বৈপ্টèবিক পরিবর্তন ঘটে যেতে পারে। বর্তমানে কৃষি উপকরণের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে কৃষকরা আর্থিক সহায়তা ছাড়া কৃষি খাতে উৎপাদন বাড়াতে পারবেন না। এর সাফল্য নির্ভর করবে মাঠ পর্যায়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ঋণ দিতে কতটা আগ্রহী হবে তার ওপর। এছাড়া বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সুদের হারও এ ক্ষেত্রে গুরুÍ^পহৃর্ণ। ঋণ নেওয়ার প™ব্দতিও সহজ করতে হবে।
রা®দ্ব্র ও সমাজের যত ঝড়ঝঞ্ঝা তা কৃষকের ওপর দিয়েই সর্বাগ্রে বয়ে যায়। বন্যাতে সবার আগে সে-ই ভাসে। খরাতেও সে-ই পোড়ে। তবে এর সবটাই যে প্রকৃতিসৃ®দ্ব তা নয়, মনুষ্যসৃ®দ্বও কম নয়। গঙ্গার পানি বণ্টনই বলি আর টিপাইমুখের বাঁধের কথাই বলি না কেন, উৎকণ্ঠাটা তারই অর্থাৎ কৃষকেরই বেশি, সমস্যাও তারইÑ এটা আমলাতšেúরও নয়, রাজনীতিকদেরও নয়। যারা দেশের অর্থনীতির সবচেয়ে বড় জোগানদাতা, যারা না বাঁচলে গোটা রা®দ্ব্রই বিপল্পু হবে, উল্পুয়ন-অগ্রগতি তো দহৃরের কথা, অস্টিøÍে^র মহৃলে টান পড়বে, তাদের উল্পুতি না ঘটিয়ে দেশ-জাতির উল্পুতি ঘটানোর উপায় আছে কি? গোটা ব্যবস্ট’ার কাছে কৃষক সমাজ জিল্ফি§। তাই ব্যবস্ট’ার বদল না ঘটাতে পারলে অবস্ট’ার বদল দুরূহ। কৃষিঋণ কার্যত্রক্রম অবশ্যই সব ধরনের দুর্নীতি ও ছ™§বেশী কৃষক, টাউট-বাটপার ও মধ্যস্ট^Í^ভোগীদের লুটপাট থেকে মুক্ত রাখতে না পারলে সব প্রচে®দ্বা এবং উদ্যোগই মাঠে মারা যাবেÑ দায়িÍ^শীলরা যদি এই বিষয়টি বিস্ট§ৃত না হন তবেই মঙ্গল।

লেখক : সাংবাদিক

রাজশাহীর ৮৮ ডিলারের গুদামে ১১ কোটি টাকার সার অবিত্রক্রীত ভেজাল ভারতীয় সারে বাজার সয়লাব

২৩.০৯.০৮
সমকাল ।। রাজশাহী ব্যুরো

রাজশাহীর ডিলারদের কাছে প্রচুর সার মজুদ থাকলেও বিত্রিক্র হচ্ছে না। দাম বেশি হওয়ায় ডিলারদের সার কৃষকরা কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ভারত থেকে আসা নিল্ফুমানের ভেজাল সার কিনে তারা জমিতে ব্যবহার করছেন। ফলে রাজশাহীর ৮৮ জন বিসিআইসি ডিলারের কাছে ১১ কোটি টাকার সার অবিত্রিক্রত রয়েছে।
জানা গেছে, সরকার গত বছরের তুলনায় দাম বাড়ানোয় কৃষকরা ডিলারদের কাছ থেকে সার কিনছেন না। এছাড়া স্টিèপের মাধ্যমে সার সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ফলে কৃষকরা চোরাইপথে ভারত থেকে আসা নিল্ফুমানের সার কিনছেন। সরকার এ বছর প্রতি বস্টøা ইউরিয়া সারের দাম ৬০০, পটাশ ২ হাজার ৭৮৫ ও টিএসপি ৩ হাজার ৮২৩ টাকা নির্ধারণ করেছে।
রাজশাহী কৃষি স¤ক্স্রসারণ অধিদফতর সহৃত্র জানায়, বর্তমান আমন মৌসুমে রাজশাহীর ৮৮ ডিলারের কাছে ৭০৭ মেট্রিক টন পটাশ ও ৬০৪ মেট্রিক টন টিএসপি মজুদ রয়েছে। যার মহৃল্য ১১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। পবা উপজেলার নওহাটার বিসিআইসি সার ডিলার স্ট‹াই এন্টারপ্রাইজের মালিক জানান, তার গুদামে এ মৌসুমের জন্য বরাদ্দ পাওয়া ৪০ লাখ টাকার টিএসপি সার অবিত্রিক্রত রয়েছে। কিছুদিনের মধ্যে রবি মৌসুমের বরাদ্দ পাওয়া যাবে। এ অবস্ট’ায় বিপুল পরিমাণ সার অবিত্রিক্রত থাকায় তিনি বিপাকে পড়েছেন। তার মতো অবস্ট’া জেলার অন্যান্য সার ডিলারদেরও।

বকশীগঞ্জে ৫ টন ভেজাল সার আটক : তিনদিনেও মামলা হয়নি

২৩.০৯.০৮
সমকাল ।। বকশীগঞ্জ (জামালপুর) প্রতিনিধি

বকশীগঞ্জে পুলিশ ৫ টন ভেজাল টিএসপি সার আটক করেছে। রহস্যজনক কারণে আটকের তিনদিন পরও কোনো মামলা হয়নি। জানা যায়, বকশীগঞ্জ থানা পুলিশ ১৯ সেপ্টেল্টল্ফ^র রাতে নিশাক্ষিয়া ইউনিয়নের মাঞ্জালিয়া গ্রামের মনির হোসেনের বাড়ি থেকে ৫ টন ভেজাল টিএসপি সার আটক করে তিনদিন পরও মামলা না হওয়ায় আটককারী এসআই হযরত আলী জানান, তিনি কৃষি অফিসকে বিষয়টি অবহিত করেছেন। কিন্তু কৃষি অফিস থেকে কোনো মতামত না দেওয়ায় মামলা হয়নি। তবে ১৯ সেপ্টেল্টল্ফ^র এ ব্যাপারে বকশীগঞ্জ থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।

Monday, September 22, 2008

পীরগাছায় আমন ক্ষেতে পোকার আক্রমণ

২২.০৯.০৮
ডেসটিনি ।। পীরগাছা (রংপুর) প্রতিনিধি

রংপুরের পীরগাছা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আমন ক্ষেতে ব্যাপক হারে বাদামি ফঁড়িং, খোল পচা ও মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এসব পোকার আক্রমণে আমনের উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কায় কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়েছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আমন চাষ করা হয়েছে। আমনের চারাও বেশ বেড়ে উঠেছে। কিন্তু বর্তমানে উপজেলার কান্দি, কৈকুড়ী, পারুল, ইটাকুমারী, তাম্বুলপুর, পীরগাছা, অন্নদানগর ও ছাওলা ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় আমন ক্ষেতে ব্যাপক হারে বাদামি গাছ ফঁড়িং, খোল পচা ও মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এসব পোকার আক্রমণে ধান গাছের পাতা সাদা ও লাল রং ধারণ করে শুকিয়ে খড়ের মতো হয়ে যাচ্ছে। পোকা গাছের কা- খেয়ে ফেলায় গাছ মরে যাচ্ছে। উপজেলার কান্দি ইউনিয়নের মনিরামপুর গ্রামের কৃষক আ. ছামাদ ও জবেদ আলী জানান, অনেক আশা নিয়ে আমন আবাদ করেছি; কিন্তু পোকার আক্রমণে ধান গাছ মরে যাওয়ায় আমন ধান ঘরে তুলতে পারব কি না এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। একই ইউনিয়নের পাটক শিকড় গ্রামের কৃষক শামছুল আলম, ফুল মিয়া সহ আরও অনেকে জানান, পোকায় যেভাবে ধান গাছ আক্রমণ করেছে, এ পোকা দমনে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক ছিঁটিয়েও (¯েপ্র) কোনো কাজ হচ্ছে না।
কান্দি ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আ. জলিল পোকার আক্রমণের কথা স্বীকার করে জানান, কম-বেশি সব আমন ক্ষেতেই বাদামি গাছ ফঁড়িং, খোল পচা ও মাজরা পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। তিনি আরও জানান, পোকা দমনে কৃষকদের ওষুধ ছিঁটানোর পাশাপাশি ক্ষেতে বাঁশের খুঁটি বা কঞ্চি পুঁতে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কে এম নূরুল আমিন বলেন, আমন ক্ষেতে খোল পচা রোগে পটাশ সার এবং আন্যন্যা পোকার আক্রমণ রোধে কীটনাশক প্রয়োগ করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

রাজিবপুরে আমন চারা সংকট

২২.০৯.০৮
ডেসটিনি ।। রাজিবপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের রাজিবপুর ও রৌমারী উপজেলায় আমন চারা সংকটের কারণে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন চাষ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কৃষকেরা বিভিন্ন স্থানে ঘুরেও চারা সংগ্রহ করতে হিমশিম খাচ্ছে। সরেজমিন দুই উপজেলার রাজিবপুর, কোদালকাটি, মোহনগঞ্জ, যাদরচর, বন্দরের, শৌলমারী, বৌমারী ইউনিয়নে ঘুরে দেখা যায়, রোপা আমনের জমি থেকে পানি নেমে গেছে। তবে বন্যার পানি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ায় ধানের চারা পচে গেছে। পাশাপাশি বীজতলাও নষ্ট হয়ে গেছে। এ কারণে চারার তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। জানা যায়, বন্যায় দুই উপজেলায় প্রায় ৫ হাজার হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলেও ধানের চারার ওপর মাটি পড়ে একাকার হয়েছে। কোদালকাটির কৃষক শাহ আলম জানান, ধানের চারা নষ্ট হওয়ার পর পার্শ্ববর্তী হাট থেকে ৪ হাজার টাকার চারা কিনেছি তা দিয়ে ১ একর জমির চারা লাগান যাবে। যাদুরচরের কৃষক মন্টু মিয়া জানান, ভোর রাতে সেহেরি খেয়ে চারার খোঁজে বেরিয়েছিলাম। কিন্তু চারা সংগ্রহ করতে পারিনি। বন্দরের কৃষক ওমেদ আলী জানান, চারা না পেলে তার ৫ একর জমি খালি পড়ে থাকবে। রাজিবপুর কৃষি কর্মকর্তা জানান, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের তালিকা প্রস্তুত করে ঊর্ধ্বতন দফতরে প্রেরণ করা হয়েছে। তবে অত্র উপজেলার কৃষকের অভিমত সরকার ক্ষতিগ্রস্তদের সঠিক সময়ে আমন বীজ সরবরাহ করতে না পারায় অসময়ে আমন চারা রোপণ করা সম্ভব হবেন না।

সন্তোষজনক নয় ভেষজ উদ্ভিদ চাষাবাদের অগ্রগতি

২২.০৯.০৮
ইত্তেফাক ।। সৈয়দ নেসার আহমদ, শ্রীমঙ্গল সংবাদদাতা


ছয় বছর পূর্বে বনবিভাগ এবং পাঁচ বছর পূর্বে বাংলাদেশ চা বোর্ড পৃথক পৃথক ভাবে দেশে প্রথমবারের মত ব্যাপকভিত্তিক ও সম্প্রসারণমূখী ভেষজ উদ্ভিদ চাষাবাদ কার্যক্রম শুরু করলেও উভয় কার্যক্রমই ইতিমধ্যে মুখ থুবড়ে পড়েছে।

আাদি ও অকৃত্রিম ভেষজ চিকিৎসা ব্যবস্থায় মানুষকে উৎসাহী করে তোলার উদ্দেশ্যে সিলেট বনবিভাগ মৌলভীবাজার ফরেষ্ট রেঞ্জ এর লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কে দুই একর জমির উপর ২০০২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করে দেশের প্রথম ভেষজ বাগান ‘আরোগ্যকুঞ্জ’। ৪১ প্রজাতির বৃক্ষজাতীয়, ১৮ প্রজাতির গুল্মজাতীয় ও ২১ প্রজাতির লতাজাতীয় গাছগাছালী আরোগ্যকুঞ্জে রোপন করা হয়।

অপরদিকে দেশের ৬৩টি চা বাগানের প্রায় ১১শত হেক্টর চা চাষ অনুপযোগী জমিতে ভেষজ, ফলদ ও মশলা জাতীয় উদ্ভিদ চাষের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ চা বোর্ড ২০০৩ সালে একটি প্রকল্প তৈরী করে। এ লক্ষ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে শ্রীমঙ্গলস্থ বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনষ্টিটিউটে (বিটিআরআই) একটি কেন্দ্রীয় নার্সারীসহ মাইজদিহি, দেওড়াছড়া, পাত্রখোলা, এম আর খান ও বালিশিরা চা বাগানে মোট ৬টি নার্সারী তৈরী করা হয় এবং ২০০৩ সালের ২৯ আগষ্ট সবক’টি নার্সারী আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী নার্সারীগুলি হতে পরবর্তী তিন বছরে চা বাগানগুলোতে মোট ৯০ লাখ ভেষজ উদ্ভিদ চারা সরবরাহের পরিকল্পনা ছিল।

ভেষজ উদ্ভিদ চাষাবাদে বনবিভাগ ও চা বোর্ডের উদ্যোগ দু’টিতে দৃশ্যত ভাটা পড়েছে। বনবিভাগের আরোগ্যকুঞ্জে ইতিমধ্যে অযতœ অবহেলার ছাপ সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বাগান রক্ষণাবেক্ষণে কোন ব্যয় বরাদ্দ না থাকায় আরোগ্যকুঞ্জ ইতিমধ্যে জঙ্গলাকীর্ণ হয়ে পড়েছে। বনবিভাগের সংশ্লিষ্ট সূত্র আরোগ্যকুঞ্জের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যত কর্ম পরিকল্পনার বিষয়ে কিছু অবগত নয় বলে জানায়। অপরদিকে চা বাগানে ভেষজ উদ্ভিদ চাষাবাদ বিষয়েও চা বোর্ড সূত্র কিছু জানাতে পারেনি। বিটিআরআই এবং সংশ্লিষ্ট চা বাগানগুলি তাদের চা গাছের সাথে ভেষজ উদ্ভিদের চারাগাছগুলিকে কোনমতে বাঁচিয়ে রাখলেও সম্প্রসারণমুখী কোন কার্যক্রমই হাতে নেয়া হয়নি বলে সূত্র জানায়।

অন্যের জমিতে ধান ও সবজি চাষ করে মুকুল এখন স্বাবলম্বী

২২.০৯.০৮
ইত্তেফাক ।। সাতক্ষীরা সংবাদদাতা ।।

দেশের খাদ্য ঘাটতির চাহিদা পূরণে সাতক্ষীরার শেখ মুকুলার রহমান গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। অন্যের জমি লীজ নিয়ে ধান ও সবজি চাষ করে তার স্বাবলম্বী হওয়ার প্রচেষ্টা এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। একই জমিতে তিনবার ধান উৎপাদনসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি চাষ করে সে এখন স্বাবলম্বী।

শহরের সুলতানপুর গ্রামের মৃত:শেখ মোকলেজার রহমানের পুত্র শেখ মুকুলার রহমান মুকুল মাত্র ২৩ বছর বয়সে পিতৃহারা হয়। পিতা মারা যাওয়ার পর মা, তিনভাই ও দুই বোনের সংসারের ভার পড়ে তার ঘাড়ে । অভাব-অনটনের কারণে তার লেখাপড়া বেশী হয়নি। ফলে তাকে বেছে নিতে হয় ব্যবসা। ব্যবসার শুরুতে সে স্থানীয় বাজার থেকে নানারকম সবজি বীজ ক্রয় করে জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে বিক্রি করতে থাকে। এতে যে সামান্য লাভ হয় তা দিয়ে সে কোন রকমে ৬/৭ জনের সংসার চালাতো। এভাবে চলতে চলতে বিভিন্ন স্থানের চাষীদের সাথে তার পরিচয় হওয়ায় ব্যবসার উন্নতি হতে থাকে। সে সুযোগ পেল ভারতের ব্যাঙ্গালোরের নামধারী একটি সীড কোম্পানীতে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণের।

প্রশিক্ষণ শেষে দেশে ফিরে সে একই জমিতে তিনবার ফসল ফলানোর লক্ষ্যে তিনি স্থানীয় খড়িবিলায় ৮০ বিঘা জমি এক বছরের জন্য লীজ নেন। সে শুরু করলো উন্নতজাতের ধান চাষ। লীজ নেয়া ৫২ বিঘা জমিতে তিনি হাইব্রীড সোনার বাংলা-৬, ২০ বিঘায় বি আর - ২৮, ৫ বিঘায় বি আর-২৯ এবং ৩ বিঘা জমিতে চাষ করলেন অন্যান্য হাইব্রীড জাতের ধান। মোট ৮০ বিঘা জমিতে চাষ করতে তার খরচ হয় ৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। একই সাথে তিনি জমির আইলে কলাগাছ, চালকুমড়া, লাউ, ঝিঙ্গা, ঢেড়শ, বরবটি, করলাসহ বিভিন্ন ধরনের সবজী চাষ করেন। তিনি জমিতে ব্যবহার করেন লালন জৈব সার, সালফার- ৯৫ ও সামান্য কিছু রাসায়নিক সার। তার চাষকৃত ৮০ বিঘা জমিতে ১ম বার বোরো চাষ করে তিনি ধান পেয়েছেন সোনার বাংলা-৬ বিঘাপ্রতি ১৪ বস্তা হিসাবে ৫২ বিঘায় ৭২৮ বস্তা, বিআর-২৮ , ২৯ ও অন্যান্য জাতের ধান বিঘাপ্রতি ১২ বস্তা হিসাবে ২০ বিঘায় ২৪০ বস্তা ও ৫ বিঘায় ৬০ বস্তা ও ৩ বিঘায় ৩৬ বস্তা। ১ম বোরো ধান চাষ করে তিনি সর্বমোট ধান পেয়েছেন ১ হাজার ৬৪ বস্তা। এর থেকে তিনি জমির মালিক ও পানি সরবরাহকারীকে দিয়েছেন ৫৬০ বস্তা। বাকি ৫০৪ বস্তা ধানের মধ্যে তিনি বিআর -২৮ ধানের বীজ রেখেছেন ৭৩ বস্তা। অবশিষ্ট ৪৩১ বস্তা ধান বাজারে প্রতিবস্তা ১ হাজার একশত টাকা দরে বিক্রি করে পেয়েছেন ৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা, খড় কুটা বিক্রি করে পেয়েছেন ১ লাখ ২৮ হাজার টাকা ও এ সময়ে সবজি বিক্রি করে পেয়েছেন ২৯ হাজার টাকা। সর্বমোট বিক্রি ৬ লাখ ৩১ হাজার টাকা হতে খরচ ৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা বাদ দিয়ে তার নীট লাভ হয়েছে ২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এরপর তিনি ঐ জমি থেকে ৭০ বিঘা জমিতে ২য় ব্লকে সোনার বাংলা - ৬ জাতের ধান চাষ করে একই পড়তায় ধান পেয়েছেন ৯৮০ বস্তা। এখানে তার খরচ হয়েছে ২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। উৎপাদিত ৯৮০ বস্তা ধান থেকে তিনি জমির মালিক ও পানি সরবরাহকারীকে দিয়েছেন ৪২০ বস্তা। অবশিষ্ট ধান বিক্রি করে পেয়েছেন ৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, খড়-কুটা বিক্রি করে পেয়েছেন ৮১ হাজার টাকা এবং সবজি বিক্রি করে পেয়েছেন ১৪ হাজার টাকা। সর্বমোট বিক্রি ৬ লাখ ৩১ হাজার টাকার মধ্যে খরচ ২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা বাদ দিলে তার নীট লাভ হয়েছে ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। ১ম ও ২য় ব্লকের চাষ করে মুকুল নীট লাভ করেছেন ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। বর্তমান তিনি ৩য় বার ধান চাষের লক্ষ্যে জোর আমন চাষের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

ভেড়ামারায় জি.কে. প্রকল্প এলাকার কৃষকরা সেচ ও সার সংকটে

২২.০৯.০৮
ইত্তেফাক ।। এ কে এম কাওছার হোসেন, ভেড়ামারা সংবাদদাতা ।।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় গঙ্গা কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প (জি.কে. প্রজেক্ট) এলাকার কৃষকদের মাঝে সেচ ও সার সংকট দেখা দিয়েছে। প্রয়োজনের সময় পানি না পেয়ে তারা ধান লাগাতে পারছেন না এবং চাহিদা মতো জমিতে সার দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন।

জানা গেছে, ভেড়ামারা উপজেলায় জি.কে. প্রজেক্টের আওতায় ৬ হাজার ৯৪ হেক্টর জমি রয়েছে। ঐ জমিতে সারা বছরই ধান আবাদ হয়। সেচের ক্ষেত্রে জি. কে. প্রজেক্টের পানিই কৃষকের একমাত্র ভরসা। সম্প্রতি প্রকল্প এলাকার কৃষকদের রোটেশনের ভিত্তিতে জি. কে. প্রজেক্ট পানি সরবরাহ করছে। এ কারণে কৃষকরা সপ্তাহে মাত্র তিনদিন পানি পাচ্ছেন।

প্রকল্পের আওতাধীন রোপার মাঠ, বারোঘোরি, আঁড়িদাগ, নওদাপাড়াচর, কামারথাক, সুতিগাঙ, পঞ্চাশ দাগ, বাহান্ন দাগ, তেরল, এক দালান ও খরতলা মাঠের অধিকাংশ জমিতে চাষাবাদ বন্ধ রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, জি. কে. সেচ প্রকল্পের প্রধান সেচ খালের সাথে যুক্ত শাখা ও উপ-শাখা খালে পানি নেই। ধান লাগানোর জন্য কৃষকরা জমি তৈরিতে ব্যস্ত। সপ্তাহখানেক আগে বেশ কিছু জমিতে ধানের চারা লাগানো হলেও পর্যাপ্ত পানির অভাবে সেগুলো ঝিমিয়ে পড়েছে।

ফারাকপুর গ্রামের কৃষক আবুল মৃধা বলেন, ‘বি আর-১১ ও স্বর্ণা ধান লাগানোর জন্য জমি তৈরি করছি। কিন্তু জি. কে.’র পানির জন্য অপেক্ষায় আছি। ক্যানালে (সেচ খালে) পানি ছাড়লিই ধানের চারা বুনবো’।

আবুল মৃধার মতো নওদাপাড়া গ্রামের কৃষক শহিদুল, মণ্ডলপাড়ার শাহাবুল মণ্ডল, চাঁদগ্রামের গনি সর্দার বলেন, পানির অভাবে ধান লাগানো যাচ্ছে না। যখন আমাদের পানির প্রয়োজন তখন আমরা পানি পাই না। রোটেশনের নিয়ম চালুর কারণে যখন পানির দরকার হয় না তখন সেচ খালে পানি থাকে। ধান লাগানোর সময় রোটেশনের নিয়ম না থাকাই উচিত।

জি.কে. প্রজেক্টের পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের ওভারসিয়ার গোলাম মোর্তুজা বলেন, প্রকল্পের ভেড়ামারা এলাকায় নয়টি পানি ব্যবস্থাপনা সমিতি আছে। ঐসব সমিতির সভাপতির মাধ্যমে যখন কৃষকরা পানি চান তখনই পানি দেয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু রোটেশনের কারণে পানি দিতে তিন-চারদিন দেরি হয়।

রোটেশন পদ্ধতিতে পানি সরবরাহ প্রসঙ্গে জি.কে. প্রজেক্টের পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের মুখ্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুর রহমান মণ্ডল জানান, খরিফ-১ (আউশ) ও খরিফ-২ (আমন) উভয় মৌসুমেই প্রকল্পের ১ লাখ ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দিতে হয়। একই সময় একসাথে সব জমিতে পানি দেয়া সম্ভব নয়। সে কারণে রোটেশন পদ্ধতিতে কৃষকদের পানি দেয়া হচ্ছে। তিনি আরো জানান, শাখা ও উপ-শাখা খালগুলো খনন বা সংস্কার করা হলে কৃষকরা আরো দ্রুত তাদের জমিতে পানি পেত।

অন্যদিকে জি. কে. প্রকল্প এলাকার কৃষকরা সার সংকটেও পড়েছেন। কার্ডধারী তালিকাভুক্ত কৃষকরা সার ডিলারের কাছ থেকে সপ্তাহে দুইদিন দশ কেজি করে ইউরিয়া পেলেও অতিরিক্ত দামের কারণে ফসফেট কিনতে পারছেন না। আর পটাশ (এমওপি) সার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না।

বাহিরচর গ্রামের আশরাফ আলি বলেন, বর্তমানে এক বস্তা ইউরিয়া সার ৬ শত ২৫ টাকায়, ফসফেট ৩ হাজার ৫ শত টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তারপরও ফসফেট ও পটাশ সার বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। বেশি দামের কারণে জমিতে সার ছিটাতে পারছি না।

কৃষকরা বলেন, সারের অভাবে তারা এখন জমিতে সারের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। এক বিঘা জমিতে ৩০ কেজি ইউরিয়া সারের স্থলে ১০ কেজি ও ১৫ কেজি ফসফেট সারের স্থলে ৫ কেজি সার দিতে হচ্ছে।

ভেড়ামারা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জামাল উদ্দিন জানান, ধান লাগানোর সময় জমিতে পানির প্রয়োজন হয়। লাগানোর পরও জমিতে পানি জমিয়ে রাখতে হয়। কিছুদিন পরে সার দিতে হয়। সার ও পানির অভাবে ধান চাষ ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ হেমেন্দ্র দত্তের কৃষি খামার এবার লাভের মুখ দেখেছে

২২.০৯.০৮
ইত্তেফাক ।। বিমল সাহা,ভ্রাম্যমাণ সংবাদদাতা ।।

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার দত্তনগরের হেমেন্দ্র নাথ দত্তের সবজি খামার আজ এশিয়ার বৃহৎ কৃষি খামারগুলোর অন্যতম। বহুদিন পর এবার খামারটি লাভের মুখ দেখলো। গত অর্থ বছরে (২০০৭-২০০৮) ৪৪ লাখ ৯০ হাজার ৬৭২ টাকা লাভ হয়েছে।

দত্তনগর ফার্মের যুগ্ম পরিচালক জানান, গত অর্থ বছরে এ বৃহত্তম বীজ উৎপাদন খামারের মোট আয় হয়েছে ১০ কোটি ২১ লাখ টাকা। আর মোট ব্যয় হয়েছে ৯ কোটি ৭৩ লাখ ৪শ ৩৭ টাকা। গত অর্থ বছরে আউশ ধান বীজ ৪৩৮ টন, আমন ধান বীজ ৯৩৭ টন, বোরো ধান বীজ ১১শ’ ২২ টন, গম বীজ ৪০৬ টন, ভুট্টা বীজ ৫৮ টন, আলু বীজ ৪১৫ টন এবং প্রায় ১০ টন পাট বীজ উৎপাদিত হয়েছে। নানা কারণে দেশের এ বৃহত্তম বীজ উৎপাদন খামার লোকসান দিয়ে আসছিল। ব্যবস্থাপনার ক্রটি ছিল। আজ থেকে ৬৭ বছর আগে কলকাতার বিশিষ্ট ঠিকাদার হেমেন্দ্র নাথ দত্ত এ বিশাল কৃষি খামার স্থাপন করেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সেনা বাহিনীর রসদ সরবরাহকারি ঠিকাদার ছিলেন। তিনি সেনাবাহিনীর জন্য সবজি সরবরাহের ঠিকাদারি লাভ করেন। তাজা সবজি উৎপাদনের জন্য নিজ গ্রাম দত্তনগরে এ বিশাল কৃষি খামার গড়ে তুলেন। ১৯৪০ সালে এ এলাকা ছিল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন নিভৃত পল্লী। সড়ক ছিল না। রেলপথে দর্শনা স্টেশনে সবজি বহন করে নিয়ে কলকাতায় পাঠানোও ছিল দুরূহ ব্যাপার। দীর্ঘ সময় লাগায় পচে যেত। তিনি দত্তনগরে হেলিপ্যাড স্থাপন করেন। প্রতিদিন হেলিকপ্টারযোগে টাটকা শাক-সবজি কলকাতায় সরবরাহ করে তিনি প্রচুর লাভ করতেন। খামারের কলেবরও বৃদ্ধি করেন। দত্তনগর এ বিশাল খামারের আওতায় ৫টি ফার্ম আছে।

সেগুলো হচ্ছে গোকুলনগর, পাতিলা, মথুরা, খড়িঞ্চা এবং কুশডাঙ্গা। ফার্মগুলোর মোট জমির পরিমাণ দু’হাজার ৭৩৭ একর। আবাদী জমির পরিমাণ প্রায় আড়াই হাজার একর। নীচু জমি আছে ৬শ’ একর এবং বিল এলাকা আছে ২শ’ একরের উপর।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর এইচ দত্ত দত্তনগর খামার ছেড়ে কলকাতায় চলে যান। ম্যানেজার ও কর্মচারিরা খামার দেখাশুনা করতে থাকেন।

১৯৪৮ সাােল তৎকালীন পাকিস্তান সরকার দত্তনগর খামার অধিগ্রহণ করে এবং কৃষি বিভাগের উপর পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। ১৯৬২ সালে ফার্মের যাবতীয় সম্পত্তি কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিএডিসি বিভিন্ন শস্য বীজ উৎপাদনে খামারটি কাজে লাগায়। অফিস, বাসভবনসহ নানান স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। সেচের জন্য বসানো হয় গভীর ও অগভীর নলকূপ। আর ক্ষেতে পানি সরবরাহের জন্য পাকা ড্রেন নির্মাণ করা হয়। আগে শ্রমিক দিয়ে শস্য কর্তন ও মাড়াই করা হতো। এখন বড় বড় মেশিনের সাহায্যে ফসল কাটা ও মাড়াই করা হয়। সেচের জন্য ৩৬টি গভীর, ১৩টি অগভীর এবং ১০টি পাওয়ার পাম্প আছে।

দত্তনগর খামারের গভীর-অগভীর নলকূপ বিদ্যুতের সাহায্যে চালানো হয়। কিন্ত চাহিদামত বিদ্যুৎ পাওয়া যায় না। রুটিন লোডশেডিং-এর বকলে পড়ে খামারটি। তখন সেচ যন্ত্রগুলো বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাহত হয় সেচদান। বোরো মৌসুমে সমস্যা বেশি হয়।

বর্তমানে পানি ষ্কিাশন সমস্যাও সৃষ্টি হয়েছে। ৫টি ফার্মের পানি করতোয়া, ভোগেরদাড়ি, উড়কি ও পোড়াবিল দিয়ে নিষ্কাশিত হয়ে থাকে। মাছ চাষের জন্য ওই বিলগুলোর বিভিন্ন স্থানে প্রবাবশালীরা বাঁধ দিয়ে পানি ঠেকিয়ে রাখে ফলে ভারি বৃষ্টি হলে পানি জমে ফসল ডুবে যায়। এ খামারে শস্য বীজ প্রসেসিং-এর আধুনিক ব্যবস্থা নেই। প্রচুর পরিমাণ টমেটো উৎপাদন হয়ে থাকে।

গঙ্গাচড়ায় মঙ্গা মোকাবেলায় ব্রিধান ৩৩ চাষে কৃষকদের ব্যাপক সাড়া

২২.০৯.০৮
ইত্তেফাক ।। গঙ্গাচড়া সংবাদদাতা ।।

মঙ্গা মোকাবিলায় রংপুরের গঙ্গাচড়ায় আমন মৌসুমে ব্রিধান-৩৩ চাষে কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। সরকারের গৃহীত কর্মসূচীর আলোকে চলতি বছর উত্তরাঞ্চলে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আগাম জাত ব্রিধান-৩৩ লাগানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে উত্তরাঞ্চলে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও ৭টি বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে এ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। বেসরকারি সংস্থাগুলো হচ্ছে আর ডি আর এস, ব্র্যাক, কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড বাংলাদেশ এবং পার্টনার এনজিও, গ্রামীণ আত্মউন্নয়ন সংস্থা, কৃষি অঙ্গন ও সীড। এসব এনজিও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার সরকারের পাশাপাশি কাজ করছে।

ব্রিধান-৩৩ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও অর্জিত হয়েছে এর অধিক। শুধুমাত্র রংপুরের গঙ্গাচড়ায় এ বছর ১ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে ব্রি-ধান ৩৩ লাগনো হয়েছে। তা অতীতের সমস্ত রেকর্ডকে ভঙ্গ করেছে।

উপজেলার হাবু গ্রামের কৃষক তৈয়ব আলী, আজিজুল ইসলাম জানান, মানুষের কাছে শুনে এ বছর প্রথম তারা ব্রি-ধান ৩৩ লাগিয়েছে। ধান বের হচ্ছে। হয়তো আর ২০/২৫ দিনের মধ্যে ধান কাটবে। গঙ্গাচড়া সদর ইউনিয়নের ধামুর বোতলার পাড় গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান ড্রাম সিডারের মাধ্যমে সরাসরি ব্রি-ধান ৩৩ রোপণ করেছেন। ধান পাকতে শুরু করেছে। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে ধান কাটবেন তিনি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলী আজম জানান, সরকার উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা মোকাবিলায় ব্রি-ধান ৩৩ চাষে জোর দিয়েছে। এ লক্ষ্যে সরকার ও বিভিন্ন এনজিও কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট আঞ্চলিক কার্যালয় রংপুরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এম এ মজিদ জানান, উত্তরাঞ্চলে প্রতিবছর আর্শ্বিন-কার্তিক মাসে মৌসুমী মঙ্গা দেখা দেয়। এ সময় শ্রমিকদের হাতে কোন কাজ থাকে না। এজন্য বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ব্রিধান-৩৩ নামক একটি আগাম জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন। তিনি আরও বলেন, ব্রিধান-৩৩ সরাসরি বপন করলে ১০৩ থেকে ১০৫ দিন এবং রোপণ করলে ১১৫ থেকে ১১৮ দিন সময় লাগে। আশ্বিন-কার্তিক মাসেই ধানের কাটা শেষ হয়ে যাবে।

ড. এম মজিদ আরও বলেন, ব্রিধান-৩৩ আগাম জাতের ধান হওয়ায় অন্যান্য ফসল বিশেষ করে আলু, ডাল, ভুট্টা আগাম চাষ করা যাবে।

উত্তরাঞ্চলে সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সুযোগ না থাকায় মৌসুমে কয়েক কোটি টাকার সবজি ও ফল নষ্ট হচ্ছে

২২.০৯.০৮
ইত্তেফাক ।। লিমন বাসার, বগুড়া অফিস

উত্তরাঞ্চলে সবজি ও দেশি ফলের চাষে চাষীরা ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। সবজি চাষের জমির পরিমাণ ক্রমশ বাড়ছে। চাষীরা উৎপাদিত সবজি বাজারজাত করারও সুযোগ পেয়েছে। উৎপাদিত লাউ, কুমড়া, মুলা, পটল, সিম, করলা, বরবটি, আলুসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি দেশের চাহিদা মিটিয়েও বিদেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে সড়ক-মহাসড়কের পাশে বসেছে সবজি হাট। এসব হাটে রাজধানীসহ বিভিন্ন অঞ্চলের মহাজন আসছে। প্রতিদিনই শত শত ট্রাক বোঝাই যাচ্ছে এসব অঞ্চলে। তবে উৎপাদিত সবজি ও ফল সংরক্ষণ, আধুনিক হিমাগার ও প্রক্রিয়াজাতকরণের সুযোগ সৃষ্টি না হওয়ায় প্রতিবছর ৫ কোটিরও বেশি টাকার সবজি ও ফল নষ্ট হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উৎপাদকরা।

সবজি ছাড়াও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় গ্রামের মানুষ বাড়ির আঙ্গিনাসহ খোলা জায়গায় ফলজ বৃক্ষ রোপণ করে ফলের উৎপাদন বাড়িয়েছে। এখান থেকে বাড়তি পাওয়া যাচ্ছে কলা, আম, জাম, জামরুল, লিচু, বাতাবী লেবু, বড়ই, আমড়া, কদবেল, আমলকিসহ বিভিন্ন প্রকারের দেশি ফল। বন বিভাগের তথ্য থেকে জানা যায়, গত দশ বছরে উত্তরাঞ্চলে দেশীয় ফলের গাছ লাগানোর সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। আর এই সময়ের মধ্যে সবজি চাষের জমির পরিমাণ বেড়েছে অনেক। সেখানে চাষ হচ্ছে উচ্চফলনশীল জাতের সবজি। বর্তমানে সবজি বাজার চাঙ্গা হবার কারণে চাষীরা সবজি চাষে ঝুঁকছে বেশি। গ্রামের এই প্রান্তিক চাষীদের বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে উন্নতজাতের সবজি ও ফলের চারা সরবরাহ করছে। এসব সংস্থা থেকেই চাষীদের প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। বেসরকারি সংস্থাসমূহের তথ্য থেকে জানা যায়, অপুষ্টির কথা বিবেচনা করে তারা সবজি চাষের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করেছে এবং চাষীদের আধুনিক চাষাবাদে সহযোগিতা দিচ্ছে। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলে সবজি উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত বগুড়ার শেরপুর, শিবগঞ্জ, আদমদীঘি, গাবতলীসহ উত্তরের বিভিন্ন জেলায় গ্রামে গ্রামে সারা বছরই চাষীরা প্রস্তুত থাকে। এই অঞ্চলের ১৫ হাজারেরও বেশি চাষী সবজি চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছে। এসব চাষীদের মধ্যে বেশির ভাগই ক্ষুদ্র, প্রান্তিক ও বর্গাচাষী। পূর্বে এখানে সবজি সংরক্ষণের জন্য একটি এগ্রোবেইড হিমাগার নির্মাণ করা হলেও টেকনিক্যাল সমস্যায় পরবর্তীতে সেটা আর চালু করা সম্ভব হয়নি। পরে প্রকল্পটিই বাতিল করা হয়।

চিংড়ি শিল্প রক্ষায় সরকারী উদ্যোগ প্রয়োজন

২২.০৯.০৮
ইত্তেফাক ।। জি এম মনিরুল ইসলাম মিনি, সাতক্ষীরা সংবাদদাতা

সাতক্ষীরার চিংড়ি ঘের গুলোতে অজ্ঞাত রোগে মাছ মারা যাওয়া অব্যহত রয়েছে। মাছ মারা যাওয়া বন্ধ না হওয়ায় জেলার চিংড়ি চাষীরাসহ এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা দারুনভাবে আর্থিক সংকটে পড়েছে। একই সাথে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয় বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে পাট শিল্পের ন্যায় চিংড়ি শিল্পেও মারাতœক বিপর্যয় নেমে আসবে। সত্তর দশকের প্রথম দিকে দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চিংড়ি চাষ শুরু হয়। এসব জেলার মধ্যে দক্ষিণ পশ্চিম উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরা খুলনা ও বাগেরহাটে চিংড়ি চাষ শুরু হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এর চাষ ও বৃদ্ধি পেতে থাকে। চিংড়ি চাষ অত্যন্ত লাভজনক হওয়ায় দিন দিন এর চাষেরও প্রসার ঘটতে থাকে। দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায় ১৯৭২-৭৩ সালে বাংলাদেশ প্রথম ৭২ কোটি টাকার চিংড়ি মাছ রফতানি করে এর যাত্রা শুরু করে। যা ২০০৭-০৮ সালে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে শুধু সাতক্ষীরা জেলা থেকে গত অর্থ বছরে সাড়ে তের’শ কোটি টাকার চিংড়ি রফতানি করা হয়েছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি খাত হিসাবে চিংড়ি শিল্প স্বীকৃত। কিন্তু বর্তমানে এ শিল্পে যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে তাতে পাট শিল্পের ন্যায় এ শিল্পটিও হুমকির মুখে পড়েছে। চলতি বছর সাতক্ষীরা জেলায় প্রায় ৫৫ হাজার হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে শতকরা ৮৫ ভাগ জমির চিংড়ি মাছ গত ৩/৪ মাস যাবৎ অজ্ঞাত রোগে মারা যাচ্ছে। যা এখনো অব্যাহত আছে।

অজ্ঞাত রোগে চিংড়ি মাছ মারা যাওয়া সম্পর্কে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়ে জানা গেছে বৈরী আবহাওয়া, ঘেরগুলিতে ভাইরাসযুক্ত রেণু ছাড়া, চাষীদের ঘের পরিচর্যায় অবহেলা সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের উদাসিনতা ইত্যাদি। চিংড়ি ঘেরগুলোতে মাছ মারা যাওয়ার ব্যাপারে গত ৯ সেপ্টেম্বর মৎস ও পশু সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক সম্পর্কে সাবেক মৎস প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় চিংড়ি সমিতির সভাপতি ডা: আফতাবুজ্জামান ইত্তেফাককে জানান, নব্বই দশকের মাঝামাঝি সময়ে ভাইরাস জনিত কারণে ব্যাপক মাছ মারা যায়। সেখান থেকে উপকূলবর্তী সকল চিংড়ি চাষ এলাকায় এ ভাইরাসের প্রকোপ চলে আসছে। চলতি বছর বৃহত্তর খুলনা এলাকায় ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বেশী হওয়ায় কাঙিক্ষত উৎপাদন পাওয়া যাবে না। এর কারণ হিসাবে তিনি বৈরী আবহাওয়ার পাশাপাশি ভাইরাসযুক্ত রেণুর কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন এই সমস্যা নিয়ে ২০০২ সালে তৎকালীন মৎস মন্ত্রী ও সচিবের উপস্থিতিতে একটি সভা হয়। সেখানে হ্যাচারী মালিক সমিতির প্রতিনিধিবৃন্দ হিমায়িত খাদ্য রফতানিকারক সমিতির প্রতিনিধিবৃন্দ, জাতীয় চিংড়ি চাষী সমিতির প্রতিনিধিবৃন্দ ও মৎস মন্ত্রণালয় ও বিভাগের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় রেণু উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের রেণু বাজারজাত করার সময় প্রতিটি পলিব্যাগের গায়ে রেনুর সংখ্যা ,বয়স, পানির লবণাক্ততা, পি এইচ লেভেল এবং সার্টিফাইড টু বি ভাইরাস ফ্রি লিখবে। কিন্তু গত ৬ বছরেরও সে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি বা সরকার বাস্তবায়নের জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি। ফলে ভাইরাসযুক্ত ও নিম্নমানের রেণু বাজারজাত হওয়ায় চাষীরাসহ এ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং কাঙিক্ষত উৎপাদন না হওয়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয় কমে যাচ্ছে। এ শিল্পের উন্নয়নে কি কি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কক্সবাজারে সরকার নিয়ন্ত্রিত পিসিআর মেশিনসহ একটি রেণুর মান নিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগার কেন্দ্র স্থাপন, প্রাকৃতিক উৎস হতে আহরিত ব্রুড গুলো ভাইরাসমুক্ত কিনা তা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা, পিসিআর মেশিনে পরীক্ষা করে ভাইরাসমুক্ত ও মানসম্মত রেনু বাজারজাত করা, বাজারজাত করার সময় প্রতিটি পলি ব্যাগের গায়ে উল্লেখিত তথ্য দেয়া, প্রাকৃতিক উৎস হতে রেণু আহরণ বন্ধ রাখা, মাঠ পর্যায়ে পিসিআর ল্যাবের সাথে মাটি ও পানি পরীক্ষার ব্যাবস্থা করা,ও ভাইরাস প্রতিরোধে চাষীদের মোটিভেশনের ব্যাবস্থা করা। এসব ব্যবস্থা গ্রহন করলে দেশের চিংড়ি শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব।

পরিবেশ বান্ধব চাষাবাদ

২২.০৯.০৮
সম্পাদকীয়
ইত্তেফাক

পরিবেশ বান্ধব চাষাবাদে দেশের বিভিন্ন জেলার কৃষিচিত্র বদলাইয়া যাইতেছে। কীটনাশকবিহীন এই চাষাবাদে ইতিবাচক পরিবর্তন হইতেছে কৃষিচিত্রে। এই পদ্ধতি ক্রমেই ছড়াইয়া পড়িতেছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে। ইহা নিঃসন্দেহেই শুভ লক্ষণ। এই পদ্ধতি অনুসরণ করা হইলে প্রকৃতি ও পরিবেশ স্বাভাবিক থাকিবে। কীটনাশকবিহীন এই চাষাবাদের ফলে একদিকে যেমন পরিবেশ রক্ষা হইতেছে অন্যদিকে তেমনি উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকেরা লাভবান হইতেছে। এদিকে মাটির উর্বরা শক্তি রক্ষা, রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমাইয়া জৈব সার ব্যবহার, বীজ উৎপাদন, কীটনাশকমুক্ত চাষাবাদ ইত্যাদি বিষয়ে কৃষকেরা নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে এ অঞ্চলের কৃষি ক্ষেত্রে ব্যাপক রূপান্তর আনার চেষ্টা করিতেছে। বাংলাদেশের কৃষিনির্ভর এই ধরনের উদ্যোগ নিঃসন্দেহেই সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বর্তমানে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা একটি জরুরি বিষয় হইয়া উঠিয়াছে। এ ব্যাপারে সকলেরই সচেতন হওয়া কর্তব্য। কৃষিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে একদিকে মাটির উর্বরা শক্তি যেমন হ্রাস পাইতেছে তেমনি পরিবেশেরও ক্ষতিসাধন হইতেছে। কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাছ, পাখি, জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণীর অস্তিত্বও অনেক ক্ষেত্রে হুমকির সম্মুখীন। এভাবে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে। ইহার পাশাপাশি আমাদের নিজস্ব কৃষি পদ্ধতির মাধ্যমে জৈব সার ও কীটনাশকমুক্ত চাষাবাদের সাফল্য প্রমাণিত হইলে তাহা কৃষি তথা পরিবেশের উন্নতি সাধনে বিশেষ উপযোগী হইবে। আমরা মনে করি, পরিবেশ বান্ধব এই চাষাবাদ কেবল দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে নয়, সারা দেশে ছড়াইয়া দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা কর্তব্য।

এই পরিবেশ বান্ধব চাষাবাদের ব্যাপারে কৃষি বিজ্ঞানীরাও যথেষ্ট আশাবাদী। তাঁহারা কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিতেও আগ্রহী। কৃষকদের সাফল্যে কৃষি বিজ্ঞানীরাও বিশেষভাবে আনন্দিত এবং কীট-পতঙ্গের আক্রমণ ঠেকাইতে পরিবেশ উপযোগী কৃষি পদ্ধতি উদ্ভাবনে ইতিমধ্যেই পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করা হইতেছে। আমরা ইহাকে বিশেষ তাৎপর্যবহ বলিয়া মনে করি। চাষাবাদের অবশ্যই এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে যাহাতে কৃষির উন্নতি সাধন হয়, মাটির উর্বরা শক্তি অটুট থাকে এবং পরিবেশ ভালো থাকে। ইহার প্রতিটি বিষয়ই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশ বান্ধব চাষাবাদ কৃষি ক্ষেত্রে নতুন মাত্রা যুক্ত করিতে সমর্থ হইবে বলিয়া আমাদের প্রত্যাশা। আমরা এই নতুন কৃষি পদ্ধতি ও চাষাবাদের সাফল্য কামনা করি।

সোনারগাঁয়ে বিষাক্ত বর্জ্যে ১০০ হেক্টর জমির ধান নষ্ট

২২.০৯.০৮
সমকাল ।। সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার পৌর এলাকার টিপুরদীতে চৈতি ক¤েক্সাজিটের ফেলা বিষাক্ত পানিতে ১০০ হেক্টর জমির ধান ন®দ্ব হয়ে গেছে।
সরেজিমন দেখা গেছে, উপজেলার পৌর এলাকার টিপুরদী, গোয়ালদী, মিনারবাড়ী ও লালেরবাড়ী এলাকার স্ট’ানীয় কৃষকদের প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে বোনা আউশ ধান চৈতি ক¤েক্সাজিটের ছেড়ে দেওয়া বর্জ্যরে বিষাক্ত পানিতে ন®দ্ব হয়ে গেছে।
এলাকার পরিবেশ এতটাই বিপর্যস্টøকর অবস্ট’ায় পৌঁছেছে যে নাকে রুমাল দিয়ে পথে-ঘাটে চলাফেরা করতে হয়। বিষাক্ত পানির ঝাঁঝ এবং গল্পেব্দ এ এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে আছে দীর্ঘদিন। তবে প্রশাসন যেন বিষয়টি দেখেও দেখছে না।
ধানি জমিগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো এলাকায় বিষাক্ত পানি জমে ধানগাছের গোড়া পচে মরে যাচ্ছে। এ অবস্ট’ায় স্ট’ানীয় কৃষকদের মাথায় হাত উঠেছে। তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। এর প্রতিকারে তারা জরুরি ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষের হস্টøক্ষেপ কামনা করেছেন। জানা গেছে, চলতি বছরের মার্চে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই উৎপাদন শুরু করে এবং কারখানার বিষাক্ত পানি স্ট’ানীয় খালে নিষ্ফ‹াশন করতে থাকে। ফলে ওই খালের সব মাছ মরে ভেসে ওঠে। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হলে স্ট’ানীয় প্রশাসন কো¤ক্সানির বিদ্যুৎ-গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিল্পু করে দেয়। এছাড়া তাদের পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র নিয়ে পরিবেশবাল্পব্দব ব্যবস্ট’াপনায় উৎপাদন করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কিন্তু কো¤ক্সানি কর্তৃপক্ষ এসবে কোনো কর্ণপাত করেনি। তারা বাঁকা পথে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ম্যানেজ করে বিদ্যুৎ-গ্যাসের সংযোগ নিয়ে আবারো উৎপাদন শুরু করে আগের কায়দায়। তবে এবার কো¤ক্সানির লোকজন একটি পুকুরে তাদের বিষাক্ত রাসায়নিজ বর্জ্য আটকে রেখে উৎপাদন কাজ চালাতে থাকে। পরে গত সোমবার সকালে এলাকার পরিবেশ এবং প্রাণী ও উদ্ভিদকুলের জন্য ক্ষতিকর বিষাক্ত তরলগুলো পাশর্^বর্তী ধানি জমিতে ছেড়ে দেয়। এতে এলাকার কৃষকদের ১০০ হেক্টর জমির ধান ন®দ্ব হয়ে যায়।
এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ কৃষকরা বলেন, ‘আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে তোলা সল্ফ¢ব না। আমাদের মধ্যে অনেক দরিদ্র কৃষক আছে যারা টাকা ধারকর্জ করে ধান রোপণ করেছে। সরকারের উচিত এর বিহিত অতি জরুরি ভিত্তিতে করা।’ কৃষকরা বলেন, ‘এ ব্যাপারে মিল কর্তৃপক্ষকে কিছু বলতে গেলে তাদের লোকজন আমাদের বিভিল্পুভাবে হুমকি দেওয়া শুরু করেছে।’
এ ব্যাপারে চৈতি গ্র“প কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, ‘আমরা মিলের পানি স¤ক্সহৃর্ণ বিষাক্তমুক্ত করে নিষ্ফ‹াশন করছি। কোনো ফসলের জমিতে পানি ছাড়ছি না।’

Saturday, September 20, 2008

কর্মসৃজন কর্মসহৃচি : নাজিরপুর কচুরিপানা ব্যবহারে কয়েক হাজার কম্পোস্ট বেড তৈরি

২১.০৯.০৮
সমকাল ।। নাজিরপুর (পিরোজপুর) প্রতিনিধি

নাজিরপুর উপজেলায় ১৫ ও ১৬ সেপ্টেল্টল্ফ^র দু’দিনে কর্মসৃজন কর্মসহৃচির আওতায় বিভিল্পু বিল, হাওর-বাঁওড়, নদী-পুকুর ও রাস্টøার পাশের ডোবায় জমে থাকা কচুরিপানা ব্যবহারে হাজার হাজার ক¤েক্সা¯দ্ব বেড তৈরির মাধ্যমে এক অনন্য দৃ®দ্বাšø স্ট’াপন করেছে।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহফুজুর রহমান ও কৃষিবিদ অসিত কুমার সাহা জানান, সহজলভ্য কচুরিপানা ব্যবহার করে প্রতিটি ক¤েক্সা¯দ্ব বেড বিজ্ঞানসল্ফ§ত উপায়ে তৈরি হচ্ছে। এ থেকে মাঠপর্যায়ে কৃষকরা ক¤েক্সা¯দ্ব সার ব্যবহারের এক অনন্য সুযোগ পাবে। কর্মসৃজন দিবসের ১ম ও ২য় দিনে উপজেলার বিভিল্পু রাস্টøার দু’পাশে প্রায় ১০ হাজার ক¤েক্সা¯দ্ব বেড তৈরি হয়েছে। এর প্রতিটিতে ১২৫ থেকে ১৫০ কেজি সার পাওয়া যাবে। কৃষি কর্মকর্তা বলেন, বাজারে প্রতি কেজি ক¤েক্সা¯দ্ব সার ২০ টাকায় বিত্রিক্র হয়। এ হিসেবে প্রতিটিতে ২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৩ হাজার টাকার সার পাওয়া যাবে। যা অত্র এলাকার ইউরিয়া ও টিএসপি সারের চাহিদা পহৃরণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
ভালো বাজারমহৃল্য পাচ্ছে কৃষক
লালমনিরহাটে এবার উৎপাদন হয়েছে উল্পুতমানের পাট
লালমনিরহাট প্রতিনিধি
অনুকূল আবহাওয়া এবং পর্যাপ্টø বৃ®িদ্বপাত হওয়ায় লালমনিরহাটে এবার উল্পুতমানের পাট উৎপাদন হয়েছে। খাল-বিলে পানি থাকায় ভালোভাবে পাট জাগ দিয়ে আঁশ ছাড়াতে পারছে কৃষকরা। ফলে এবার পাটের গুণগত মান বেশ ভালো হয়েছে। এতে পাটের বাজারমহৃল্য বেড়ে গেছে অনেক।
লালমনিরহাটের হাট-বাজারগুলোতে এখন প্রতি মণ পাট ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা দরে বিত্রিক্র হচ্ছে। অন্য বছরের তুলনায় পাটের দাম বেশি হওয়ায় এলাকার কৃষকরা খুব খুশি। সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর গ্রামের কৃষক আহছানুল হক জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছেন। উৎপাদন খরচ পড়েছে প্রায় ৪ হাজার টাকা। এতে তার ফলন হয়েছে ৮ মণ। এই পাট বিত্রিক্র করে তার ৪ হাজার টাকা মুনাফা হয়েছে।
পাট ব্যবসায়ী প্রদীপ রায় জানান, লালমনিরহাট জেলায় বর্তমানে কোনো সরকারি বা বেসরকারি পাট ত্রক্রয় কেন্দ্র নেই। আদমজী জুট মিল ও কওমী কুট মিলের কাছে ব্যবসায়ীদের পাওনা রয়েছে ৬৩ লাখ টাকা। তিনি সরকারি ও বেসরকারিভাবে পাটকেন্দ্র খোলা এবং ব্যবসায়ীদের পাওনা পরিশোধের দাবি জানান। কৃষি বিশেষজ্ঞরা জানান, শুধু কাঁচা পাট নয়, পাটজাত পণ্য উৎপাদন করে বিদেশে রফতানি করতে পারলে পাট থেকে ৩ গুণ অধিক মুনাফা অর্জন করা সল্ফ¢ব হবে। আর ভালো দাম পেলে কৃষকরা পাটচাষে আরো আগ্রহী হয়ে উঠবেন।

জামালপুরে বন্যার পর ফের আমন রোপণের উদ্যোগ কৃষকের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় প্রধান বাধা চারার অধিকমূল্য

২১.০৯.০৮
সমকাল ।। আনোয়ার হোসেন মিন্টু, জামালপুর

জামালপুরে বন্যাকবলিত এলাকা থেকে পানি নেমে যাওয়ায় কৃষক আমন রোপণে নেমে পড়েছে। কিন্তু চারা সংকট ও চারার উচ্চমহৃল্যের কারণে রোপণ কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এবার বন্যা হবে না ভেবে কৃষকরা মৌসুমের শুরুতেই আমন চারা রোপণ করেছিল। কিন্তু মাঠের পর মাঠজুড়ে যখন সবুজের ঢেউ, ঠিক তখনই সর্বনাশা বন্যা তছনছ করে দেয় কৃষকের স্ট^পু।
বৃহ¯ক্সতিবার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ ও মেলান্দহ উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে কৃষক আবারো জমি চাষ দিয়ে রোপণের উপযুক্ত করে তুলছে। কোনো কোনো এলাকায় আমন লাগানোর ধুম পড়েছে। অনেক এলাকার জমিতে পলি পড়ায় ক®েদ্বর মধ্যেও ক্ষতিগ্রস্টø কৃষকের চোখে আনন্দের ঝিলিক দেখা দিয়েছিল। কিন্তু আমন চারার সংকট আর চড়া মহৃল্যের কারণে কৃষকরা চারা রোপণ করতে হিমশিম খাচ্ছে। এদিকে জেলার ইসলামপুর দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহ, সরিষাবাড়ি রেল¯েদ্বশন, বাস¯দ্ব্যান্ড, বাজারসহ বিভিল্পু পয়েন্টে আমন চারার হাট বসছে। উচ্চ মহৃল্যে কেউ কেউ চারা কিনলেও অনেক কৃষক পড়েছেন চরম বিপাকে।
দেওয়ানগঞ্জ রেল¯েদ্বশনে চারা কিনতে আসা চাকুরিয়া গ্রামের কৃষক মজিদ, রব্বানী, রবিউল, আজম ফকিরসহ অনেকেই বলেন, এক বিঘা (৪০ শতাংশ) জমির চারা কিনতে হচ্ছে ২ থেকে আড়াই হাজার টাকায়। জমি তৈরি ও রোপণের মজুরিসহ বিঘাপ্রতি মোট খরচ হচ্ছে ৫ হাজার টাকা। এ খরচ জোগাতে হিসশিম খাচ্ছেন কৃষক।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা বিলাস চন্দ্র পাল বলেন, এ চারা রোপণ কাজ চলবে আরো ৭ থেকে ১০ দিন পর্যšø। দেরিতে চারা রোপণ হলেও জমিতে পলি পড়ায় কৃষকরা ভালো ফলন পাবেন বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জেলা কৃষি স¤ক্স্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক জসিমউদ্দিন জানান, বন্যায় এবার জেলার ৭ উপজেলার প্রায় ২ লাখ কৃষকের ৩০ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ধ্বংস হয়ে গেছে। তিনি জানান, সরকারি ব্যবস্ট’াপনায় কৃষি বিভাগ এখনো কৃষকদের মধ্যে চারা বিতরণ শুরু করেনি।

শৈলকূপায় ২২০ বস্টøা সারসহ আটক ৩

২১.০৯.০৮
সমকাল ।। শৈলকূপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি

ঝিনাইদহের শৈলকূপার ভাটইবাজারে পুলিশ শনিবার ভোররাতে অভিযান চালিয়ে চোরাপথে পাচার হওয়া ২২০ বস্টøা ইউরিয়া সারসহ ৩ জনকে আটক করেছে। যার আনুমানিক মহৃল্য প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকা। পুলিশ জানায়, শনিবার ভোরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম থেকে আসা ভাটইবাজারে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকভর্তি ২২০ বস্টøা ইউরিয়া সার ও গাড়ির চালকসহ ৩ জনকে আটক করা হয়। আটককৃতরা হচ্ছে ট্রাক ড্রাইভার মাসুদ. হেলপার রাজীব ও রুবেল।

ফুলবাড়িয়ায় আনারস চাষে হরমোন প্রয়োগ আকার রং বদলে গেলেও হারিয়ে যাচ্ছে সেই মিষ্টি স্বাদ গন্ধ

২১.০৯.০৮
সমকাল ।। কবীর উদ্দিন সরকার হারুন, ফুলবাড়িয়া (ময়মনসিংহ)

কয়েক দিনেই হƒ®দ্বপু®দ্ব হয়ে ওঠে ক্ষেতের আনারস। রংও বদলে হয়ে যায় ‘মনের মতো’। সব মিলিয়ে শেষ পর্যšø ত্রেক্রতার হাতে তুলে দেওয়া হয় টসটসে আনারস। এজন্য ব্যবহার করা হয় হরমোন। হরমোন প্রয়োগে আনারসের আকার ও রং বদলে গেলেও হারিয়ে যায় এর মি®িদ্ব স্ট^াদ ও গল্পব্দ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রে ওই হরমোন জনস্ট^াস্টে’্যর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
কৃষি বিভাগ বলছে, কিছু ওষুধ প্রস্ট‘তকারী প্রতিষ্ঠান তাদের অবহিত না করেই কৃষকের হাতে তুলে দিচ্ছে ওই হরমোন ও এর ব্যবহার প™ব্দতি। ফলে কৃষক তাৎক্ষণিক লাভবান হলেও খুব দ্র“তই এর নেতিবাচক প্রভাবে তারাও ক্ষতির সল্ফ§ুখীন হবেন।
উপজেলার আনারস আবাদের জন্য বিখ্যাত নাওগাঁও ও রাঙ্গামাটিয়ার পাহাড়ি এলাকা ঘুরে আনারস চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঘ-ফাল্কºুন মাসে আনারসের চারায় লাল রংয়ের কুড়ি বের হয়। চৈত্র-বৈশাখে লাল কুড়ি কালো রং ধারণ করলে আনারস বড় হওয়ার জন্য ১৫ দিনে ২-৩ বার ‘ত্রক্রপসকেয়ার’ অথবা ‘প্রানোফিকস’ নামের হরমোন ¯েক্স্র করা হয়। উল্কিèখিত হরমোনের সঙ্গে ‘আলগা গোল্ড’ নামের ভিটামিনও একবার ¯েক্স্র করা হয়। কৃষকরা জানান, এতে আনারস বড় ও আকর্ষণীয় রং ধারণ করে। তারা আরো জানান, বায়ার ও ন্যাশনাল এগ্রিফেয়ারের ত্রক্রপসকেয়ার, প্রানোফিকস ও রাইকেন স্ট’ানীয় বাজারে কীটনাশক ডিলারদের কাছ থেকে তারা সংগ্রহ করে থাকেন।
আনারস চাষী আবদুল কুদ্দুস (২৯) জানান, হরমোন ব্যবহারে জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাসে আনারস যখন বড় ও হƒ®দ্বপু®দ্ব হয়, তখন চাষীরা পুরো বাগানের ফলন একসঙ্গে পাকাতে রাইকেন ¯েক্স্র করেন। এতে পুরো বাগানের ফল পাকা রং ধরে। নাওগাঁও ইউনিয়নের সšেøাষপুর পাহাড়ি এলাকার আনারস চাষী ডাক্তার সোহরাব আলীকে আনারস ফল বড় এবং পাকাতে হরমোন প্রয়োগ প্রত্রিক্রয়ার কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, হরমোন প্রয়োগ করে সময়ের আগেই আনারস বড় ও পাকানোর এ প্রত্রিক্রয়ার কথা এলাকার চাষীরা প্রথম জানতে পারেন মধুপুর এলাকা থেকে।
রাঙ্গামাটিয়া গ্রামের আনারস চাষী মাসুদ আলম বলেন, এ এলাকায় বিভিল্পু মাল্কিল্টন্যাশনাল কো¤ক্সানির প্রতিনিধিরা সরাসরি ফল বাগানে এসে হরমোন ব্যবহারের বিভিল্পু কলাকৌশল শিখিয়ে যান। পরে কৃষকরা স্ট’ানীয় কেশরগঞ্জ বাজার, মোটের বাজার, গাড় বাজার, সাগরদীঘি বাজারের কীটনাশক ডিলারদের কাছ থেকে হরমোন ওষুধ ত্রক্রয় করেন। তিনি বলেন, হরমোন প্রয়োগে যে আনারস হয় তার চাহিদা ও বিত্রিক্র বেশি হয়। হরমোন ব্যবহার না করলে ফলটি আকারে ছোট থেকে যায় এবং পাকতে সময় বেশি লাগে। মহৃলত ব্যবসায়িক কারণেই তারা কৃত্রিম উপায়ে আনারস পু®দ্ব ও মোটাতাজা করে সময়ের আগেই বাজারে বিত্রিক্র করছেন। আনারস চাষী আবদুল কুদ্দুস জানান, তারা হরমোন প্রয়োগ করা আনারস খান না। কিছু জমিতে নিজেরা খাওয়ার জন্য আনারস চাষ করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ আবদুল হাই সমকালকে জানান, ওষুধ প্রস্ট‘তকারী কিছু প্রতিষ্ঠান কৃষি বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ না করে সরাসরি সহজ-সরল কৃষকদের প্রলুব্ধ করছে। কৃষকরাও লাভের ফাঁদে পা দিয়ে নিজেদের সর্বনাশ ডেকে আনছেন। এতে আনারসের আকৃতি, রং লোভনীয় হলেও স্ট^াভাবিক স্ট^াদ-গল্পব্দ হারাচ্ছে এবং জনস্ট^াস্টে’্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। বাকৃবির উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর গোলাম রব্বানী জানান, আনারসে অতিরিক্ত হরমোন ব্যবহারে বিভিল্পুভাবে মানবদেহের ক্ষতির আশগ্ধকা থাকে। এ ব্যাপারে কেশরগঞ্জ বাজারের জনৈক কীটনাশক ডিলার বলেন, ‘হরমোন ব্যবহার ক্ষতিকর কি-না তা জানি না।’ তবে ওসব ওষুধ বিত্রিক্র করে মধুপুরের ডিলারই পুরস্ট‹ৃত হয়েছেন।

কৃষিতে জৈব সারের প্রয়োজনীয়তা ও বাণিজ্যিক প্রসারে জটিলতা

২১.০৯.০৮
ইত্তেফাক ।। মো. রফিকুল ইসলাম

জৈব সার বলতে জৈব পদার্থ থেকে সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াজাত অথবা রূপাš-রিত করা সারকে বুঝায়। অন্যভাবে বলতে গেলে উদ্ভিদ বা উদ্ভিদের অংশ বিশেষ, জীবজন্তুর বিষ্টা ও মূত্র, প্রাণীজাত পচনশীলের অংশবিশেষ এবং নানা প্রকার আবর্জনা নির্দিষ্ট অনুপাত ও পদ্ধতিতে পচিয়ে যে সার তৈরি করা হয় তাকে জৈব সার বলে।

দিন দিন আমাদের জনসংখ্যা বাড়ছে ফলে কমে যাচ্ছে আবাদী জমির পরিমাণ। দেশের বিশাল জনগোষ্ঠীর খাদ্যের চাহিদা মেটাতে বছরে একই জমিতে আমরা বিভিন্ন ফসল করতে বাধ্য হচ্ছি। আগের দিনে যেখানে জমিতে বছরে এক থেকে দুবার ফসল তোলা হত, এখন প্রয়োজনের তাগিদে খাদ্যের চাহিদা মেটাতে সেই জমিতে বছরে তিন থেকে চার বার, কোন কোন জমিতে পাঁচ থেকে ছয়বার ফসল ফলাতে হচ্ছে, যার ফলে জমি বিশ্রাম পাচ্ছে না। আবার বেশি সার গ্রহণ করে এমন বিভিন্ন ফসলের দিকেও ঝুঁকছি আমরা। যেমন- উফশী, হাইব্রিড ইত্যাদি। অপরদিকে পূর্বের তুলনায় মাঠে গরু-মহিষ বিচারণের সুযোগ এবং গরু-মহিষের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারণে জমিতে গোবর ও গো-চুনা কমে যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে জ্বালানীর অভাব হওয়ায় ফসলের উচ্ছিষ্টাংশ মাঠে পড়ে থাকে না, তাই আগের মত স্বাভাবিক নিয়মে জমি জৈব পদার্থ পাচ্ছে না। ফলে আমাদের জমির উর্বরতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। কৃষক ভাইয়েরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফসল উৎপাদনের জন্য পুষ্টি পদার্থের প্রকৃত চাহিদা না জেনে আন্দাজমত সার ব্যবহার করেছে। এর ফলে মাটির পুষ্টি ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, অনেক উপকারী অনুজীব মরে যাচ্ছে, পুষ্টি পদার্থের প্রাপ্যতা কমে যাচ্ছে, উপকারী পোকামাকড়ের অ¯ি-ত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে, মাটি দিনে দিনে উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে।

রাসায়নিক সারের আন্দাজনির্ভর ব্যবহার এভাবে চলতে থাকলে একসময় আমাদের ফসল উৎপাদন সম্পূর্ণ ব্যহত হয়ে পড়বে। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, টেকসই কৃষি উন্নয়ন ও মাটির স্বাস্থ্য পুণরুদ্ধারের জন্য আমাদের জৈব সার ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। আদর্শ মাটিতে শতকরা পাঁচ ভাগ জৈব পদার্থ থাকার কথা। সেখানে আমাদের মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ কোথাও কোথাও এক ভাগেরও কম রয়েছে। মাটির এমন অবস্থা ভবিষ্যতে কৃষির জন্য হুমকিস্বরূপ। তার কিছু নমুনা আমরা লক্ষ্য করলে পাব। যেমন- উত্তরাঞ্চলে কাঁকরোল আগের মত হচ্ছে না, আমাদের বসতবাড়িতে আগের মত চাল কুমড়া, শসা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি হচ্ছে না, পান চাষে দেশের কৃষক আজ ক্ষতিগ্রস্থ। অনেক জায়গায় ভূট্টার ফলন কমে গেছে, জমিতে রাসায়নিক সার দিয়েও কাঙ্খিত ফলন পাওয়া যাচ্ছে না। জমিতে জৈব পদার্থের ঘাটতিই এর মূল কারণ। অধিক হারে জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করার ফলে পোকামাকড়ের আক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকরা মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহার করছে। সবজি থেকে বিষক্রিয়া যেতে না যেতে সেগুলো খেয়ে নানান রকম কঠিন অসুখে আক্রাš- হচ্ছে মানুষ। মূলকথা মাটির স্বাস্থ্যরক্ষা, অধিক ফসল ও পরিবেশ সম্মত খাবারের জন্য জৈব সারের বিকল্প নেই। তাছাড়া বর্তমানে রাসায়নিক সারের উর্ধ্বমূল্যে জৈব সার ব্যবহারের যুক্তিসঙ্গত কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের গরু মহিষের সংখ্যা কমে যাওয়ায় গৃহস্থরা নিজের বাড়িতে যে জৈব সার উৎপাদন করে তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। আজকের দিনে বাংলাদেশের কৃষির প্রেক্ষাপটে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে জৈব সার উৎপাদন ও বিপণন খুবই জরুরি। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে জৈব সার উৎপাদন ও বিপণন করতে দরকার প্রযুক্তিগত জ্ঞান আইনগত বৈধতা ও পুঁজি।

বাণিজ্যিক ভিত্তিতে জৈব সার উৎপাদনের প্রযুক্তিগত জ্ঞান স¤প্রসারণে সরকারের কোন উদ্যোগ আছে কিনা আমার জানা নেই। তবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে জৈব সার উৎপাদনে আইনগত জটিলতা আছে এটা জানি। সরকারের বর্তমান আইন অনুযায়ী বাণিজ্যিক ভিত্তিতে জৈব সার উৎপাদনের আইনগত বৈধতার জন্য (লাইসেন্স পাওয়ার জন্য) ৮-১০ মাস সময় লাগার কথা। আমার জানা মতে নাটোরের ড. ইলিয়াছ সাহেব গত ২৫/০৩/০৭ ইং তারিখে দরখা¯- করেও লাইসেন্স পাওয়ার নয়টি ধাপের পাঁচটি ধাপও ষোল মাস পরেও শেষ করতে পারেনি। ইতোমধ্যে তিনি দশলক্ষ টাকা তার ব্যবসাতে বিনিয়োগ করেছেন। ইলিয়াছ সাহেবের উৎপাদিত জৈব সারের মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। কিন্তু আইনগত বৈধতার অভাবে উৎপাদন ও বিক্রি করতে পারছে না তিনি। ড. ইলিয়াস সাহেবের এই জটিলতা অনেক জৈব সার বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদনকারীকে নিরুৎসাহী করবে। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে জৈব সারের রেজিষ্ট্রেশন (লাইসেন্স) দেয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে আইগত জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা। সরকারি পর্যায়ে আš-রিকভাবে সহযোগিতার অভাব, খোঁজা হয় আইনের ফাঁক। যারা বলছে, এদেশের কৃষিতে জৈব সারের গুরুত্ব অপরিসীম। তারাই জৈব সার স¤প্রসারণে আš-রিকভাবে কাজ করছে না। বাংলাদেশের কৃষির প্রেক্ষাপটে এমন অবস্থা পরিবর্তন, আজকের দিনে খুবই জরুরি।

লেখক : মো. রফিকুল ইসলাম, কৃষক ও কৃষক সংগঠক, রামপুর, নাটোর। সম্পাদক, এলজিইডির ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পাধীন রামপুর পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি।

বিলুপ্তির পথে কৃষিবান্ধব জলজ প্রাণী শামুক

২১.০৯.০৮
ইত্তেফাক ।। মাটি ও মানুষের কৃষি ডেস্ক

বিল-ঝিল কিংবা ডোবা ফসলী জমির জলজ প্রাণীদের মধ্যে অন্যতম একটি হল শামুক। জীববৈচিত্র বা প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় এর আছে কিছু নির্দিষ্ট ভূমিকা। গৃহপালিত হাঁসসহ মুক্ত অনেক পাখির খাবার এই শামুক। চাষাবাদের প্রাকৃতিক ধারা অব্যাহত রাখতে উপকারী অন্যান্য অনেক জলজ প্রাণীর মধ্যে এরও রয়েছে অনেক কৃষিবান্ধব ভূমিকা।

প্রাকৃতিকভাবে বাংলাদেশের সব অঞ্চলেই রয়েছে কমবেশি শামুক। দক্ষিণাঞ্চলের নিচু অঞ্চলে কিংবা জলাবদ্ধ এলাকায় শামুকের প্রাচুর্য বেশি। কিন্তু এবার হুমকির মুখে পড়েছে এ জীবটি। ঘেরে আবাদ করা চিংড়ির অন্যতম খাবারে পরিণত হয়েছে এই শামুক। এজন্য এই অঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় দরিদ্র মানুষেরা ফসলী ক্ষেতে কিংবা অন্যান্য জলাশয়ের শামুক ধরে চিংড়ি ঘেরের মালিকদের কাছে বিক্রি করছে। পটুয়াখালী কিংবা গোপালগঞ্জের মত জেলাগুলোতে প্রাকৃতিক উৎস থেকে সংগৃহীত এই শামুক বেচা-কেনার জন্য রীতিমত বাজারব্যবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, খোলা হয়েছে আড়ৎ। ব¯-ায় করে ট্রাকের পর ট্রাক শামুক এসব অঞ্চল থেকে চলে যাচ্ছে চিংড়ি প্রধান এলাকাগুলোতে।

প্রতি ব¯-া শামুক ১৫০ থেকে ২০০ টাকা পর্যš- বিক্রি করে এসব অঞ্চলের হতদরিদ্র লোকজন তাদের জীবিকানির্বাহ করলেও দীর্ঘমেয়াদে সামগ্রীক কৃষি পরিবেশ পড়ছে হুমকির মুখে।

শামুকের অ¯ি-ত্ব হুমকির মুখে চলে আসার অন্যতম কারণ চিংড়ির খাবার হিসেবে শামুকের ব্যবহার। এখনও এ জীবটির আলাদা করে বাণিজ্যিক চাষাবাদের আওতায় আসেনি। রাজশাহীর গবেষক ড. সাইফুল ইসলাম শামুকের বাণিজ্যিক চাষে দীর্ঘদিন গবেষণা করে আসছেন। তিনি জানান, এভাবে প্রাকৃতিক উৎস থেকে নির্বিচারে শামুক নিধন চলতে থাকলে কৃষিবান্ধব এই জলজ প্রাণী অচিরেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। তিনি বলেন, শামুক চাষ এখন সময়েরই দাবি। এর রয়েছে বানিজ্যিক উপযোগিতাও। শামুক চাষের মধ্য দিয়েও সৃষ্টি হতে পারে বহু কর্মসংস্থান, আসতে পারে কৃষি সাফল্য।

কম্পিউটারে উদ্ভিদের রোগ নির্ণয়

২১.০৯.০৮
ইত্তেফাক ।। মোঃ শাহীন আলম ও তাওহিদুল ইসলাম

সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষ কোন না কোনভাবে উদ্ভিদের উপর নির্ভরশীল। আধুনিক সভ্যতার শুরু থেকেই তাই মানুষ কৃষির উপর সর্বোচ্চ নজর দিয়েছে। শুরু হয়েছে কৃষির উপর গবেষণা ও নতুন নতুন উদ্ভাবন। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী মুহাম্মদ মো¯-াগীজ বিল¬¬াহ উদ্ভাবন করেছেন এমনই এক প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে পাতা দেখেই একটি উদ্ভিদের রোগ বলে দেবে কম্পিউটার।

বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে মানুষসহ বিভিন্ন পশুপাখির রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত হচ্ছে কম্পিউটারসহ আরও উন্নত ধরনের প্রযুক্তি। প্রাণীজগত বাদে জীবজগতের অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য অংশ হচ্ছে উদ্ভিদজগত। আর এই উদ্ভিদজগতের বিভিন্ন রোগ নির্ণয়কল্পে দেশে প্রথমবারের মত উদ্ভিদের পাতা থেকে কম্পিউটারের মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ে সফলতা লাভ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) এর কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ম্যাথমেটিক্স বিভাগের শিক্ষক মুহাম্মদ মো¯-াগীজ বিল¬াহ।

বাংলাদেশের কৃষি অর্থনীতি কৃষিনির্ভর হলেও দিন দিন এদেশের কৃষক বিভিন্ন সমস্যার কারণে কৃষির এই অগ্রযাত্রা থেকে পিছিয়ে পড়ছে। বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে উদ্ভিদের রোগ, পোকামাকড়ের আক্রমণ ইত্যাদি উলে¬খযোগ্য। বাকৃবিতে অবস্থিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সর্বপ্রথম উদ্ভিদ হাসপাতাল এর তথ্যমতে, বাংলাদেশে প্রতি বছর উদ্ভিদের প্রায় ১২০০ রোগবালাইয়ের জন্য ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ফসল নষ্ট হয়। টাকার হিসেবে ওই ক্ষতির পরিমাণ ৭০০ থেকে ৮৪০ কোটি টাকা। এই বিশাল ক্ষতির একমাত্র কারণ হচ্ছে সময়মত উদ্ভিদের সঠিক রোগ নির্ণয়ের অপারগতা। মানুষের পক্ষে অতি অল্প সময়ে এই শত শত প্রকার বাহ্যিক রোগ নির্ণয় করা অনেকাংশেই সম্ভবপর হয়ে ওঠে না। আর এই অসম্ভবকে কম্পিউটারের মাধ্যমে দ্রুত ও সহজতর করার চেষ্টা করছেন মু¯-াগীজ বিল¬াহ। তিনি সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে দীর্ঘ এক বছর ধান গাছের বিভিন্ন রোগের উপর গবেষণা চালিয়ে উদ্ভাবন করেছেন এক নতুন প্রযুক্তি। কম্পিউটারের আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ইমেজ প্রসেসিং এবং সেন্সরকে কাজে লাগিয়ে ধান গাছের পাতার বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ সফলতা লাভ করেছেন। এক্ষেত্রে রোগাক্রাš- উদ্ভিদের পাতাকে স্ক্যানিং করে সফটওয়ারের মাধ্যমে কম্পিউটারের মধ্যে ওই রোগের বৈশিষ্ট্যসমূহকে প্রবেশ করানো হয় এবং কম্পিউটার তাৎক্ষণিক বিশে¬¬ষণ করে ফলাফল প্রদান করে। এতে করে ভুলের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। বর্তমানে ধানের পাতার কিছু নির্দিষ্ট রোগ নিয়ে চলছে গবেষণা। রোগ সনাক্তকরণের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইপিএম ল্যাব ও উদ্ভিদ রোগ হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ড. এম বাহাদুর মিঞা ।

মুহাম্মদ মো¯-াগীজ বিল¬াহ বলেন- “যদি উচ্চমানসম্পন্ন ছবি এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ রোগাক্রাš- পাতার নমুনা সংগ্রহ করে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা, গবেষণা এবং নিউরাল নেটওয়ার্কে প্রশিক্ষণ করানো যায় তবে এ প্রযুক্তির মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা শতভাগের কাছাকাছি পৌঁছানো সম্ভব হবে।’’ তিনি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ডিজিটাল ক্যামেরার সাহায্যে সরাসরি মাঠ থেকে ছবি সংগ্রহ করে ওয়ার্লেস প্রযুক্তির মাধ্যমে ঘরে বসেই যাতে রোগ সনাক্ত করা যায় এবং একই সাথে রোগ নির্ণয় যেন মাঠেই করা যায় এমন হাতে বহনযোগ্য, স্বল্পমূল্যের এবং সহজলভ্য যন্ত্র আবিষ্কারের ব্যাপারে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘এ প্রযুক্তিটির কাজ প্রাথমিকভাবে সম্পন্ন হয়েছে এবং এ ব্যাপারে আরও প্রচুর গবেষণার প্রয়োজন আছে।”

প্রফেসর ড. বাহাদুর মিঞা বলেন, ‘‘এ প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষকরা তুলনামুলকভাবে স্বল্প খরচে সল্প সময়ে উদ্ভিদ রোগাক্রাš- হওয়ার সাথে সাথেই দ্রুত সমস্যা চিহ্নত করে ব্যবস্থা নিলে উৎপাদন প্রত্যাশিত হবে এবং দেশ শত শত কোটি টাকা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে।’’ ধানের মত অন্য ফসলের ক্ষেত্রেও এ প্রযুক্তি নতুন দিগš- সৃষ্টি করবে। ধান এবং অন্য ফসলের পাতা দেখে আগাম রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে শস্যকে প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করতে সহজ হবে। তবে এ প্রযুক্তিটি মাঠ পর্যায়ে বি¯-ারের জন্য সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সার্বিক সহযোগীতা প্রয়োজন।

চাল উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াজাতকরণে নতুন সংস্করণ ‘ভ¬াদেনি’

২১.০৯.০৮
ইত্তেফাক ।। তৌফিক আহমেদ

রোমানিয় কমিউনিস্ট নেতা নিকোলাই ভালবাসতেন ইতালিয় রিসোতো (একধরনের পোলাও), আর প্রায়ই শঙ্কিত হয়ে পড়তেন এটা ভেবে যে রোমানিয়ার চালের বাণিজ্য অন্য কোন ইউরোপিয় দেশ না দখল করে নেয়। যেহেতু সারা বিশ্বে চালের দাম বেড়েছে হু হু করে আর শুধুমাত্র এ বছরেই যখন চালের দাম বেড়েছে তিনগুণ এবং যেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ চাল রপ্তানীর ক্ষেত্রে নির্ধারণ করেছে বেশ কঠোরতা, সেক্ষেত্রে, খাদ্য সংকটের এই কঠিন সময়ে নিজের অবস্থান সংহত করতে একটি ইউরোপিয় দেশ হয়েও, চালের উৎপাদনে নীরবে যথেষ্ট এগিয়েছে বালকান রাষ্ট্র, রোমানিয়া। সিংহভাগ সহযোগিতায় রয়েছে অন্য একটি বৃহৎ এবং শক্তিশালী ইউরোপিয় রাষ্ট্র, ইতালি। বুখারেস্ট থেকে ১৭০ কিলোমিটার পূর্বে ভ¬াদেনি নামক একটি গ্রামে ইতালিয় চাল-প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান, ‘রিসো স্কটি’-এর সহযোগিতায় জোরেশোরে চলছে চাল-উৎপাদন থেকে শুরু করে এর প্রক্রিয়াজাতকরণের অন্যান্য সব কার্যক্রম। ২০০৩ সাল থেকে শুরু করে ‘রিসো স্কটি’ ৭,০০০ হেক্টর জমিতে ধান চাষের জন্য প্রায় দশ মিলিয়ন ইউরো ইতোমধ্যে বিনিয়োগ করেছে এবং তাদের লক্ষ্য ১০,০০০ হেক্টর পর্যš- জমিতে বিনিয়োগ করা। দিনের পর দিন, অমিত সম্ভাবনার এক কৃষিক্ষেত্রে পরিণত হচ্ছে রোমানিয়া। সবচেয়ে বড় কথা, প্রাšি-ক এবং দূর্বিষহ জীবনযাপন করা এই কৃষকেরা কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে তাদের জীর্ণদশা থেকে বের হয়ে আসতে পারছেন। স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন প্রত্যেকেই। সাহস, আস্থা আর মনোবলের সাথে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে ভ¬¬াদেনির কৃষক ভাইয়েরা। রোমানিয়াতে চাল কখনোই জনপ্রিয় খাদ্য কিংবা প্রধান খাদ্যশস্য হিসেবে অš-র্ভূক্ত ছিল না বরং গম এবং ভুট্টাই এখানে প্রধান খাদ্যশস্য হিসেবে সুপরিচিত। ১৯৭০ সালে প্রথমবারের মত চীন এবং উত্তর কোরিয়ার সামগ্রিক কৃষি উন্নয়ন প্রচণ্ড প্রভাবিত করে নিকোলাইকে। এর পর বলা চলে, নিকোলাই তার নিজের পরিকল্পনাতে এক রকম জোর করেই সেখানকার প্রাšি-ক এবং দুর্ভাগা কৃষকদের ঠেলে দেন ধান চাষের দিকে। ভ¬াদেনি নামক রোমানিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের গ্রামটির বুকে তখন থেকেই উন্নয়নের নতুন ধারা রচিত হয়ে যায়। এ সব কিছুই জানতেন শুধু নিকোলাই। স্বাবলম্বী হয়ে গড়ে উঠতে থাকে ভ¬¬াদেনি। তারই ফলস্বরূপ ইউরোপিয় অন্য রাষ্ট্রগুলো ক্রমেই রোমানিয়ার কৃষি বাণিজ্যে আগ্রহী হয়ে উঠতে থাকে। অবহেলিত জমিগুলোতে নিত্যনতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে রোমানিয়ায় চাল উৎপাদনে চলে আসে বিরাট পরিবর্তন। উষ্ণ জলবায়ু, উর্বরা জমি এবং কল্যাণময়ী নদী, ‘দান্যুবে’ দেশটির ধান উৎপাদনে রেখে চলেছে বিশেষ অবদান। আর ইউরোপিয় অন্যান্য দেশগুলোর তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম খরচে এখানে চলছে ফসল উৎপাদন। ধারণা করা হচ্ছে, ২০০৮ সালেই প্রায় ৪০,০০০ টন চাল উৎপাদনে সক্ষম হবে রোমানিয়া যা গোটা ইউরোপিয় চাল উৎপাদনের ১০ ভাগ। এরকমই একের পর এক ইতিবাচক বিষয়ের পাশাপাশি রোমানিয়ায় চাল উৎপাদনে নেতিবাচক যে বিষয়টি রয়েছে তা হল রোমানিয়া সরকার এবং ইউরোপিয় ইউনিয়নের যৌথ প্রয়াসে রোমানিয় কৃষকদের প্রতি হেক্টর জমিতে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে সর্বসাকুল্যে ৫০০ ইউরো। অংকটি সেখানকার কৃষকদের জন্য যথেষ্ট নয়। তাই, রোমানিয়ার ধান চাষের ভবিষ্যত সুনিশ্চিত করতে এই মুহূর্তে যা প্রয়োজন তা হল, সুষ্ঠু এবং আš-রিক রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা, তবেই খুব অল্প দিনে রোমানিয়া পরিণত হতে পারবে এক শক্তিশালী চাল উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে। ধান চাষ এবং চাল উৎপাদনে টেক্কা দিতে পারবে ইউরোপের সব দেশগুলোকে।

-তৌফিক আহমেদ

কুষ্টিয়ায় কচু নিয়ে চাষীরা বিপাকে

২১.০৯.০৮
ইত্তেফাক ।। জহুরুল হক

চলতি মৌসুমে কুষ্টিয়ায় কচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চালের বিকল্প আলু এবং আলুর বিকল্প হিসাবে সবজি ফসল কচুকে মনে করা হয়। কচুর বহুমুখি গুণ থাকায় এটি গ্রামগঞ্জের দরিদ্র মানুষের বন্ধু ফসল হিসাবে পরিচিত। কচুর পাতা, ফুল ও কাণ্ড তরকারি হিসাবে ব্যবহার করা হয়। যা থেকে খাদ্য চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়রণ ও ভিটামিন পাওয়া যায়। কুষ্টিয়া জেলার মাটি এঁটেল দোঁ-আশ হওয়ায় এ জেলা কচু চাষের জন্য অত্যš- উপযোগী। গতবছর এখানে কচুর পর্যাপ্ত ফলন ও ন্যায্যমূল্য পাওয়ায় এখানকার চাষীরা চলতি মৌসুমে কচুর আবাদের উপর বেশি আগ্রহী হয়ে পড়ে। গত বছর এ জেলার ৬ টি উপজেলায় ৩২৭৫ হেক্টর জমিতে কচুর চাষ করা হয়েছিল। এবছর প্রায় ৪০০০ হেক্টর জমিতে কচুর চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ইরি ও ওল কচুর আবাদ হয়েছে বেশি। জেলার বিভিন্ন মাঠ ঘুরে চাষীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়। চলতি বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গতবছরের চাইতে এই মৌসুমে কচুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কোন রোগবালাই, পোকার উপদ্রব হয়নি, ফলে গাছ হয়েছে মোটা ও সতেজ। প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে প্রায় ৮০ মণ হারে। চাষীরা বাজার মূল্যও পেয়েছে ভাল। প্রতি মণ কচু তারা মৌসুমের শুরুতে বিক্রয় করেছে ৬৫০ থেকে ৮০০ টাকা দরে। খুবই অল্প সময়ে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে উচ্চ ফলনশীল ও সহজে আবাদযোগ্য সবজি ফলনের মধ্যে এটিই উপযুক্ত বলে চাষীরা জানায়। কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বকুল আহম্মেদ জানান, জেলার মিরপুর ও দৌলতপুর উপজেলায় কচুর আবাদ হয়েছে সবচেয়ে বেশি। তিনি বলেন, ‘‘কচুর পাশাপাশি কচুর সবুজ পাতা, কচুর ফুল ও কাণ্ড বিক্রয় করে চাষীরা খরচের প্রায় অর্ধেক আয় করেছে।’’ কিন্তু হঠাৎ করে কচুর দাম পড়ে যাওয়ায় কচু চাষীদের মাথায় যেন বজ্রাঘাত হয়েছে। গত ২ সপ্তাহ ধরে কচুর দাম মাত্র ৩ টাকা কেজি দরে নেমে যাওয়ায় চাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ১২০ টাকা মজুরী দিয়ে ১ মণ কচু তুলে তা পরিস্কার করে বাজার নিতে যে খরচ হচ্ছে তা ঐ কচু বিক্রি করেও হচ্ছে না। উপায়াš-র না পেয়ে অধিকাংশ কচু চাষীর গলার কাঁটা হয়ে জমিতেই পড়ে আছে। দৌলতপুর উপজেলা মানিকদিয়াড় গ্রামের কচু চাষী সেলিম সর্দ্দার জানান, সেই দু’বিঘা কচুর আবাদ করেছিল। কচুর দাম পড়ে যাওয়ায় তার কচু মাঠেই পড়ে আছে। একই অবস্থা এই অঞ্চলের অন্য কচু চাষীদেরও। কচু সংরক্ষণের উপায় ও ব্যবস্থা না থাকায় আজ তারা এই দূরবস্থার মধ্যে পতিত হয়েছে।

এ ব্যাপারে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর ও সংশি¬ষ্ট কর্তৃপক্ষ যদি সঠিক সময়ে চাষীদের পরামর্শ বা নির্দেশনা দিত, তবে চাষীরা হয়তো এই ক্ষতির সম্মখীন হত না। তাই এ বিষয়ে সংশি¬ষ্ট বিভাগ যদি এখনই সজাগ দৃষ্টি না দেয় তবে আগামী মৌসুমে কচু চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে চাষীরা।

- জহুরুল হক, কুষ্টিয়া

জাম্বুরা: পাহাড়ে আর্থিক সাফল্যের হাতছানি

২১.০৯.০৮
মাটি ও মানুষের কৃষি
ইত্তেফাক ।। মাজহার মিলন

বাজারে এখন নানা বাহারি ফলমূলের সমাহার। দেশী-বিদেশী ফলমূলের ভিড়ে এখনও আমাদের কিছু পুরানো ফল বেশ জনপ্রিয় রয়ে গেছে। স্বাদের ভিন্নতার কারণে এসব ফলমূলের যেমন রয়েছে ক্রেতা চাহিদা তেমনি বাণিজ্যিক উৎপাদনের কারণে রয়েছে সহজলভ্যতাও। আমাদের দেশী ফলের তেমনই একটি হল জাম্বুরা। রমজানের এই বাজারে জাম্বুরার রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ লেবুজাতীয় এই ফলটির জুস কিংবা সরাসরি শাঁসের স্বাদ সারাদিনের রোজার পর শরীরকে চনমনে করে তোলে।

জাম্বুরার ফলন বিচ্ছিন্নভাবে সারাদেশে হলেও শুধুমাত্র জাম্বুরাকেই বাণিজ্যিক ফসল হিসেবে চাষের বিষয়টিকে অনেকের কাছেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না। কিন্তু এটাই সত্যি, বৃহত্তর সিলেটের কয়েকটি জেলায় ছোটবড় টিলাগুলোতে অনেকদিন ধরেই চলছে জাম্বুরার চাষ। এ অঞ্চেলের অনেক চাষীই শুধুমাত্র জাম্বুরার চাষ করে তাদের জীবিকা নির্বাহই করেন না তাদের অনেকেই আজ লাখপতি। মাত্র দেড় দশক আগেও বি¯-ীর্ণ এই পাহাড়ী পললভূমির মানুষের দিন কাটত অর্থনৈতিক দৈন্যদশার ভেতর দিয়ে। আজ সেই মানুষের মুখে ফুটে উঠছে স্বচ্ছলতার হাসি। নানাধরনের পাহাড়ী ফলমূলের উৎপাদন আর বাজারজাতকরণের সুযোগ সুবিধার জন্য আজ এই সাফল্য। সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক আকারে মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জুড়ি, কুলাউড়া ও আশেপাশের থানাগুলোর ছোটবড় এইসব পাহাড়ের গায়ে চাষ করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ জাম্বুরা। এছাড়াও হবিগঞ্জ ও সিলেটসহ বেশকিছু অঞ্চলে চাষ চলছে এই জাম্বুরার। আগে পুলিশ বা বিডিআর ভারতীয় জাম্বুরা সন্দেহে এই জাম্বুরার বাজারজাতকরণে চাষীদের নানাভাবে নাজেহাল করত। এখন দিন পাল্টে গেছে। সহজেই বিভিন্ন শহরের বাজারে যেতে পারছে এখানকার জাম্বুরা।

মৌলভীবাজারের পাহাড়ী টিলাগুলোর উপর প্রায় প্রত্যেক বাড়িতেই রয়েছে ছোট বড় জাম্বুরার বাগান। দেশী জাতের এই গাছগুলো একবার রোপনের পর তেমন পরিচর্যা ছাড়াই বেড়ে ওঠে। দুবছর পরই শুরু হয় ফলন। প্রতিটি গাছ থেকে বছরে আসে প্রায় ২০০ থেকে ৫০০টি মত জাম্বুরা। একেকটির দাম সর্বোচ্চ বিশ থেকে পঁচিশ টাকা হলেও সর্বনিু পাঁচ থেকে সাত টাকা পর্যš-। গাছগুলো বাঁচেও ত্রিশ থেকে চলি¬শ বছর পর্যš-। জাম্বুরা চাষের মাধ্যমে পরিবর্তন ঘটছে এলাকার মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থার। তাই জাম্বুরা হয়েছে এই এলাকার অন্যতম অর্থকরী ফসল।

শুধুমাত্র জাম্বুরা চাষ করে সহায়-সম্বলহীন অবস্থা থেকে লাখপতি হয়েছে এমন উদাহরণ অনেক। জেলার জুড়ি উপজেলার শুকনাছড়া গ্রামের মায়া বেগম নামে এক পঞ্চাশোর্ধ্ব নারীর সাথে কথা হল এখানকার জাম্বুরা চাষের রেওয়াজ আর সাফল্যের কথা নিয়ে। মায়া বেগম জানালেন মাত্র কয়েক বছর আগেও তিনি ছিলেন সহায়-সম্বলহীন এক নারী, স্বামী-সš-ান নিয়ে অসহায় জীবনযাপন করা ছাড়া কোন গত্যš-র ছিল না তার। যে টিলাটিতে তিনি থাকেন, সেখানে কয়েক’শ জাম্বুরার চারা লাগিয়ে তিনি ফলন পাওয়া শুরু করেন মাত্র তিন বছর পর থেকেই। এরপর প্রতিবছর শুধু লাভ আর লাভ। গাছের পরিচর্যা বাবদ কোন খরচ নেই বললেই চলে। কোন রোগবালাইয়ের আক্রমণ হলে সামান্য কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়, খরচ বলতে এটুকুই। মায়া বেগম এখন লাখপতি। প্রতিবছর দুই থেকে আড়াই লাখ টাকার জাম্বুরা বিক্রি করেন তিনি। নিজের তত্ত্বাবধানেই ট্রাকভর্তি জাম্বুরা চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠান। মায়া বেগম এখন এই এলাকার জাম্বুরা চাষীদের মধ্যে একজন মডেল। বাড়ি পাকা করেছেন, জীবনযাত্রায় এনেছেন ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তন। এরকম উদাহরণ ওই অঞ্চলে বি¯-র। শুধুমাত্র জাম্বুরাকে প্রধান ফসল করে এ রকম অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা এ অঞ্চল এনেছে রীতিমত ¬িবপ¬ব।

এভাবেই আমাদের দেশের নানা অঞ্চলে বাড়ির আঙ্গিনা ও আশেপাশে করতে পারি জাম্বুরার চাষ। আর এ চাষ করে আর্থিকভাবে আসতে পারে স্বচ্ছলতা। এমনি নানা ফলমূল যেগুলো আপাত অর্থে আমাদের কাছে মনে হয় সামান্য এক-একটি নাম সেগুলো আমাদের প্রধান ফসলের পাশাপাশি হয়ে উঠতে পারে অন্যতম অর্থকরী ফসল। মৌলভীবাজারে জাম্বুরা চাষে আসা এই অর্থনৈতিক সাফল্য এর একটি উলে¬¬খযোগ্য উদাহরণ।

কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা

২১.০৯.০৮
ইত্তেফাক ।। আব্দুল কাইয়ুম তুহিন

চলতি অর্থবছরে (২০০৮-০৯) কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। যা গত বছরের চেয়ে ১৩ শতাংশ বেশি। রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো গত বছরের চেয়ে ৫ শতাংশ এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলো ৫৫ শতাংশ বেশি কৃষি ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। গত অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে ৯৭২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি খাতের ৮ ব্যাংক বিতরণ করেছে ৬৩৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। বেসরকারি খাতের সব ব্যাংক ৩৩৬ কোটি ৮৬ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। বিদেশি একটি ব্যাংক বিতরণ করেছে ৮ কোটি টাকা।

চলতি অর্থ বছরে কোন ব্যাংক কত টাকা কৃষি ঋণ বিতরণ করবে : সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সোনালী ব্যাংক ৬৭৫ কোটি, জনতা ব্যাংক ৬৫৫ কোটি, অগ্রণী ব্যাংক ৪৮০ কোটি, রূপালী ব্যাংক ৭০ কোটি, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ৩ হাজার ৮০০ কোটি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ৮৫৫ কোটি ১৮ লাখ, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড ৭৫০ কোটি ৫০ লাখ, বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক ৪৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে এবি ব্যাংক ১১৫ কোটি, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ৩২ কোটি, ব্যাংক এশিয়া ৬০ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংক ৩৫ কোটি, বেসিক ব্যাংক ৪০ কোটি, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ২০ কোটি, ব্র্যাক ব্যাংক ৩৫ কোটি, ঢাকা ব্যাংক ১ কোটি ৮০ লাখ, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ৪০ কোটি, ইস্টার্ন ব্যাংক ৫২ কোটি, এক্সিম ব্যাংক ২১ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক ১০ কোটি, আইএফআইসি ব্যাংক ২৫ কোটি, ইসলামী ব্যাংক ৬৬০ কোটি, যমুনা ব্যাংক ৫৮ কোটি, মার্কেন্টাইল ব্যাংক ২৭ কোটি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ১০ কোটি ৭৫ লাখ, ন্যাশনাল ব্যাংক ৪১ কোটি ৫০ লাখ, ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক ১৪ কোটি, ওয়ান ব্যাংক ২০ কোটি, প্রাইম ব্যাংক ৩০ কোটি, পূবালী ব্যাংক ১০২ কোটি, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ৪০ কোটি, সোস্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ৩০ কোটি, সাউথইস্ট ব্যাংক ৩০ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ১০ কোটি, সিটি ব্যাংক ৮০ কোটি, ট্রাস্ট ব্যাংক ১৭৫ কোটি, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ১২ কোটি এবং উত্তরা ব্যাংক ৩০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ব্যাংক আল ফালাহ ১০ কোটি, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন ২০ কোটি, সিটি ব্যাংক এনএ ১০৬ কোটি, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ৫০ কোটি, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া ৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

কৃষি ঋণ বিতরণে কোনো লক্ষ্যমাত্রা নেই : চলতি অর্থবছর শুরু হওয়ার আগেই বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে চিঠি দিয়ে চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে তাদের ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে বলা হয়েছিল। ওই চিঠির জবাবে দেশে কার্যরত ৪৮ ব্যাংকের মধ্যে ৫টি বিদেশি ব্যাংক কোনো তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানায়নি। এগুলো হচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, হাবিব ব্যাংক, এইচএসবিসি, ওরি ব্যাংক এবং আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। এসব ব্যাংক চলতি অর্থবছরে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেনি।

অর্থ বছরের প্রথম দুই মাসে কৃষি ঋণ বিতরণ : সোনালী ব্যাংক বিতরণ করেছে ৩৬ কোটি ৫২ লাখ, জনতা ব্যাংক ৩১ কোটি, অগ্রণী ব্যাংক ২২ কোটি, রূপালী ব্যাংক সাড়ে ৩ কোটি, কৃষি ব্যাংক ৩৬৬ কোটি, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক সাড়ে ৭৮ কোটি, বাংলদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড ৯৮ কোটি টাকা।

বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে এবি ব্যাংক ২ কোটি ৮ লাখ, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ৮ কোটি, ব্যাংক এশিয়া ১৮ কোটি, বেসিক ব্যাংক প্রায় ৩ কোটি, ব্র্যাক ব্যাংক প্রায় ৯ কোটি, ডাচ-বাংলা ব্যাংক ১২ কোটি, ইস্টার্ন ব্যাংক প্রায় ৩১ কোটি, এক্সিম ব্যাংক ২ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ব্যাংক ১১ লাখ, আইএফআইসি ব্যাংক প্রায় সোয়া ৩ কোটি, ইসলামী ব্যাংক ১৫১ কোটি ৪২ লাখ, ন্যাশনাল ব্যাংক ২৮ কোটি, ওয়ান ব্যাংক ২ কোটি, প্রাইম ব্যাংক ৫১ কোটি ২৯ লাখ, সোস্যাল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ৭৯ লাখ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ৮ লাখ, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ৫ কোটি, উত্তরা ব্যাংক ২৯ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে একমাত্র সিটি ব্যাংক এনএ ৮ কোটি টাকা বিতরণ করেছে।

এদিকে দেশে কার্যরত দেশি-বিদেশি সব ব্যাংকের জন্য কৃষিঋণ বিতরণ বাধ্যতামূলক করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী ঋণের জোগান দেওয়া, বর্গাচাষীদের জামানতবিহীন ঋণ প্রদান এবং জেলেদের ঋণ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে উদ্যোগ নেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের মধ্যে কার্ড বিতরণ করছে। ওই কার্ড দেখে কৃষকদের ঋণ দেওয়া হবে। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং কৃষি উৎপাদন বাড়াতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এসব বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করা হবে।

About Me

My photo
প্রতিদিন বিভিন্ন সংবাদপত্র কৃষি বিষয়ে নানান সংবাদ প্রকাশ করে থাকে। এ সকল তথ্য কাজের জন্য খুবই সহায়ক। কিন্তু একজনের পক্ষে প্রতিদিন সবগুলো সংবাদপত্র পড়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। অথচ এ সকল বিষয়গুলো আমাদের সবার জন্য কম-বেশি দরকারি। এ চিন্তা থেকে আমরা বিভিন্ন সংবাদপত্র নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও কৃষি বিষয়ক সংবাদসমূহ তথ্যায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছ্।ি আশা করছি সংবাদ তথ্যায়নের এ প্রকিৃয়াটি আমাদের কাজের জন্য সহায়ক হবে। পার্টিসিপেটরি রিসার্চ এন্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এ কাজটি সঞ্চালনের কাজ করছে।

Krishi Khobor